ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)হানাফি মাযহাব মতে জুমূআহ এর নামাযের পূর্বে চার রাকাত নামায পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
এ সম্পর্কে দলীল হল;
হযরত ইবনে মাসউদ রাযি থেকে বর্ণিত আছে যে,
وروي عن عبد الله بن مسعود: أنه كان يصلي قبل الجمعة أربعا، وبعدها أربعا.
ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ ( 523 )
তিনি জুমুআহ এর পূর্বে ও পরে চার রাকাত নামায পড়তেন। (জামে তিরমিযি-৫২৩নং হাদীসের আলোচনায় বর্ণিত)
প্রকাশ থাকে যে,
ইবনে মাসউদ রাযি এর উক্ত আ'মল নবীজী সা এর কাছ থেকে জেনেই করেছেন,কেননা গায়রে মা'ক্বুল(আ'কল গবেষনার উর্ধে কোনো) বিষয়ে কোনো সাহাবীর আ'মল হাদীসের মারফুর হুকমে হয়।তাই বুঝা গেল,হযরত ইবনে মাসউদ রাযি নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে এ বিষয়টা জেনেই করেছেন।এটা রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আ'মল।ইবনে মাসউদ রাযি এর গবেষণা নয় যাতে ভূল ভ্রান্তির সমূহ সম্ভাবনা থাকতে পারে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল আল মুযানি রাযি থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেনঃ
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﻐﻔﻞ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ( ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺃﺫﺍﻧﻴﻦ ﺻﻼﺓ، ﻗﺎﻟﻬﺎ ﺛﻼﺛﺎً، ﻭﻗﺎﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﻟﻤﻦ ﺷﺎﺀ )
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺻﺤﻴﺢ ﻣﺴﻠﻢ » ﻛﺘﺎﺏ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻤﺴﺎﻓﺮﻳﻦ ﻭﻗﺼﺮﻫﺎ » ﺑﺎﺏ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺃﺫﺍﻧﻴﻦ ﺻﻼﺓ
ﺍﻟﻜﺘﺐ » ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ » ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻷﺫﺍﻥ » ﺑﺎﺏ ﺑﻴﻦ ﻛﻞ ﺃﺫﺍﻧﻴﻦ ﺻﻼﺓ ﻟﻤﻦ ﺷﺎﺀ
প্রত্যেক দুই আযান তথা আযান ও ঈকামাতের মধ্যকার নামায রয়েছে।তিনি এ কথা তিনবার বললেন।তৃতীয়বার বললেনঃ যার ইচ্ছা সে পড়বে। (সহীহ বুখারী-৬০১ )
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি থেকে বর্ণিত,
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎً : ( ﻣﺎ ﻣﻦ ﺻﻼﺓ ﻣﻔﺮﻭﺿﺔ ﺇﻻ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ )
নবীজী সাঃ বলেনঃ এমন কোনো ফরয নামায নেই যার সামনে বা প্রথমে দু-রাকাত (সুন্নাত/নফল)নামায নেই। (সহীহ ইবনে হিব্বান-২৪৮৮)
এই হাদীস এবং তার উপরের হাদীস ব্যাপকতার ধরুণ জুমুআহ এর নামাযকেও শামিল রাখবে।
ইবনে হাজার রাহ বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﻭﺃﻗﻮﻯ ﻣﺎ ﻳﺘﻤﺴﻚ ﺑﻪ ﻣﻦ ﻣﺸﺮﻭﻋﻴﺔ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﻋﻤﻮﻡ ﻣﺎ ﺻﺤﺤﻪ ﺍﺑﻦ ﺣﺒﺎﻥ ﻣﻦ ﺣﺪﻳﺚ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺍﻟﺰﺑﻴﺮ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎً : ( ﻣﺎ ﻣﻦ ﺻﻼﺓ ﻣﻔﺮﻭﺿﺔ ﺇﻻ ﺑﻴﻦ ﻳﺪﻳﻬﺎ ﺭﻛﻌﺘﺎﻥ ) ﻓﺘﺢ ﺍﻟﺒﺎﺭﻱ ( 3 351/ )
জুম্মার নামাযের পূর্বে দু-রাকাত সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামায বিষয়ে সবচেয়ে মযবুত দলীল হচ্ছে,ইবনে হিব্বান রাহ কর্তৃক বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাযি এর নিম্নোক্ত হাদীস। "এমন কোনো ফরয নামায নেই যার প্রথমে দু-রাকাত (সুন্নাত/নফল)নামায নেই। (ফতহুল বারী-৩/৩৫১--৬০১নং হাদীসের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
