এক দেশে চাঁদ দেখে রোজা রাখার পর কেউ যদি অন্য কোনো দেশে চলে যায়, তাহলে সে ওই দেশের সংখ্যা ও নিয়ম মেনে বাকি রোজা পালন করবে এবং ওই দেশের সময় ও জনসাধারণের সঙ্গে ঈদ পালন করবে। আর এই স্থান পাল্টানোর কারণে মাঝখান থেকে যে কয়টি রোজা তার কম হবে,সেগুলোকে রমজান মাসের পর কোনো সুবিধাজনক সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে।
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্বামী যেই দেশে গিয়েছে,সেই দেশের হিসেবেই রোযা,ঈদ পালন করবে।
,
পরবর্তীতে ঐ একটি রোযার কাজা আদায় করে নিবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ عُثْمَانَ بْنِ مُحَمَّدٍ الأَخْنَسِيِّ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الصَّوْمُ يَوْمَ تَصُومُونَ وَالْفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যেদিন তোমরা সবাই রোযা পালন কর সে দিন হল রোযা। যেদিন তোমরা সবাই রোযা ভঙ্গ কর সে দিন হল ঈদুল ফিতর। আর যেদিন তোমরা সবাই কুরবানী কর সে দিন হল ঈদুল আযহা। — সহীহ,তিরমিজি ৬৯৭. ইবনু মা-জাহ (১৬৬০)
কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের নিয়ম ও সময় অনুযায়ী চাঁদ দেখে রোজা রাখা শুরু করলেন। ১০টি রোজা রাখার পর কোনো কারণে অন্য দেশে যেতে হলো তাকে। সেখানে গিয়ে দেখলেন, ১২তম রোজা চলছে। তখন তিনি ওই দেশের নিয়ম ও সময় মেনে বাকি রোজা রাখবেন এবং সেখানে থাকলে ঈদ উদযাপন করবেন। এবং যে রোজা তার মাঝখান থেকে কম হলো,রোজার পর সুবিধাজনক কোনো এক সময়ে সেটার কাজা আদায় করে নেবেন।
সে-ক্ষেত্রে যদি সে ২৭ বা ২৮ রোজা পূর্ণ করার পরই তার (সফর করে আসা) দেশে ঈদের চাঁদ ওঠে যায়, তাহলে সে পরবর্তী সময়ে একটি বা দুটি রোজা রেখে ৩০টি পূর্ণ করবে। তবে ওই জায়গায় যদি ২৯ রোজার পরই ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে তাহলে ২৯টি পুরো করলেই চলবে।
আর যে ব্যক্তির রোজা ৩০টি পুরো হয়ে যাওয়ার পরও ওই দেশের মুসলিমদের রমজান মাস পূর্ণ না হয়, তবে সে ওই দেশের লোকজনের সঙ্গে রমজান শেষ হওয়া পর্যন্ত রোজা রেখে যাবে। যাতে রমজানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ণ না হয়। অতপর সকলের সঙ্গে একত্রে ঈদ করবে।
ফাতওয়ায়ে রহমানিয়া ৫/১৮০-৮১
শাইখ বিন বায রাহিমাহুল্লাহ কে প্রশ্ন করা হয়েছিল:
আমি পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী। আমাদের দেশে হিজরি মাস সৌদি আরবের একদিন পর শুরু হয়। রমজান মাসে আমি দেশে যাব। আমি যদি সৌদি আরবে সিয়াম পালন শুরু করি এবং আমার দেশে গিয়ে শেষ করি, তাহলে আমার ৩১ দিন রোজা পালন করা হবে। এভাবে আমার সিয়াম পালনের হুকুম কি? আমি কতটি রোজা রাখব?
তিনি উত্তরে বলেন-
“আপনি যদি সৌদি আরব বা অন্য কোন দেশে সিয়াম পালন শুরু করেন এবং নিজের দেশে গিয়ে বাকিটা পালন করেন তাহলে আপনার দেশের লোকদের সাথে সিয়াম ভঙ্গ করবেন তথা ঈদ উদযাপন করবেন; যদিও বা তা ৩০ দিনের বেশি হয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
(الصوم يوم تصومون،والفطريوم تفطرون)
“রোজা হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) রোজা পালন কর, আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন যেদিন তোমরা (সকলে) ইফতার (রোজা ভঙ্গ) কর।”কিন্তু আপনি যদি তা করতে গিয়ে ২৯ দিনের কম রোজা পালন করেন, তাহলে আপনাকে পরবর্তীতে১টি রোজা কাযা আদায় করে নিতে হবে। কারণ রমজান মাস২৯দিনের কম হতে পারেনা।” [মাজমূফাতাওয়াশ-শাইখইবনে বায (১৫/১৫৫)]
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ এর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল:
যদি কোন ব্যক্তি এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে যে দেশের মুসলমানেরা প্রথম দেশের একদিন পরে রমজান শুরু করেছে সে ব্যক্তি সেদেশের লোকদের সাথে রোজা রাখতে গিয়ে তার ৩০টির বেশি রোজা হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে হুকুম কী?অনুরূপভাবে এ অবস্থারবিপরীতঅবস্থারহুকুম কী?
