আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
522 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (0 points)
আসসালামু আলাইকুম।

আলহামদুলিল্লাহ আসসালাতু আসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ।

আচ্ছা হাদিসে টিকটিকি বা গিরগিটি মেরে ফেলার নির্দেশ আছে। এটা কি টিকটিকি নাকি গিরগিটি মারার নির্দেশ?

কুরানে আছে দুনিয়ার সব প্রানী (কিছু মানুষ আর জীন বাদে) আল্লাহর ইবাদত করে তাহলে ইব্রাহিম আ: এর আগুনে গিরগিটি কেন ফু দিয়েছিল? গিরগিটি কি আল্লাহর ইবাদত করে না?

1 Answer

0 votes
by (589,140 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী লিখেন,
হ্যাঁ, তা টিকটিকি। এটাই সর্বাধিক বিশুদ্ধ কথা।

উল্লেখ্য, অনেকেই গিরগিটি (কোন কোন এলাকায় কাঁকলাস, ডাহিন, রক্তচোষা বলে) মারতে বলেন। এটা ঠিক নয়। কারণ হাদিসে وزغ শব্দ এসেছে যার অর্থ টিকটিকি।‘আল-ওয়াযাগ’ (اَلْوَزَغُ) শব্দের উর্দু অনুবাদ ‘ছিপকলী’ এর অর্থ টিকটিকি। (ফ‘রহঙ্গ-ই-রববানী; পৃঃ ২৬০; ফরহঙ্গ-এ-জাদীদ (উর্দু-বাংলা অভিধান)। আর গিরগিটির আরবি হ’ল حرباء (আল-মুনজিদ, পৃ: ১২৫; আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব দ্র:)।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মা আয়েশা রা. ঘরের মধ্যে টিকটিকি মারার জন্য একটি বর্শা রাখতেন।
عن سائبة مولاة للفاكه بن المغيرة قالت : دخلت على عائشة فرأيت في بيتها رمحا موضوعا قلت يا أم المؤمنين ما تصنعون بهذا الرمح ؟ قالت هذا لهذه الأوزاغ نقتلهن به
এখান থেকেও বুঝা যাচ্ছে, এটি ঘরে থাকা টিকটিকি; বাইরের গাছ-গাছালি বন-জঙ্গলে থাকা গিরগিটি, কাঁকলাস, ডাহিন বা রক্তচোষা নয়।

◯◯ টিকটিকি মারার সওয়াব:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ مَنْ قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الأَوَّلِ وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الثَّانِيَةِ ” .
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি টিকটিকি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-১৭৬ টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে, হা/৫২৬৩-সনদ সহিহ]

অন্য বর্ণনায় এসেছে:
مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِى أَوَّلِ ضَرْبَةٍ كُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَفِى الثَّانِيَةِ دُونَ ذَلِكَ وَفِى الثَّالِثَةِ دُونَ ذَلِكَ
“যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতেই একটি টিকটিকি মারবে, তার জন্য রয়েছে একশ সওয়াব, দ্বিতীয় আঘাতে মারলে রয়েছে তার চেয়ে কম সওয়াব, আর তৃতীয় আঘাতে মারলে রয়েছে তার চাইতেও কম সওয়াব।” (সহিহ মুসলিম ৫৯৮৩-৫৯৮৪ নং)

অন্য বর্ণনায় প্রথম আঘাতে হত্যা করলে ৭০ সওয়াবের কথা এসেছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ “ فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ سَبْعِينَ حَسَنَةً ” .
আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: “প্রথম আঘাতে মারতে পারলে তার জন্য সত্তর সওয়াব রয়েছে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-১৭৬ টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে, হা/৫২৬৪-সনদ সহিহ]

◯◯ টিকটিকি মারতে উৎসাহিত করার কারণ কি?

