আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
693 views
in সালাত(Prayer) by
আসসালামু আলাইকুম

প্রায় সময় আমার ফজর নামাজ সঠিক সময়ে আদায় হয়না।

কখনো সকাল ৯/১০ টায় আবার কখনো জহুর নামাজ এর সাথে আদায় করে ফেলি।

এতে করে কি আমার নামাজ আদায় হচ্ছে?

উত্তর দিলে উপকৃত হব।

1 Answer

0 votes
by (709,720 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

নামাজকে তার সঠিক সময়ে আদায় করতে হবে, এবং সঠিক সময়ে আদায় করাই প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।যেমন আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ
 ﺇﻥ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻛﺎﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻛﺘﺎﺑﺎ ﻣﻮﻗﻮﺗﺎ
নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের উপর ফরজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। (সূরা নিসা-১০৩)

বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি রাহ, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ
إنَّ الصَّلَاة كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا}
مَكْتُوبًا أَيْ مَفْرُوضًا {مَوْقُوتًا}
أَيْ مُقَدَّرًا وَقْتهَا فَلَا تُؤَخَّر عَنْهُ
অর্থ্যাৎ-নামাজ নির্দিষ্ট সময়ের সাথেই ফরজ, সেই সময় থেকে নামাজকে কখনো পিছানো যাবেনা।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে প্রতিটা নামাজের নির্দিষ্ট ওয়াক্ত বা সময় রয়েছে।ফজরের নামাজের ওয়াকাত হচ্ছে  সুবহে সাদিক থেকে নিয়ে সুর্যদয় পর্যন্ত। তাই শরয়ী ওজর ব্যতীত এই সময়ের পুর্বে বা পরে নামাজ পড়া যাবে না।

নবী কারীম সাঃ বলেনঃ
ﻭﻗﺖ ﺍﻟﻔﺠﺮ ﻣﺎ ﻟﻢ ﺗﻄﻠﻊ ﺍﻟﺸﻤﺲ " ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ
অর্থ- ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে সুর্যদয়ের পুর্ব পর্যন্ত (সুবহে সাদিকের পর থেকে)

নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের তাগিদ দিতে গিয়ে নবী কারীম সাঃ আরও বলেনঃ
ﻣﻦ ﺃﺩﺭﻙ ﺭﻛﻌﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﺒﺢ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻄﻠﻊ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻓﻘﺪ ﺃﺩﺭﻙ ﺍﻟﺼﺒﺢ " ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ .
অর্থ- যে ব্যক্তি সুর্যদয়ের পুর্বে এক রাকাত নামাজ পরিমান সময় পেল(এবং নামাজে দাড়াল,সে যেন সঠিক সময়ে ফজরের নামাজ পড়ার ফজিলত পেল।
নামাজকে সঠিক সময়ে পড়লে পরিভাষায় তাকে "আদায়"বলা হয়,আর অন্য সময়ে পড়লে ক্বাযা বলা হয়।

আপনার ফজরের নামাজ সঠিক সময়ে কেন আদায় হচ্ছেনা???মনে নেই? অনেক রাত করে ঘুম?শারিরিক সমস্যা?

যে কোনো একটি হতে পারে তাই শুনুন.......
কেউ ইচ্ছা করে এক ওয়াক্ত ফরজ নামাজ সঠিক সময়ে না পড়লে, সারা জীবন নামাজ পড়লে ও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।তবে যদি কেউ নমাজকে  ভুলে যায় অথবা হঠাৎ ঘুম( যা নিয়মিত নয় বা এরকম বদঅভ্যাসও তার নয়) এর ধরুণ নামাজ পড়তে না পাড়ে তাহলে তার গুনাহ হবেনা।

নবী কারীম সাঃ বলেনঃ-
" ﻣﻦ ﻧﺴﻲ ﺻﻼﺓ ﺃﻭ ﻧﺎﻡ ﻋﻨﻬﺎ، ﻓﻠﻴﺼﻠﻬﺎ ﺇﺫﺍ ﺫﻛﺮﻫﺎ، ﻻ ﻛﻔﺎﺭﺓ ﻟﻬﺎ ﺇﻻ ﺫﻟﻚ " ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ
অর্থ- যদি কেউ নামাজ ভুলে যায়,অথবা ঘুমিয়ে যায়, তাহলে যখনই স্বরণ হবে ততক্ষনাৎ যেন সে নামাজ পড়ে নেয়।নামাজ পড়া ছাড়া তার অন্য কোনো বিনিময় নেই।যারা নামাজকে অবহেলা করে ছেড়ে দেয় তাদের সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে......
ﻭﻣﻦ ﻟﻢ ﻳﺤﺎﻓﻆ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻟﻪ ﻧﻮﺭ ﻭﻻ ﺑﺮﻫﺎﻥ ﻭﻻ ﻧﺠﺎﺓ ﻭﻛﺎﻥ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻣﻊ ﻗﺎﺭﻭﻥ ﻭﻓﺮﻋﻮﻥ ﻭﻫﺎﻣﺎﻥ ﻭﺃﺑﻲ ﺑﻦ ﺧﻠﻒ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭﻱ : ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺣﻤﺪ ﺑﺈﺳﻨﺎﺩ ﺟﻴﺪ .
ভাবার্থ-যারা নামাজ পড়েনা তাদের জন্য কোনো নূর,হেদায়ত,বা (আখেরাতে)মুক্তি নেই।তাদের হাশর হবে (বড় বড় বিশিষ্ট কাফের) ক্বারুন,ফেরাউন এবং হামান ও উবাই ইবনে ক্বালফের সাথে।

