আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
213 views
in সালাত(Prayer) by (0 points)
আসসালামু আলাইকুম।

১. তারাবির সাথে বিতির পরে ফেললে পরে শেষ রাতে কি তাহাজ্জুত পরতে পারবো? নাকি তাহাজ্জুত পরলে আবার বিতির পরতে হবে?

২নামাজে হানাফি মাজাব অনুজায়ী মেয়েদের সিজদায় হাত মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় কিন্তু বুখারী শরিফে আছে কুকুরের মত সিজদা করতে রাসুল (স) নিষেধ করেছেন। তাহলে মেয়েরা কি ছেলেদের মত সিজদা করবে?

৩. বিভিন্ন মাজাবে নামাজে ভিন্নতা কেন? রাসুল স: কি বিভিন্ন ভাবে নামাজ পরতো?

1 Answer

0 votes
by (546,690 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللهِ، حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم قَالَ " اجْعَلُوا آخِرَ صَلَاتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْرًا " . - صحيح 

ইবনু ‘উমার রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ বিতরকে তোমাদের রাতের শেষ সলাতে পরিণত করবে।
বুখারী (অধ্যায় : বিতর, অনুঃ বিতরকে শেষ সলাত গণ্য করা, হাঃ ৯৯৮), মুসলিম (অধ্যায় : মুসাফিরের সলাত, অনুঃ রাতের সলাত দু’ দু’ রাক‘আত করে এবং তার শেষে বিতর এক রাক‘আত) আবু দাউদ ১৪৩৮)

এই হাদিসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামগন বলেছেনঃ
তোমাদের শেষ সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) হিসেবে বিতরের সলাত আদায় করো। (অর্থাৎ তাহাজ্জুদের শেষাংশে বিতর পড়)

উপরোক্ত হাদীস থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, বিতরের পর কোন সলাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করা শুদ্ধ নয়। তবে এ ব্যাপারে মুহাক্কিকদের দু’টি বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। (১) বিতরের পর বসা অবস্থায় দু’ রাক্‘আত সলাত আদায় করা শারী‘আত সম্মত, (২) যে ব্যক্তি বিতর রাতের প্রথমভাগে আদায় করে নিবে এবং গভীর রাতে নফল সলাতের ইচ্ছা করবে, তাহলে রাতের প্রথমভাগে আদায়কৃত বিতর কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? নাকি এক রাক্‘আত সলাত আদায় করার মাধ্যমে তার রাতের প্রথমভাগের আদায়কৃত বিতর ভেঙ্গে দিতে হবে? অতঃপর নফল সলাত আদায় করার পর আবার কি বিতর আদায় করা প্রয়োজন? নাকি প্রয়োজন নয়। এ ব্যাপারে অধিকাংশ ‘উলামাগণ যথাক্রমে চার ইমাম, সাওরী ও ইবনু মুবারাকসহ অনেকেই বলেছেন যে, দু’ দু’ রাক্‘আত করে ইচ্ছামত সলাত আদায় করবে বিতর ভাঙ্গার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এক রাত্রিতে দু’বার বিতর পড়া বৈধ নয়। (আহমাদ, আত্ তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, সহীহ ইবনু হিব্বান, সহীহ ইবনু খুযায়মাহ্-এর রিওয়ায়াতে হাদীসটি রয়েছে)

তবে কেউ কেউ বলেছেন যে, বিতর ভাঙ্গা জায়িয। তারা বলেন যে, বিতরের উপর (দু’ বার) বিতর পড়ে তা ভেঙ্গে দিয়ে ইচ্ছামাফিক নফল সলাত আদায় করার পর পুনরায় বিতর আদায় করতে হবে।

তবে প্রথম মতই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং সর্বাধিক সহীহ; কেননা অপর বর্ণনায় রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের পরেও সলাত আদায় করেছেন এবং তুহফা প্রণেতা এ মাসআলার ব্যাপারে দৃঢ় মতামত দিয়েছেন যে, বিতর না ভাঙ্গাটাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয় মত এবং তিনি এও বলেছেন যে, বিতর ভাঙ্গার সপক্ষে সহীহ হাদীস দ্বারা কোন প্রমাণ আমি পাইনি।

ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বিতর ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে দলীল গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, اجْعَلُوا শব্দটি أمر আর أمر -এর মৌলিকত্বটা ওয়াজিবের জন্য। কাজেই বিতর ওয়াজিব। তার জবাব তিনভাবে দেয়া যায়।

(১) أمر যদিও وجوب বা আবশ্যকতার জন্য, কিন্তু যখন কোন قرينة বা আলামত পাওয়া যায় তবে তা وجوب বা আবশ্যকতা থেকে غير وجوب বা অনাবশ্যকতার দিকে স্থানান্তরিত হয়। তাছাড়া হানাফী ‘উলামাগণ স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে, এ হাদীসে اجْعَلُوا শব্দটি أمر বা আবশ্যকতার জন্য নয়। মুল্লা ‘আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন, এ হাদীসে اجْعَلُوا শব্দটি বৈধতার জন্য ব্যবহার হয়েছে।

