আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
288 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (45 points)

1. How to recreate onleself by following the sunnah of the rasul and change the habits. Everyone gives tips but I want to know how rasul give us the way to change the habits by taking some good steps. Today we live in a toxic environment but It is really hard to change ourselves. Some people say yoga can do the job. But it is not permissible in islam.

2. Is In vitro fertilization is halal ? t involves retrieving eggs from a woman's ovaries and fertilizing them with sperm. This fertilized egg is known as an embryo. The embryo can then be frozen for storage or transferred to a woman's uterus. Today a vast nuumber of people are using it ?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
নিন জীবনে সুন্নাহর অনুকরণ এর জন্য সেই আমলের পরিবেশে থাকতে হবে।  
এক্ষেত্রে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন।   
বা কোনো হক্কানী শায়েখের কাছে যেতে পারেন।
,
ইনশাআল্লাহ উপকার হবে।  

(০২)
‘আইভিএফ’ তথা In vitro fertilization 
 ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন,টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে আমরা উইকিপিডিয়াত মাধ্যমে তথ্য পেয়েছি যে,

 এটি কাঁচের ভেতর নিষেক (ভিট্রো = কাঁচ, ইন ভিট্রো = কাঁচের ভেতর) বা টেস্ট টিউব পদ্ধতি হচ্ছে মানবদেহের বাইরে শুক্রাণুর দ্বারা ডিম্বাণু নিষিক্ত করার পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে অনেক নিঃসন্তান নারী সন্তান লাভ করে থাকেন অাবার অনেক নারী সারোগেসি বা নিজ গর্ভ ভাড়া দিয়ে তাতে অন্য দম্পতির নিষিক্ত ভ্রুণ (সন্তান) ধারণ ও লালন করেন। 
,
আই.ভি.এফ (IVF) বা টেস্ট টিউব চিকিৎসা পদ্ধতির সফল পদযাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালে যুক্তরাজ্যে লুইস ব্রাউনের জন্মের মধ্য দিয়ে। এই বাচ্চাটির ক্ষেত্রে নিষেক করা হয়েছিল একটি টেস্ট টিউবে। প্রকৃতপক্ষে ভ্রণ টেস্টটিউবে বেড়ে ওঠে না, বাড়ে মায়ের জরায়ুতেই আর দশটি বাচ্চার মতোই। এ পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু আর নারীর ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণটুকুই শুধু স্বাভাবিক পদ্ধতিতে না হয়ে দেহের বাইরে হয়। স্ত্রীর ডিম্বপাত বা ওভুলেশনের সময় ডিম্বাণু যখন পরিপক্ব হয়, তখন তা ডিম্বাশয় থেকে বের করে আনা হয় ল্যাপারোস্কপি নামের এক পদ্ধতির মাধ্যমে। যে সব নারীর ডিম্ব উৎপাদনে সমস্যা, তাদের ক্ষেত্রে প্রথমে ডিম্ব উৎপাদনে সহায়তা করে এমন কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ল্যাপারোস্কপি ছাড়াও যোনিপথে ছোট্ট একটি অপারেশনের মাধ্যমেও ডিম্বাণু সংগ্রহ করা যায়। সংগ্রহের পর ডিম্ব রাখা হয় টেস্ট টিউব অথবা বিশেষ ধরনের একটি পাত্রে যার নাম পেট্রিডিশ। 
,
এদিকে স্বামীর শুক্রাণু সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। পরে ডিম্বাণুসহ সেই ডিশ বা টিউবে শুক্রাণু রাখা হয়। এ সময় একটি ডিম্বাণুর বিপরীতে থাকে প্রায় পঁচাত্তর হাজার শুক্রাণু। এরপর ডিশ বা টিউবটি কয়েক ঘণ্টা রাখা হয় ইনকিউবিটরে। ইনকিউবেটরের পরিবেশ রাখা হয় জরায়ুর অনুরূপ। এখানে উপযুক্ত শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে মানব ভ্রুনের সৃষ্টি হয়। 
,
তারপর বিশেষ নলের সাহায্যে স্ত্রীর জরায়ুতে রাখা হয় ভ্রণটি। অনেক ক্ষেত্রে, ভ্রণকোষটি জরায়ুতে প্রতিস্থাপনের আগে বিশেষ প্রক্রিয়ায় হিমায়িত করে রাখা হয় কিছুদিন। বিশেষতঃ যাদের ক্ষেত্রে ডিম্ব উৎপাদন করা হয় ওষুধের সাহায্যে, তাদের জরায়ুর প্রকৃতি ঐ মাসিক চক্রে স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা কম থাকে। সে কারণে ভ্রণ প্রতিস্থাপনের জন্য পরবর্তী স্বাভাবিক মাসিক চক্রের জন্য অপেক্ষা করা হয়। সব ভ্রণ অবশ্য কাজে লাগানো হয় না। গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে এদের গুণগত মান পরীক্ষা করে স্কোরিং করা হয়। ভ্রণে কোষের সংখ্যা যথাযথ বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির গতির উপর ভিত্তি করে উপযুক্ত ভ্রণ বাছাই করা হয়।
,
,
★★এক্ষেত্রে ইসলামের বিধানঃ 
 
