বিসমিহি তা'আলা
উত্তরঃ-
বিয়ের পুর্বে অথবা সন্তান জন্মের পুর্বে কুনিয়ত বা উপনাম গ্রহণ করা বৈধ আছে।
হযরত আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ ﺃَﻧَّﻬَﺎ ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻛُﻞُّ ﺻَﻮَﺍﺣِﺒِﻲ ﻟَﻬَﺎ ﻛُﻨْﻴَﺔٌ ﻏَﻴْﺮِﻱ ، ﻗَﺎﻝَ : ( ﻓَﺎﻛْﺘَﻨِﻲ ﺑِﺎﺑْﻨِﻚِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﺍﻟﺰُّﺑَﻴْﺮِ ) ﻓَﻜَﺎﻧَﺖْ ﺗُﺪْﻋَﻰ ﺑِـ " ﺃُﻡِّ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ " ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ
তরজমাঃ- তিনি বলেনঃ হে আল্লাহর রাসুল সাঃ আমার সমস্ত সাথী বর্গের(নবী কারীম সাঃ এর অন্যান্য স্ত্রীগনের) একেকটি কুনিয়ত রয়েছে কিন্তু আমারতো তা নেই।নবী কারীম সাঃ বললেন তুমি তোমার ছেলে(বোনপুত্র)আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের নামে কুনিয়ত গ্রহণ করো।সুতরাং (তিনি তা গ্রহণ করলেন)এবং মৃত্য পর্যন্ত তাকে 'উম্মে আব্দুল্লাহ' নামেই ডাকা হয়েছিল।(মসনদে আহমদ-৪৩/২৯১)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে,
ﻋَﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ : ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﻨَّﺎﻩُ ﺃَﺑَﺎ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤﻦِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻮﻟَﺪْ ﻟَﻪُ
তরজমাঃ- নবী কারীম সাঃ তাকে "আবু আব্দুর রহমান"কুনিয়ত দিয়েছিলেন,অথচ ইবনে মাসউদ রাঃ এর এ নামে কোন সন্তান ছিলনা।(হাকিম-৩/৩৫৩,তাবারানী-৯/৬৫,ফাতহুল বারী-১০/৫৮২)
ইমাম বোখারী রাহ বলেন,
ﺃﻥ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻛﻨَّﻰ ﻋﻠﻘﻤﺔ " ﺃﺑﺎ ﺷﺒﻞ " ، ﻭﻟﻢ ﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ
তরজমাঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ আলক্বামা রাঃ কে আবু শিবল কুনিয়ত দিয়েছিলেন,অথচ এ নামে তার কোন সন্তান ছিল না।(আদাবুল মুফরাদ-ইমাম বোখারী-৮৪৮)
ছোট ছোট বালক/বালিকাকে কুনয়াহ দিয়ে ডাকতেও কোন বিধি-নিষেধ নেই।জন্মের সময় থেকেই ডাকা হোক বা জন্মের আগে বা পরে ডাকা হোক,ছেলে হোক বা মেয়ে হোক।সর্বাবস্থায় বৈধ আছে।
★ছোট বেলায় কুনিয়তের মাধ্যমে ছোটমনিদেরকে ডাকলে উলামায়ে কেরামগন তার কয়েকটি ফায়দার কথা উল্লেখ করেছেন।
ব্যক্তিগঠন আত্মবিশ্বাসও মন্দ উপনাম থেকে ছোটমনিদেরকে বাছিয়ে রাখা এবং শুভাকাঙ্কা রাখা এমর্মে যে ভবিষ্যতে যখন সন্তান হবে তখন ঐ সন্তানের এই নাম রাখা হবে।
ইত্যাদি ইতিবাচক দিক পরিলক্ষিত হয়।
ছোট সন্তানকে কুনিয়তের মাধ্যমে ডাকা সহীহ সুন্নাহর মাধ্যমে প্রমাণিত আছে যেমনঃ
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে যে,
ﻋَﻦْ ﺃَﻧَﺲِ ﺑْﻦِ ﻣَﺎﻟِﻚٍ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗَﺎﻝَ : ﻛَﺎﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺣْﺴَﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺧُﻠُﻘًﺎ ، ﻭَﻛَﺎﻥَ ﻟِﻲ ﺃَﺥٌ ﻳُﻘَﺎﻝُ ﻟَﻪُ : " ﺃَﺑُﻮ ﻋُﻤَﻴْﺮٍ " – ﺃَﺣْﺴِﺒُﻪُ ﻓَﻄِﻴﻤًﺎ – ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻜَﺎﻥَ ﺇِﺫَﺍ ﺟَﺎﺀَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﺮَﺁﻩُ ﻗَﺎﻝَ : ( ﺃَﺑَﺎ ﻋُﻤَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨُّﻐَﻴْﺮُ ؟ ) ﻗَﺎﻝَ : ﻓَﻜَﺎﻥَ ﻳَﻠْﻌَﺐُ ﺑِﻪِ .
