জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যাকাত মহান আল্লাহ তায়ালার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান।
যাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তি পেতে হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن عمرو بن شعيب عن أبيه عن جده أن امرأة أتت رسول الله صلى الله عليه و سلم ومعها ابنة لها وفي يد ابنتها مسكتان غليظتان من ذهب فقال لها ” أتعطين زكاة هذا ؟ ” قالت لا قال ” أيسرك أن يسورك الله بهما يوم القيامة سوارين من نار ؟ ” قال فخلعتهما فألقتهما إلى النبي صلى الله عليه و سلم وقالت هما لله عزوجل ولرسوله
অনুবাদ- আমর বিন শুয়াইব থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিন [দাদা] বলেনঃ এক মহিলা তার কন্যাসহ রাসূল সাঃ এর খিদমতে উপস্থিত হন। তার কন্যার হাতে মোটা দুই গাছি স্বর্ণের চুড়ি [কাঁকন] ছিল। তিনি [রাসূল সাঃ] তাকে বললেনঃ তোমরা কি এটার যাকাত আদায় কর? মহিলা বলেনঃ না। রাসূল সাঃ বলেনঃ তুমি পছন্দ কর যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এর পরিবর্তে তোমাকে এক জোড়া আগুনের কাঁকন পরিধান করান? রাবী বলেনঃ একথা শুনে মেয়েটি তার হাত থেকে তা খুলে নবী করীম সাঃ এর সামনে রেখে দিয়ে বললঃ এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৩, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭৭৯৯, সুনানুল কুবরা লিননাসায়ী, হাদীস নং-২২৫৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২০০৫}
عن عبد الله بن شداد بن الهاد أنه قال دخلنا على عائشة زوج النبي صلى الله عليه و سلم فقالت ” دخل علي رسول الله صلى الله عليه و سلم فرأى في يدي فتخات ( خواتيم كبار ) من ورق فقال ” ما هذا يا عائشة ” ؟ فقلت صنعتهن أتزين لك يارسول الله قال ” أتؤدين زكاتهن ؟ ” قلت لا أو ماشاء الله قال ” هو حسبك من النار “
হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ ইবনুল হাদ থেকে বর্ণিত। তিন বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর স্ত্রী হযরত আয়শা রাঃ এর খেদমতে উপস্থিত হই। তখন তিনি বলেন, একদা রাসূল সাঃ আমার নিকট উপস্থিত হয়ে আমার তাতে রূপার বড় বড় আংটি দেখতে পান। তিনি বলেন, হে আয়শা! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উদ্দেশ্যে রূপচর্চা করার জন্য তা বানিয়েছি। তিনি জিজ্ঞাসা করেনঃ তুমি কি এর যাকাত পরিশোধ করে থাক? আমি বললাম, না অথবা আল্লাহ পাকে যা ইচ্ছে ছিল। রাসূল সাঃ বললেনঃ তোমাকে দোযখে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৬৫, সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১২৩৩, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৭৩৩৮, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯৭৪, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১৪৩৭}
.
যাকাত সংক্রান্ত মাসয়ালা জানুনঃ
.
(০১)
★প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।
,
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে কাটানো জায়েয নেই। কেউ কাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
,
তবে কেহ যদি বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করে,তাহলে তাহা বৈধ হবেনা। এটির কারণে সুদি চুক্তির গুনাহ হবে।
এখন সম্ভব হলে কর্তব্য হবে, বাধ্যতামূলকের অতিরিক্ত যা জমা করেছে, তার সুদসহ উঠিয়ে ফেলা এবং এই সুদ সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত গরীব-মিসকীনকে সদকা করে দেওয়া। আর এখন উঠানো সম্ভব না হলে চাকরি শেষে যখন সব টাকা উঠাবেন তখন হলেও ঐচ্ছিক জমাকৃত অংশের সুদ সদকা করে দিতে হবে। আর নিজ বেতনের জমাকৃত অংশ আপনি ব্যবহার করতে পারবেন।
,
প্রকাশ থাকে যে, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মূল ও অতিরিক্ত হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তা যাকাতযোগ্য সম্পদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই তা হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে না।
আর আপনি স্বেচ্ছায় যে এক লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন এ টাকার যাকাত জমার বছর থেকেই দিতে হবে। এ টাকার অতিরিক্তটা যাকাতযোগ্য নয়; বরং তা পুরোটাই সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকাযোগ্য।
(মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদীস ২৫১১; আহকামুল কুরআন, জাসসাস ১/৪৬৮; আলবাহরুর রায়েক ২/২০৭; ইমদাদুল আহকাম ৩/৪৮০; জাওয়াহিরুল ফিকহ ৩/২৫৮)
★প্রভিডেন্ট ফান্ডে যদি সরকারীভাবে বেতন থেকে কেটে রেখে দেয়া হয়, তা উঠিয়ে ফেলার কোন সুযোগ যদি সরকারী কর্মচারীর না থাকে, তাহলে উক্ত ফান্ডের জমা কৃত টাকার উপর যাকাত আসবে না। যেহেতু উক্ত টাকার মালিকই এখনো পর্যন্ত উক্ত চাকরিজীবি হচ্ছে না।
পক্ষান্তরে যদি স্বেচ্ছায় প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা জমা রাখে। অর্থাৎ ইচ্ছে করলেই উক্ত চাকরিজীবি জমাকৃত টাকা উঠিয়ে ফেলতে সক্ষম হয়, তাহলে উক্ত টাকার উপর যাকাত আসবে। নতুবা আসবে না।
★প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমাকৃত টাকা খরচ করার ব্যাপারে মালিকের স্বাধীনতা থাকলে অর্থাৎ যেকোন সময়ে উঠানো সম্ভব হলে যাকাত দিতে হবে। আর স্বাধীনতা না থাকলে যখন পাবে তখন সব টাকার যাকাত দিতে হবে। কারণ যাকাত বের করার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে- সম্পদের উপর মালিকের স্বাধীনতা থাকা।
ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩৯৫ পৃঃ।
আরো জানুনঃ
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা যাকাতের হিসেবে আসবেনা।
যেদিন আপনি এটি উত্তোলন করার পর এক বছর অতিবাহিত হলে তার উপর যাকাত আসবে।
আপাতত এই টাকার উপর আপনার যাকাত আসবেনা।
,
যেহেতু এই টাকা বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে,তাই এর সূদের নামে যেটি বলা হচ্ছে,সেটি শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে সূদ নয়।
তাই উত্তোলন করার পর এই অতিরিক্ত টাকাও আপনি গ্রহন করতে পারবেন।
,
(০২)
হ্যাঁ আপনি বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ঘরের কাজের লোকদের বেতনাদি টাকা বাদ দিয়ে হিসেব করে যাকাত দিবেন।
কেননা এগুলো দৈনন্দিন প্রয়োজনের অন্তর্ভুক্ত।