টেষ্ট টিউবের মাধ্যমে প্রজনন
 
ডাক্তারী বিষয়ে প্রযুক্তিগত উন্নতী যেসব নতুন ফিক্বহী মাসআলার উদ্ভব করেছে তার মাঝে অন্যতম একটি মাসআলা হল “টেষ্টটিউবের মাধ্যমে প্রজনন”। এই উদ্ভাবন অনেক নোংরামীর দরজাকে খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে সন্তান বঞ্চিত লোকদের জন্য এটি শুনাচ্ছে আশার বাণী। সচেতন নাগরীক হিসেবে আমাদের এ সকল বিষয়ে নোংরামী এবং খারাবীর দিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সাথে সাথে সত্যান্বেষী হিসেবে এটিরও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন যে, যদি এর কোন জায়েজ সুরত থাকে, সেটিকে অযথা না জায়েজ বলা থেকে বিরত থাকা। সেই সাথে কোন সুরত যদি জায়েজ হয়, তাহলে তৎসংশ্লিষ্ট ফিক্বহী হুকুম ও তার প্রভাবের ব্যাপারেও রাখতে হবে তীক্ষ্ণ নজর।
 
স্ত্রী ছাড়া অন্য মহিলার ডিম্বানু সংমিশ্রণ
 
মৌলিকভাবে টেষ্টটিউবের মাধ্যমে প্রজননের দু’টি পদ্ধতি। একটি হল-অপরিচিতা মহিলা ও পুরুষের ডিম্বানু ও শুক্রানো মিশ্রণ করে প্রজনন করা। চাই এ দুই অপরিচিত উৎসগিরি [ডিম্বানু ও শুক্রানু] কোন টিউবে একত্র করা হোক, বা সেই মহিলার জরায়ুতে বা অন্য কোন মহিলার জরায়ুতে হোক। অথবা সেই পুরুষের নিয়মসিদ্ধ ও শরয়ীতসিদ্ধ স্ত্রীর জরায়ুতে তা ফিট করা হোক।
এ পদ্ধতিটি একদমই না জায়েজ। কেননা এতে করে প্রজননে সংমিশ্রণ ঘটে। আর ব্যভিচারের মূল নিষিদ্ধতা এ কারণেই। এ ব্যাপারে স্পষ্ট বর্ণনা আছে-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-
عَنْ رُوَيْفِعِ بْنِ ثَابِتٍ الأَنْصَارِىِّ قَالَ قَامَ فِينَا خَطِيبًا قَالَ أَمَا إِنِّى لاَ أَقُولُ لَكُمْ إِلاَّ مَا سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ يَوْمَ حُنَيْنٍ قَالَ « لاَ يَحِلُّ لاِمْرِئٍ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ يَسْقِىَ مَاءَهُ زَرْعَ غَيْرِهِ (سنن ابى داود-كتاب النكاح، باب فِى وَطْءِ السَّبَايَ، رقم الحديث-2160)

অনুবাদ-হযরত রুয়াইফি বিন সাবিত আনসারী রাঃ একদা খুতবাদানকালে বলেন-আমি কি তোমাদের বলব না যা আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি হুনাইন যুদ্ধের দিন? তিনি বলেছেন-আল্লাহ ও আখেরাত বিশ্বাসী কোন ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় যে, সে তার পানি [বীর্য} দিয়ে অন্য কারো জমি [জরায়ু] প্রবাহিত করবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৬০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৯৯০, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৭৪৯, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪৪৮২}
 
এ মিশ্রণ থেকে বাঁচার জন্যই বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার পর স্ত্রীর উপর ইদ্দত পালনকে আবশ্যক করা হয়েছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ লিখেন-
منها معرفة براءة رحمها من مائه ، لئلا تختلط الأنساب ، فان النسب  أحد ما يتشاح به ، ويطلبه العقلاء ، وهو من خواص نوع الانسان ، ومما  امتاز به من سائر الحيوان ، (ححة الله البالغة، كتاب النكاح، باب العدة-2/13)

অনুবাদ-ইদ্দত পালনের উপকারিতার মাঝে এটাও একটা যে, এর দ্বারা মহিলার জরায়ু পূর্ব স্বামীর উৎসগিরি [ডিম্বানু] থেকে মুক্ত হওয়া বুঝা যায়। যেন বংশে সংমিশ্রণ সৃষ্টি না হয়। কেননা বংশ এটি এমন বিষয় যার কামনা করা হয়। আর জ্ঞানীরা যার অনুসন্ধানী। যা মানুষের বিশেষত্ব। এর মাধ্যমে মানুষ অন্য প্রাণী থেকে বৈশিষ্টমন্ডিত। {হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা-২/১৩}
 