তরজমাঃ- নবী কারীম সাঃ অত্যন্ত সচ্ছচরিত্রবান ছিলেন।আমার একটি ছোট্ট ভাই ছিল।তাকে আবু উমাইর বলা হত।আমার ধারণা সে ফাতিম(দুধ ছেড়ে দিয়ে ভাত খাওয়া শুরু করেছে)ছিল।আনাছ রাঃ বলেন যখনই নবী কারীম সাঃ তাকে দেখতেন তখন বলতেন
يا ﺃَﺑَﺎ ﻋُﻤَﻴْﺮٍ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻞَ ﺍﻟﻨُّﻐَﻴْﺮ
ُ(হে আবু উমাইর তোমার পাখিটি কি করছে?)
রাবী বলেন, সে এই পাখিকে নিয়ে প্রায়ই খেলা করত।(সহীহ বোখারী-৫৮৫০,সহীহ মুসলিম-২১৫০)
ইমাম নববী রাহ.বলেন
ﻭﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻓﻮﺍﺋﺪ ﻛﺜﻴﺮﺓ ﺟﺪّﺍً ، ﻣﻨﻬﺎ : ﺟﻮﺍﺯ ﺗﻜﻨﻴﺔ ﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ، ﻭﺗﻜﻨﻴﺔ ﺍﻟﻄﻔﻞ ، ﻭﺃﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻛﺬﺑﺎً "
উক্ত হাদিসে অনেক ফায়দা রয়েছে,
(১)যার এখনও সন্তান হয়নি তাকেও কুনিয়ত দ্বারা ডাকা জায়েয।
(২)ছোট বাচ্ছাকে কুনিয়ত দ্বারা ডাকা মিথ্যা হবে না।(আল-মিনহাজ-১৪/১২৯)
আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যাহ(৩৫/১৭০)কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ : ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﻜﻨﻮﻥ ﺍﻟﺼﺒﻲ ﺗﻔﺎﺅﻻً ﺑﺄﻧﻪ ﺳﻴﻌﻴﺶ ﺣﺘﻰ ﻳﻮﻟﺪ ﻟﻪ ؛ ﻭﻟﻸﻣﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻠﻘﻴﺐ .
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻋﺎﺑﺪﻳﻦ : ﻭﻟﻮ ﻛﻨﻰ ﺍﺑﻨﻪ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﺑﺄﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﻭﻏﻴﺮﻩ : ﻛﺮﻫﻪ ﺑﻌﻀﻬﻢ ، ﻭﻋﺎﻣﺘﻬﻢ ﻻ ﻳﻜﺮﻩ ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺮﻳﺪﻭﻥ ﺑﻪ ﺍﻟﺘﻔﺎﺅﻝ " ﺍﻧﺘﻬﻰ .
উলামাগন বলে থাকেন, লোকজন তাদের সন্তানদেরকে শুভাকাঙ্খা করে বিভিন্ন প্রকার কুনিয়ত দ্বারা ডেকে থাকে,এভাবে যে, সে যেন অনেকদিন বেঁচে থাকে, তার যেন সন্তানাদি হয়,এবং তাকে যেন মন্দ কুনিয়ত থেকে সংরক্ষণ করা হয়।
ইবনে আবেদীন শামী রাহ বলেন,যদি কেউ তার সন্তানকে আবু বকর বা এ জাতীয় অন্যান্য শব্দ দ্বারা ডাকে তাহলে কিছুসংখ্যক উলামায়ে কেরাম মাকরুহ মনে করে থাকেন,তবে অধিকাংশ উলাময়ে কেরাম মাকরুহ মনে করেন না।কেননা লোকজন এদ্বারা শুভাকাঙ্খাকে-ই উদ্যেশ্য নিয়ে থাকে।
এ সমস্ত আলোচনা থেকে কৃতপ্রশ্নের জবাব এমনিতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে,ছোট ছোট বালক বালিকাকে উপযোক্ত কুনিয়ত/উপনাম দ্বারা ডাকা জায়েয আছে।যদিও তারা দুধ পানকারী হয়।ছেলের দিকে সম্বন্ধ করে হোক বা মেয়ের দিকে।যদি কেউ কোনো সাহাবা-সাহাবিয়ার নামে কারো কুনিয়ত দেয়,তাহলে এটা একটা পছন্দনীয় কাজ। নিন্দা বা অপছন্দের কোন কারণ আপাতদৃষ্টে পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।
আল্লাহই ভাল জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, Iom.