আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
122 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম।
একজন কয়দিন আগে হার্ট অ্যাটাক করলে তার পরিবার একটি ইয়াতিম খানায় জানের বদলে জান এই নিয়তে একটি ছাগল দেয়।

এখন আমার প্রশ্ন হলো এমন ভাবে ছাগল-মুরগী দান করা ইসলামে জায়েজ কিনা?তারা এটাও মনে করছে বাজার থেকে ছাগলটি একদামে কিনতে হবে।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
জানের বদলা জান দেয়া যাবে। হাদীসে এসেছে, যে সদকাহ বিপদাপদ দূর করে দেয়, তবে একদামে কিনতে হবে, তা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। 

কোরআনুল কারীমে দান-খয়রাত বোঝাতে তিনটি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যথা- (১) ইনফাক, ব্যয় করা, খরচ করা। (২) ইতআম : খাওয়ানো, খাদ্য দান করা এবং (৩) সাদাকাহ : দান-খয়রাত করা। আল্লাহর পথে ব্যয় করা বলতে উল্লিখিত তিন শ্রেণির দানকেই বুঝায়। চাই তা ফরজ হোক, ওয়াজিব হোক, নফল অথবা মোস্তাহাব হোক।

এ প্রসঙ্গে কোরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে: ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের উপার্জিত বস্তু থেকে এবং আমি ভূমি থেকে তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তা থেকে উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ বা দান করো।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৭)। এই দানের সওয়াব এক থেকে শুরু করে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশত শস্যকলা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বর্ধিত করে দেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬১)।

এই আয়াতের কারীমার অর্থ ও মর্মের প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকালে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, আল্লাহর পথে দান করার সওয়াব বহুগুণে বর্ধিত করা হয়। তবে, এর জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত : দান-সাদাকাহ যোগ্য ও উপযুক্ত নয় এমন ব্যক্তিকে দিলে দান-সাদাকাহ ব্যর্থ হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত : যে ব্যক্তি দান-খয়রাত করবে তাকে সৎ ও সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। নিয়তের মাঝে কোনোরূপ আবিলতা থাকতে পারবে না। যদি যশ অর্জনের জন্য বা লোক দেখানোর জন্য দান-খয়রাত করে তা বিফলে যাবে। এর দ্বারা কোনো পুণ্য লাভ করা যাবে না। সে ব্যক্তি অজ্ঞ ও মূর্খ কৃষকের মতো, যে অনুর্বর বা মরুভূমিতে বীজ বপন করে, যার ফলে বীজ মরে যায়, অঙ্কুর উদগম হয় না। তৃতীয়ত : আল্লাহর পথে যে মাল-সম্পদ খরচ করবে তা পবিত্র হালাল হতে হবে। হাদিস শরিফে সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ পাক পবিত্র, তিনি হালাল বস্তু ব্যতীত কিছুই কবুল করেন না।
বস্তুত: আল্লাহ পাকের দরবারে দান-খয়রাত গ্রহণযোগ্য হওয়ার দুটি শর্ত রয়েছে। এর একটি হলো, দান-খয়রাত করে অনুগ্রহ প্রকাশ করা যাবে না, মনোতুষ্টির ভাব দেখানো যাবে না। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে এবং যা ব্যয় করে তা মানুষের কাছে বলে বেড়ায় না, এবং গ্রহীতাকেও ক্লেশ দেয় না, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তান্বিতও হবে না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৬৯)।

মোট কথা গ্রহীতার সাথে এমন কোনো আচরণ করা যাবে না, যাতে সে নিজেকে হেয়, ঘৃণিত মনে করে ও কষ্ট পায়। আর দ্বিতীয়টি হলো, দান-খয়রাত রাতে ও দিনে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে মুক্ত মনে আদায় করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে এ প্রসঙ্গে ইরশাদ করছেন, ‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে খরচ করে তাদের পুণ্যফল তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোনো ভয় ও শঙ্কা নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না।’ (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৭৪)।

বস্তুত: আল্লাহর পথে খরচকারীগণ পরকালীন অধিক নেকি লাভের পাশাপাশি দুনিয়ার জীবনেও প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভ করে থাকেন। এতদ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আল কোরআনে ঘোষণা করছেন, ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর পথে) খরচ করো তিনি তার বিনিময় প্রদান করেন। তিনি উত্তম রিজিক (সম্পদ) দাতা। (সূরা সাবা : আয়াত ৩৯)।

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাছির রাহ. বলেছেন, যারা আল্লাহর পথে খরচ করে, আল্লাহ পাক তাদেরকে এর বিনিময় দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানেই প্রদান করেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা আল্লাহর বান্দাহর নিকট আসে। তাদের একজন এই দোয়া করে, হে আল্লাহ, তোমার পথে দানকারীকে উত্তম বিনিময় প্রদান করো।

আর দ্বিতীয়জন বলে, হে আল্লাহ, তোমার পথে যারা খরচ করে না তাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস করে দাও। (সহিহ বুখারি : খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩০৪)। এখানে উত্তম বিনিময় দান করার অর্থ হচ্ছে দুনিয়া এবং আখেরাতে উভয় জাহানে দান করা। সুতরাং সমৃদ্ধি অর্জনে দান-খয়রাতের ভূমিকা যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে রয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। (সংগৃহিত)



(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...