ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
(১)
ইশরাক নামাযের ফযিলতঃ
হযরত আনাস রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أنس، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من صلى الغداة في جماعة ثم قعد يذكر الله حتى تطلع الشمس، ثم صلى ركعتين كانت له كأجر حجة وعمرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تامة تامة تامة.(هذا حديث حسن غريب)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামায পড়বে,অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যিকিরে লিপ্ত থাকবে,তারপর দু'রাকাত নামায পড়বে,তাহলে সে একটি হজ্ব ও একটি উমরার সওয়াব পাবে।এরপর তিনি তাকিদ করে বলেন,হ্যা পূর্ণ হজ্ব ও উমরার সওয়াব সে পাবে।(সুনানু তিরমিযি-৫৮৬)
ইমাম তিরমিযি রাহ উক্ত হাদীসকে হাসান বলেছেন।তাছাড়া হযরত জবির রাযি থেকে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দৈনন্দিন আদত বা অভ্যাস বর্ণিত রয়েছে,
عن جابر بن سمرة، قال: كان النبي صلى الله عليه وسلم إذا صلى الفجر قعد في مصلاه حتى تطلع الشمس.
هذا حديث حسن صحيح
রাসূলুল্লাহ সাঃ ফজরের নামায পড়ার পর সূর্যোদয় পর্যন্ত জায়নামাযেই বসে থাকতেন।(সুনানু তিরমিযি-৫৮৫)অর্থাৎ ইশরাকের জন্যই বসে থাকতেন
এই হাদীস সমূহ দ্বারা ইশরাকের নামাযই উদ্দেশ্য। কেননা সূর্যোদয়ের দিনের প্রথমভাগে যে নামায পরা হয় সেটার নাম ইশরাক।
ইশরাক নামাযের সময়ঃ
ফরয নামাযের মত অনির্দিষ্ট করে নফল নামাযের শুরু এবং শেষ সীমানাকে রাসূলুল্লাহ সাঃ বর্ণনা করেননি।
তবে হযরত আলী রাযি থেকে এর সময় সীমা বর্ণিত রয়েছে,তিনি বলেন,
عن عاصم بن ضمرة، قال: سألنا عليا عن صلاة رسول الله صلى الله عليه وسلم من النهار؟ فقال: إنكم لا تطيقون ذاك، فقلنا: من أطاق ذاك منا، فقال: كان رسول الله صلى الله عليه وسلم إذا كانت الشمس من هاهنا كهيئتها من هاهنا عند العصر صلى ركعتين، وإذا كانت الشمس من هاهنا كهيئتها من هاهنا عند الظهر صلى أربعا، وصلى أربعا قبل الظهر وبعدها ركعتين، وقبل العصر أربعا، يفصل بين كل ركعتين بالتسليم على الملائكة المقربين، والنبيين، والمرسلين، ومن تبعهم من المؤمنين، والمسلمين
পূর্বদিগন্তে সূর্য যখন এ পরিমাণ উদয় হয়েছিলো,যতটুকু পশ্চিম দিগন্তে আসরের সময় থাকে,তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ দুই রাকাত নামায পড়তেন।এবং পূর্বদিগন্তে সূর্য যখন এ পরিমাণ উদয় হয়েছিলো,যতটুকু পশ্চিম দিগন্তে যোহরের সময় থাকে,তখন রাসূলুল্লাহ সাঃ চার রাকাত নামায পড়তেন।এছাড়া রাসূলুল্লাহ সাঃ যোহরের ফরযের পূর্বে চার রা'কাত ও পরে দু'রাকাত এবং আছরের পূর্বে চার রা'কাত সুন্নত পড়তেন।প্রত্যেক দু'রাকাতের পর ফিরিস্তার, আম্বিয়া,এবং পরবর্তী উম্মতের উপর সালাম তথা তাশাহুদ পড়তেন।
(সুনানু-তিরমিযি-৫৯৮)
এখানে প্রথম নামায দ্বারা ইশরাকের নামায উদ্দেশ্য আর দ্বিতীয় নামায দ্বারা চাশতের নামায উদ্দেশ্য।
ইমাম গাযযালী রাহ,বলেন,ইশরাকের নামায ঐ সময় পড়া হবে,যখন সূর্য এক নে'যা পরিমাণ উচুতে উঠবে।আর দিনের এক চতুর্থাংশ চলে যাবার পর চাশতের নামায পড়া হবে।(এহইয়াউল উলূম-১/১৯৭)
সহজ কথায়,সূর্যোদয়ের পর মাকরুহ ওয়াক্ত অতিবাহিত হওয়ার পর যেকেনো মূহুর্তে ইশরাকের নামায পড়া যাবে।আর সূর্যোদয় এবং যাওয়ালের ঠিক মধ্যবর্তী সময়-ই চাশতের নামাযের জন্য উত্তম।
ইশরাক নামাযের রা'কাত সংখ্যাঃ
ইশরাকের নামায রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে দু'রাকাত প্রমাণিত রয়েছে।যেমন ইতিপূর্বে হযরত আলী রাযি বর্ণনায় রয়েছে।এবং হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি থেকেও দু রা'কাতের এক বর্ণনা রয়েছে।
অন্য এক বর্ণনায় চার রা'কাতের কথাও এসেছে।যেমন হযরত আবু-দারদা এবং হযরত আবু যর রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أبي الدرداء، وأبي ذر، عن رسول الله صلى الله عليه وسلم عن الله تبارك وتعالى أنه قال: ابن آدم اركع لي أربع ركعات من أول النهار أكفك آخره.
