ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১) সুদের ভয়াবহতা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদের সর্বনিম্ন গোনাহ বুঝিয়েছেন, নিজ মায়ের সাথে যিনা করা। বাস্তব যিনা বলা হয়নি। সুতরাং হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হওয়ার প্রশ্নই আসবে না।
(২) জ্বী অনুমানের উপর বিত্তি করে হুরমতে মুসাহারাহ সাব্যস্ত হবে না।
(৩)বৈবাহিক সম্পর্ক যাকে মুসাহারাত বলে,সেটা কিভাবে প্রতিষ্টিত হবে?আমরা জানি বৈধ বিয়ের মাধ্যমে সেটা প্রতিষ্টিত হয়ে থাকে।সুতরাং কোনো মানুষ তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এবং তার সন্তানের স্ত্রীকে বিয়ে করতে পারবে না।এমনকি সে তার স্ত্রীর মা বা মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না।কারণ তাদের সাথে তার বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন হয়ে গেছে। যা বিয়েকে বাধা প্রদাণ করে।
এখন প্রশ্ন জাগে,তাহলে বিয়ের মত অবৈধ সম্পর্কের কারণে কি হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে?যেমন কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচার করলো,এখন সেই যিনাকারীর ছেলে উক্ত মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
জবাবে বলা যায়,
এই মাসআলায় উলামাদের মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
(প্রথম মত)
যিনা-ব্যভিচার তথা অবৈধ সম্পর্কের কারণে হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে।ব্যভিচারী পরুষ মহিলা উভয়ের উর্ধতন-নিম্নতন উভয়দিকে এই হুরমতের বিস্তার ঘটবে। এটা হানাফি মাযহাব,হাম্বলী মাযহাব,এবং ইমাম সাওরী রাহ ও আওযায়ী রাহ এর অভিমত।
তাদের দলিল
(১)
ﻭَﻻَ ﺗَﻨﻜِﺤُﻮﺍْ ﻣَﺎ ﻧَﻜَﺢَ ﺁﺑَﺎﺅُﻛُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻗَﺪْ ﺳَﻠَﻒَ ﺇِﻧَّﻪُ ﻛَﺎﻥَ ﻓَﺎﺣِﺸَﺔً ﻭَﻣَﻘْﺘًﺎ ﻭَﺳَﺎﺀ ﺳَﺒِﻴﻼً
যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।(সূরা নিসা-২২)
আয়াতে অশ্লীল, গযবের কাজ,এবং নিকৃষ্ট আচরণ বলা হয়েছে।কাজেই বুঝা গেল এখানে নিকাহ দ্বারা সহবাস উদ্দেশ্য।সুতরাং অর্থ হবে যাদেরকে তোমাদের পিতামহগণ সহবাস করেছেন,(বিয়ের মাধ্যমে বা বিয়ে ছাড়া)তাদের সাথে তোমরা(বিয়ে বা বিয়ে ছাড়া কোনোভাবে) সহবাসে লিপ্ত হইওনা।
(২)
বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﺇﻟﻰ ﺭﺟﻞٍ، ﻧَﻈَﺮَ ﺇﻟﻰ ﻓﺮْﺝ ﺍﻣﺮﺃﺓ ﻭﺍﺑﻨﺘﻬﺎ " .
আল্লাহ ঐ মানুষের দিকে তাকাবেন না, যে কোনো মহিলার লজ্জাস্থান এবং ঐ মহিলার মেয়ের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে।(বিয়ের মাধ্যমে হোক বা বিয়ে ছাড়া হোক)
(৩)কিয়াস তথা যেভাবে বৈধ সহবাসের কারণে হুরমত সাব্যস্ত হয়,ঠিকসেভাবে অবৈধ সহবাসের কারণেও হুরমত সাব্যস্ত হবে।
(দ্বিতীয় মত)
যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত প্রমাণিত হবে না।সুতরাং যদি কেউ কোনো মহিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়,তাহলে সেই মহিলার মা-মেয়েকে বিয়ে করতে কোনো সমস্যা নেই।এটা শাফেয়ী মাযহাব,মালিকী মাযহাব ও ইবনে হযম জাহিরী এবং এক বিবরণ অনুযায়ী ইমাম আহমদ রাহ এর র মত।
দলীল,
(ক)
কুরআনে কারীমে যাদেরকে হারাম বলা হয়েছে,তারা ব্যতীত বাকী সবাই হালাল।সুতরাং অবৈধ যিনা-ব্যভিচারের মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত হয়ে কেউ আর হারাম হবেন না।
(২)
আল্লাহ তা'আলা বংশ এবং বৈবাহিক সম্পর্ক দ্বারা বান্দার উপর অনুগ্রহ করেছেন।যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﺧَﻠَﻖَ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻓَﺠَﻌَﻠَﻪُ ﻧَﺴَﺒًﺎ ﻭَﺻِﻬْﺮًﺍ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻗَﺪِﻳﺮًﺍ
তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম।(সূরা ফুরকান-৫৪)
সুতরাং আল্লাহর অনুগ্রহকৃত কোনো জিনিষ অবৈধ কোনো কিছু দ্বারা সাব্যস্ত হবে না।
(৩)
বর্ণিত রয়েছে,
রাসূল্লাহ সাঃ বলেছেন,
ﺭﻭﻱ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﻗﺎﻝ : " ﻻ ﻳُﺤﺮِّﻡ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ ﺍﻟﺤﻼﻝ " .
হারাম কোনো হালালকে হারাম করে না।
কোন মত গ্রহণযোগ্য ও অগ্রাধিকার যোগ্য?
সতর্কতামূলক হানাফি মাযহাবকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।যাতেকরে বেপর্দা ও ফ্রি মিক্সিং ইত্যাদি সম্পূর্ণ রূপে খতম হয়ে নিরাপদ পরিবেশ কায়েম হয়।
(৪) তখনও আত্মহত্যা জায়েয হবে না।