বিসমিহি তা'আলা
দিবস পালন এবং ইসলাম।
ﺑﺴْﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮّﺣْﻤﻦ ﺍﻟﺮّﺣﻴْﻢ
ﺣﺎﻣﺪﺍ ﻭ ﻣﺼﻠﻴﺎ ﻭﻣﺴﻠﻤﺎ
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
(হে আল্লাহ)আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা।
(২/৩২)
সূচনা......
(১)
বিভিন্ন দিবস যা নির্দিষ্ট তারিখে বৎসরান্তে একবার আমাদের সামনে ঘুরে আসে।
লক্ষ করলে দেখা যাবে,দিবসসমূহ এবং ঈদের মধ্যে অদ্ভুত এক মিল আছে অর্থ্যাৎ যেভাবে হিজরী তারিখ অনুযায়ী প্রতি বৎসর একবার করে আমাদের সামনে দু'টি ঈদ ঘুরে আসে ঠিক তেমনিভাবে ঐসমস্ত দিবসগুলোও আমাদের সামনে ঘুরে আসে।
কেননা ঈদ অর্থ-ই হচ্ছে বারংবার ঘুরে আসা যা আরবী শব্দ عود থেকে সংগ্রহীত ও রুপান্তিত, এর বাংলা অর্থ হচ্ছে বারংবার ঘুরে আসা।যেহেতু ঈদ বারংবার আমাদের সামনে ঘুরে আসে বিধায় তাকে ঈদ বলা হয়,আর হুবহু এই অর্থ বর্তমান প্রচলিত দিবস সমূহে পাওয়া যায়।
(২)
ইসলামে ঈদ বা বৎসরান্তে ঘুরে আসা দিবস সমূহের মধ্যে দু'টি ঈদ সহ আরো ও দু'একটি দিবস আছে।
যা কোরআন-হাদীস দ্বারা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত যেমনঃ-
(ক)ঘুরে আসা সাপ্তাহিক শুক্রবার দিবস যা মুসলমানদের নিকট ঈদ সমতুল্য।
(খ)আশুরার দিবস।
(গ)এবং অনির্দিষ্ট লাইলাতুল ক্বদর রজনী।
এছাড়া ইসলামে আর চতুর্থ দিবস বলতে নেই।
এবং এ মর্মে কোনো প্রমান ও নেই যে, ভবিষ্যতে মানবতা বা দ্বীনী প্রয়োজনে কোন প্রকার দিবস পালন করা যাবে।
বরং ইসলামে জাহিলিয়্যাতের বিভিন্ন দিবসসমূহ যেমনঃ- নাইরুয/মেহেরজান ইত্যাদি কুসংস্কারকে বলিষ্ঠকন্ঠে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
আমরা প্রত্যক্ষ করছি বর্তমান প্রচলিত দিবস সমূহের
মধ্যে রয়েছে কিছু আন্তর্জাতিক দিবস এবং কিছু স্বদেশীয় দিবস।
এবং এই দিবস সমূহের মধ্যে আবার কিছু রয়েছে ভালো।
যেমনঃ-আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস,আন্তর্জাতিক মা দিবস,ও বিভিন্ন রোগ থেকে সচেতনতা সম্বলিত দিবস সমূহ ও বিবিধ ।
অন্যদিকে কিছু রয়েছে মানবতা বিধ্বংসী- চরিত্রনাশী ও ইসলাম বিরোধী দিবস সমূহ।
(৩)
চরিত্রনাশী ও ইসলাম বিরোধী দিবস সমূহ
আন্তর্জাতিক হোক বা স্বদেশীয় হোক পালন করা ও উদযাপন করা কখনো বৈধ হবে না বরং তা স্পষ্টই হারাম, এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই।
কেননা উক্ত দিবস সমূহকে বৎসরান্তে একবার ঈদের মত পালন করা হয়, অথচ ইসলামে যেই সমস্ত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিবস রয়েছে তা নির্দিষ্ট ও বিধিবদ্ধ। এছাড়া আর কোনো কিছুকে পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা যাবে না ।
হাদীস শরীফে এসেছে :
ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻭﻣﺴﻠﻢ ،
অনুবাদঃ
যদি কেউ আমাদের মধ্যে কোনো(ধর্মীয়) নতুন জিনিষ সৃষ্টি করে তাহলে সে আমাদের মধ্য থেকে নয়।
ইবনে রজব হাম্বলী রাহ,উক্ত হাদিসের ব্যখ্যা করে বলেনঃ