সুতরাং পুরুষ ও নারীর উৎসগিরির সংমিশ্রণের সকল পদ্ধতিই গোনাহের কাজ। আর হুকুমের দিক থেকে ব্যভিচার। তবে যেহেতু হদ [শরীয়ত নির্দিষ্ট শাস্তি] সাধারণ সন্দেহর কারণেও বাদ হয়ে যায়, আর এখানে সেই সন্দেহ বিদ্যমান। কেননা ব্যভিচার হল দুই গায়রে মাহরামের মাঝে না জায়েজ শারিরিক কর্ম অর্থাৎ শারিরিক সম্পর্কের নাম, আর এ পদ্ধতিতে উক্ত বিষয়টি বাহ্যিকভাবে অনুপস্থিত। এছাড়াও ব্যভিচারের মাঝে পুরুষ ও নারী একজন অপরজনের শরীর উপভোগ করে। আর এ প্রকারের যান্ত্রিক কাজে সে ধরণের শারিরিক মজা অনুভূত হয় না, তাই জিনার নির্ধারিত হদ তথা শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি কার্যকর হবে না।
,
কিন্তু যেহেতু এ কর্মটি মৌলিকত্বের দিক থেকে ব্যভিচারের মতই ক্ষতিকর। তাই বিচারক এ কারণে ন্যায্য শাস্তি প্রয়োগ করবে।
যদি সে মহিলাটি কোন পুরুষের স্ত্রী থাকা অবস্থায় অন্য কোন পুরুষের বীর্য দ্বারা অন্তসত্মা হয়,অথবা সন্তান জন্ম দেয়, তাহলে সে সন্তানের বংশ স্ত্রীর আসল স্বামী থেকেই হবে। কারণ বংশ প্রমাণের অধ্যায় ফিক্বহী মুলনীতি হল-যা রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-

عنأبى هريرة  : قال النبي صلى الله عليه و سلم ( الولد للفراش وللعاهر الحجر (صحيح البخارى-كتاب الحدود، باب للعاهر الحج، رقم الحديث- 6432)

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-সন্তান হবে তার বিছানা হল যার, আর লম্পটের জন্য হল পাথর নিক্ষেপন। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৪৩২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩৬৮৮, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪৩১৪}
 
আর স্ত্রীকে তার স্বামীর বিছানা নির্ধারিত করা হয়েছে [হেদায়া-২/৪৩, বাবু সুবুতিন নাসাব]। এমনকি অবিবাহিত মেয়েও যদি এ পদ্ধতিতে মা হয়, তাহলেও সে পুরুষ থেকে বাচ্চার বংশ প্রমাণিত হবে না, যার বীর্য দ্বারা সে গর্ভ ধারণ করেছে, বরং বংশ সাব্যস্ত হবে জন্মদায়িনী মেয়ের পক্ষ থেকে। যেমন ব্যভিচারের দ্বারা জন্ম নেয়া বাচ্চার হুকুম।
,
হ্যাঁ, যদি কোন অপরিচিত মেয়ের ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়, তারপর তা কোন পুরুষের শুক্রানুর সাথে টিউবের মাঝে সংমিশ্রণ করা হয়। তারপর পরাগায়িত সংমিশ্রণটি সেই পুরুষের বৈধ স্ত্রীর গর্ভে স্থানান্তর করা হয়। আর তার স্ত্রী তা গর্ভে ধারণ করে, তাহলে এ থেকে জন্ম নেওয়া বাচ্চার মা হবে সে গর্ভধারণকারী মহিলা। কেননা কুরআনে মা সে মহিলাকে বলা হয়েছে যে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে। {সূরা মুজাদালা-২)
যখন পুরুষটির স্ত্রী মা হল, তখন বাচ্চা তার বিছানা থেকেই হল, এজন্য লোকটি বাচ্চার পিতা সাব্যস্ত হবে। আর গর্ভে ধারণকারী মায়ের স্বামী থেকেই বংশ প্রমাণিত হবে।
,
থেকে গেল সে মহিলার কথা, যার ডিম্বানু প্রজননের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, সে মহিলার অবস্থান মা হিসেবে হবে না। কেননা শরীয়তে এতটুকু প্রমাণই যথেষ্ঠ নয় যে, প্রসূত বাচ্চা কারো অংশ হওয়া। বরং এটাও জরুরী যে, স্বীয় প্রজননে যে পুরুষ-নারীর অংশ হল সেটা জায়েজ ও হালাল পদ্ধতিতে হতে হবে। এ কারণেই ব্যভিচারের দ্বারা বংশ প্রমাণিত হয় না। অথচ প্রসূত বাচ্চা ব্যভিচারীর অংশ থেকেই হয়েছে। আর দুগ্ধপানের সময়সীমা দুই বছর অতিক্রান্তের পর মহিলার দুধ পান করলে দুধ মায়ের সম্পর্ক সাব্যস্ত হয় না, যেহেতু এ দুগ্ধপান শরীয়তসিদ্ধ ও বৈধ পদ্ধতিতে হয়নি। তবে যেহেতু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে বিবাহ হারাম হওয়ার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, তাই ব্যভিচারের দ্বারাও বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়। এ কারণে প্রসূত বাচ্চার জন্য যার শুক্রানু দ্বারা বাচ্চার প্রজনন হল তার সকল খান্দানের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হয়, তেমনি যে মহিলার ডিম্বানু দ্বারা প্রজনন হল সেই মহিলার খান্দানের সাথে বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হবে। ঠিক তেমনি সেই মহিলার খান্দানের সাথেও বিবাহ হারাম হওয়া সাব্যস্ত হবে, যার গর্ভে বাচ্চাকে ধারণ করে প্রসবের কষ্ট সহ্য করেছে।
 
