আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
381 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (62 points)
edited by
অল্পসময়ের জন্য ইতিকাফে বসতে চাচ্ছি যেহেতু আমার পরিবারে আমিই একমাত্র রান্নাঘরের দায়িত্বে আছি।
১. আমি কি নিয়ত করে রাত দশটার পর থেকে রাত দুটো পর্যন্ত ইতিকাফে বসতে পারবো? অথবা ফজর থেকে নিয়ে ১টা পর্যন্ত? মানত করে করতে পারবো? নাকি মানত করে করার জন্যবউরো একদিন ইতিকাফ করা লাগবে?

২. ঐ অবস্থায় কেউ যদি কথা বলতে আসে আমি কি তার সাথে কথা বলতে পারবো নাকি বলে দিবো যে আমি কিছুসময়ের জন্য ইতিকাফে আছি? কোনো একটা কাজ করে দেওয়ার জন্য কারো সাথে কথা বলা যাবে?

৩. যে জায়গায় ইতিকাফ করবো সে জায়গায় যদি স্বামী অবস্থান করে তাহলে কি ইতিকাফ হবে? স্বামীর সাথে যদি প্রয়োজনের বাইরে অভ্যাসবশত হাসিঠাট্টা বা কথাবার্তা হয়ে যায় ইতিকাফ কি ফাসিদ হয়ে যাবে?

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
যদি একদিনের মান্নতের ইতেকাফ হয়,তাহলে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ করা জরুরি। 

মান্নতের ইতেকাফ ওয়াজিব। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা যেন তাদের মানৎ পূর্ণ করে। ’ -সূরা হজ: ২৯

সুতরাং মান্নতের একদিনের ইতেকাফ হলে একদিনের জন্য  ইতিকাফে  বসলে যতক্ষন ইতেকাফের মান্নত করেছে,ততটুকু সময় থাকতেও হবে।
,
★মান্নতের ইতেকাফ মানে কেহ বললো যদি আমার অমুক কাজ হয়,তাহলে একদিন ইতেকাফ করিবো।

সেক্ষেত্রে কোনো সময় নির্দিষ্ট ভাবে না বললে পূর্ণ ২৪ ঘন্টা ইতেকাফ দিনের বেলা রোযা রেখে ইতেকাফ করতে হবে।
 
যে সময় সে  ইতিকাফের স্থানে  প্রবেশ  করবে,  পরবর্তী  দিন সে সময় ইতিকাফ  শেষ  হবে।

 قال عليش في (منح الجليل شرح مختصر خليل): فمن نذر اعتكافاً ودخل فيه، ولم يعين قدره لزمه أقل ما يتحقق به، وهو يوم وليلة على المعتمد، ويوم فقط على مقابله. ا.هـ
সারমর্মঃ
কেহ যদি ইতেকাফের মান্নত করে,কোনো কোনো সময় নির্দিষ্ট না করে,তাহলে এক দিন এক রাত ইতেকাফ করতে হবে  

আর যদি মান্নতের ইতেকাফ না হয়,এমনিতেই নফল ইতেকাফ হয়,তাহলে এক্ষেত্রে শুরু ও শেষের ক্ষেত্রে  কোনো আবশ্যকীয় নিয়ম নেই।
,
এক মুহুর্তের জন্যেও ইতেকাফ করতে পারে।

অধিকাংশ আলেমের মতে ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময় এক মুহূর্তের জন্যও হতে পারে। এটি ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমাদের মাযহাব।দেখুন:আদ্দুরুলমুখতার(১/৪৪৫), আলমাজমু (৬/৪৮৯), আলইনস্বাফ (৭/৫৬৬)।

ইমাম নববী আলমাজমূ (৬/৫১৪) গ্রন্থে বলেছেন:
“আর ইতিকাফের সর্বনিম্ন সময় সম্পর্কে অধিকাংশ আলেম দৃঢ়তার সাথে যে মত ব্যক্ত করেছেন সেটাই সঠিক মত। তা হচ্ছে-ইতিকাফের জন্য মসজিদে অবস্থান করা শর্ত।সেটা বেশি সময়ের জন্য হতে পারে, কম সময়ের জন্যেও হতে পারে। এমনকি সামান্য সময় বা এক মুহূর্তের জন্যেও হতে পারে।”

ইতিকাফ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-অবস্থান করা।এটি দীর্ঘ সময়ের জন্যেও হতে পারে, অল্প সময়ের জন্যেও হতে পারে। 

শরিয়তের এমন কোন দলীল পাওয়া যায়না যা নির্দিষ্ট কোন সময় সীমার মধ্যে ইতিকাফকে সীমাবদ্ধ করে দিবে।

ইবনে হাযম বলেছেন:
“আরবী ভাষায় ইতিকাফ শব্দের অর্থ-অবস্থান করা। তাই আল্লাহর মসজিদে তাঁর নৈকট্য লাভের আশায় যে কোন অবস্থানই হল ইতিকাফ। সেটা কম সময়ের জন্যে হোক অথবা বেশি সময়ের জন্যে হোক। যেহেতু কুরআন ও সুন্নাহ নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা বা সময় নির্ধারণ করেনি”সমাপ্ত। [আল-মুহাল্লা (৫/১৭৯)]

