আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
440 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (24 points)
সামী যদি স্ত্রীর ব্যয়ভার বহন করতে অনিচ্ছুক থাকে স্ত্রীর জন্য কি উক্ত সামীর আনুগত্য করা আবশ্যক? তিনি দেশের বাহিরে থাকেন।  তার কাছে স্ত্রীকে নেওয়ার মত টাকা থাকা সত্ত্বেও সে নিবে না কারন সে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন এর জন্য উক্ত টাকা খরচ করবে । এমনিতেও সে মনে করে বিদেশে সব কিছুর খরচ বেশি তাই স্ত্রী নিজে কাজ করে স্ত্রীর থাকা খাওয়ার জন্য টাকা দিবে। সে দুইজনের খরচ একা বহন করতে অনিচ্ছুক।  এরুপ অবস্থায় স্ত্রীর করনিয় কি এবং সামীর আনুগত্য করতে হবে কিনা?

1 Answer

0 votes
by (574,110 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

اَلرِّجَالُ قَوّٰمُوۡنَ عَلَی النِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ اللّٰہُ بَعۡضَہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ وَّ بِمَاۤ اَنۡفَقُوۡا مِنۡ اَمۡوَالِہِمۡ ؕ فَالصّٰلِحٰتُ قٰنِتٰتٌ حٰفِظٰتٌ لِّلۡغَیۡبِ بِمَا حَفِظَ اللّٰہُ ؕ وَ الّٰتِیۡ تَخَافُوۡنَ نُشُوۡزَہُنَّ فَعِظُوۡہُنَّ وَ اہۡجُرُوۡہُنَّ فِی الۡمَضَاجِعِ وَ اضۡرِبُوۡہُنَّ ۚ فَاِنۡ اَطَعۡنَکُمۡ فَلَا تَبۡغُوۡا عَلَیۡہِنَّ سَبِیۡلًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلِیًّا کَبِیۡرًا ﴿۳۴﴾ 

পুরুষেরা নারীদের অভিভাবক, ঐ (বিশেষত্বের) কারণে, যার দ্বারা আল্লাহ তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং ঐ সম্পদের কারণে, যা তারা ব্যয় করেছে। সুতরাং সৎ নারীরা হল অনুগত, (স্বামীর) অবর্তমানে (নিজের সতিত্ব ও স্বামীর সম্পদ) রক্ষাকারী, আল্লাহ রক্ষা করার কারণে ... -সূরা নিসা : ৩৪

এই আয়াতে স্ত্রীর উপর স্বামীর অভিভাবকত্বের দুটো কারণ বলা হয়েছে : প্রথমত দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য ও বিচার-বিচক্ষণতার মতো গুণাবলি, দ্বিতীয়ত মোহরানা ও পরিপোষণের জন্য ব্যয়বহন।

এই আয়াতে ‘পুরুষের ব্যয়কৃত সম্পদ’ মানে স্ত্রীর মোহরানা, খোরপোষ ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ, কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অনুযায়ী যা বহন করা অবশ্যকর্তব্য। এ আয়াত প্রমাণ করে, স্ত্রীর নাফাকা ও খোরপোষ স্বামীর উপর ফরয। -তাফসীর ইবনে কাছীর ১/৪৯২; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ২/১৮৮

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
 الۡوَالِدٰتُ یُرۡضِعۡنَ اَوۡلَادَہُنَّ حَوۡلَیۡنِ کَامِلَیۡنِ لِمَنۡ اَرَادَ اَنۡ یُّتِمَّ الرَّضَاعَۃَ ؕ وَ عَلَی الۡمَوۡلُوۡدِ لَہٗ رِزۡقُہُنَّ وَ کِسۡوَتُہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ لَا تُکَلَّفُ نَفۡسٌ اِلَّا وُسۡعَہَا ۚ لَا تُضَآرَّ وَالِدَۃٌۢ بِوَلَدِہَا وَ لَا مَوۡلُوۡدٌ لَّہٗ بِوَلَدِہٖ ٭ وَ عَلَی الۡوَارِثِ مِثۡلُ ذٰلِکَ ۚ فَاِنۡ اَرَادَا فِصَالًا عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡہُمَا وَ تَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡہِمَا ؕ وَ اِنۡ اَرَدۡتُّمۡ اَنۡ تَسۡتَرۡضِعُوۡۤا اَوۡلَادَکُمۡ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ اِذَا سَلَّمۡتُمۡ مَّاۤ اٰتَیۡتُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۲۳۳﴾

