بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
প্রকৃতপক্ষে এ বিধানটি হাজীদের কর্মের সাথে সাদৃশ্যায়নের হিকমত হিসেবে সুন্নাত আমল। হাজীরা যেমন হজ্বরত অবস্থায় চুল নখ ইত্যাদি কর্তন করে না। বরং দশে জিলহজ্জ কুরবানী শেষ করে তারপর চুল নখ ইত্যাদি কর্তন করে থাকে।তেমনি যারা হজ্জে যাননি। তারাও হাজীদের সাদৃশ্যায়নে জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের সূচনালগ্ন থেকে এমন আমল করে থাকেন।
সুতরাং যারা জিলক্বদ মাসের শেষের দিকে চুল নখ ইত্যাদি কর্তন করেছেন, তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠা থেকে নিয়ে কুরবানীর দিন পর্যন্ত চুল নখ না কাটা সুন্নত। কাটলে গোনাহ হবে না।তবে আগে কাটলে সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে।এবং হাদীসে এ আমলের বদৌলতে কবুল কুরবানীর সওয়াব পাবার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِرَجُلٍ: أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ: أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةً أُنْثَى أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنْ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَّتِكَ عِنْدَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ : আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫]
ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,
إن ابن عمر مر بامرأة تأخذ من شعر ابنها في الايام العشر فقال : لو أخرتيه إلى يوم النحر كان أحسن.
অর্থ : আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত।
ঐ ব্যক্তি নিজের কুরবানী সম্পন্ন হওয়ার পর নখ, চুল কাটবে। হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ.
‘যে ব্যক্তির কুরবানীর পশু আছে যা সে কুরবানী করবে যিলহজে¦র চাঁদ ওঠার পর থেকে কুরবানী করার আগ পর্যন্ত সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ
أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য মোচ, নখ কর্তন এবং বগলের চুল ও অবাঞ্ছিত লোম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটি হল, যেন তা চল্লিশ দিনের উর্দ্ধে না যায়। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৯৫]
সুতরাং, এই বিধান তখনি প্রযোজ্য হবে যখন অবাঞ্ছিত পশম ও নখ না কাটার সময় ৪০ দিন থেকে বেশি না হয়। কেননা, সহীহ হাদীসে আছে, আনাস রা. বলেন, গোঁফ কর্তন করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা ও নাভির নিচের পশম পরিষ্কার করার বিষয়ে আমাদের জন্য সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যে, আমরা যেন ৪০ দিনের বেশি বিলম্ব না করি।
-সহীহ মুসলিম ১/১২৯; হাশিয়াতুত তহতাবী আলালমারাকী ২৮৭; আহসানুল ফাতাওয়া ৪/৪৯৬
প্রশ্নকারী প্রিয় ভাই/বোন! শুক্রবার জুমার নামাযে যাওয়ার আগে নখ কাটা সুন্নত। (শরহুস্ সুন্নাহ, হাদিস নং ৩০৯০ ও ৩০৯১)। জুমার দিনে হাতপায়ের নখ কাটা সুন্নত হলেও জিলহজ্ব মাসের উপরোক্ত আমলটি বিশুদ্ধ দললি দ্বারা প্রমাণিত হওয়াই উক্ত আমলকে প্রাধাণ্য দিতে হবে এবং হাত-পায়ের নখ কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে। হাত-পায়ের নখ না কাটলেও উক্ত আমলের যে সাওয়াব তা আপনার আমলনায় জমা হবে ইনশাআল্লাহ ।