আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,464 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আসসালামুয়ায়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ্।

তালাকে কেনায়া সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের মনোমালিণ্য চলাবস্থায়,  আমরা দুজন ঝগড়া করা অবস্থায় আমার স্বামী কিছু কথা বলেছিলেন----

[১]
একদিন বলে ফেলেছেন--- আমারো সংসার থেকে রুচি উঠে গেছে। কিভাবে শেষ করবা কর। তোমার পরিবার নিয়ে বস, কখন বসবা, বস। ( এটা রাগে বিরক্ত হয়ে বলেছেন)
[২]
আরেকদিন বলেছেন-- তুমি হয় আজকের মধ্যে আসবা, আর নাহয় আমাকে ছাড়বা, আর না হয় আমি ছাড়ব। আজকে যদি  না আস, তাহলে আজকেই শেষ মনে কর।
(এই কথাগুলো বলেছিলেন সকাল বেলা, সেদিন রাতের বেলা আমাদের ফোনে কথা হয় ও রাগ ভেঙে যায় এবং সকালে নিতে আসবেন কথা দিয়েছেন। তবে আমি সেদিন সকালে তৈরি হতে দেরি হলে দুপুরবেলা এসেছিলাম। তবে, এই কথাগুলোও খুব রাগ নিয়ে মন থেকে বলেছে।

[৩]
আরেকদিন মেসেজে বলেছেন---"ফি আমানিল্লাহ"। তোমাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। তোমার যা মন চায় কর। ( আশা  ছেড়ে দিয়ে বলেছিলেন।)

[৪]
আরেকদিন সাধারণ ভাবে বলেছেন যে-- তুমি তোমার জন্য জামাই দেখ। (এটা শান্ত অবস্থায় এমনিতেই বলেছিলেন।)

[৫]
আরেকদিন বলেছেন যে--- এতই যদি ভালো না লাগে সংসার তাহলে বাবার বাড়ি চলে যাও না কেন, আমাকে জানানোর দরকার কি? অনুমতি তো দেয়ায় আছে। (এগুলো বিরক্ত নিয়ে বলেছেন।)

[৬]
আরেকদিন উনি আমাকে বলেছিলেন যে, তোমার যদি ইচ্ছা হয়, তুমি গিয়ে  ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমারে জানাও কেন।
এটা কয়েকদিন বলেছেন। মানে, আমার সমস্যা হলে যেন আমিই ডিভোর্স দেই, উনাকে দেয়ার কথা না বলি।  তারপর একদিন আমি আমার হাসব্যন্ডকে মুখে এটা আমি বলে ফেলেছি যে," তোমাকে আমি তালাক দিলাম, তিন তালাক।  "

[৭] উনি আরেকদিন বলেছেন যে, তোমার গার্জিয়ানদের জানাও, তাদের ডাক। এটাও রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন।
[৮] আরেক দিন বলা হয়েছে যে, তুমি তোমার গার্জিয়ান ডাক। কারে জানাইবা জানাও।
[৯]
অন্য একদিন বলেছেন--- যাও, আজকে থেকে ডিভোর্স। ( ঝগড়া করে খুব রাগ নিয়ে এটা বলেছিলেন,
[১০]
বছর পাঁচেক আগে আরো একবার বলেছিলেন, ঝগড়া করেই বলেছিলেন যে, তোমার সাথে সংসার করব না, ডিভোর্স দিব।  ঝগড়া অবস্থায় বলা হয়েছে।
এখন, এসব কথায় যে তালাক পতিত হতে পারে সেটা আমরা জানতাম না। তাই বলা হয়েছে। আর নিয়ত বলতে, রাগের সময় আমরা যা বলি সাময়িকভাবে মনের মধ্যে ঐ বিষয়টায় থাকে। যেমন, আমি আমার বোনের সাথে ঝগড়া করে যখন বলি যে, তোর সাথে আর জীবনে কোনো দিন কথা বলব না, তখন কিন্তু আমার এটাই মনে হয় যে, আর জীবনে ওর সাথে কথা বলব না। কিছু দিন পর হয়ত রাগ ভুলে যাই, আবার কথা বলি।
এখন নিয়ত বলতে এইটুকুই আমরা জানি। এসব কথায় যে তালাক হয় এটা জানার পর আমার হাসব্যন্ড বলছেন যে, উনি নাকি আমাকে ভয় দেখিয়েছেন। এটা উনি ভয়ে বলছেন। অথচ রাগের সময় সিরিয়াসলি বলতেন এসব। আমাদের এই অবস্থায় কি করা উচিত।
যদি আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গিয়ে থাকে তবে কি পুনরায় বিয়ের মাধ্যমে সংসার করতে পারব?