হযরত ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺮﻛﻊ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ﺃﺭﺑﻌﺎً ﻻ ﻳﻔﺼﻞ ﻓﻲ ﺷﻲﺀ ﻣﻨﻬﻤﺎ
নবীজী সাঃ জুম্মার নামাযের পূর্বে চার রাকাত নামায পড়তেন।এবং এই চার রাকাতে সালাম দ্বারা কোনো পৃথকতা করতেন না। (ইবনে মাজা-১১২৯)
এই হাদীসকে মুহাদ্দিসগণ দুর্বল বললেও এ বিষয়ে অনেক সহীহ সাক্ষ্য দেয়ায় তার দুর্বলতা রহিত হয়ে গেছে।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/4666
(২)আল্লামা ইবনে নুজাইম রাহ,লিখেন,
اﻟْﻘَﺎﻋِﺪَﺓُ اﻟﺜَّﺎﻟِﺜَﺔُ: اﻟْﻴَﻘِﻴﻦُ ﻻَ ﻳَﺰُﻭﻝُ ﺑِﺎﻟﺸَّﻚِّ
ﻭَﺩَﻟِﻴﻠُﻬَﺎ ﻣَﺎ ﺭَﻭَاﻩُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭَﺿِﻲَ اﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻣَﺮْﻓُﻮﻋًﺎ {ﺇﺫَا ﻭَﺟَﺪَ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓِﻲ ﺑَﻄْﻨِﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻓَﺄَﺷْﻜَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺃَﺧَﺮَﺝَ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْءٌ ﺃَﻡْ ﻻَ ﻓَﻼَ ﻳَﺨْﺮُﺟَﻦَّ ﻣِﻦْ اﻟْﻤَﺴْﺠِﺪِ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﺴْﻤَﻊَ ﺻَﻮْﺗًﺎ، ﺃَﻭْ ﻳَﺠِﺪَ ﺭِﻳﺤًﺎ}
ভাবার্থঃতৃতীয় উসূল,ঈয়াক্বিন(দৃঢ় বিশ্বাস)সন্দের দ্বারা খতম হয় না।[তথা কারো কোনো বিষয় সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস থাকলে, সে বিষয় সম্পর্কে বিপরিত কোনো সন্দেহের উদ্রেক হলে পূর্ব বিশ্বাসের কোনো ক্ষতি হবে না।অর্থাৎ নতুন করে জন্ম নেয়া সন্দেহ অগ্রহণযোগ্য ]
মুসলিম শরীফের সনদে বর্ণিত হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত হাদীস তার উজ্জল দৃষ্টান্ত। হাদীসটি এই,রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যদি কারো তার পায়ুপথে কিছু বের হওয়ার সন্দেহ হয়।এবং উক্ত বের হওয়া না হওয়া নিয়ে সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়।তাহলে সে যেন মসজিদ থেকে (অজু করার নিমিত্তে) বের না হয়,যতক্ষণ না সে বায়ুর আওয়াজ শুনছে বা এর দুর্গন্ধ তার নাকে আসছে।(আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর;১/৪৭)............এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/293
অনিচ্ছায় মুখ ভরে বমি হলে রোযা ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত বমি করলে মুখ ভরে হলে ভেঙ্গে যাবে। মুখ ভরে না হলে ভাঙ্গবে না। ইচ্ছেকৃত হল মুখে আঙ্গুল দিয়ে এভাবে কোন পদ্ধতিতে ইচ্ছেকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অনিচ্ছায় হলে বা ইচ্ছেকৃতি মুখ ভরে না হলে রোযা ভাঙ্গবে না। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/16100
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আপনার রোযা ভঙ্গ হবে না।
(৪)ফজরের সুন্নাত ক্বাযা করা সম্পর্কে রদ্দুল মুহতার কিতাবে বর্ণিত আছে,
وَمَا إذَا فَاتَتْ وَحْدَهَا فَلَا تُقْضَى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ بِالْإِجْمَاعِ،
যদি শুধুমাত্র ফজরের সুন্নাত ক্বাযা হয়ে যায়,তাহলে উলামায়ে কেরামদের ঐক্যমতে সূর্যোদয়ের পূর্বে পড়া যাবে না।সূর্যদয়ের পর ক্বাযা পড়া যাবে।জরুরী কি?
এ সম্পর্কে মতাবিরোধ পরিলক্ষিত হচ্ছে
শায়খাইন রাহ মতে পড়া জরুরী নয়,বরং নফল হিসেবে পরিগণিত হবে।ইমাম মুহাম্মদ রাহ মতে পড়া উত্তম এবং সুন্নাতও। ( রদ্দুল মুহতার-2/57)