উলামায়ে কেরামগন বলেছেনঃ
এই যমানায় যে তিনটি গুনাহ ছাড়তে পারবে আল্লাহওয়ালারা বলেন, আল্লাহ তাকে সব গুনাহ থেকে হেফাজত করবেন।
১. চোখের হেফাজত।
২. দাঁড়ির হেফাজত।
৩. টাখনুর উপরে কাপড় রাখা। (পুরুষের জন্য)
মানুষ সৃষ্টিগতভাবে পাপ প্রবণ। শয়তান ও কু প্রবৃত্তি তাকে প্রায়ই পাপাচার, অন্যায় ও আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজের দিকে তাড়িত করে। সব মানুষের মধ্যেই এমন পাপের মনোবৃত্তি জাগ্রত হয়। কিন্তু সফল তো সে ব্যক্তি যে সুযোগ থাকার পরও আল্লাহর আযাবের ভয়ে পাপ ও অন্যায় থেকে আত্ম সংবরণ করে আর হতভাগ্য ও ধ্বংস প্রাপ্ত তো সে ব্যক্তি যে শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে কিংবা কামনা-বাসনার ডাকে সাড়া দিয়ে পাপ-পঙ্কিলতার অন্ধকারে হারিয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا – وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
“যে নিজের আত্মাকে (পাপ-পঙ্কিলতা থেকে) পবিত্র করে সেই সফল হয় আর যে তাকে কলুষিত করে ধ্বংস হয়।” (সূরা শামস: ও ১০)
যা হোক যখন অন্তরে অন্যায় ও পাপকাজের চিন্তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে তখন কী করণীয় সে ব্যাপারে কিছু আইডিয়া পেশ করা হল। এগুলো থেকে এক বা একাধিক আইডিয়া কাজে লাগালে আশা করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাপ পঙ্কিলতায় ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাকে সহ প্রতিটি মুসলিমকে আল্লাহর নাফরমানী ও পাপাচার থেকে রক্ষা করুন। আমীন।
১) মনে পাপের চিন্তা জাগ্রত হওয়ার সাথে সাথে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ “বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা এ মর্মে বলেন:
وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّـهِ ۚ
“আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তাহলে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো।” (সূরা আ’রাফ: ২০০)
২) মনে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা। অর্থাৎ এই চিন্তা করা যে, আল্লাহর অবাধ্যতা করলে তিনি ক্রোধান্বিত হবেন এবং জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে, পৃথিবীর কোনও মানুষ না দেখলেও আল্লাহর চোখকে কোনোভাবেই ফাঁকি দেয়া সম্ভব নয়। তিনি অবশ্যই বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু দেখেন এবং প্রতিটি কর্ম সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখেন।
তাছাড়া আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত আমাদের কাঁধের ফেরেশতা দ্বয় আমাদের প্রতিটি কর্ম দিনরাত অবিরামভাবে লিখে চলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَإِنَّ عَلَيْكُمْ لَحَافِظِينَ كِرَامًا كَاتِبِينَ يَعْلَمُونَ مَا تَفْعَلُونَ
“অবশ্যই তোমাদের উপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে যা তোমরা কর।” (সূর ইনফিতার: ১০, ১১ ও ১২)
৩) মহান আল্লাহর নিকট অন্তরের পরিশুদ্ধি ও আল্লাহ ভীতির জন্য দুআ করা।
যেমন: নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমদেরকে দুআ শিক্ষা দিয়েছেন:
اَللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجَابُ لَهَا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আতি নাফসী তাকওয়াহা ওয়া যাক্কিহা
আন্তা খাইরু মান যাককাহা
আনতা ওয়ালিয়্যুহা ওয়া মাওলাহা।
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিন ‘ইলমিন লা ইয়ানফা‘উ
ওয়া কালবিন লা ইয়াখশাউ
ওয়া নাফসিন লা তাশবা‘উ
ওয়া মিন দাওয়াতিন লা ইউসতাজাবু লাহা।
অর্থ:
“হে আল্লাহ, তুমি আমার মনে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) দান করো,
আমার মনকে পবিত্র কর,
তুমিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী।
তুমিই তো হৃদয়ের মালিক ও অভিভাবক।”
“হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই
এমন ‘ইলম (জ্ঞান) থেকে যা কোনও উপকার দেয় না,
এমন হৃদয় থেকে যা (তোমার ভয়ে) ভীত হয় না,
এমন আত্মা থেকে যা পরিতৃপ্ত হয় না
এবং এমন দোয়া থেকে যা কবুল করা হয় না।”
(সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: দুআ, তওবা-ইস্তিগফার হা/২৭২২)
৪) মৃত্যুর কথা স্মরণ করা। হাদিসে এসেছে, গুনাহরত অবস্থায় যদি মৃত্যু সংঘটিত হয় তাহলে কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উত্তোলন করা হবে। (আল্লাহ ক্ষমা করুন)
যেমন: জাবির রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
يُبعَثُ كلُّ عبدٍ على ما مات عليه المُؤمِنُ على إيمانِه والمُنافِقُ على نِفاقِه
“প্রত্যেক বান্দাকে ঐ অবস্থায় কিয়ামতের দিন উঠানো হবে যে অবস্থার উপর সে মৃত্যু বরণ করেছে। মুমিনকে উঠানো হবে ঈমানের উপর এবং মুনাফিককে উঠানো হবে নিফাকির উপর।” ( সহীহ ইবনে হিব্বান,হা/৭৩১৩)
৫) মনে রাখতে হবে,পাপের আনন্দ ক্ষণস্থায়ী কিন্তু তার ক্ষতি ও করুণ পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী। পাপের উন্মাদনা সাময়িক কিন্তু তার অনুতাপ দীর্ঘ মেয়াদি।