স্বামী স্ত্রীর উৎসগিরি [শুক্রানু ও ডিম্বানু] সংমিশ্রণ
 
দ্বিতীয় পদ্ধতি হল-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরিকে সংমিশ্রণের মাধ্যমে প্রজনন করা। এর তিনটি পদ্ধতি হতে পারে-
১-স্বামীর শুক্রানু ইনজেকশনের দ্বারা স্ত্রীর গর্ভে পৌঁছানো।
২-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরি [শুক্রানু ও ডিম্বানু] সংগ্রহ করে তা টিউবে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাখা হবে। তারপর সেটি মহিলার গর্ভে স্থানান্তরিত করা হবে।
৩-স্বামী ও স্ত্রীর উৎসগিরি সংগ্রহ করে সেই স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভে স্থানান্তরিত করে দেয়া হবে। এ কারণে যে, প্রথম স্ত্রী গর্ভ ধারণে সক্ষম না হয় অসুস্থতার কারণে বা অক্ষমতার কারণে।
,
এ পদ্ধতিগুলোতে একটি প্রশ্নতো এটি হয় যে, এ পদ্ধতিগুলো কি শুধুমাত্র সন্তানের বাবা-মা হওয়ার আগ্রহ ও মনের প্রশান্তির কারণে জায়েজ হবে?
দ্বিতীয়ত প্রসূত সন্তানের বংশ পিতা-মাতা থেকে প্রমাণিত হবে?
তৃতীয়ত তৃতীয় পদ্ধতিতে প্রসূত সন্তানের মা কে হবে? যার ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়েছে সে হবে মা? না কি যার গর্ভে লালিত হয়েছে ভ্রুণ এবং যে সন্তান ধারণের কষ্ট সহ্য করেছে সে হবে মা?
 
প্রথমে আমাদের এটা ভাবতে হবে যে, এমন করা জায়েজ আছে কি না?
যারা এ পদ্ধতিগুলোকে না জায়েজ বলেন এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য হল ৩টি। যথা-
১-পুরুষকে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্য বের করার দরকার হবে। আর হস্তমৈথুন করা জায়েজ নয়।
২-পুরুষ ও নারীর সতর খুলতে হবে। বিশেষ করে নারীরতো হবেই। আর চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রয়োজন ছাড়া ডাক্তারের সামনেও সতরহীন হওয়া জায়েজ নয়।
৩-এ পদ্ধতিটি স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ কাজ। আর শরীয়তের আম নীতি হল-স্বাভাবিক রীতির বিরোধী বিষয়কে বাঁধা দেয়।
 
হস্তমৈথুনের বিষয়টিতো শরীয়ত সুনিশ্চিত নিষিদ্ধ করেছে। আর জমহুর ফুক্বাহারা এটাকে না জায়েজ বলেছেন। কিন্তু যেখানে তীব্র প্রয়োজন হয়, সেখানে এটাকে জায়েজ ও বলেছেন। আব্দুর রশীদ তাহের বুখারী রহঃ লিখেন-
ولا يحل هذا الفعل خارج رمضان ان قصد قضاء الشهوة وان قصد تسكين الشهوة أرجو أن لا يكون عليه وبال (خلاصة الفتاوى-1/26)

অনুবাদ-এ কর্মটি [হস্তমৈথুন] রমযান ছাড়া অন্য সময়ে [রমযানের মতই] হালাল হবে না, যদি মনের কুপ্রবৃত্তির জন্য এমনটি করে। তবে যদি উন্মদনার প্রাবল্যতা কমাতে এমনটি করে তাহলে আশা করা যায় কোন শাস্তি হবে না। (খুলাসাতুল ফাতওয়া-১/২৬)
 
আমাদের জমানার ডাক্তারী গবেষণা, ও পরীক্ষার জন্য এর অনুমতি দেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
কথা হল-সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া একটি স্বভাবজাত আগ্রহ। আর কখনো কখনো এ আগ্রহ এতটাই বেড়ে যায় যে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে তা জরুরতের পর্যায়ে উপনীত হয়ে যায়।
,
অন্যান্য ফুক্বাহায়ে কিরাম কিছু এমন কাজকে জায়েজ বলেছেন-যা পরিণতির দিক থেকে একেবার হস্তমৈথুনের মতই। যেমন-আজল করা তথা স্ত্রীর সাথে এমনভাবে সহবাস করা যে, যখন বীর্য স্খলীত হওয়ার সময় হয়ে যাবে, তখন বিশেষ অঙ্গ বের করে বাহিরে বীর্যপাত করা। ভিতরে নয়। হানাফীদের মতে এ পদ্ধতিটি জায়েজ। হস্তমৈথুনে যেমন উত্তেজনা প্রশমিত করা হয়, আর বীর্যকে করা হয় নষ্ট, তেমনি আজল করে উত্তেজনা প্রশমিত করা হয়, আর বীর্যকে নষ্ট করা হয়। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, মহিলার শরীর দ্বারা আনন্দ লাভ করার বদলে হস্তমৈথুনে স্বীয় হাতে আনন্দ লাভ করে।
,
হস্তমৈথুন নিষিদ্ধতার কারণ হল-এভাবে মানুষ প্রাণ সঞ্চারী বীর্যকে মূল কাজে ব্যবহার না করে উদ্দেশ্যহীন ব্যবহার করে এবং অযথা নষ্ট করে। এবার ভেবে দেখুন-যদি বৈজ্ঞানিক প্রজননের জন্য হস্তমৈথুন করা হয়, তাহলে এর উদ্দেশ্যই পাল্টে যাচ্ছে। এখানে হস্তমৈথুন দ্বারা প্রাণ সঞ্চারী বস্তুকে নষ্ট করা নয়। বরং এটাকে ফলবান ও কার্যকরি করার জন্যই করা হচ্ছে। তাই এ পদ্ধতিটি নিষিদ্ধতার অধীনই নয়।
 