● ১. এর প্রধান কারণ হল, এটি অনিষ্টকারী ও ক্ষতিকারক:
সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রা. বলেন,
أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টিকটিকি মারার আদেশ দিয়েছেন এবং একে ‘অন্যায়-অনিষ্টকারী’ বলে অভিহিত করেছেন।” (মুসলিম, মিশকাত হা/৪১২০)।
উল্লেখ্য যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ছাড়া আরও ৫টি প্রাণীকে অন্যায়-অনিষ্টকারী হিসেবে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন- যদি সেগুলো হারাম সীমানার মধ্যে থাকে। যেমন: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী। এদেরকে হারাম সীমানার মধ্যেও মেরে ফেলতে হবে। এগুলো হল:
الْفَأْرَةُ، وَالْعَقْرَبُ، وَالْحُدَيَّا، وَالْغُرَابُ، وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ
“বিচ্ছু, ইঁদুর, চিল, কাক এবং পাগলা কুকুর।” [সহিহ বুখারি, অধ্যায়: ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق),অনুচ্ছেদ: পাঁচ শ্রেণির অনিষ্টকারী প্রাণীকে হারাম শরীফেও হত্যা করা যাবে।]
● ২. এটি সরীসৃপ জাতীয় প্রাণী। এটি ঘরের কোঠা, দেয়াল, খাট, চেয়ার, টেবিল, ফ্রিজ এবং অন্যান্য আসবাপত্রের উপর চলাফেরা করে এবং বিশেষ করে খাবার পাতিলে বা খাদ্যদ্রব্যের উপর মল মূত্র ত্যাগ করে। আর তা মানব দেহের জন্য বিষাক্ত ও রোগ-ব্যাধির কারণ এতে কোন সন্দেহ নাই।

ডাক্তারগণ বলেন: “টিকটিকির মল বিষাক্ত হওয়ার কারণে খাবারের সাথে পেটে গেলে আপনার পেটে অসুখ, পেট খারাপ, পাতলা পায়খানা, পেটব্যথা, বমি ইত্যাদি হতে পারে।” [ উৎস: Dr. Khadega,উৎস: maya ডট কম ডট বিডি]

আল নিহায়া গ্রন্থে বলা হয়েছে: هِيَ الَّتِي يُقَالُ لَهَا سَامُّ أَبْرَصَ “এটিকেই বলা হয়, শ্বেত বিষাক্ত।”
قَالَ ابْنُ الْمَلَكِ: وَمِنْ شَغَفِهَا إِفْسَادُ الطَّعَامِ خُصُوصًا الْمِلْحَ، فَإِنَّهَا إِذَا لَمْ تَجِدْ طَرِيقًا إِلَى إِفْسَادِهِ ارْتَقَتِ السَّقْفَ وَأَلْقَتْ خَرَأَهَا فِي مَوْضِعٍ يُحَاذِيهِ. وَفِي الْحَدِيثِ بَيَانُ أَنَّ جِبِلَّتَهَا عَلَى الْإِسَاءَةِ.” انتهى من “مرقاة المفاتيح” (7/2671)
ইবনুল মালিক বলেন: এর নেশা হল, খাবার নষ্ট করা। বিশেষ করে লবণ। যদি সে পর্যন্ত পৌঁছার রাস্তা না পায় তাহলে ঘরের কোঠায় উঠে যায় এবং তার ঠিক নিচ বরাবর বিষ্ঠা নিক্ষেপ করে। হাদিসের বিবরণ থেকে বুঝা যায়, এটি সৃষ্টিগতভাবে ক্ষতিকারক। (মিরকাতুল মাফাতিহ ৭/২৬৭১)

● ৩. এটি যে নিকৃষ্ট স্বভাবের প্রাণী তা বুঝার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, যখন ইবরাহীম আ. কে নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করার জন্য বিশাল অগ্নিকুণ্ড বানিয়েছিল তখন সে আগুনে ফুঁ দিয়েছিলো। (সহিহ বুখারি)
● ৪.এটি ঘরময় রাজত্ব করে এবং বিভিন্ন সময় ‘টিকটিক’ করে আওয়াজ করে উঠে। ফলে তা বিরক্তি ও অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
● ৫. এর লেজে মাদকতা রয়েছে। নেশাখোররা এর লেজ আগুনে পুড়িয়ে নেশা করে। এটি একদিকে নানাভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকর অন্য দিকে
মরণ ব্যাধি নেশার উৎস। তাই ঘরকে এ থেকে যথাসাধ্য মুক্ত রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
● ৬. টিকটিকি মারার ক্ষেত্রে এক আঘাতে মারলে বেশি সওয়াব (১০০ সওয়াব, অন্য বর্ণনায় ৭০টি) হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ এতে তার কষ্ট কম হবে। যত বেশি আঘাতে মারা হবে তত বেশি কষ্ট হবে। ফলে এতে সওয়াবও কমে যাবে।
● ৭. সর্বোপরি কথা হল, এটি ইসলামের নির্দেশ। আর ইসলামের প্রতিটি বিধানের পেছনে কোনো না কোনো হেকমত বা রহস্য লুকিয়ে আছে। আমরা মানবিক জ্ঞানে কখনো তা উপলব্ধি করতে পারি আর কখনো তা পারি না। সুতরাং সর্ববস্থায় আল্লাহর বিধানকে বিনা প্রশ্নে মানার মধ্যে রয়েছে মানবজাতির কল্যাণ।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই ক্ষতিকর প্রাণীর ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আমিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...