ফাতেমা রাঃ এর মৃত্যুর পর তার গোসল করানো সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীস পাওয়া যায়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
روى الحاكم في المستدرك بسنده عن أسماء بنت عميس قالت غسلت أنا و علي فاطمة بنت رسول الله صلىاللهعليه وآله «اه»
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।
হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১।
وقد روى ابن سعد في (الطبقات): أنها غسلت نفسها قبل أن تموت، ووصت أن لا يغسلها أحد لئلا ينكشف جسدها، وأن علياً دفنها دون غُسل، قال الذهبي عن هذا الكلام في (السير): هذا منكر. ا.هـ
সারমর্মঃ
ফাতেমা রাঃ নিজেই মৃত্যুর আগে নিজের গোসল করেছেন,আর অছিয়ত করেছেন যে তাকে যেনো গোসল না করানো হয়,কেননা তাতে তার শরীর প্রকাশ হবে।
আর আলী রাঃ তাকে দাফন করিয়েছিলেন গোসল করানো ছাড়াই।
وقال ابن الأثير في (أسد الغابة): والصحيح أن علياً وأسماء غسًّلاها. ا.هـ
ছহীহ মত হলো আলী রাঃ তাকে গোসল করিয়েছিলেন।
روى ابن عبد البر في الإستيعاب أن فاطمة عليها السلام قالت لأسماء بنت عميس إذا أنا مت فاغسليني أنت و علي و لا تدخلي علي أحدا
সারমর্মঃ
ফাতেমা রাঃ আসমা আসমা বিনতে উমায়েস রাঃ কে বলেছেন যে যখন আমি মৃত্যু বরন করিবো,তখন তুমি আর আলী রাঃ আমাকে গোসল করাবে।
অন্য কাউকে প্রবেশ করাবেনা।
.و روى أبو نعيم في الحلية أنها لما حضرتها الوفاة أمرت عليا فوضع لها غسلا فاغتسلت و تطهرت و دعت بثياب أكفانها فأتيت بثياب غلاظ خشن فلبستها و مست من الحنوط ثم أمرت عليا أن لا تكشف إذا قبضت و أن تدرج كما هي في ثيابها«اه»
সারমর্মঃ
যখন ফাতেমা রাঃ এর মৃত্যু নিকটবর্তী হলো,তখন তিনি নিজেই আলী রাঃ কে ডেকে জীবিতকালেই তার দ্বারা গোসল করিয়েছেন,অছিয়ত করেছেন যে আমার মৃত্যু পর যেনো আর গোসল না করায়,,,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে তাঁর স্বামী হযরত আলী (রাঃ) মৃত্যুর পর গোসল দিয়েছিলেন কিনা,এই মর্মে যেহেতু বিরোধপূর্ণ হাদীস রয়েছে,আর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেনা,মর্মে যেহেতু স্পষ্ট হাদীস আছে।
তাই হানাফী মাযহাবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেনা মর্মে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে।
,
তবে অন্যান্য ইসলামী স্কলারদের মতে এটি জায়েজ আছে,তাই তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
কোনো সমস্যা নেই।
(০২)
জী,প্রশ্নে উল্লেখিত তথ্য সঠিক।
স্ত্রীর মৃত্যুর সাথে সাথে স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়।
,
স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী তাকে গোসল করাতে পারবেনা।
তবে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী তাকে গোসল করাতে পারবে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
أَنَّ أَبَا بَكْرٍ «أَوْصَى أَسْمَاءَ بِنْتَ عُمَيْسٍ أَنْ تُغَسِّلَهُ» (المصنف لابن ابى شيبة-7/144، رقم-11078)
সারমর্মঃ
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ আসমা বিনতে উমায়েস রাঃ কে নিজের গোসল করানোর অছিয়ত করেছিলেন।
عَنْ عَطَاءٍ، قَالَ: «تُغَسِّلُ الْمَرْأَةُ زَوْجَهَا» (مصنف ابن ابى شيبة-7/145، رقم-11084)
সারমর্মঃ
হযরত আতা রহঃ বলেন স্ত্রী তার স্বামীকে গোসল করাবে।
عَنِ الشَّعْبِيِّ، قَالَ: «لَا يُغَسِّلُ الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ» وَهُوَ رَأْيُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَسُفْيَانَ (مصنف ابن ابى شيبة-7/146، رقم-11092)
সারমর্মঃ