দ্বিতীয় কারণ তীব্র প্রয়োজন ছাড়া সতরহীন হওয়া জায়েজ নয়। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি একটি শক্তিশালী কারণ, যা তা নিষিদ্ধ হওয়ার উপর দাঁড় করানো যায়। কিন্তু চিন্তা করুন-এক হল সন্তান লাভ করা একটি অনিস্বিকার্য তীব্র আকাংখা হয়। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। সন্তানহীনতার প্রভাব মহিলাদের অনেক সময় শারিরিক-মানসিক বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত করে দেয়। কখনো কখনো স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ব্যাপারটি একটি শক্ত মন কষাকষির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি বিচ্ছেদের মত ঘটনাও ঘটে থাকে। কখনো নাজায়েজ পদ্ধতিতে গর্ভ হওয়ার মত গোনাহে লিপ্ত হওয়ার বাসনাও মনে জাগরিত করে তোলে।
,
এ কারণে এ ব্যাপারটি সাধারণ মহিলাদের জন্য এটা বলা যায় যে, এটা জরুরী নয়। কিন্তু কিছু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে তা জরুরতের পর্যায়ভূক্ত হতে পারে।
এবার যখন আমরা ফিক্বহী ইবারত দেখি, তখন স্পষ্ট জানা যায় যে, কিছু এমন সুরতেও সতরহীন হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে যেটা মূলত কোন কঠিন অসুখ নয়, কিন্তু সম্ভাবনার সাথে কঠিন অসুখ হতে পারে, যেমন সন্তানহীনতা কখনো কঠিন রোগের কারণ হতে পারে, আল্লামা সারখসী রহঃ লিখেন-
فى المبسوط- وقد روي عن أبي يوسف رحمه الله تعالى أنه إذا كان به هزال فاحش وقيل له أن الحقنة تزيل ما بك من الهزال فلا بأس بأن يبدي ذلك الموضع للمحتقن وهذا صحيح فإن الهزال الفاحش نوع مرض يكون آخره الدق والسل (المبسوط السرخسى- كتاب المبسوط – الجزء العاشر-1/156)

অনুবাদ-ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ থেকে বর্ণিত। যদি কারো চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বলতা দেখা দেয়, আর তাকে বলা হয় যে, ইঞ্জেকশন পুশ করার দ্বারা তার দুর্বলতা দূরিভূত হতে পারে, তাহলে তার জন্য কোন সমস্যা নেই ইঞ্জেকশনের জন্য সে স্থান [পায়খানার স্থান] খুলে দেয়াতে। আর সঠিক কথা হল অধিক দুর্বলতাও একটি অসুখ। যার সমাপ্তি চিকন হয়ে যাওয়া বা যক্ষ্মা দ্বারা হয়। {মাবসূতে সারাখসী-১/১৫৬}
 
এ রায়টিতো কাযী আবু ইউসুফ রহঃ এর।
যৌনশক্তি বৃদ্ধি ফুক্বাহাদের বর্ণানাভঙ্গি দ্বারাতো জরুরতের অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত হয় না, যেমন খোদ সারাখসী রহঃ ই তা জরুরতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা অস্বিকার করেছেন। কিন্তু ফিক্বহের এক মহান উদ্ভাবক ইমাম শাফী রহঃ এর নিকট যৌনশক্তি বৃদ্ধির জন্যও ইঞ্জেকশন দেয়া, এবং ইঞ্জেকশনদাতার সামনে আব্রুহীন হওয়া জায়েজ। সারাখসী রহঃ নিজেই বর্ণনা করেন-
وحكي عن الشافعي رحمه الله تعالى قال إذا قيل له أن الحقنة تقويك على المجامعة فلا بأس بذلك أيضا (المبسوط السرخسى- كتاب المبسوط – الجزء العاشر-1/156)     

অনুবাদ-ইমাম শাফী রহঃ থেকে বর্ণিত। যদি অসুস্থকে বলা হয় যে, তাকে ইঞ্জেকশন দিলে তার ভিতরে যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে, তাহলে ইঞ্জেকশন দেয়া দেয়া জায়েজ। {মাবসুতে সারখসী-১/১৫৬}
 
[বিঃদ্রঃ এখানে আরবী ইবারতের হুকনা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চাদ্দেশে অসুধ প্রবিষ্ট করানো। যার অনুবাদ করা হর ইঞ্জেকশন বলে।]
 