এখন, এই উপরিউক্ত কথাগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে বিবেচনাপূর্বক আমাদের সংসারিক হালাত শরীয়াত মোতাবেক কোন অবস্থায় আছে,  জানতে চাই।
****

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


শরীয়তের বিধান হলো ১.২ তালাকের পর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে।
তবে তিন তালাক পতিত হয়ে গেলে শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত আর স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেওয়া যায়না।

সুরা বাকারার ২২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَأْخُذُوا مِمَّا آَتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (229)

"এ তালাক দু'বার, অতঃপর স্ত্রীকে হয় বিধিসম্মতভাবে রাখবে অথবা সদয়ভাবে বিদায় দেবে। আর স্ত্রীকে দেয়া কোন কিছু ফেরৎ নেয়া তোমাদের পক্ষে উচিত নয়। তবে যদি তাদের উভয়ের আশংকা হয় যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না এবং তোমরা যদি আশংকা কর যে তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে না, তবে (সে অবস্থায়) স্ত্রী কোন কিছুর বিনিময়ে (স্বামী থেকে) নিষ্কৃতি পেতে চাইলে তাতে (স্বামী-স্ত্রীর) কারো কোনো পাপ নেই। এসব আল্লাহর সীমারেখা। কাজেই তা লংঘন কর না। যারা আল্লাহর (নির্দিষ্ট) সীমারেখা লংঘন করে তারাই অত্যাচারী।" (২:২২৯)

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠] 

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন.
https://ifatwa.info/17866/ ফতোয়াতে আমরা উল্লেখ করেছিঃ

প্রশ্নে উল্লেখিত  ০৯ নাম্বারে উল্লেখ রয়েছেঃ
যাও, আজকে থেকে ডিভোর্স।
আগের প্রশ্ন অনুসারে এ কথা তিনি মোট ২ বার বলেছেন।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ডিভোর্স বলার দ্বারা সাথে সাথে তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।
এখানে কোনো নিয়তের প্রয়োজন নেই।
এটি স্পষ্ট তালাকের বাক্য।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নিশ্চিত  দুই তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।

★★★যদি স্বামী ""আজকে থেকে ডিভোর্স"" এটি সাংসারিক পুরো জীবনে  কেবল একবারই বলে থাকে, যেমনটি এই প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে ,তাহলে এর দ্বারা এক তালাক পতিত হবে।
দুই তালাক নয়।

,
১০ নং গদে বলা হয়েছে যে তোমার সাথে সংসার করব না, ডিভোর্স দিব।  
এখানে দিবো বলেছে, যেহেতু এটি ভবিষ্যত বাচক শব্দ,তাই এতে তালাক হবেনা।   
,  
★প্রশ্নে উল্লেখিত ০২ নং এ উল্লেখ রয়েছেঃ

তুমি হয় আজকের মধ্যে আসবা, আর নাহয় আমাকে ছাড়বা, আর না হয় আমি ছাড়ব। আজকে যদি  না আস, তাহলে আজকেই শেষ মনে কর।

আপনি সেদিন যাননি,রাতে আপনাদের ঝগড়া শেষ হয়েছে,পরের দিন আপনি গিয়েছেন।

০৪ নং এ উল্লেখ রয়েছেঃ
তুমি তোমার জন্য জামাই দেখ। 

এ দুটো  কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ। 
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

আরো জানুনঃ  

তাই উক্ত দুটি বাক্য বলার সময় স্বামী যদি তালাকের নিয়ত করে থাকে,তাহলে আপনার উপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে।
আপনাদের বিবাহ পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
কোনো ভাবেই সেই স্বামীর সাথে শরয়ী হালালাহ ব্যাতিত  ঘর সংসার করা জায়েজ হবেনা।
,
এটি যেনা হবে।

তিন তালাকের বিধান সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ   
,
আর যদি উক্ত দুটি বাক্য বলার সময় তালাকের নিয়ত না করে থাকে,তাহলে শুধু দুটি তালাকই পতিত হবে।
,
এক্ষেত্রে ইদ্দত চালাকালিন সময়ে স্বামী ফিরিয়ে নিতে চাইলে এমনিতেই ফিরিয়ে নিতে পারবে।  

ফিরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুনঃ 

আর ইদ্দতকালিন সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ফিরিয়ে নিতে চাইলে নতুন করে মোহরানা ধার্য করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে। 
,
★★প্রশ্নে উল্লেখিত অন্যান্য  বাক্য (১.৩.৫.৬.৭.৮) বলার ক্ষেত্রে তালাক হবেনা।
এগুলো স্পষ্ট তালাকের শব্দও নয়,কেনায়া তালাকের শব্দও নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
Divorce এর সংজ্ঞা/Definition হলো the legal dissolution of a marriage by a court or other competent body.অর্থাৎ একটি আদালত বা অন্য উপযুক্ত সংস্থা দ্বারা একটি বিবাহের আইনি বিলুপ্তি।

তাহলে এখানে তালাক এবং Divorce এক হয় কিভাবে?তালাক যেহুতু একটি sensitive word যেখানে এটি উচ্চারণ এর সাথেই সাথেই স্ত্রী তালাক হয়ে যায় সেখানে এটার পরিবর্তে যেকোনো অন্য ওয়ার্ড কেন গ্রহণযোগ্য হবে?Divorce word টা আমাদের দেশের word নয়,সাথে সাথেই divorce word টার Definition আমি উপরে দিলাম।আর এখানি নাকি নিয়তের থাকা না থাকায় কিছু আসে যায়না,তাহলে অন্য দেশের word ইউজ করলে যার মূলত অর্থ হলো court বা উপযুক্ত সংস্থার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হওয়া বোঝায় সেইক্ষেত্রে এখানে কিভাবে তালাক পতিত হয়ে একটা সুন্দর সংসার শেষ হয়ে যাবে?এটার তো কোনো যুক্তি নেই আদৌও অর্থে। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...