হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «إِذا دخل شهر رَمَضَانُ فُتِحَتْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ» . وَفِي رِوَايَةٍ: «فُتِحَتْ أَبْوَابُ الرَّحْمَةِ»
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মাহে রমাযান (রমজান) শুরু হলে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে শিকলবন্দী করা হয়। অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়’।
সহীহ : বুখারী ১৮৯৯, ৩২৭৭, মুসলিম ১০৭৯, নাসায়ী ২০৯৯, ২০৯৭, ২১০২, আহমাদ ৭৭৮০, মুসান্নাফ ‘আবদুর রাযযাক ৭৩৮৪, ৭৭৮১, ৯২০৪, শু‘আবূল ঈমান ৩৩২৬, সহীহ ইবনু হিববান ৩৪৩১।
তবে রমজান মাসে মৃত্যুবরনকারী সরাসরি জান্নাতে যাবে,কিয়ামতের দিন কোনো হিসাব নেওয়া হবেনা,মর্মে কোনো হাদীস নেই।
দারুল উলুম দেওবন্দ এর 61433 নং ফতোয়া দ্রষ্টব্য।
আল্লাহর আদেশ অমান্য করা ইবলিস আদম আঃ কে সেজদাহ করলোনা।
তার পর মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قَالَ یٰۤـاِبۡلِیۡسُ مَا لَکَ اَلَّا تَکُوۡنَ مَعَ السّٰجِدِیۡنَ ﴿۳۲﴾
তিনি বললেন, ‘হে ইবলীস, তোমার কী হল যে, তুমি সিজদাকারীদের সঙ্গী হলে না’?
قَالَ لَمۡ اَکُنۡ لِّاَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَهٗ مِنۡ صَلۡصَالٍ مِّنۡ حَمَاٍ مَّسۡنُوۡنٍ ﴿۳۳﴾
সে বলল, ‘আমি তো এমন নই যে, একজন মানুষকে আমি সিজদা করব, যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’।
قَالَ فَاخۡرُجۡ مِنۡهَا فَاِنَّکَ رَجِیۡمٌ ﴿ۙ۳۴﴾
তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও, তুমি বিতাড়িত’।
وَّ اِنَّ عَلَیۡکَ اللَّعۡنَۃَ اِلٰی یَوۡمِ الدِّیۡنِ ﴿۳۵﴾
‘আর নিশ্চয় কিয়ামত দিবস পর্যন্ত তোমার উপর লা‘নত’।
قَالَ رَبِّ فَاَنۡظِرۡنِیۡۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ ﴿۳۶﴾
সে বলল, ‘হে আমার রব, তাহলে আমাকে অবকাশ দিন সে দিন পর্যন্ত, যেদিন তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে’।
قَالَ فَاِنَّکَ مِنَ الۡمُنۡظَرِیۡنَ ﴿ۙ۳۷﴾
তিনি বললেন, ‘তুমি নিশ্চয় অবকাশপ্রাপ্তদের একজন’।
قَالَ رَبِّ بِمَاۤ اَغۡوَیۡتَنِیۡ لَاُزَیِّنَنَّ لَهُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَاُغۡوِیَنَّهُمۡ اَجۡمَعِیۡنَ ﴿ۙ۳۹﴾
সে বলল, ‘হে আমার রব, যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তাই যমীনে আমি তাদের জন্য (পাপকে) শোভিত করব এবং নিশ্চয় তাদের সকলকে পথভ্রষ্ট করব’।
অর্থাৎ যেভাবে তুমি এ নগণ্য ও হীন সৃষ্টিকে সিজদা করার হুকুম দিয়ে আমাকে আপনার হুকুম অমান্য করতে বাধ্য করেছে ঠিক তেমনিভাবে এ মানুষদের জন্য আমি দুনিয়াকে এমন চিত্তাকর্ষক ও মনোমুগ্ধকর জিনিসে পরিণত করে দেবো যার ফলে তারা সবাই এর দ্বারা প্রতারিত হয়ে আপনার নাফরমানী করতে থাকবে, আখেরাতের জবাবদিহির কথা ভুলে যাবে। অথবা আয়াতের অর্থ, নাফরমানকে তাদের কাছে এমন চিত্তাকর্ষক করে তুলব যে, তারা আপনার নির্দেশ ভুলে যাবে। [ফাতহুল কাদীর] ইবলীসের এ ঘোষণা কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এসেছে। [যেমন, সূরা আল-আরাফঃ ১৬–১৭, সূরা আন-নিসাঃ ১১৮, সূরা আল-ইসরাঃ ১৬২]
اِنَّ عِبَادِیۡ لَیۡسَ لَکَ عَلَیۡهِمۡ سُلۡطٰنٌ اِلَّا مَنِ اتَّبَعَکَ مِنَ الۡغٰوِیۡنَ ﴿۴۲﴾
‘নিশ্চয় আমার বান্দাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই, তবে পথভ্রষ্টরা ছাড়া যারা তোমাকে অনুসরণ করেছে’।
এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ্ তা'আলার মনোনীত বান্দাদের উপর শয়তানী কারসাজির প্রভাব পড়ে না। কিন্তু বর্ণিত আদমের কাহিনীতে একথাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদম ও হাওয়ার উপর শয়তানের চক্রান্ত সফল হয়েছে। এমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে কুরআন বলেঃ (إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا) [সূরা আলে ইমরানঃ ১৫৫] এ থেকে জানা যায়া যে, সাহাবায়ে কেরামের উপরও শয়তানের ধোঁকা এক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে। তাই আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের উপর শয়তানের আধিপত্য বিস্তৃত না হওয়ার অর্থ এই যে, তাদের মন-মস্তিস্ক ও জ্ঞান-বুদ্ধির উপর শয়তানের এমন আধিপত্য বিস্তৃত হয় না যে, তারা তাদের নিজ ভ্রান্তি কোন সময় বুঝতেই পারেন না; ফলে তওবা করার শক্তি হয় না কিংবা কোন ক্ষমার অযোগ্য গোনাহ করে ফেলেন। উল্লেখিত ঘটনাবলী এ তথ্যের পরিপন্থী নয়। কারণ, আদম ও হাওয়া তওবা করেছিলেন এবং তা মাফ করা হয়েছিল। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
অর্থাৎ, আমার নেক বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব চলবে না। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের দ্বারা কোন পাপ হবে না। বরং এর উদ্দেশ্য হল, তারা এমন কোন পাপ করবে না, যার পর তারা লজ্জিত হবে না বা তওবা করবে না। কারণ সেই পাপই মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়, যার পর মানুষ অনুতপ্ত হয় না এবং তওবার সাথে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে না। আর এরূপ পাপের পরই মানুষ একের পর এক পাপ করতে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত ধ্বংসই তার ভাগ্যে পরিণত হয়। পক্ষান্তরে মু’মিনদের গুণ হল তারা পাপের পর পাপ করতে থাকে না, বরং তারা সত্ত্বর তওবা করে এবং ভবিষ্যতে আর দ্বিতীয়বার তা না করতে দৃঢ়সংকল্প হয়।
আল্লাহ তায়ালা কোনো কিছুর বিনিময়ে ইবলিসকে এমন শক্তি দেয়নি,বরং ইবলিসের চাওয়াতে নিজেই তাকে এই শক্তি দিয়েছেন।
হ্যাঁ সে যদি তওবার সমস্ত শর্ত পরিপূর্ণ ভাবে মেনে খালেছ তওবা করে,তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকেআফ করে দিবেন।