কখনো ফুক্বাহায়ে কিরাম সুন্নাত আদায়ে বা এমন বিষয়ের জন্যও সতরহীন হওয়ার অনুমোদনের কথা বলেছেন যা শুধু মুবাহ বিষয় বা একবার করার যোগ্য।
পুরুষের খতনা করা সুন্নাত। কিন্তু সতরহীন হওয়া হারাম। আর মহিলাদের খাতনা করা জায়েজ, কিন্তু ফুক্বাহায়ে কিরাম একেও প্রয়োজন ও ওজরের সীমারেখায় প্রবিষ্ট করিয়েছেন। আর এজন্য সতরহীন হওয়ার অনুমতি দিয়ে থাকেন।
,
প্রসিদ্ধ ফক্বীহ আলাউদ্দীন সামারকন্দী যার “তুহফাতুল ফুক্বাহা” গ্রন্থকে আল্লামা কাসানী রহঃ তার সুবিখ্যাত গ্রন্থ “বাদায়েউস সানায়ে” এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ সাব্যস্ত করেছেন, তিনি বলেন-

ولا يباح النظر والمس الى مابين السرة والركبة الا فى حالة الضرورة بان كانت المرأة ختانة تختن النساء (تحفة الفقهاء-3/334)

অনুবাদ-নাভি ও হাটুর মাঝামাঝি অংশ দেখা এবং স্পর্শ করা জায়েজ নয় প্রয়োজন ছাড়া এবং মহিলাকে খতনা করার সময় খতনাকারী মহিলা ছাড়া। {তুহফাতুল ফুক্বাহা-৩/৩৩৪}
 
মোটা হওয়া কোন জরুরত? না প্রয়োজন? তবু ফুক্বাহায়ে কিরাম এর অনুমোদন দিয়েছেন। খোলাসাতুল ফাতওয়াতে সংকলক বলেন-
لا بأس بالحقنة لأجل السمن هكذا روى عن ابى يوسف  (خلاصة الفتاوى-4/363)
অনুবাদ-মোটা হওয়ার জন্য ইঞ্জেকশন দেয়া জায়েজ, এমনটিই বর্ণিত ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ থেকে। {খুলাসাতুল ফাতওয়া-৪/৩৬৩}
 
সন্তানের মা-বাবা হওয়ার আকাংখাতো প্রাকৃতিক আকাংখা। ফুক্বাহায়ে কিরাম মহিলাদের এ আকাংখাকেও দৃষ্টিযোগ্য নয় বলে সাব্যস্ত করেন নি। তাইতো স্বামীকে খুশি করতে মোটা হওয়ার জন্যও ইঞ্জেকশন নেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন। ফাতওয়ায়ে আলমগীরীতে এসেছে-

والمرأة اذا كانت تسمن نفسها لزوجها لا بأس به (الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، الباب التاسع عشر في الختان والخصاء وقلم الأظفار وقص الشارب وحلق الرأس وحلق المرأة شعرها ووصلها شعر غيرها -5/356)

 অনুবাদ-মহিলা যদি নিজের স্বামীর জন্য মোটা হতে চায়, তাহলে তাতে কোন সমস্যা নেই। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৬}
 
টেষ্ট টিউবের সাহায্য নিয়ে সন্তান ধারণ মূলত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ফুক্বাহায়ে কিরাম মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট মাসায়েলকে ১-জরুরত, ২-হাজাত তথা প্রয়োজন, ৩-সৌন্দর্যবর্ধক এ তিন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছেন।
,
আর নিষিদ্ধ বিষয়কে কেবল সে সময় জায়েজ বলেছেন, যখন জরুরত বা হাজাত এটার অনুমোদনকে চায়। কিন্তু ফুক্বাহাদের শাখাগত মাসায়েল দেখলে বুঝা যায়, অসুখ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা একটু বেশিই সুযোগ দিয়েছেন। আর সহজতা ও সহজলভ্যতার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন উল্লেখিত মোটা হওয়ার কোন জরুরত নেই, তারপরও আলমগীরীতে বলা হয়েছে-

وسئل ابو مطيع ان إمرأة تأكل القبقبة وأشباه ذلك تلتمس السمن، قال لا بأس به مالم تأكل فوق الشبع واذا اكلت فوق الشبع لا يحل (الفتاوى الهندية، كتاب الأضحية، الباب التاسع عشر في الختان والخصاء وقلم الأظفار وقص الشارب وحلق الرأس وحلق المرأة شعرها ووصلها شعر غيرها -5/356)

অনুবাদ-আবু মুতী রহঃ এর কাছে এক মহিলার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হল যে মোটা হওয়ার জন্য শামুক এবং এ জাতীয় বস্তু খায়, তখন তিনি বললেন-যদি পেট ভরে না খায়, তাহলে কোন সমস্যা নেই। পেট ভরে খেলে জায়েজ নয়। {ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/৩৫৬}
এ কারণে অধমের ধারণা হল সন্তানহীন মা-বাবার সন্তান লাভ করা একটি প্রাকৃতিক আকাংখা এবং স্বাভাবিক চাহিদা। এ কারণে পুরুষের জন্য পুরুষ ডাক্তারের সামনে আর মহিলার জন্য মহিলা ডাক্তারের সামনে বেআব্রু হওয়া জায়েজ আছে।
 