ইবনে আবু শাইবাহ ইয়ালা ইবনে উমাইয়্যা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেছেন:“আমি মসজিদে অল্প কিছু সময় অবস্থান করলেও সেটা আমি ইতিকাফের নিয়্যতে অবস্থান করি।”ইবনে হাযম‘আল-মুহাল্লা’ গ্রন্থে (৫/১৭৯) এই রেওয়ায়েতদিয়েদলীল পেশ করেছেন এবং হাফেজ ইবনে হাজার ‘ফাতহুল বারী’গ্রন্থে তা উদ্ধৃতকরেছেন; কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি। রেওয়ায়েতটিতে الساعة (ঘন্টা) দ্বারা বর্তমান পরিভাষায় যা বুঝি ৬০ মিনিট সেটা উদ্দেশ্য নয়। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে- কিছু সময়।

কিছু কিছু আলেমের মতে ইতিকাফেরসর্বনিম্ন সময় একদিন। ইমাম আবু হানিফা থেকে ও মালেকি মাযহাবের কোন কোন আলেম থেকে এ ধরনের একটি বর্ণনা পাওয়া যায়।

শাইখ ইবনে বায ‘মাজমুউল ফাতাওয়া’গ্রন্থে (১৫/৪৪১) বলেছেন:“ইতিকাফ হলো আল্লাহতাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করা, সময় কম হোক অথবা বেশি হোক। কারণ আমার জানা মতে এমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না যা একদিন, দুইদিন বা এর চেয়ে বেশী দিনের জন্য ইতিকাফ করাকে নির্দিষ্ট করবে। ইতিকাফশরিয়তসম্মত ইবাদত।তবে কেউ যদি মান্নত করে তখন মান্নতের কারণে তার উপর ইতিকাফ করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। ইতিকাফের বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।”
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে নফল ইতেকাফের ক্ষেত্রে আপনি  নিয়ত করে রাত দশটার পর থেকে রাত দুই টা পর্যন্ত ইতিকাফে বসতে পারবেন।
অথবা ফজর থেকে নিয়ে ১টা পর্যন্ত ইতেকাফ করতে পারবেন।
,
আর যদি মান্নতের ইতেকাফ হয়,তাহলে মান্নত করার সময় আপনি কোনো সময় নির্দিষ্ট ভাবে না বললে পূর্ণ ২৪ ঘন্টা ইতেকাফ দিনের বেলা রোযা রেখে ইতেকাফ করতে হবে।

(০২)
হ্যাঁ ইতেকাফের স্থানে থেকে কথা বলতে পারবেন।
তবে প্রয়োজন অতিরিক্ত  কথা না বলাই উচিত।    

(০৩)
যে জায়গায় ইতিকাফ করবেন, সে জায়গায় যদি স্বামী অবস্থান করে তাহলেও ইতিকাফ হবে।

স্বামীর সাথে যদি প্রয়োজনের বাইরে অভ্যাসবশত হাসিঠাট্টা বা কথাবার্তা হয়ে যায় ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবেনা।
তবে তাকে স্পর্শ করা যাবেনা।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا وَهْبُ بْنُ بَقِيَّةَ، أَخْبَرَنَا خَالِدٌ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، - يَعْنِي ابْنَ إِسْحَاقَ - عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتِ السُّنَّةُ عَلَى الْمُعْتَكِفِ أَنْ لاَ يَعُودَ مَرِيضًا وَلاَ يَشْهَدَ جَنَازَةً وَلاَ يَمَسَّ امْرَأَةً وَلاَ يُبَاشِرَهَا وَلاَ يَخْرُجَ لِحَاجَةٍ إِلاَّ لِمَا لاَ بُدَّ مِنْهُ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ بِصَوْمٍ وَلاَ اعْتِكَافَ إِلاَّ فِي مَسْجِدٍ جَامِعٍ


ওয়াহব  ইবন  বাকীয়্যা ......... আয়েশা  (রাঃ)  হতে  বর্ণিত।  তিনি বলেন,  ই‘তিকাফের  জন্য  সুন্নাত  এই  যে,  সে  যেন  কোন  রোগীর  পরিচর্যার  জন্য  গমন  না  করে,  জানাযার  নামাযে  শরীক  না  হয়,  স্ত্রীকে  স্পর্শ  না  করে  এবং  তার  সাথে  সহবাস  না  করে।  আর  সে  যেন  বিশেষ  প্রয়োজন  ব্যতীত  মসজিদ  হতে  বের  না  হয়।  রোযা  ব্যতীত  ই‘তিকাফ  নেই  এবং  জামে  মসজিদ  ব্যতীত  ই‘তিকাফ  শুদ্ধ  নয়।
(আবু দাউদ ২৪৬৫)

আরো জানুনঃ 

★আর এসব প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত কথা ইতেকাফ রত অবস্থায় বলা উচিত নয়।   
এসময় বেশি বেশি আমল করা উচিত।  


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...