ﻓﻜﺬﻟﻚ ﻛﻞ ﻋﻤﻞ ﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﻠﻴﻪ ﺃﻣﺮ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ، ﻓﻬﻮ ﻣﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﻋﺎﻣﻠﻪ ،
প্রত্যেক ঐ আমল যা আল্লাহএবং রাসুলুল্লাহ সাঃএর পদ্ধতি সমর্থিত নয়, তা বর্জিত ও পরিত্যাজ্য।
(জামেউল উলূম ওয়াল হিকাম-১৭৬)
(৪)
সর্ব প্রথম অমুসলিমরাই দিবস সমূহকে প্রথাসিদ্ধ করেছে,আবিস্কার করেছে,আর অমুসলিমদের অনুসরণ কখনো বৈধ নয়,অন্যদিকে এ দিবস সমূহকে উদযাপন করতে যেয়ে নামায-রোজা তরকসহ অনেক শরীয়ত বিরোধী কাজে লিপ্ত হতে হয় যা শেষপর্যন্ত ঈমান বিধ্বংসী ও মানবতা বিরোধী কাজে মানুষকে পৌঁছে দেয়।
হাদীসে অমুসলিমদের আদর্শ চাল চলন কে অনুসরণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
ﻋَﻦْ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ ﻗَﺎﻝَ : ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
অনুবাদঃ
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ বলেন যে ব্যক্তি অন্য গোত্রে (অমুসলিম)-র অনুসরণ করবে সে তাদের-ই অন্তর্ভুক্ত হবে।
{আবু-দাউদ-৩৫১২}
বিদগ্ধ গবেষক আল্লামা ইবনে উছাইমিন রহ: বলেন
ﻭﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﺸﺮﻋﻴﺔ ﻣﻌﺮﻭﻓﺔ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻹﺳﻼﻡ ، ﻭﻫﻲ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ، ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ ، ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻷﺳﺒﻮﻉ ( ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ) ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻲ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺳﻮﻯ ﻫﺬﻩ ﺍﻷﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﺜﻼﺛﺔ
শরীয়ত স্বীকৃত ঈদ হল তিনটা যা মুসলিমদের নিকট অতি সু-পরিচিত,এবং তা হল,ঈদুল আযহা,ঈদুল ফিতর,সাপ্তাহিক ঈদ (শুকুবার)এই তিন ঈদ ব্যতীত ইসলামে অন্যকোন ঈদ নেই
(মাজমু'উ ফাতাওয়া ইবনে ইছাইমিন,২/৩০১)
সুতরাং বিশেষ কোন দিন-তারিখ নির্ধারণ করে
"হৃদরোগ দিবস"
"ডায়াবেটিস দিবস"
"হিজাব দিবস"
"মা দিবস"
ও নববর্ষ
ইত্যাদি পালন করা কখনো বৈধ হবে না।
যদিও কাজটি ভালো হোক এবং জনসচেতনতার স্বার্থে হোক না কেন।
কেননা এগুলো কাজ ভালো হলেও এতে অনেক খারাবী রয়েছে।
যেমনঃ- এই সমস্ত দিবসকে ঈদের স্থানে নিয়ে আসা,কাফিরদের অনুসরণ, নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি সহ মুসলিম সমাজে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ইত্যাদি নানান সমস্যা এতে রয়েছে।
তাই দিবস পালনকে শরীয়ত কখনো সমর্থন দিতে পারেনা।
২য় পৃষ্টা-
তবে জনসচেতনতার স্বার্থে দিন-তারিখ ঠিক না করে অন্য কোনো প্রদেক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
তাই জন্মদিবস বা মৃত্যুদিবস পালন নাজায়েয।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, iom
ও
পরিচালক
ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