هذا حديث حسن غريب.
হে বনী আদম!আমার জন্য দিনের প্রথমাংশে চার রা'কাতের গুরুত্ব দাও,আমি দিনের শেষাংশ পর্যন্ত তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবো।(সুনানু তিরমিযি-৪৭৫)
সালাতুদ-দোহা/ চাশতের নামাযের ফযিলতঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাযি থেকে বর্ণিত,
عن أنس بن مالك، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من صلى الضحى ثنتي عشرة ركعة بنى الله له قصرا من ذهب في الجنة.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি চাশতের ১২রা'কাত নামায পড়বে,আল্লাহ তা'আলা তার জন্য জান্নাতে স্বর্ণের একটি প্রসাদ নির্মাণ করে দেবেন।(সুনানু তিরমিযি-৪৭৩)
সালাতুদ-দোহা/চাশতের নামাযের সময়ঃ
চাশতের নামায যা ফুকাহায়ে কেরামদের নিকট সালাতুয-যুহা নামে পরিচিত, এ নামাযের সময়সূচী সম্পর্কে দুররুল মুখতারে বর্ণিত আছে,
(وَ) نُدِبَ (أَرْبَعٌ فَصَاعِدًا فِي الضُّحَى) عَلَى الصَّحِيحِ مِنْ بَعْدِ الطُّلُوعِ إلَى الزَّوَالِ وَوَقْتُهَا الْمُخْتَارُ بَعْدَ رُبُعِ النَّهَارِ.
وَفِي الْمُنْيَةِ: أَقَلُّهَا رَكْعَتَانِ وَأَكْثَرُهَا اثْنَيْ عَشَرَ، وَأَوْسَطُهَا ثَمَانٍ
ভাবার্থঃ
বিশুদ্ধতম মতানুযায়ী চার রাকাত বা তার চেয়ে বেশী সালাতুয-যুহা (চাশতের নামায)পড়া মুস্তাহাব।সূর্যোদয়ের পর থেকে নিয়ে যাওয়ালে সূর্য বা মাথার উপর থেকে সূর্য পশ্চিমদিকে হেলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময়ে ভিতর। উত্তম হচ্ছে দিনের এক চতুর্থাংশ চলে যাবার পর পড়া।মুনয়া কিতাবে বর্ণিত আছে
সর্বনিম্ন ২রাকাত ও সর্বোচ্ছ ১২ রাকাত এবং মধ্যম হচ্ছে ৮ রাকাত।
দুররুল মুখতার-২/২২
২থেকে ১২ রাকাত যে কোনোটা পড়া যাবে।
ফাতাওয়া রহিমিয়্যাহ-৪/৮৩।
কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/৩৬৩
সালাতুদ-দোহা/চাশতের নামাযের রা'কাত সংখ্যাঃ
হযরত উম্মে হানি রাযি থেকে বর্ণিত,
عن عبد الرحمن بن أبي ليلى، قال: ما أخبرني أحد أنه رأى النبي صلى الله عليه وسلم يصلي الضحى، إلا أم هانئ، فإنها حدثت أن رسول الله صلى الله عليه وسلم دخل بيتها يوم فتح مكة فاغتسل، فسبح ثمان ركعات، ما رأيته صلى صلاة قط أخف منها، غير أنه كان يتم الركوع والسجود.
রাসূলুল্লাহ সাঃ মক্কা বিজয়ের দিন উনার ঘরে প্রবেশ করেন,অতঃপর গোসল করেন,তারপর আট রাকাত চাশতের নামায পড়েন।আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে এত তারাতারি নামায পড়তে কখনো দেখিনি।তবে রুকু সেজদা ভালোভাবে করেছেন।সুনানু তিরমিযি-৪৭৪
তবে সাধারণত রাসূলুল্লাহ সাঃ সর্বদা চার রাকাতই চাশতের নামায পড়তেন।যেমন হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে,
عن معاذة، أنها سألت عائشة رضي الله عنها، كم كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلي صلاة الضحى؟ قالت: «أربع ركعات ويزيد ما شاء».
হযরত আয়েশা রাযি কে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর চাশতের নামাযের সংখ্যা নিয়ে জিজ্ঞাসা হলে তিনি জবাবে বলেন,রাসূলুল্লাহ সাধারণত চার রা'কাত চাশতের নামায পড়তেন।তবে কখনো কখনো এর চেয়েও বেশী পড়তেন।(সহীহ মুসলিম-৭১৯)বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://www.ifatwa.info/1929
(২) জ্বী মাগরিব সহ আগের নামায কাযা করতে হবে।
(৩)
নিম্নস্বরে পড়াতে হবে, যাতে পরপুরুষরা শুনতে না পারে।