তিনি উত্তরে বলেন :
“যদি কেউ এক মুসলিম দেশ থেকে অন্য মুসলিম দেশে ভ্রমণ করে এবং সেই দেশে রমজান পরে শুরু হয়, তবে তিনি ঐ দেশের লোকেরা সিয়াম না-ছাড়া পর্যন্ত সিয়াম পালন করে যাবেন। কারণ রোজা হল সেদিন,যেদিন লোকেরা সিয়াম পালন করে;আর ঈদুল ফিতর হল সেদিন, যেদিন লোকেরা রোজা ছেড়ে দেয়। আর ঈদুল আযহা হল সেদিন, যেদিন লোকেরা পশু যবেহ করে। তাকে এভাবে রোজা পালন করতে হবে; যদিও বা এজন্য তাকে একদিন বা এর বেশিদিন সিয়াম পালন করতে হয়।
এটি সেই মাসয়ালার অনুরূপ যখন কোন ব্যক্তি এমন কোন দেশে ভ্রমণ করে যেখানে সূর্যাস্ত দেরীতে হয়, তবে সে ব্যক্তি কে সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত রোজা পালন করতে হবে।যদিওবা এর ফলে রোজা পালন স্বাভাবিক দিনের চেয়ে দুই,তিন বা ততোধিক ঘণ্টা বিলম্বিত হয়। এছাড়া এ কারণেও তাকে বেশিদিন রোজা থাকতে হবে যেহেতু সেদ্বিতীয় যে দেশে ভ্রমণ করেছে সেখানে(শাওয়াল মাসের) নতুনচাঁদদেখাযায়নি।
,অথচনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে চাঁদ দেখেরোজারাখতে ও চাঁদ দেখে রোজা ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছেন।তিনিবলেছেন:
(صوموالرؤيته،وأفطروالرؤيته)
“তোমরা তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজাধর এবং তা (নতুন চাঁদ) দেখে রোজা ছাড়।”
আর বিপরীত অবস্থা হচ্ছে-কোন ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য এক দেশে ভ্রমণ করে যেখানে রমজান মাস প্রথম দেশের তুলনায় আগে শুরু হয়েছে, তবে তিনি তাদের সাথেই রোজাপালন ছেড়ে দিবেন এবং যে কয়দিনের রোজা বাদ পড়েছে সে রোজাগুলো পরে কাযা আদায় করে নিবেন। যদি একদিন বাদ পড়ে তবে একদিনের রোজাকাযা করবেন। যদি দুই দিনের বাদ পড়ে তবে দুই দিনের কাযা করবেন। তিনি ২৮ দিন পর রোজাছাড়লে দুই দিনের রোজা কাযা আদায় করবেন। যদি উভয় দেশে মাস ৩০দিনে শেষ হয়, আর এক দিনের কাযা করবেন যদি উভয় দেশে বা যে কোন এক দেশে ২৯ দিনে মাস শেষ হয়।”[মাজমূ‘ ফাতাওয়া আশ-শাইখইবনেউছাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৪)] তাঁর কাছে আরও জানতে চাওয়া হয়েছিল -
কেউ হয়ত বলবে যে, কেন আপনি বলছেন যে প্রথম ক্ষেত্রে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করতে হবে এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোযার কাযা পালন করতে হবে?
তিনি উত্তরে বলেন-
“দ্বিতীয় ক্ষেত্রে রোযার কাযা রোজা পালন করতে হবে কারণ মাস ২৯ দিনের কম হতে পারে না। আর প্রথম ক্ষেত্রে সে ৩০ দিনের বেশি রোজা পালন করবে কারণ তখনও নতুন চাঁদ দেখা যায়নি। প্রথম ক্ষেত্রে আমরা তাকে বলব রোজাছেড়ে দাও যদিও তোমার ২৯ দিন পূর্ণ হয়নি। কারণ নতুন চাঁদ দেখা গিয়েছে। নতুন চাঁদ দেখা যাওয়ার পর রোজাছেড়ে দেয়া বাধ্যতামূলক। শাওয়াল মাসের প্রথম দিন রোজা পালন করা হারাম। আর কেউ যদি ২৯ দিনের কম রোজা পালন করে থাকে তাহলে তাকে ২৯ দিন পূরণ করতে হবে। এটি দ্বিতীয় অবস্থা হতে ভিন্ন। কারণ যে দেশে আসা হয়েছে সেখানে তখন রমজান চলছে; নতুন চাঁদ দেখা যায় নি। যেখানে এখনও রমজান চলছে সেখানে কিভাবে রোজা ভঙ্গ করা যেতে পারে?তাই আপনাকে রোজা পালন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি তাতে মাস বেড়ে যায়, তাহলে তা দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার মত।”[মাজমূ ‘ফাতাওয়া আশ-শাইখ ইবনেউছাইমীন (১৯/ প্রশ্ন নং ২৫)]