মায়েরা তাদের সন্তানদের স্তন্যদান করবে পূর্ণ দুই বছর। এটা তার জন্য, যে দুধপানের সময় পূর্ণ করতে চায়। আর সন্তান যার (অর্থাৎ পিতা) তার কর্তব্য হলো যথাবিধি তাদের খোর-পোষ বহন করা। কাউকেই তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় না। আর যেন কষ্ট না দেওয়া হয় কোনো মাকে তার সন্তান দ্বারা এবং কোন পিতাকেও তার সন্তান দ্বারা। আর (মাহরাম) ওয়ারিছের উপরও বর্তায় অনুরূপ (দায়িত্ব)  ...।-সূরা বাকারা : ২৩৩

এ আয়াতে মায়ের প্রতি আদেশ হলো স্তন্যদানের, আর পিতার প্রতি আদেশ হলো (সন্তানের) মায়ের খোরপোষ বহনের।
‘মারূফ’ শব্দ থেকে বোঝা যায়, নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানের মায়ের খোরপোষ বহন করা পিতার কর্তব্য। সুতরাং সামর্থ্য  সত্ত্বেও স্বাভাবিক খোরপোষে কার্পণ্য করা স্বামীর জন্য জায়েয নয়, তেমনি স্ত্রীর জন্যও বৈধ নয় স্বামীর সামর্থ্যের অধিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খোরপোষ দাবি করা।
বিবাহের অবস্থায় তো দাম্পত্য সম্পর্কের কারণেই স্ত্রীর পরিপোষণ স্বামীর দায়িত্বে  থাকে। 

হযরত আমর ইবনুল আহওয়াস রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
সাবধান, তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের উপর রয়েছে কিছু অধিকার, আর তোমাদের স্ত্রীদের জন্যও তোমাদের উপর রয়েছে কিছু অধিকার। তোমাদের অধিকার এই যে, স্ত্রীরা কোনোভাবেই তোমাদের বিছানায় এমন কাউকে পদার্পণের সুযোগ দিবে না, যাকে তোমাদের পছন্দ নয়। এবং তোমাদের ঘরে এমন কাউকে প্রবেশের অনুমতি দিবে না, যাকে তোমাদের অপছন্দ।
সাবধান, তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, খোরপোষের বিষয়ে তাদের প্রতি সদাচার করবে।-জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস : ১৮৫১

 হিন্দ বিনতে উতবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে আরজ করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবু সুফিয়ান একজন কৃপণ লোক। সে আমার ও আমার সন্তানের প্রয়োজনীয় খোরপোষ দেয় না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন-

নিজের ও সন্তানের স্বাভাবিক প্রয়োজন পরিমাণ খোরপোষ তুমি নিতে পার।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৬প্ত সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৩/১৩৩৮

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, স্ত্রী-সন্তানের ভরণ-পোষণ স্বামীর অবশ্য-কর্তব্য এবং এটি তাদের প্রাপ্য। এ কারণেই স্বামীর অগোচরে হলেও আবু সুফিয়ান রা.-এর স্ত্রীকে তা নিয়ে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
★★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রী চাইলে ভরনপোষণ এর জন্য  আইনের সহায়তা নিতে পারে।
প্রয়োজনে তালাকের দারস্ত হতে পারে।
যদি স্বামী তাকে তালাকের অনুমতি দিয়ে থাকে,বা নিকাহ নামার ১৮ নং ধারাতে জেনে শুনে টিক চিন্হ দিয়ে থাকে,তাহলে স্ত্রী নিজেই নিজেকে তালাক দিতে পারে।
নতুবা তালাকের জন্য আদালতের সহায়তা নিতে পারে।
,
যদি স্ত্রী তালাক না চায়,নিজের ভরনপোষণ এর জন্য  আইনের সহায়তাও না নেয়,তাহলে সেক্ষেত্রে যদিও ভরনপোষণ না দেওয়ার জন্য স্বামীর গুনাহ হবে,তবে স্ত্রী তার স্ত্রী হিসেবেই থাকার কারনে তার বৈধ আদেশের আনুগত্য করবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...