আর তৃতীয় বিষয়টি তথা এটি স্বাভাবিক রীতি বিরুদ্ধ বিষয়। এটি নিষিদ্ধতার কোন শক্তিশালী দলিল নেই। একটি প্রাকৃতিক চাহিদা সম্পাদনের জন্য এমন রীতিবিরুদ্ধ সুরত অবলম্বন করা যা নিষিদ্ধতার কোন আয়াত বা হাদীস নেই সেটি জায়েজ হতেই পারে।
অষুধ পৌছানোর পথ হল মুখ এবং খাদ্যনালী দিয়ে। কিন্তু উপকারীতার কারণে ইঞ্জেকশনের তথা পিছনের রাস্তা দিয়ে পৌঁছানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে।
বাচ্চা প্রসবের আসল রাস্তা হল মহিলাদের লজ্জাস্থান। কিন্তু প্রয়োজনের সময় অপারেশনের অনুমতি আছে। এজন্যই কোন কারণ নেই যে, অপারগতার সময় এ রীতি বিরুদ্ধ পদ্ধতি অবলম্বন করা থেকে বাঁধা দেয়া হবে। সুতরাং সন্তানহীন/সন্তানহীনাদের জন্য এ রীতি বিরুদ্ধ পদ্ধতিতে সন্তান লাভ করা জায়েজ আছে।
 
টিউব বেবির বংশ কার থেকে ধরা হবে?
 
এখানে একথাটিতো স্পষ্ট যে, যে পুরুষের শুক্রানু হবে সেই হবে প্রসুত বাচ্চার পিতা। বংশ প্রমানের জন্য স্বামীর শুক্রানু দ্বারা স্ত্রী গর্ভবতী হওয়াই যথেষ্ঠ। এটা জরুরী নয় যে, শারিরিকভাবে তার সাথে সঙ্গম করে।
 
আর টেষ্ট টিউব পদ্ধতিটি একদমই নতুন পদ্ধতি। এ কারণে এ ব্যাপারে ফিক্বহী কিতাবে সরাসরি হুকুম পাওয়া কঠিন। তবে এমন কিছু ইবারত পাওয়া গেছে যার দ্বারা সঙ্গম ছাড়াও সন্তান ধারণ সম্ভব বলে স্বীকার করা হয়েছে, এবং বংশ প্রমাণিত করা হয়েছে। যেমন-

رجل عالج جاريته فيما دون الفرج فأنزل فأخذت الجارية ماءه في شيء فاستدخلته في فرجها فعلقت عند أبي حنيفة رحمه الله تعالى أن الولد ولده وتصير الجارية أم ولد له (الفتاوى الهندية-كتاب الدعوى، الدعوة ثلاثة أنواع-3/347)

অনুবাদ-কোন ব্যক্তি তার বাদির জরায়ুর বাহিরে সঙ্গম করল। বীর্যপাতও করল। তখন বাদি সে শুক্রকে কোন কিছুতে মিলিয়ে নিজের জরায়ুতে প্রবিষ্ট করিয়ে দিল। আর এতে করে সে গর্ভবতী হয়ে যায়। তাহলে ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মতে প্রসূত বাচ্চাটি মনীবের হবে। আর বাদিটি মনীবের উম্মে ওয়ালাদ হয়ে যাবে। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৩/৩৪৭)
 
একথাটিতো স্পষ্ট যে, মহিলার ডিম্বানু যদি সে মহিলাই তার গর্ভে ধারণ করে তাহলে সে তার মা গণ্য হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল-যদি এক মহিলার ডিম্বানু আরেক মহিলার গর্ভে ধারণ করে, আর সে গর্ভবতী থেকেই বাচ্চা প্রসব হয়, তাহলে বাচ্চার মা কে হবে? এ ব্যাপারে ফুক্বীহদের মতভিন্নতা পাওয়া যায়। কারো কারো মতে বাচ্চা সে মহিলার হবে যার ডিম্বানু ছিল। আর একদলের মতে মা সে মহিলা হবে যার গর্ভে তা ধারণ করে তা লালিত হয়েছে।

মূল কথা হল-দলিলের হিসেবে এবং শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে তো উভয় রায় যৌক্তিক। যে মহিলার ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয়েছে সে এজন্য মা, যেহেতু সে বাচ্চাটি তারই অংশ। আর বংশ ও হারাম হওয়ার সম্পর্ক এ অংশ হওয়ার উপরই। হেদায়া প্রণেতা ব্যভিচারের কারণে হুরমতে মুসাহারাত তথা আজীবনের জন্য বিবাহ হারাম হওয়ার বিষয় আলোচনা করতে গিয়ে এ সুক্ষ্ম কথাটি এভাবে এনেছেন

أن الوطء سبب الجزئية بواسطة الولد حتى يضاف إلى كل واحد منهما (الهدية-كتاب النكاح، فصل فى بيان المحرمات)

অনুবাদ-সঙ্গম প্রসূতের ক্ষেত্রে অংশ হওয়ার কারণ। এ কারণেই প্রসূতকে স্বামী স্ত্রী উভয়ের দিকেই সম্বোধিত করা হয়। {হেদায়া, বিবাহ অধ্যায়, মুহাররামাত পরিচ্ছেদ)
 
