ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
ﻭَﻻَ ﺗَﻘْﺘُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻧﻔُﺴَﻜُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻜُﻢْ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ-
আর তোমরা নিজেদের কাউকে হত্যা করো না।নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু।(সূরা-নিসা-২৯)
ﻭَﻻَ ﺗُﻠْﻘُﻮﺍْ ﺑِﺄَﻳْﺪِﻳﻜُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﻭَﺃَﺣْﺴِﻨُﻮَﺍْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠّﻪَ ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﺤْﺴِﻨِﻴﻦَ -
তোমরা নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।(সূরা বাক্বারা-১৯৫)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
( ﻻ ﺿَﺮَﺭَ ﻭَﻻ ﺿِﺮَﺍﺭَ )
ইসলামে নিজের ক্ষতি করা ও অন্যকে ক্ষতি পৌছানোর কোনো বিধান নাই।(সুনানু ইবনি মা'জা-২৩৪১)
চার মাযহাব সম্ভলিত ফেকহি কিতাব আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'আহ এ বর্ণিত রয়েছে,
لا يجوز للمرأة ان تمنع حيضا او تستعجل إنزاله اذا كان يضر صحتها ،لأن المحافظة على الصحة واجبة ،
পিল খেয়ে হায়েয বন্ধ রাখা বা হায়েযকে তার সময়ের আগে করিয়ে নেয়া বৈধ হবে না যদি সেটা শারিরিক কোনো ক্ষতি করে।কেননা শারিরিক সুস্থতাকে বাঁচিয়ে রাখা ওয়াজিব।(আল-ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা'আহ-১/১২৪)
বিশিষ্ট ফকিহ খালেদ সাইফুল্লাহ রাহমানি বলেন,
বিজ্ঞ দু'জন মুসলিম চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যদি সেটা শারিরিক কোনো ক্ষতি না করে, তাহলে বিশেষ বিশেষ সময় যেমন হজ্বের সময় পিল খেয়ে হায়েয বন্ধ রাখা বা আগেই হায়েয করিয়ে নেয়ার বৈধতা রয়েছে।(কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১০৭)
তবে যদি কোনো মহিলার রক্ত স্রাব এত অধিক হয় যে, হায়েযের সময় ব্যতিত অন্য সময়েও অত্যাধিক পরিমাণে রক্তস্রাব নির্গত হয়, তাহলে তখন ঔষধ সেবন পূর্বক রক্তস্রাব বন্ধ রাখার উৎসাহ অনেকেই দিয়ে থাকেন। যথা-
এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযিকে এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল,
’’تطاول بھا دم الحیضة فأرادت أن تشرب دواء بقطع الدم عنھا فلم یر ابن عمر بأسا ونعت ابن عمر ماء الأراک‘‘(مصنف عبدالرزاق 318/1)
যেই মহিলা তার হায়েযের রক্ত নির্ধারিত সময়সীমা পার করে ফেলছে, এখন সেই রক্তস্রাবকে বন্ধ করা জন্য ঐ মহিলা কি কোনো ঔষধ সেবন করতে পারবে? এটা কি জায়েয হবে? ইবনে উমর রাযি এতে কোনো সমস্যা মনে করলেন না। এমনকি তখন তিনি ডালিম গাছের পানি পান করার নির্দেশ দিলেন।
মা'মর রাহ বলেন,
’’وسمعت ابن أبي نجیح یسأل عن ذالک فلم یربه بأسا‘‘(مصنف عبدالرزاق 318/1)
আমি ইবনে আবি নাজিহ রাহ কে বলতে শুনেছি, যখন উনাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, তিনি বলেন, এ সম্পর্কে আমি কোনো সমস্যা মনে করি না।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
পিল খেয়ে হায়েয বন্ধ রাখা-শারিরিক ক্ষতি থেকে কখনো মুক্ত নয়।এর একটি পারিপার্শ্বিকতা অবশ্যই থাকবে।কেননা যেখানে আল্লাহ নারীদের জন্য হায়েযকে রেখেছেন,নিশ্চয় একে বন্ধ রাখলে শারিরিক ক্ষতি হবে।
তবে বিশেষ আ'মল যেমন হজ্ব-উমরা এবং এ'তেক্বাফের জন্য উলামায়ে কেরাম রুখসত দিয়ে থাকেন।হজ্ব ফরয তাছাড়া হজ্ব-উমরার জন্য মানুষ অনেক দূরদূরান্ত থেকে সফর করে যায়।কিন্ত নারীদের জন্য এ'তেক্বাফের বিষয়টা তেমন নয়।
সুতরাং এ'তেক্বাফের জন্য পিল খাওয়া কখনো উচিৎ হবে না।
যে নারীর রমজানের শেষ দশকে হায়েয আসার সম্ভাবনা রয়েছে উনি এ বৎসর এ'তেক্বাফে বসবেন না।তারপরও যদি বসেন,তাহলে যে দিন হায়েয শুরু হবে সেদিন উনি এ'তেক্বাফ থেকে বেরিয়ে যাবেন।কেননা হায়েয-নেফাস শুরু হওয়ার পরপরই এ'তেক্বাফ ফাসিদ হয়ে যায়।পরবর্তিতে যখন তিনি পবিত্র হবেন,তখন একদিনের এ'তেক্বাফকে রোযা সহ কা'যা করে নেবেন।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৬/৪২০)
কোনো মহিলা যদি আবেগতারিত হয়ে এ'তেক্বাফের জন্য পিল খেয়ে নেন,এবং উনার হায়েয বন্ধ হয়ে যায়,তাহলে উনাকে নামায রোযা সবকিছুই পালন করতে হবে।এবং উনার জন্য এ'তেক্বাফ করাও তখন বিশুদ্ধ হবে। কেননা হায়েয বা মাসিকের সম্পর্ক রক্তস্রাব নির্গত হওয়া না হওয়ার উপর। যেভাবেই হোক যেহেতু রক্তসাব নির্গত হয়নি, তাই হায়েয নেই বলেই ধরে নেয়া হবে।
یجب أن یعلم بأن حکم الحیض والنفاس والاستحاضة لا یثبت إلابخروج الدم وظھورہ، وھذا ھو ظاهرمذھب أصحابنا وعلیه عامة المشايخ. (الفتاوی التاتارخانیة: 330/1)
এটা জানা আবশ্যক যে, হায়েয,নেফাস,ইস্তেহাযা এর বিধান রক্তস্রাব নির্গত হওয়ার সাথে লিপিবদ্ধ। সুতরাং কোনো নারীর রক্তস্রাব নির্গত না হলে, হায়েয,নেফাস,ইস্তেহায এই তিনটির কোনোটিই তার উপর প্রযোজ্য হবে না।