মসজিদ প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হল, এতে সালাত, কুরআন তিলাওয়াত-কুরআন পাঠ ও পঠন, ইলম চর্চা, জিকির-আজকার, ইতিকাফ ইত্যাদি আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّ هَذِهِ المَسَاجِدَ لاَ تَصْلُحُ لِشَيءٍ مِنْ هَذَا البَوْلِ وَلاَ القَذَرِ، إنَّمَا هي لِذِكْرِ اللهِ تَعَالَى، وَقِراءةِ القُرْآنِ» أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم .
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় এ মসজিদসমূহ পেশাব ও নোংরা-আবর্জনার উপযুক্ত স্থান নয়। এসব তো মহান আল্লাহর জিকির এবং কুরআন তেলাওয়াত করার জন্য।’’ অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ কিছু বলেছেন।
সহীহুল বুখারী ২১৯, ২২১, ৬০২৫, মুসলিম ২৮৪, ২৮৫, তিরমিযী ১৪৭, নাসায়ী ৫৩, ৫৫, ৩২৯, ইবনু মাজাহ ৫২৮, আহমাদ ১১৬৭২, ১১৭২২, ১২২৯৮, ১২৫৭২, ১২৯৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৪, দারেমী ৭৪০
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
মসজিদে অবস্থান করা,থাকা খাওয়া ইতেকাফের নিয়তে জায়েজ আছে।
ইতেকাফের নিয়তে থাকলে সেটিও ইবাদত বলেই গন্য হবে।
তাই সেটিকে ইবাদত ব্যাতিত বলা যাবেনা।
তবে কিছু শর্ত মানতে হবেঃ
★ইতেকাফের নিয়ত করতে হবে।
★মসজিদের আদব রক্ষা করা জরুরি। সুতরাং মসজিদে অযথা হাসি-তামাশা, অশ্লীল কথাবার্তা, গান-বাজনা শোনা, তাতে দৌড়াদৌড়ি, দুষ্টামি এবং তাতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা ইত্যাদি মসজিদের আদব পরিপন্থী।
★মসজিদে সালাত আদায়কারী, জিকির-আজকার ও তিলাওয়াত রত ব্যক্তিদেরকে বিরক্ত না করা।
★কাচা পিঁয়াজ-রসুন, বিড়ি-সিগারেট খেয়ে বা ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পোশাক পরে মসজিদে না আসা।
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ حُمَيْدِ بْنِ كَاسِبٍ، وَحَرْمَلَةُ بْنُ يَحْيَى، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، حَدَّثَنِي سُلَيْمَانُ بْنُ زِيَادٍ الْحَضْرَمِيُّ، أَنَّهُ سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْحَارِثِ بْنِ جَزْءٍ الزُّبَيْدِيَّ، يَقُولُ كُنَّا نَأْكُلُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ فِي الْمَسْجِدِ الْخُبْزَ وَاللَّحْمَ .
আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে জাযই আয-যুবাইদী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে মসজিদে বসে রুটি ও গোশত আহার করতাম।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ৩৩০০)
হযরত সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন,
” جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ بَيْتَ فَاطِمَةَ فَلَمْ يَجِدْ عَلِيًّا فِي الْبَيْتِ، فَقَالَ: أَيْنَ ابْنُ عَمِّكِ؟ قَالَتْ: كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ شَيْءٌ فَغَاضَبَنِي فَخَرَجَ فَلَمْ يَقِلْ عِنْدِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ لِإِنْسَانٍ: انْظُرْ أَيْنَ هُوَ، فَجَاءَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، هُوَ فِي الْمَسْجِدِ رَاقِدٌ، فَجَاءَ رَسُولُ اللَّهِ وَهُوَ مُضْطَجِعٌ قَدْ سَقَطَ رِدَاؤُهُ عَنْ شِقِّهِ وَأَصَابَهُ تُرَابٌ، فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ يَمْسَحُهُ عَنْهُ، وَيَقُولُ: قُمْ أَبَا تُرَابٍ، قُمْ أَبَا تُرَابٍ.
একদিন রাসূলুল্লাহ সা. হযরত ফাতেমার ঘরে এসে আলীকে (রা.) পাননি। জিজ্ঞেস করলেন, আলী কোথায়? ফাতেমা বললেন, আমাদের দু’জনে মধ্যে কিছু রাগারাগি হয়েছে। ফলে তিনি রাগ করে এখানে বাইরে চলে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. একজনকে বললেন, তাকে একটু খুঁজে দেখ কোথায়। লোকটি এসে জানাল, আলী মসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ সা. এসে দেখলেন আলী শুয়ে আছেন। শরীর এক পাশ থেকে চাদর পড়ে গেছে। আর গায়ে ধুলো-বালি লেগে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর গায়ের বালি ঝেঁড়ে দিচ্ছেন আর বলছেন ‘আবু তোরাব উঠ উঠ। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৪১,৪৩০}
হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বলেন,
أَنَّ أَبَا ذَرٍّ الْغِفَارِيَّ كَانَ يَخْدُمُ النَّبِيَّ صلى الله عليه و سلم فَإِذَا فَرَغَ مِنْ خِدْمَتِهِ، آوَى إِلَى الْمَسْجِدِ، فَكَانَ هُوَ بَيْتُهُ، يَضْطَجِعُ فِيهِ، فَدَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم الْمَسْجِدَ لَيْلَةً، فَوَجَدَ أَبَا ذَرٍّ نَائِمًا مُنْجَدِلًا فِي الْمَسْجِدِ، فَنَكَتَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم بِرِجْلِهِ حَتَّى اسْتَوَى جَالِسًا، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم :” أَلَا أَرَاكَ نَائِمًا؟ “، قَالَ أَبُو ذَرٍّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَأَيْنَ أَنَامُ، هَلْ لِي مِنْ بَيْتٍ غَيْرُهُ؟،. قال فى المجمع: رواه أحمد والطبراني وروى بعضه في الكبير وفيه شهر بن حوشب وفيه كلام وقد وثق
হযরত আবুযর রা. রাসূলুল্লাহ সা. -এর খেদমত করতেন। ফারেগ হলেই মসজিদে চলে যেতেন। মসজিদই ছিল তাঁর ঘর। এখানেই ঘুমাতেন। একদিন রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে দেখলেন, আবুজর মসজিদে শুয়ে আছেন। তিনি তাকে পা দিয়ে স্পর্শ করলেন। আবুযর রা. উঠে বসলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এখানে ঘুমিয়ে কেন? আবুযর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কোথায় ঘুমাব আর ?! এ ছাড়াকি আমার আর কোন ঘর আছে? (মুসনাদে আহমদ হা.২৬৯২৮ মাজমাউয যাওয়াইদ হা. ২০২৩)
عن الحارث بن عبد الرحمن قال سألت سليمان بن يسار عن النوم في المسجد فقال كيف تسألون عن هذا وقد كان أهل الصفة ينامون فيه ويصلون فيه
হযরত হারেস ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, হযরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসারকে জিজ্ঞেস করলাম, মসজিদে ঘুমানোর বিধান কী? তিনি উত্তরে বললেন, তোমরা কেন এবিষয়ে প্রশ্ন কর? আহলে ছুফফাতো মসজিদেই থাকতেন, মসজিদেই নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবীশাইবা হা. ৪৯১১)