আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
557 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (6 points)
আসসালামুয়ায়ালাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ্।

তালাকে কেনায়া সম্পর্কে জানতে চাই।
আমাদের মনোমালিণ্য চলাবস্থায়,  আমরা দুজন ঝগড়া করা অবস্থায় আমার স্বামী কিছু কথা বলেছিলেন----

[১]
একদিন বলে ফেলেছেন--- আমারো সংসার থেকে রুচি উঠে গেছে। কিভাবে শেষ করবা কর। তোমার পরিবার নিয়ে বস, কখন বসবা, বস। ( এটা রাগে বিরক্ত হয়ে বলেছেন)
[২]
আরেকদিন বলেছেন-- তুমি হয় আজকের মধ্যে আসবা, আর নাহয় আমাকে ছাড়বা, আর না হয় আমি ছাড়ব। আজকে যদি  না আস, তাহলে আজকেই শেষ মনে কর।
(এই কথাগুলো বলেছিলেন সকাল বেলা, সেদিন রাতের বেলা আমাদের ফোনে কথা হয় ও রাগ ভেঙে যায় এবং সকালে নিতে আসবেন কথা দিয়েছেন। তবে আমি সেদিন সকালে তৈরি হতে দেরি হলে দুপুরবেলা এসেছিলাম। তবে, এই কথাগুলোও খুব রাগ নিয়ে মন থেকে বলেছে।

[৩]
আরেকদিন মেসেজে বলেছেন---"ফি আমানিল্লাহ"। তোমাকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম। তোমার যা মন চায় কর। ( আশা  ছেড়ে দিয়ে বলেছিলেন।)

[৪]
আরেকদিন সাধারণ ভাবে বলেছেন যে-- তুমি তোমার জন্য জামাই দেখ। (এটা শান্ত অবস্থায় এমনিতেই বলেছিলেন।)

[৫]
আরেকদিন বলেছেন যে--- এতই যদি ভালো না লাগে সংসার তাহলে বাবার বাড়ি চলে যাও না কেন, আমাকে জানানোর দরকার কি? অনুমতি তো দেয়ায় আছে। (এগুলো বিরক্ত নিয়ে বলেছেন।)

[৬]
আরেকদিন উনি আমাকে বলেছিলেন যে, তোমার যদি ইচ্ছা হয়, তুমি গিয়ে  ডিভোর্স দিয়ে দাও। আমারে জানাও কেন।
এটা কয়েকদিন বলেছেন। মানে, আমার সমস্যা হলে যেন আমিই ডিভোর্স দেই, উনাকে দেয়ার কথা না বলি।  তারপর একদিন আমি আমার হাসব্যন্ডকে মুখে এটা আমি বলে ফেলেছি যে," তোমাকে আমি তালাক দিলাম, তিন তালাক।  "

[৭] উনি আরেকদিন বলেছেন যে, তোমার গার্জিয়ানদের জানাও, তাদের ডাক। এটাও রেগে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলেছিলেন।
[৮] আরেক দিন বলা হয়েছে যে, তুমি তোমার গার্জিয়ান ডাক। কারে জানাইবা জানাও।
[৯]
অন্য একদিন বলেছেন--- যাও, আজকে থেকে ডিভোর্স। ( ঝগড়া করে খুব রাগ নিয়ে এটা আলাদা থাকার উদ্দেশ্যেই বলেছিলেন, এই কথাটা বছর তিনেক আগে আরো একবার বলেছিলেন, ঝগড়া করেই বলেছিলেন।  অর্থাৎ এই কথাটা দুইবার বলা হয়েছে।)


আমরা আগে জানতাম না যে, এসব কথায় তালাক পতিত হতে পারে। আর নিয়ত বলতে প্রচন্ড রাগের সময় আমরা যেটা বলি সেটাতো তখন সাময়িকভাবে ঐ উদ্দেশ্যেই বলি। যেমন আমি আমার বোনের সাথে ঝগরা করে যখন বলি যে, তোর সাথে জীবনে আর কোনোদিন কথা বলব না। তখন কিন্তু মনের মধ্যে এটাই থাকে আমার যে, ওর সাথে আর জীবনে কখনো কথা বলব না। পরে হয়ত ভুলে যাই। এখন, নিয়ত বলতে এইটুকুই আমরা জানি। কিন্তু আমার স্বামী এখন কেনায়া তালাক সম্পর্কে জানার পর বলছেন যে, উনি নাকি ভয় দেখানোর উদ্দেশ্য বলেছন। তবে এটা উনি ভয়ে বলছেন।
এখন, এই উপরিউক্ত কথাগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে বিবেচনাপূর্বক আমাদের সংসারিক হালাত কোন অবস্থায় আছে, তা জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (559,260 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


তালাক শব্দ। এটি খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়। 

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন.
প্রশ্নে উল্লেখিত  ০৯ নাম্বারে উল্লেখ রয়েছেঃ
যাও, আজকে থেকে ডিভোর্স।
এ কথা তিনি মোট ২ বার বলা হয়েছে।

সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে ডিভোর্স বলার দ্বারা সাথে সাথে তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।
এখানে কোনো নিয়তের প্রয়োজন নেই।
এটি স্পষ্ট তালাকের বাক্য।
তাই দুই তালাক পতিত হয়ে গিয়েছে।
,  

★প্রশ্নে উল্লেখিত ০২ নং এ উল্লেখ রয়েছেঃ
তুমি হয় আজকের মধ্যে আসবা, আর নাহয় আমাকে ছাড়বা, আর না হয় আমি ছাড়ব। আজকে যদি  না আস, তাহলে আজকেই শেষ মনে কর।

আপনি সেদিন যাননি,রাতে আপনাদের ঝগড়া শেষ হয়েছে,পরের দিন আপনি গিয়েছেন।

০৪ নং এ উল্লেখ রয়েছেঃ
তুমি তোমার জন্য জামাই দেখ। 

এ দুটো  কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ। 
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★★শরিয়তের পরিভাষায় কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

আরো জানুনঃ  

তাই উক্ত দুটি বাক্য বলার সময় স্বামী যদি তালাকের নিয়ত করে থাকে,তাহলে আপনার উপর তিন তালাক পতিত হয়ে যাবে।
আপনাদের বিবাহ পুরোপুরি বিচ্ছেদ হয়ে যাবে।
কোনো ভাবেই সেই স্বামীর সাথে ঘর সংসার করা জায়েজ হবেনা।
,
এটি যেনা হবে।

তিন তালাকের বিধান সংক্রান্ত বিস্তারিত জানুনঃ   
,
আর যদি উক্ত দুটি বাক্য বলার সময় তালাকের নিয়ত না করে থাকে,তাহলে শুধু দুটি তালাকই পতিত হবে।
,
এক্ষেত্রে ইদ্দত চালাকালিন সময়ে স্বামী ফিরিয়ে নিতে চাইলে এমনিতেই ফিরিয়ে নিতে পারবে।  

ফিরিয়ে নেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানুনঃ 

আর ইদ্দতকালিন সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর ফিরিয়ে নিতে চাইলে নতুন করে মোহরানা ধার্য করে বিবাহ পড়িয়ে নিতে হবে। 
,
বাকি প্রশ্নে উল্লেখিত অন্যান্য  বাক্য বলার ক্ষেত্রে তালাক হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...