৬) কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী বই-পুস্তক পাঠ, নফল সালাত আদায় এবং বিভিন্ন ধরণের দুআ, জিকির, তাসবিহ, ইস্তিগফার ইত্যাদি পাঠ করা।
৭) নির্জন স্থান ত্যাগ করে মা, বাবা, ভাই, বোন, দ্বীনদার আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সাথে অথবা ভালো কোনও আলেমের সান্নিধ্যে অথবা মসজিদে গিয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করা। পরিবার থেকে দূরে থাকলে তাদের সাথে ফোনে কথা বলা বা ফোনে রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের খোঁজ-খবর নেয়া অথবা দীর্ঘ দিন যোগাযোগ হয় নি এমন দীনী ভাই ও বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করা।
৮) করতে ভালো লাগে এমন কোনও দুনিয়াবি উপকারী কাজ করা, শরীর চর্চা করা বা বাইরে খোলাস্থানে ঘুরতে যাওয়া। ঘরে চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকা ঠিক নয়। কারণ কথায় বলে: “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।”
৯) সিনেমা, নাটক ইত্যাদি দেখা, গান-বাদ্য শোনা বা অশ্লীল গল্প, উপন্যাস পাঠ করা থেকে দূরে থাকা। কারণ এগুলো মনের সুপ্ত বাসনা ও কু প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করে।
অনুরূপভাবে যে সব উপকরণ হাতের কাছে থাকার কারণে পাপের দিকে মন ছুটে যায় সে সব উপকরণকে ঘর থেকে বের করা বা নষ্ট করে ফেলা।
১০) পাপের দিকে মনে প্রচণ্ড ঝোঁক সৃষ্টি হলেও ধৈর্য ধারণ করা এবং পাপ থেকে আত্ম সংবরণ করা ফরয। কেউ পাপ কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা করার পর যদি আল্লাহর ভয়ে তা পরিত্যাগ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তার আমলনামায় গুনাহের পরিবর্তে সওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেন। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً
“আর সে যদি কোনও পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করে দেন।” (সহিহ বুখারী হা/৬৪৯১ ও সহিহ মুসলিম হা/১৩১)
উল্লেখ্য যে, পাপকর্ম হয়ে গেলে করণীয় হল, অনতিবিলম্বে অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া (নিবিষ্ট চিত্তে দু রাকআত নফল সালাত পড়ার পর আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার বা ক্ষমা চেয়ে দুআ করা অধিক উত্তম) এবং বেশি বেশি নেকির কাজ সম্পাদন করা। তাহলে আল্লাহ তাআলা সকল গুনাহ মোচন করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ আমাদেরকে শয়তানের প্ররোচনা এবং কু প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়া থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
(সংগৃহীত)
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
وَأَذَانٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الْأَكْبَرِ أَنَّ اللَّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ۙ وَرَسُولُهُ ۚ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللَّهِ ۗ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُوا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ [٩:٣]
আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর,আর যদি মুখ ফেরাও,তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও। [সূরা তওবা-৩]
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ [٢:٢٢٢
নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে পছন্দ করেন। [বাকারা-২২২]
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِنْ قَرِيبٍ فَأُولَٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٧] وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا [٤:١٨
অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন,যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে,অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী,রহস্যবিদ। আর এমন লোকদের জন্য কোন ক্ষমা নেই, যারা মন্দ কাজ করতেই থাকে,এমন কি যখন তাদের কারো মাথার উপর মৃত্যু উপস্থিত হয়,তখন বলতে থাকেঃ আমি এখন তওবা করছি। আর তওবা নেই তাদের জন্য, যারা কুফরী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। {সূরা নিসা-১৭-১৮}
عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ»
হযরত ইবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহ করে নাই ব্যক্তির মত হয়ে যায়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই /বোন,
তওবার শর্ত গুলির মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত ভবিষ্যতে সেই কাজটি ছেড়ে দেওয়ার উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
,
যদি কেহ তওবার সমস্ত শর্ত মেনে খালেছ দিলে আল্লাহর কাছে তওবা করে,আল্লাহ যদি তার তওবা কবুল করেন,তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে ঐ গুনাহ গুলোর জন্য শাস্তি দিবেননা।
.
তওবার পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