আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
2,026 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (0 points)
আমরা তো জানি যে তাকদির আগে থেকেই লাওহে মাহফুযে লিখিত আছে।তাহলে হাদিসে যে আছে যে শুধু মাত্র দোয়ার মাধ্যমে তাকদির পরিবর্তন হয়,এইটার ব্যাখ্যা কী তাহলে?

1 Answer

0 votes
by (660 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
উত্তর-

আপনার এই বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বুঝতে হলে কয়েকটি বিষয় ভালো করে উপলব্ধি করতে হবে।
প্রথমত, তাকদীর দুই প্রকার।
১/ তাকদীরে মুসবাত বা মুবরাম। এটি লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। এতে কোন ধরনের পরিবর্তন হয় না।
২/ তাকদীরে মুয়াল্লাক বা মুকায়্যাদ। যা ফেরেশতাদের রেজিস্টারে সংরক্ষিত। এতে পরিবর্তন পরিবর্ধন বা সংযোজন হয়ে থাকে।
প্রত্যেক মুসলমানের উপর আবশ্যক হল, এই বিশ্বাস লালন করা যে, আল্লাহ তা'আলার অনুমতি ব্যতীত কোন কিছুই হয় না। আল্লাহ কর্তৃক তাকদীর বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী তা হয়ে থাকে। তিনি সব কিছুর স্রষ্টা। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَٰهُ بِقَدَرٍ
'আমি প্রত্যেক বস্তুকে পরিমিতরূপে সৃষ্টি করেছি।' (সূরা আল ক্বামার : ৪৯)
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-كل شيء بقدر، حتى العجز والكيس'প্রতিটি বস্তু সক্ষমতা ও অক্ষমতার বিচারে পরিমিতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।' (সহীহ মুসলিম : ২৬৫৫)অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إن أول ما خلق الله القلم، فقال له : اكتب. قال : رب، وماذا أكتب ؟ قال : اكتب مقادير كل شيء حتى تقوم الساعة 'আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করলেন। এরপর তাকে বললেন তুমি লিখো। সে বলল, হে প্রভু! আমি কী লিখবো? তিনি বললেন, কেয়ামত পর্যন্ত সকল বস্তু সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী লিখো।' (সুনানে আবু দাউদ : ৪৭০০, সুনানে তিরমিজি : ২১৫৫)
তাকদীরের বিষয়ে নিজের আকিদাকে স্বচ্ছ রাখা আবশ্যক।
উপরে উল্লেখিত হয়েছে তাকদীরে মুবরাম অপরিবর্তনশীল। যা লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত। এটা কেবল একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন। মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
مَا يُبَدَّلُ ٱلْقَوْلُ لَدَىَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٍ لِّلْعَبِيدِ
'আমার কাছে কথা রদবদল হয় না এবং আমি বান্দাদের প্রতি জুলুমকারী নই।' (সূরা ক্বফ : ২৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন-
قد سألت الله لآجال مضروبة، وأيام معدودة، وأرزاق مقسومة، لن يعجل شيئا قبل حله، أو يؤخر شيئا عن حله، 
'আমি আল্লাহ তাআলার নিকট চেয়েছি সুনির্দিষ্ট সময়, নির্ধারিত দিবস এবং বন্টিত রিজিক। যথাযথ সময়ের পূর্বে কোন বস্তু ত্বরান্বিত হবে না এবং যথাযথ সময় থেকে বিলম্বিত হবে না।' (সহীহ মুসলিম : ২৬৬৩)ইমাম নববী রহমতুল্লাহি বলেছেন, মানুষের জীবনের নির্ধারিত ক্ষণ এবং রিজিক সুনির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা যা নির্ধারণ করেছেন এবং তার চিরন্তন জ্ঞানে যা রয়েছে তা অপরিবর্তনশীল। এখানে কোন বৃদ্ধি ঘটানো কিংবা হ্রাস করা অসম্ভব।
তাকদীরে মুয়াল্লাক হলো, ফেরেশতাদের হাতে থাকা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ তাকদীর। তাকে বলা হবে,  অমুক যদি সদকাহ না করে তাহলে তার বয়স এত লিখো। আর যদি সদকাহ করে তাহলে এত লিখো। অথচ আল্লাহ তায়ালা কিন্তু তার অপরিবর্তনীয় তাকদীরে জানেন যে, সে দান করবে নাকি করবে না। এই প্রকারের তাকদীরে দোয়া ও সদাকার মাধ্যমে উপকার লাভ করা যায়। কেননা এটি তার আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট। পবিত্র কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতে এমনটি উদ্দেশ্য করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
لِكُلِّ أَجَلٍ كتاب، يَمْحُوا۟ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ وَيُثْبِتُ وَعِندَهُۥٓ أُمُّ ٱلْكِتَٰبِ،'প্রত্যেকটি ওয়াদা লিখিত আছে। আল্লাহ যা ইচ্ছা মিটিয়ে দেন এবং বহাল রাখেন এবং মূলগ্রন্থ তাঁর কাছেই রয়েছে। (সূরা রাদ : ৩৮-৩৯)
কুরআনুল কারিমের এই আয়াতের সমর্থনে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
لا يرد القضاء إلا الدعاء، ولا يزيد في العمر إلا البر
'কেবল দোয়ার মাধ্যমে তাকদীরের ফায়সালা পরিবর্তিত হয়। ভালো বা কল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে হায়াতে বৃদ্ধি ঘটে।' (সুনানে তিরমিজি : ২১৩৯) প্রিয় ভাই,  আল্লাহ তাআলার গোপন ভেদ রহস্য। এ বিষয়ে নানা চিন্তাভাবনা করা, অধিক প্রশ্ন করা, গবেষণা করা মোটেও উচিত নয়। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে- حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ، فَذَكَرَ لَهَا شَيْئًا مِنَ الْقَدَرِ، فَقَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: : مَنْ تَكَلَّمَ فِي شَيْءٍ مِنَ الْقَدَرِ سُئِلَ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ لَمْ يَتَكَلَّمْ فِيهِ لَمْ يُسْأَلْ عَنْهُ হযরত ইয়াহইয়া বনি আব্দুল্লাহ বিন আবী মুলাইকা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি একদা হযরত আয়শা রাঃ এর নিকট গেলেন। তখন তিনি তাকদীর বিষয়ে তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেন, তখন হযরত আয়শা রাঃ বলেন, আমি রাসুল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি তাকদীর বিষয়ে কথা বলে, কিয়ামতের ময়দানে এ কারণে সে জিজ্ঞাসিত হবে। আর যে এ বিষয়ে আলোচনা না করবে, তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৮৪)মোল্লা আলি কারী রহ. বলেছেন- والقدر سر من أسرار الله تعالى، لم يطلع عليه ملكا مقربا ولا نبيا مرسلا، ولا يجوز الخوض فيه، والبحث عنه بطريق العقل، ‘তাকদীর আল্লাহ তাআলার গোপন রহস্য। এ রহস্য সম্পর্কে কোন ফেরেশতা বা কোন নবীও ওয়াকিফহাল নন। তাকদীর বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা ও গবেষণা করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। (মিরকাত : ১/২৫৬) আকিদাতুত ত্বহাবী নামক গ্রন্থে ইমাম ত্বহাবী রহ. বলেছেন-
 واصل القدر سر فى خلقه لم يطلع على ذلك ملك مقرب ولا نبى مرسل، والتعمق والنظر فى ذلك ذريعة الخذلان وسلم الحرمان، ودرجة الطغيان، فاحذر كل الحذر من ذلك، نظرا وفكرا ووسوسة، فإن الله تعالى طوى علم القدر عن أنامه، ونهاهم عن مرامه كما قال فى كتابه: لا يسئل عما يفعل وهم يسئلون (الانبياء-23) فمن سأل: لم فعل؟ فقد رد حكم كتاب الله، ومن رد حكم كتاب الله تعالى كان من الكافرين….. وقال على رضى الله عنه “القدر سر الله فلا تكشفه، তাকদীর মূলত আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির গোপন রহস্য। এ রহস্য সম্পর্কে কোন ফেরেশতা বা কোন নবীও জানেন না। এ বিষয়ে আলোচনা করা, গবেষণা করা লাঞ্চণার মাধ্যম, নিষিদ্ধ কাজের সিড়ি এবং অবাধ্যাচরণের স্তর। এই বিষয়ে পূর্ণ সতর্ক থাকো। চিন্তাগত দিক থেকে, দৃষ্টিভঙ্গিগত দিক থেকে এবং শয়তানের কুমন্ত্রণার দিক থেকে। নিশ্চয়েই আল্লাহ তাআলা তাকদীরের জ্ঞান সৃষ্টিজগত থেকে গুটিয়ে রেখেছেন এবং তাদেরকে এ ব্যাপারে কোন উদ্দেশ্য থেকে নিষেধ করেছেন। যেমনটি কুরআনে ইরশাদ হয়েছে- তিনি যা করেন সে ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে না, বরং তোমাদের কাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, তিনি কেন এটা করেছেন, তাহলে সে আল্লাহর কিতাবের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করলো। আর যে আল্লাহর কিতাবের বিধানকে প্রত্যাখ্যান করবে সে অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। হযরত আলী রা. বলেছেন- তাকদীর আল্লাহ তাআলার গোপন রহস্য। তুমি তা উন্মোচন করার চেষ্টা করো না। (পৃষ্ঠা-১৮০)  এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ বলেন-

