আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
160 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (3 points)
reshown by
১.একটি হাদিসে পড়েছিলাম অন্যায় দেখলে এর প্রতিবাদ করতে হবে হাত দিয়ে।সম্ভব না হলে মুখ দিয়ে প্রতিবাদ জানাতে হবে।এখন বর্তমান যুগে আমরা ফেসবুকে লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ করি আবার অনেক সময় প্রতিবাদ সমাবেশ করি।কিন্তু প্রতিবাদ সমাবেশ করতে না পারলে অন্তত সোশাল মিডিয়াতে লেখালেখি করে প্রতিবাদ জানায়।কারণ সোশাল মিডিয়া বর্তমানে মতামত জানানোর অন্যতম প্লেট ফর্ম বা নিজের মত প্রকাশের এবং এটি প্রচার মাধ্যমও।আর মুখ দিয়ে প্রতিবাদ জানানোও মতামত প্রকাশের মতো।তাহলে সোশাল মিডিয়াতে লেখালেখি করে প্রতিবাদ জানানো এবং হাদিসে বর্ণিত মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করা কী একই বিষয়?অর্থাৎ লেখালেখি করে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে কী ঈমানি দ্বায়িতের কর্তব্য পালন হচ্ছে।

২.হাশরের ময়দানে আল্লাহ যখন ফিলিসতিনের জন্য কী করেছি এবং ইসরাইলের প্রতিবাদে কী করেছি জিজ্ঞেস করেন।তাহলে আমি বলতে পারব আমি ইসরাইলের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়েছি সাধ্য অনুযায়ী লেখালেখির মাধ্যমে এবং ফিলিসতিনের জন্য দোয়া করেছি এবং আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি।প্রশ্ন হলো, হাশরের ময়দানে আল্লাহ কী আমার থেকে জবাবদিহিতা চাইবেন আমি ইসরাইলের প্রতি প্রতিবাদ জানিয়েছি কী না এবং ফিলিসতিনের জন্য কী করেছি?

৩.একজন ব্যক্তি সে নামাযে ফিলিসতিনের জন্য দোয়া করেছে এবং আর্থিকভাবে সহায়তা করেছে।কিন্ত সে প্রতিবাদ জানায় নি ইসরাইলের প্রতি।হাদিসে উল্লিখিত মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করা এইটাও সে করেনি।কিন্ত মন থেকে ঘৃণা করেছে।তাহলে হাশরের ময়দানে আল্লাহ কী তার থেকে জবাবদিহিতা চাইবে লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানোর উপায় থেকেও সে কেন ব্যবহার করেনি।

৪.অনেকেই বলছে লেখালেখি করে কোনো লাভ নেই।এগুলো দিয়ে কোনো লাভ হবে না।তাই লেখালেখি না করে দোয়া করতে বলছে তারা এবং উম্মাহ যাতে আরু শক্তিশালী হতে পারি তাই নবির দ্বীন ও সুন্নাত চর্চা করতে বলছে।আল্লাহ আমাদের থেকে বলে এগুলোর হিসাব নিবেন না।আমিও নবির দ্বীন ও সুন্নাত চর্চা করছি সাথে সাধ্য অনুযায় লেখে প্রতিবাদ করেছি।  সেক্ষেএে আমরা কী লেখালেখির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানানো বন্ধ করে দিব,এটির কী জবাবদিহিতা আল্লাহ চাইবেন না?

৫.এক ব্যক্তি নামায পড়ে না বা ধর্ম ভালোভাবে পালন করে না কিন্তু তার ঈমান আছে আল্লাহর উপর। কিন্ত সে যখন অন্যায় দেখে সাধ্যমত লেখালেখির মাধ্যমে হইলেও প্রতিবাদ জানায়।সেক্ষেএে সে ধর্ম ভালোভাবে পালন করে না বলে কী তার প্রতিবাদ জানানোর সোয়াবগুলো কী আল্লাহ গ্রহণ করবেন না?কেউ যদি নামায না পড়ে বা ধর্ম ভালোভাবে পালন না করে তাহলে সে কী অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর অধিকার রাখে না?

1 Answer

0 votes
by (590,550 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/1982 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে, 
আপনি যে হাদীস বলেছেন তার মূল আরবী পাঠ হল, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪٍ ﺍﻟﺨُﺪْﺭِﻱِّ - ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﻋﻨﻪُ - ﻗﺎﻝَ : ﺳَﻤِﻌْﺖُ ﺭﺳﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻳﻘُﻮﻝ" : ﻣَﻦْ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣُﻨْﻜَﺮًﺍ ﻓَﻠْﻴُﻐَﻴِّﺮْﻩُ ﺑِﻴَﺪِﻩِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ  ﻓَﺒِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻘَﻠْﺒِﻪِ ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺿْﻌَﻒُ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ "
তরজমাঃ  নবীজী সাঃ বলেনঃ তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি কোনোঅন্যায় কাজ দেখে,তাহলে সে যেন তা হাত দিয়ে ,না পারলে মুখ দিয়ে এবং না পারলে সে যেন তা অন্তর দিয়ে গৃণা করে।এবং এটাই তার ঈমানের সর্বনিম্ন স্থর। (সহীহ মুসলিম শরীফ-৭৩)