হযরত শা'বি রাঃ বলেন পুরুষরা তাদের স্ত্রীকে (মৃত্যুর৷ পর) গোসল করাতে পারবেনা।
عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ: مَاتَتِ امْرَأَةٌ لِعُمَرَ، فَقَالَ: «أَنَا كُنْتُ أَوْلَى بِهَا إِذَا كَانَتْ حَيَّةً، فَأَمَّا الْآنَ فَأَنْتُمْ أَوْلَى بِهَا» (مصنف ابن ابى شيبة-7/147، رقم-11094)
সারমর্মঃ
হযরত ওমর রাঃ এর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বললেন নিশ্চয়ই আমি তোমার গোসল করানোর বেশি হকদার,যদি তুমি জীবিত থাকতে।
কিন্তু এখন তোমরা (সামনের উপস্থিত মহিলা) বেশি হকদার।
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
(ويمنع زوجها من غسلها ومسها لا من النظر إليها على الأصح) منية. الخ (وهي لا تمنع من ذلك) (الدر المختار مع رد المحتار، كتاب الصلاة، باب الجنائز-3/90)
সারমর্মঃ
স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামীর তাকে গোসল করানো,স্পর্শ করা নিষেধ।
তবে তাকে দেখা নিষেধ নয়।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
এটি হানাফি মাযহাবের মত।
তবে অন্যান্য কিছু মাযহাবের ইমামগন এবং ইসলামী স্কলারদের মতে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে মৃত্যুর পর গোসল করাতে পারবেন।
,
কোনো ব্যক্তির স্ত্রী যদি মারা যান, তিনি মৃত স্ত্রীকে গোসল দিতেও বাধা নেই, স্পর্শ করতেও বাধা নেই এবং কবরে দাফন করতেও কোনো বাধা নেই। এই কাজগুলো তাঁর জন্য জায়েজ, তিনি করতে পারবেন।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ رَجَعَ رَسُوْلُ اللهِ مِنَ الْبَقِيْعِ فَوَجَدَنِىْ وَأَنَا أَجِدُ صُدَاعًا فِىْ رَأْسِىْ وَأَنَا أَقُوْلُ وَارَأْسَاهُ فَقَالَ بَلْ أَنَا يَا عَائِشَةُ وَارَأْسَاهُ ثُمَّ قَالَ مَا ضَرَّكِ لَوْ مِتِّ قَبْلِىْ فَقُمْتُ عَلَيْكِ فَغَسَّلْتُكِ وَكَفَّنْتُكِ وَصَلَّيْتُ عَلَيْكِ وَدَفَنْتُكِ.
আয়েশা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাক্বীউল গারক্বাদ (মদীনার বাকি গোরস্থান) থেকে যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি আমাকে মাথার যন্ত্রণা অবস্থায় পেলেন। আমি বলছিলাম, উফ! আমার মাথাব্যথা! তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছিলেন, আয়েশা! বরং আমারও মাথা ব্যথা করছে।
অতঃপর তিনি বলেন, তোমার কোন সমস্যা নেই। তুমি যদি আমার পূর্বে মারা যাও তবে আমি তোমার পাশে থাকব, তোমাকে গোসল দিব, তোমাকে কাফন পরাব এবং তোমার জানাযার সালাত আদায় করব।
ইবনে মাজাহ হা/১৪৬৫, পৃঃ ১০৫, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০০, ৩/১৬০ পৃঃ।
আরেকটি হাদীস:
عَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ قَالَتْ غَسَّلْتُ أَنَا وَعَلِىٌّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَاطِمَةَ بِنْتَ رَسُوْلِ اللهِ
আসমা বিনতে উমাইস (রাঃ) বলেন, আমি এবং আলী (রাঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতেমাকে গোসল দিয়েছি।
হাকেম হা/৪৭৬৯; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৬৯০৭; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/২১৫৭; দারাকুৎনী হা/১৮৭৩; সনদ হাসান, ইওয়াউল গালীল হা/৭০১।
অন্য দিকে আয়েশা রা. বলেন,
لَوِ اسْتَقْبَلْتُ مِنْ أَمْرِىْ مَا اسْتَدْبَرْتُ مَا غَسَّلَهُ إِلاَّ نِسَاؤُهُ
‘পরে যা জানলাম তা যদি আগে জানতাম, তবে রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর স্ত্রীরা ছাড়া কেউ গোসল দিতে পারত না’।
আবুদাঊদ হা/৩১৪১, ২/৪৪৮ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩২; সনদ হাসান, ইরওয়াউল গালীল হা/৭০২, ৩/১৬২ পৃঃ।