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَتَنَازَعُ فِي القَدَرِ فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ، حَتَّى كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْنَتَيْهِ الرُّمَّانُ، فَقَالَ: أَبِهَذَا أُمِرْتُمْ أَمْ بِهَذَا أُرْسِلْتُ إِلَيْكُمْ؟ إِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حِينَ تَنَازَعُوا فِي هَذَا الأَمْرِ، عَزَمْتُ عَلَيْكُمْ أَلاَّ تَتَنَازَعُوا فِيهِ. একবার রাসূল সাঃ আমাদের কাছে আসলেন এমতাবস্থায় যে, আমরা তাকদীর বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসূল সাঃ প্রচন্ড রেগে গেলেন।রাগে চেহারা আনারের মত রক্তিম বর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমরা এ এসব করতে আদিষ্ট হয়েছো? নাকি আমি এসবের জন্য আবির্ভূত হয়েছি? ইতোপূর্বের লোকজন এ বিষয়ে আলোচনা করে ধ্বংস হয়েছে, আমি তোমাদের দৃঢ়তার সাথে বলছি, তোমরা এ বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। ( হাদীস নং-২১৩৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিকভাবে বুঝে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।
উত্তর প্রদান
মুফতি মুহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান
ফাতওয়া বিভাগ, IOM

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...