আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
236 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (4 points)
বর্তমানে একদল লোক বলে যে, কোরআন শরীফ ১০০% বিশুদ্ধ তাই কোরআন শরীফ কে অনুসরণ করে কিন্তু হাদিস ১০০% সহি না ।হাদিসে কিছু মতবিরোধ আছে তাই তারা হাদিসকে অস্বীকার করে এবং হাদিস  অনুসরণ করাকে বিদআত বলে মনে করে তাহলে তাদেরকে হাদিসের গুরুত্ব কিভাবে বোঝাতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।   

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আহলুল কুরআন’ মূলত একটি মর্যাদাপূর্ণ দ্বীনী পরিভাষা। ।হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " إِنَّ لِلَّهِ أَهْلِينَ مِنَ النَّاسِ " . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ هُمْ قَالَ " هُمْ أَهْلُ الْقُرْآنِ أَهْلُ اللَّهِ وَخَاصَّتُهُ " .

আনাস ইবনে মালেক রাযিয়াল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-‘নিশ্চয়ই মানুষদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর‘আহল’ (অর্থাৎ আল্লাহর বিশেষ ব্যক্তি)।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন-‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা কারা?’ আল্লাহর রাসূল বললেন-‘তারা আহলুল কুরআন-কুরআনওয়ালা। তারাই আল্লাহর ‘আহল এবং তাঁর ঘনিষ্ঠজন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১২২৭৯; সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৭৯৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২১৫)

 

কিন্তু বর্তমান যুগে হাদীস অস্বীকারকারী ভ্রান্ত ফেরকার লোকেরা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বলে দাবী করে। অথচ কুরআনের অসংখ্য আয়াতে হাদীস তথা রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার নির্দেশ রয়েছে। যা তারা মানেনা। বস্ত্ততঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভবিষ্যদ্বাণীর একটি বাস্তব চিত্র হল, ভ্রান্ত ফেরকা ‘আহলে কুরআন।’

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " أَلاَ إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلاَ يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلاَلٍ فَأَحِلُّوهُ وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ " .

আল-মিক্বদাম ইবনু মা’দীকারিব (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোন প্রাচুর্যবান লোক তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নিবে। (সুনানে আবু দাউদ, ৪৬০৪ )

আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমের অনেক জায়গায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীস অনুসরণের  নির্দেশ দিয়েছেন।নিম্নে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।

১. আল্লাহ তায়ালা বলেন-

و َ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْنَ.

(হে নবী!) আমি আপনার প্রতি ‘আযযিকর’  নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেইসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা নাহল (১৬) : ৪৪)

আল্লাহ তাআলা কুরআন অবতীর্ণ করে তার বয়ান ও ব্যাখ্যার দায়িত্ব দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। অর্থাৎ কুরআনে কারীমের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করবেন আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

 

২. অন্যত্র তিনি বলেন-

وَّ اذْكُرُوْا نِعْمَتَ اللهِ عَلَیْكُمْ وَ مَاۤ اَنْزَلَ عَلَیْكُمْ مِّنَ الْكِتٰبِ وَ الْحِكْمَةِ یَعِظُكُمْ بِهٖ.

আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাদেরকে উপদেশ দানের লক্ষ্যে তোমাদের প্রতি যে কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন তা স্মরণ রেখ। (সূরা বাকারা (২) : ২৩১)

অতএব কিতাব ও হিকমত দুই-ই আল্লাহর নাযিলকৃত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে কিতাব শিখিয়েছেন, হিকমতও শিখিয়েছেন। হিকমত হল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ এবং শরীয়তের সকল বিধি-বিধান।

 

৩. আল্লাহ তাআলা  আরো বলেন-

و َ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْنَ.

(হে নবী!) আমি আপনার প্রতি এই কিতাব  নাযিল করেছি, যাতে আপনি মানুষের সামনে সেইসব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দেন, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে। (সূরা নাহ্ল (১৬) : ৪৪)

অতএব কুরআনের তালীম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, কুরআনের কোন্ আয়াতের কী মর্ম, কোন্ আয়াতে কী বিধান, এবং সেই বিধান পালনের কী নিয়ম- এগুলো শিক্ষা দেওয়া।

 

 

৪. তিনি আরো বলেন-

وَ مَا یَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰی  اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْیٌ یُّوْحٰی.

তিনি মনগড়া কথা বলেন না। সেটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়। (সূরা নাজম (৫৩) : ৩-৪)

 ৫. তিনি আরো বলেন –

 قُلْ اَطِیْعُوا اللهَ وَ الرَّسُوْلَ فَاِنْ تَوَلَّوْا فَاِنَّ اللهَ لَا یُحِبُّ الْكٰفِرِیْنَ.

(হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ কাফেরদের পছন্দ করেন না। (সূরা আলে ইমরান (৩) : ৩২)

 ৬. তিনি আরো বলেন-

وَ مَاۤ اٰتٰىكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَ مَا نَهٰىكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَ اتَّقُوا اللهَ اِنَّ اللهَ شَدِیْدُ الْعِقَابِ.

রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা হাশর (৫৯) : ০৭)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

যারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে আহলে কুরআন হয়ে গেছে তাদের সেসব কুরআনের আয়াত দ্বারা বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে যেগুলোতে আল্লাহ তায়ালা হাদীস অনুসরণের কথা বলেছেন । তাদের হাতে-পায়ে ধরে হলেও ফেরানোর চেষ্টা করতে হবে। দুআ করতে হবে, বোঝাতে হবে এবং আলেম-উলামার মজলিসে নিয়ে যেতে হবে। এরপর তারা নিজেরাও যদি নিজেদের জন্য দুআ করেন এবং সত্যটা বোঝার চেষ্টা করেন, আশা করি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের হেদায়েত দান করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by
reshown
জাযাকাল্লাহু খাইরান। সহি হাদিস চেনার উপায় কি? এবং জাল হাদিস চেনার উপায় কি?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...