অন্তর দিয়ে গৃনা করার অর্থ হচ্ছে,হালালকে হালাল জানা এবং তাকে মহব্বত করা।এবং হারামকে হারাম জানা ও গৃনা করা এবং তার থেকে দূরে থাকা। এ সম্পর্কে  চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ "আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " এ বর্ণিত রয়েছে,
ولا يسقط الإنكار بالقلب عن المكلف باليد أو اللسان أصلا، إذ هو كراهة المعصية، وهو واجب على كل مكلف، فإن عجز المكلف عن الإنكار باللسان وقدر على التعبيس والهجر والنظر شزرا لزمه، ولا يكفيه إنكار القلب، فإن خاف على نفسه أنكر بالقلب واجتنب صاحب المعصية. قال ابن مسعود رضي الله عنه: جاهدوا الكفار بأيديكم فإن لم تستطيعوا إلا أن تكفهروا في وجوههم فافعلوا
তরজমাঃহাত বা জবান দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করলে অন্তরের গৃনা রহিত হবে না,বরং অন্তর দিয়ে অবশ্যই গৃনা করতে হবে।কেননা তাহা তো গুনাহ হওয়ার ধরুণ গৃন্য।এবং গুনাহকে গৃনাহ করা প্রত্যেক জ্ঞানবান প্রাপ্তবয়স্কের উপর ওয়াজিব।কেউ যদি জবান দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করতে অক্ষম হয়,কিন্তু মনকে চিন্তিত ও ব্যথিত রাখতে এবং উক্ত কাজকে পরিত্যাগ করতে ও তার দিকে হেয়প্রতিপন্নমূলক দৃষ্টি স্থাপন করতে সক্ষম হয়,তাহলে  তার জন্য তাই করা অত্যাবশ্যকীয়। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মনের অপছন্দ যথেষ্ট হবে না।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে  যদি কেউ প্রাণনাশের আশঙ্কা করে তাহলে এমতাবস্থায় অন্তর দিয়ে গৃনা করা তার জন্য ওয়াজিব।শুধু তাই নয় বরং সাথে সাথে উক্ত কাজকে পরিত্যাগ করাও তার জন্য ওয়াজিব।ইবনে মাসউদ রাঃ বলেনঃ তোমরা কাফিরদের সাথে হাত দ্বারা যুদ্ধ করো।যদি তোমাদের চেহারায় গৃনা ও ব্যথিত হওয়ার চাপ প্রকাশ ব্যতীত আর কিছু না পারো তাহলে তোমরা তাই করো।(৬/২৫১)

অন্য একটি হাদীসে হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বিস্তারিত এভাবে বর্ণিত আছে যে,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ": ﻣﺎ ﻣﻦ ﻧﺒﻲ ﺑﻌﺜﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺃﻣﺘﻪ ﻗﺒﻠﻲ ﺇﻻ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﻣﻦ ﺃﻣﺘﻪ ﺣﻮﺍﺭﻳﻮﻥ ﻭ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﻳﺄﺧﺬﻭﻥ ﺑﺴﻨﺘﻪ ﻭ ﻳﻘﺘﺪﻭﻥ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﺛﻢ ﺃﻧﻬﺎ ﺗﺨﻠﻒ ﻣﻦ ﺑﻌﺪﻫﻢ ﺧﻠﻮﻑ ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﻣﺎﻻ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﻭ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﻣﺎﻻ ﻳﺆﻣﺮﻭﻥ ﻓﻤﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻴﺪﻩ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭ ﻣﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻠﺴﺎﻧﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭ ﻣﻦ ﺟﺎﻫﺪﻫﻢ ﺑﻘﻠﺒﻪ ﻓﻬﻮ ﻣﺆﻣﻦ ﻭﻟﻴﺲ ﻭ ﺭﺍﺀ ﺫﻟﻚ ﻣﻦ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺣﺒﺔ ﺧﺮﺩﻝ ."
তরজমাঃ নবীজী সাঃ বলেনঃ-অতীতে এমন কোনো নবী অতিবাহিত হননি যার কিছু সাহায্যকারী ও সাথী ছিলেন না,যারা সেই নবীর সুন্নাতকে আকড়ে ধরতেন এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করতেন।
অতঃপর তাদের পরবর্তী এমন কিছু লোক আসল যারা যা বলে তা তারা করে না এবং যা করে তা তারা বলে না।যে ব্যক্তি (শরীয়ত বিরোধী কাজকে প্রতিহত করতে)হাত দ্বারা চেষ্টা প্রচেষ্টা করবে,সে মু'মিন।এবং যে জবান দ্বারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সেও মু'মিন। এবং যে অন্তর দ্বারা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করবে সেও মু'মিন। কিন্তু এর পরবর্তী ঈমানের দানা পরিমানও আর কোনো স্থর নেই। (সহীহ মুসলিম-৫০) (শেষ)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১)সোশাল মিডিয়াতে লেখালেখি করে প্রতিবাদ জানানো এবং হাদিসে বর্ণিত মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করা একই না হলে প্রায় কাছাকাছি। 

(২)
জ্বী, এমনটা করা যেতে পারে। হয়তো আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। 

(৩) মন থেকে প্রতিবাদ করলেও হবে। 

(৪) লেখালেখির দ্বারা লাভ হলে লেখালেখি করে প্রতিবাদ করাই উচিৎ। 

(৫) নামায না পড়ে প্রতিবাদ জানালে প্রতিবাদ জানানোর সওয়াব সে পাবে। নামায না পড়লে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার খর্ব হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...