আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
235 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (50 points)
১.যে নারী নরমাল ডেলিভারি করে, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়--এরকম একটা লেখা পড়েছিলাম। এটা কি ঠিক?

২.সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থাতে যেকোনো এবাদত করলে কি সাওয়াব বেশি হয়?

৩.জুম্মার সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাওয়ার পথে প্রতি কদমে নেকি লেখা হয়। নারীদের ক্ষেত্রে সমপর্যায়ের কোনো কাজ আছে  কি যার ফলে এরূপ নেকী পাওয়া সম্ভব?

1 Answer

0 votes
by (715,680 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

(১)

হযরত উবাদাহ ইবনে সামাত রাযি থেকে বর্ণিত

عن عبادة بن الصامت ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : " ما تعدون الشهيد فيكم ؟ قالوا : الذي يقاتل فيقتل في سبيل الله عز وجل ، فقال الرسول صلى الله عليه وسلم : " إن شهداء أمتي إذا لقليل ، القتيل في سبيل الله شهيد ، والمطعون شهيد ، والمبطون شهيد ، والمرأة تموت بجُمع شهيد " رواه الإمام أحمد (5/315)

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,তোমরা শহীহ বলতে কি বুঝ? সাহাবারা বললেন,যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে মারা যায়, তারাই শহীদ। রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন, আমার উম্মতের শহীদরা নিতান্তই কম।আল্লাহর রাস্তায় যারা মারা যাবে, তারা শহীদ। ভাইরাস রোগে যারা মারা যাবে, তারা শহীদ। পেঠের রোগে যারা মারা যাবে, তারা শহীদ। আর কোনো সন্তান জন্মের সময় মারা যাবে, তারা শহীদ। ( মুসনাদে আহমদ-৫/৩১৫)

তবে আপনি যে হাদীসের কথা বলেছেন, এমন কোনো হাদীস আমরা খুজে পাইনি। 


(২) সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থাতে যেকোনো এবাদত করলে সাওয়াব এজন্য বেশি হয়, কেননা এতে কষ্ট বেশী হয়। 

(৩)হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বর্ণনা করেন: মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: নারী যদি সময় মত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে (কিয়ামতের দিন) সে জান্নাতের (আট দরজার) যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহীহ ইবনে হিব্বান- হাদীস নং ৪১৩৯)


দেখুন অত্র হাদীসে মহিলাদের কতটুকু সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। তাছাড়া মহিলাদের আ’মলের ব্যাপারে আরো হাদীসে বর্ণিত রয়েছে,


২। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন, তোমরা বেশী বেশী দান খায়রাত করো। যদিও তোমাদের অলংকারাদি থেকে হয়। কারণ কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশী হবে। একথা শুনে জনৈকা মহিলা জিজ্ঞাসা করলেন, মহিলাদের সংখ্যা বেশী হওয়ার কারণ কীঃ জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কারণ (কথায় কথায়) তোমরা অভিশাপ দাও এবং স্বামীর অবাধ্য হও। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৪০৩৬)


৩। হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তিনি মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা কররেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা জানি জিহাদ সর্ব শ্রেষ্ঠ আমল, তবুও কেন আমাদেরকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না?


জবাবে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের জন্য তার চেয়েও উত্তম জিহাদ হল মাকবূল হজ্জ। (অর্থাৎ, যে হজ্জ্ব সব ধরনের ত্রুটি বিচ্যুতি ও গুনাহ থেকে মুক্ত।) (বুখারী শরীফ হাঃ নং ২৭৪৩)


৪। হুমাইজা বিনতে ইয়াছির রাযি. তাঁর দাদী থেকে বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, তোমরা এই তাসবীহ গুলো বেশী বেশী পড়া  سُبْحانَ المَلِكِ القُدُّوسِسُبْحَانَ اللهِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ (মিরকাত ৫/২২৬)


এবং তা আঙ্গুলে গণনা করে পড়, কেননা কিয়ামতের দিন এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে। আর আল্লাহর যিকির থেকে কখনো গাফেল থাকবে না, অন্যথায় তাঁর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে। (আবু দাউদ হাঃ নং ১৫০১, তিরমিযী হাঃ নং ৩৫৮৩)