আরবীতে মাকে “উম্ম” বলা হয় এ দিকে লক্ষ্য করেই। “উম্ম” মূল ও শিকড়কে বলা হয়। উল্লেখিত মহিলার ডিম্বানু যেহেতু তার প্রজনের জন্য মূল এবং ভিত্তি, তাই আবশ্যক হল তাকে “মা” সাব্যস্ত করা।
সাথে সাথে দুগ্ধপানের মাসআলাও এ বিষয়টিকে জোরালো করে। দুগ্ধপানের কারণে হারাম হওয়া সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এটা জরুরী নয় যে, মহিলার স্তন থেকেই দুধ পান করতে হবে। বরং অন্যকোনভাবে পান করলেও দুগ্ধপানের কারণে “হুরমতে রিযায়াত” সাব্যস্ত হয়ে যায়। তেমনি মহিলার ডিম্বানু অন্যকোনভাবে প্রজনন হওয়ার মাধ্যমেও মায়ের সম্পর্ক প্রমাণিত করাকে চায়।
 
যে ফক্বীহরা ঐ মহিলাকে মা সাব্যস্ত করেছেন যে গর্ভধারণ করে, ও যার গর্ভে লালিত হয়, তাদের জন্য সবচে’ বড় দলিলতো কুরআনে কারীমের আয়াত, যাতে মাকে ওয়ালেদা তথা বাচ্চাকে গর্ভে লালনকারী শব্দে উদ্ধৃত করেছে। তারপর বাচ্চাটি সে সন্তানের অংশ সাব্যস্ত হয়ে যায়।
 
তাই এ মাসআলাটি আরো বিস্তর চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়।
ফিক্বহী কিতাবে দৃষ্টি বুলালে পাওয়া যায়, এক সন্তানের বংশ দুই ব্যক্তি থেকে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন-

وإذا كانت جارية بين اثنين وجاءت بولد فادعياه حتى ثبت النسب منهما (الجوهرة النيرة،  كتاب النكاح-2/6)

অনুবাদ-দুই ব্যক্তির এক বাদি। সে বাদি বাচ্চা প্রসব করলে উভয় মালিকই যদি সন্তানের পিতা দাবি করে, তাহলে বংশ উভয় থেকেই সাব্যস্ত হবে। (আল জাওহারাতান নায়্যিরাহ-২/৬)
আল্লামা ইবনে নুজাইম রহঃ জাহিরিয়্যাহ এর বরাত দিয়ে এ বিষয়টিকে কিছুটা পার্থক্যসহ লিখেছেন-
وفي الظهيرية والجارية بين اثنين إذا جاءت بولد فادعياه حيث يثبت النسب من كل واحد منهما ينفرد كل واحد منهما بالتزويج (البحر الرائق-كتاب النكاح،   باب الأولياء والأكفاء-3/119)

অনুবাদ-দুই ব্যক্তির মাঝে শরিকানা বাদির যদি সন্তান হয়, আর উভয়ে একে নিজের সন্তান দাবি করে, তাহলে বংশ উভয় থেকেই সাব্যস্ত হবে। উভয়েরই একে বিবাহ করার অধিকার অর্জিত হবে। {আল বাহরুর রায়েক-৩/১১৯}

এ আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হল যে, বিবাহ এবং অন্যান্য বিষয়ে উভয় মহিলাকেই বাচ্চার জন্য আসল মা হিসেবে হুকুম আরোপিত হবে। আর লালন পালন ও মিরাসের ক্ষেত্রে ঐ মহিলাকে আসল মা বলা হবে, যার পেটে সন্তান লালিত হয়েছে। অর্থাৎ যে তা প্রসব করেছে। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
إِنْ أُمَّهَاتُهُمْ إِلاَّ اللاَّئِي وَلَدْنَهُمْ

অনুবাদ-তার মা সেই যে তাকে পেটে ধারণ করেছে। {সূরা মুযাদালা-৩}
 
সারমর্ম {অনুবাদক}
আমরা উপরোল্লিখত আলোচনা থেকে কয়েকটি বিষয় জানতে পারি-
১-ডিম্বানু যদি স্বীয় স্ত্রীর হয়, আর শুক্রানু হয় স্বামীর তাহলে টিউবের মাধ্যমে প্রজনন হলে, বা উক্ত মহিলার গর্ভেই তা লালিত হয়ে প্রসব হলে এ পদ্ধতিটি সন্তানের জন্য দিশেহারা পরিবারের জন্য জায়েজ আছে।
২-অপরিচিত মহিলার ডিম্বানু, বা অপরিচিত পুরুষের শুক্রানু দ্বারা প্রজনন জায়েজ নয়। কারণ এটা জিনা তথা ব্যভিচারের মতই।
৩-এক মহিলার ডিম্বানু আর আরেক মহিলার গর্ভে যদি সে ডিম্বানু দ্বারা বাচ্চা প্রসব করানো হয়, তাহলে ডিম্বানু যার সেও উক্ত বাচ্চার মা হিসেবে হুরমতে মুসাহারাত তথা সে মহিলার পিতা-মাতা তথা তাদের উপরের ব্যক্তিরা এবং তাদের নিচের তথা সন্তানরা সে বাচ্চার জন্য বিবাহ করা হারাম সাব্যস্ত হবে।
সেই সাথে যার গর্ভে জন্ম নিল সেও মা হবে।

বিজ্ঞ আলেম মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানী সাহেবের  প্রণীত “জাদিদ ফিক্বহী মাসায়েলে” থেকে সংগৃহীত।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...