(২) নিশ্চয়ই রাতের সলাত ওয়াজিব নয়। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন যে, রাতের সলাত ওয়াজিব নয় কাজেই রাতের শেষটাও (অর্থাৎ বিতর) অনুরূপ, তথা ওয়াজিব নয়। আর মৌলিক বিষয় সর্বদাই অনাবশ্যক থাকবে যতক্ষণ না আবশ্যক হওয়ার প্রমাণ না পাওয়া যাবে।

(৩) নিশ্চয়ই যদি এ হাদীস দ্বারা বিতর ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় তাহলে ইবনু ‘উমার (রাঃ) অবশ্যই তা বলতেন এবং কোন ধরনের ছাড় দেয়া ছাড়াই তিনি ফাতাওয়া দিতেন। কিন্তু তিনি শুধু এতটুকুই বলতেন, ‘‘নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতর আদায় করেছেন এবং মুসলিমগণ বিতর আদায় করেছেন’’। (সহীহ মুসলিম)
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি শেষ রাতে  তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারবেন।   
পুনরায় বিতর নামাজ আদায় করতে হবেনা। 

(০২)
প্রশ্নে উল্লেখিত হুকুমটি পুরুষদের জন্য,নারীদের জন্য সেই হুকুম নয়।
কারন তাদের ব্যাপারে আলাদা হাদীস আছে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

আলী ইবনে আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, سئل عن صلاة المرأة নারীর নামায সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন,

إذا سجدت المرأة فلتحتفز ولتلصق فخذيها ببطنها

“নারী যখন সিজদা করবে তখন যেন সে জড়সড় হয়ে সিজদা করে এবং তার দুই উরু পেটের সাথে মিলিয়ে রাখে।” -মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক ৫০৭২; মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ২৭৭৭

ইমাম বায়হাকী রাহ. তাঁর ‘আসসুনানুল কুবরা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

إذا جلست المرأة في الصلاة وضعت فخذها على فخذها الأخرى وإذا سجدت ألصقت بطنها في فخذيها كأستر ما يكون لها وإن الله تعالى ينظر إليها ويقول يا ملائكتي أشهدكم أني قد غفرت لها.

“নারী যখন নামাযে বসবে তখন তার এক উরু অন্য উরুর উপর রাখবে। আর যখন সিজদা করবে তখন তার পেটকে উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে। আল্লাহ পাক ঐ নারীর দিকে তাকান এবং বলেন, হে ফিরিশতাগণ! আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি”। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৩১৯৯

ইমাম আবু দাউদ রাহ. তাঁর কিতাবুস সুনানের কিতাবুল মারাসীলে বিখ্যাত ইমাম ইয়াযিদ ইবনে আবী হাবীব রাহ.-এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন যে,

أن النبى مر على امرأتين تصليان فقال : اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فان المرأة ليست فى ذلك كالرجل.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুইজন মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তারা নামায পড়ছিল। তিনি তাদের বললেন, “যখন তোমরা সিজদা করবে তোমাদের শরীরের কিছু অংশ, (মানে পিছনের অংশ) মাটির সাথে মিলিয়ে রাখবে। কারণ নারী এই বিষয়ে পুরুষের মত নয়। ” -মারাসীলে আবু দাউদ, হাদীস ৮৭; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৩২০১; মারিফাতুস সুনানি ওয়াল আছার, বায়হাকী, হাদীস ৪০৫৪

বিস্তারিত জানুনঃ 
,
(০৩)
এখানে একটি বিষয় সকলের কাছে স্পষ্ট যে বিভিন্ন মাযহাবে যে নামাজের মাসয়ালা নিয়ে ভিন্নতা রয়েছে,এর সবগুলিই সুন্নাত মুস্তাহাব সংক্রান্ত মাসয়ালা নিয়ে।
নামাজের ফরজ নিয়ে ইমামদের মাঝে কোনো মতবিরোধ নেই।
,
সুন্নাতের ক্ষেত্রে যেসব মতবিরোধ রয়েছে,এগুলো হাদীসের ভিন্নতার কারনে  হয়েছে।
,
রাসুলুল্লাহ সাঃ জীবনের শুরুতে কিছু নিয়ম ফলো করে নামাজ আদায় করতেন,সেটিও হাদীসে এসেছে,জীবনের শেষ দিকে তার নামাজের কিছু পদ্ধতি নসখ হয়ে গিয়েছে।
যেগুলোও হাদীসে এসেছে। 
এখন ইমামগন যেই হাদীসের আমলকে তার জিবনের শেষ দিকের আমল বলে পেয়েছেন,তারা সেই মত অনুযায়ী ফতোয়া পেশ করেছেন।
,
এটি ইজতিহাদ গত বিষয়।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 92 views
0 votes
1 answer 350 views
...