আল্লাহর আযাব থেকে বাচতে হলে এবংকামিয়াবীর জীবন অর্জন করতে হলে সঠিক সময়ে নামাজকে আদায় করতে হবে।সঠিক সময় ব্যতীত অন্য সময়ে পড়লে তা আদায় হবে বরং ক্বাযা হবে।আর ওজর ব্যতীত অবহেলা করে নামাজকে ক্বাযা করলে কবিরা গুনাহ হবে।তবে শরয়ী ওজর থাকলে ভিন্ন কথা,এক্ষেত্রে কোনো গুনাহ হবেনা।যেমন খন্দকের যুদ্ধে নবী কারীম সাঃ নামাজকে যুদ্ধের ধরুণ ক্বাযা করেছেন।
عن ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﻏﺰﻭﺓ ﺍﻟﺨﻨﺪﻕ ﺗﻮﺿﺄ ﺑﻌﺪ ﻣﺎ ﻏﺮﺑﺖ ﺍﻟﺸﻤﺲ ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺑﻌﺪﻫﺎ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ . ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴ
অর্থ- হযরত জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃনবী কারীম সাঃ খন্দকের যুদ্ধে সুর্যাস্তের পর ওযু করে প্রথমে আছরের নামায পড়লেন,তারপর মাগরিবের নামায পড়লেন।

অন্য হাদিসে উক্ত ঘটনা বিস্তারিত এভাবে বর্ণিত আছে যে,
 ﻭﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻟﺨﺪﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ : ﺣﺒﺴﻨﺎ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺨﻨﺪﻕ ﻋﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺣﺘﻰ ﻛﺎﻥ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﺑﻬﻮﻱ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻗﺎﻝ : ﻓﺪﻋﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺑﻼﻻ ﻓﺄﻗﺎﻡ ﺍﻟﻈﻬﺮ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﻭﻗﺘﻬﺎ ﺛﻢ ﺃﻣﺮﻩ ﻓﺄﻗﺎﻡ ﺍﻟﻌﺼﺮ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻓﺄﺣﺴﻦ ﺻﻼﺗﻬﺎ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻴﻬﺎ ﻓﻲ ﻭﻗﺘﻬﺎ ﺛﻢ ﺃﻣﺮﻩ ﻓﺄﻗﺎﻡ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻟﻠﻤﻐﺮﺏ ﻓﺼﻼﻫﺎ ﻛﺬﻟﻚ ﺭﻭﻯ ﺃﺣﻤﺪ .
হযরত আবু সাইদ খুদরী রাঃ থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃনামায বিষয়ে খন্দকের দিনই আমাদের জন্য যতেষ্ট।যখন মাগরিবের পর রাত একটু গভীর হল তখন নবী কারীম সাঃ বেলাল রাঃ কে ডাকলেন,প্রথমে জহরের নামাজ পড়লেন,অত্যান্ত সুন্দরভাবে পড়লেন যেভাবে তার ওয়াক্তে পড়তেন,এবং ঠিকতেমনিভাবে আছর ও মাগরিবের নামাজ পড়লেন।

শরয়ী কোনো ওজরে নামাজ না পড়ে থাকলে পরবর্তীতে ক্বাযা পড়তে হবে এবং এক্ষেত্রে কোনো প্রকার গুনাহ হবেনা, এমনটাই আরো পরিস্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে নিম্নোক্ত হাদিস থেকে। এক সফরে নবী কারীম সাঃ ও সাহাবায়ে কেরাম ঘুম থেকে না জাগার ধরুণ ফজরের নামাজ পড়তে পারেননি,এবং এমন সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন যখন সুর্যদয় হয়ে গেছে,

ﺛﻢ ﺃﺫﻥ ﺑﻼﻝ ﺑﺎﻟﺼﻼﺓ ﻓﺼﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻐﺪﺍﺓ ﻓﺼﻨﻊ ﻛﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻨﻊ ﻛﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ

অর্থ- তখন বেলাল রাঃ  আযান দিলেন এবং নবী কারীম সাঃ দু-রাকাত (সুন্নাত) নামাজ পড়লেন এবং ফজরের ফরজ নামাজওপড়লেন,এবং তা ঐভাবে করলেন যেভাবে প্রতিদিন করতেন।

ভাই সঠিক সময়ে নামাজ পড়ার চেষ্টা করুন।এবং তা অভ্যাসে পরিনত করুন।অন্য সময়ে নামাজ কখনো আদা হবে বরং ক্বাযা হবে।নিয়মিত এভাবে করলে গুনাহগার হবেন।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক সময়ে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুক।আমীন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...