জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
""মাইয়্যিতের বুকের উপর আয়না রাখলে আযাব মাফ হয়,বা কম হয়""
এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা। কুরআন ও হাদিসে এসব কিছু নেই।
সুতরাং তা ভিত্তিহীন ও শরিয়ত বর্হিভূত কথা-তাতে কোন সন্দেহ নাই।
প্রকৃতপক্ষে এগুলো সুস্পষ্ট কুসংস্কার ও ভিত্তিহীন ভ্রান্ত বিশ্বাস যেগুলোর সাথে ইসলামের কোনও সম্পর্ক নাই। ইসলামের সঠিক জ্ঞানের অভাবে এ বিষয়গুলো সম্ভবত: হিন্দুদের থেকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে।
কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, এসব জিনিস আযাব থেকে রক্ষা করবে তাহলে তা বড় শিরক বলে গণ্য হবে।
,
কারণ এসব জড়পদার্থ মানুষকে ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। বরং সকল আযাব, বালা-মুসিবত, ক্ষয়-ক্ষতি এবং মাখলুকের অনিষ্ট থেকে উদ্ধারকারী একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّـهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ
“আর আল্লাহ যদি তোমার উপর কোন কষ্ট আরোপ করেন তাহলে কেউ নেই তা খণ্ডাবার মত কেই নাই তিনি ছাড়া।” (সূরা ইউনুস: ১০৭)
সুতরাং কেউ যদি এসব জড়বস্তুকে অনিষ্ট থেকে রক্ষাকারী মনে করে তাহলে সে প্রকারন্তরে এগুলোকে আল্লাহর স্থানে বসালো যা সুস্পষ্ট শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
আর এ কথা বলা বাহুল্য যে, শিরক হল, সবচেয়ে ভয়াবহ গুনাহ যা মানুষকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়। তার জন্য জান্নাত হারাম এবং সে চিরকালের জন্য জাহান্নামি। (আল্লাহ হেফাজত করুন। আমিন)
পক্ষান্তরে যদি কেউ বিশ্বাস করে যে, এসব জিনিস বিভিন্ন অনিষ্ট ও ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার ওসিলা (মাধ্যম) মাত্র তাহলে তা শিরক না হলেও ভ্রান্ত ও হারাম বিশ্বাস-তাতে কোনও সন্দেহ নাই। (এটাই অধিকাংশ মানুষের বিশ্বাস)।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا طِيَرَةَ وَخَيْرُهَا الْفَأْلُ» قَالُوا: وَمَا الْفَأْلُ؟ قَالَ: «الْكَلِمَةُ الصَّالِحَة يسْمعهَا أحدكُم»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কিছুকে অশুভ গণ্য করো না। অবশ্য কিছু শুভ লক্ষণ গ্রহণ করা উত্তম। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ শুভ লক্ষণ কী? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারো পক্ষ কোন ভালো কথা, যা সে শুনতে পায়।
(বুখারী ৫৭৫৪, ৫৭৫৫; মুসলিম (২২২৩)-১১০, আহমাদ ৭৬১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১২৪, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৭০৩, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ১৯৫০৩, বায়হাক্বী’র কুবরা ১৬৯৬০, শু‘আবুল ঈমান ১১৬৮, আল জামি‘উস্ সগীর ১৩৪৮৩, তিরমিযী ১৬১৫, সহীহুল জামি‘ ৭৫২৬, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ২৫৭৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৩৭।)
জাহিলী যুগের লোকেরা কোন সফরে বা প্রয়োজনে বের হওয়ার পূর্বে পাখি উড়াত। পাখি যদি উড়ে ডান দিক দিয়ে যেত তবে তারা এটাকে বারাকাত মনে করত। তখন তারা তাদের সফরে বা প্রয়োজনে বের হত। আর পাখি যদি উড়ে বাম দিকে যেত সেটাকে তারা অশুভ লক্ষণ মনে করত এবং তাদের সফর বা প্রয়োজন থেকে না বের হয়ে ফিরে আসত। আর এ কাজ তাদেরকে কল্যাণ থেকে অনেক সময় ধরে বিরত রাখত। এ কারণে শারী‘আত এটা নিষেধ করেছে এবং তা বাতিল বলে ঘোষণা করেছে। আর সংবাদ দিয়েছে যে, উপকার বা অপকার করার মতো কোন ক্ষমতাই তার নেই। আর এটাই হলো রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী (لَا طِيَرَةَ)-এর অর্থ। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২২৩)