৫। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল, অমুক মহিলা দিনে রোযা রাখে আর সারা রাত ইবাদত-বন্দেগী করে, কিন্তু সে কটূ কথা বলে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কোন লাভ নেই, সে জাহান্নামে যাবে। আর এক মহিলা সম্পর্কে বলা হল যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে রমযান মাসে রোযা রাখে, এবং সে যথাসাধ্য দান-সদকা করে, কিন্তু কাউকে কষ্ট দেয় না, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে জান্নাতে যাবে। (মুসতাদরাকে হাকেম হাঃ নং ৭৩০২)


৬। হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন, একবার মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈকা আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার? তুমি আমাদের সাথে হজ্বে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ না কেন? জবাবে মহিলা বললেন, আমাদের মাত্র দুটি উট, তন্মধ্য থেকে একটি আমার স্বামী ও তার ছেলে হজ্জ করার জন্য নিয়ে গেছে। আর অপরটি দিয়ে আমাদের ক্ষেতে পানি সিঞ্চন করি। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সাত্ত্বনা দিয়ে বললেন, আগামী রমযান মাসে উমরা করে নিও। কেননা রমযান মাসে উমরার সওয়াব হজ্জের সমতুল্য। অন্য রিওয়ায়েতে আছে আমার সাথে হজ্জ করার সমতুল্য। (বুখারী শরীফ হাঃ নং ১৭৮২)


৭। উম্মে সালামাহ রাযি. বলেন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোন (মুমিনা) নারী স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমীযী শরীফ হাঃ নং ১১৬১)


৮। হযরত হুসাইন ইবনে মিহসান রাযি. থেকে বর্ণিত, একবার তার ফুফু কোন এক প্রয়োজনে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরবারে আসেন। প্রয়োজন পূরণ হলে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে সম্বোধন করে বললেন, তোমার স্বামী কি জীবিত আছে? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। পূনরায় মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তার সাথে কেমন ব্যবহার কর? জবাবে তিনি বলরেন, সাধ্যানুযায়ী তাঁর খেদমত করে থাকি। অতঃপর মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (সাবধান করে) বললেন, ভাল করে চিন্তা কর, তুমি তার কতটুকু খেদমত করে যাচ্ছ। কেননা সেই তোমার জান্নাত, আবার সেই তোমার জাহান্নাম। (অর্থাৎ তাকে সন্তুষ্ট রাখতে পারলে জান্নাত লাভ করবে, অন্যথায় জাহান্নাম)। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ১৯০২৭)


৯। হযরত ইবনে আবী আউফ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রাযি. একবার শাম থেকে আসার পর মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মাথা নত করে সম্মান প্রদর্শন করলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মু‘আয! তুমি একি করছ? জবাবে মু‘আয রাযি. বললেন, আমি শাম থেকে এসেছি, সেখানের অধিবাসীরা তাদের সেনাপতি ও ধর্মযাজকদেরকে এভাবে সম্মান প্রদর্শন করে থাকে। তাই আমিও আপনাকে সেভাবে সম্মান প্রদর্শন করলাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে এরকম কাজ করতে নিষেধ করে বললেন, আমি যদি কাউকে সিজদা করার আদেশ দিতাম, তাহলে শুধু নারী জাতিকেই আদেশ দিতাম যে, তোমরা তোমাদের স্বামীদেরকে সম্মান করার লক্ষ্যে সিজদা কর। ঐ সত্তার কসম যার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ, কোনো নারী তাঁর প্রতিপালকের হক্ব আদায় করতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার স্বামীর হক্ব পরিপূর্ণভাবে আদায় করবে। (স্ত্রীর উপর স্বামীর হক্ব এত বেশী যে) সফরের প্রাক্কালে সওয়ারীর পিঠে থাকা অবস্থায়ও যদি স্বামী স্ত্রীকে আহ্বান করে তাহলেও সে নিষেধ করতে পারবে না। (সহীহ ইবনে হিব্বান হাঃ নং ৪১৭১)


১০। হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা ঐ মহিলার উপর রহম করুন, যে মহিলা শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে। এবং স্বামীকেও (তাহাজ্জুদের জন্য) জাগিয়ে দেয়। (স্বামী) ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে মুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে হলেও উঠানোর চেষ্টা করে। অন্য হাদীসে উক্ত গুণ সম্পন্ন স্বামীর জন্যও মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’আ করেছেন। (মুসনাদে আহমদ হাঃ নং ৭৪১০) বিস্তারিত জানুন-

http://www.darsemansoor.com/books/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (715,680 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 314 views
...