আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
505 views
in সাওম (Fasting) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম।

গর্ভবতী অবস্থায় মহিলারা সাওম পালন করতে পারবে কি না?

আবার অনেকের ৩ বেলা মেডিসিন নিতে হয় তাহলে তারা কি করবে?আবার প্রতি সপ্তাহে ইনজেকশন নিতে হয়,এ সময় রক্তও বের হয়ে থাকে।

এসময় করণীয় কি?

জাযাকিল্লাহু খায়রান।

1 Answer

+1 vote
by (597,330 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-

«وَعَوَارِضُ الصَّوْمِ الَّتِي قَدْ يُغْتَفَرْ ... لِلْمَرْءِ فِيهَا الْفِطْرُ تِسْعٌ تُسْتَطَرْ
حَبَلٌ وَإِرْضَاعٌ وَإِكْرَاهُ سَفَرْ ... مَرَضٌ جِهَادٌ جُوعُهُ عَطَشٌ كِبَرْ» - «حاشية ابن عابدين = رد المحتار ط الحلبي» 2/ 421)
নয়টি কারণে রোযা না রাখার অুনমোদন রয়েছে, গর্ভ,দুগ্ধপান,জোড়জবরদস্তী,সফর,অসুস্থতা,জিহাদ,অনাহার,পিপাসা,বৃদ্ধ( রদ্দুল মুহাতর-২/৪২১)

গর্ভবতী মা: 
গর্ভাবস্থায় বাচ্চা সরাসরি মায়ের খাবার থেকে পুষ্টি পায় না, বরং আম্বিলিক্যাল শিরা দিয়ে মায়ের রক্ত থেকে পুষ্টি পায়। তাই মা দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে গর্ভস্থ সন্তান পুষ্টিহীনতায় ভুগবে, এই ধারণা সত্য নয়।
প্রথম ও শেষের ৩ মাস সাধারণত মায়েরা দুর্গন্ধ, বমি, বারবার ক্ষুধা লাগা ইত্যাদি নানারকম অসুস্থতায় ভুগে থাকেন, তাই মায়ের জন্য কষ্টকর হলে এসময় সিয়াম না রাখাই উত্তম, পরে সুস্থ হয়ে কাযা করে নেবেন। তবে দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে (৪ থেকে ৬ মাস) সাধারণত মায়েরা তুলনামূলক সুস্থ থাকেন। তাই মায়ের জন্য কষ্টকর না হলে, এবং সব টেস্টের রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলে এ সময় নির্দ্বিধায় সিয়াম রাখতে পারেন। তবে কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে রোযা না রাখা বা ভঙ্গ করারও অনুমোদন রয়েছে।
তবে গর্ভবতী মায়ের অতিরিক্ত রক্তশূন্যতা, পেটে জময বাচ্চা, আগেই পানি ভেঙে যাওয়া (PROM), পানি কমে যাওয়া (Oligohydramnios), এক্লাম্পশিয়া, প্রি-এক্লাম্পশিয়া, আগে থেকেই ডায়াবেটিস থাকা, গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হওয়া (GDM), হাইপারটেনশন ইত্যাদি রোগ থাকলে তাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে, সিয়াম রাখতে চাইলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই রাখতে হবে। গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি করে সিয়াম রাখা যাবেনা। 

ডায়াবেটিস:
নিয়ন্ত্রিত ও অনিয়ন্ত্রিত- উভয়েই রমজানের কয়েক মাস আগে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধের ডোজ ও সময়সূচি ঠিক করিয়ে নেবেন। রমজানের আগে কয়েকদিন একটানা সিয়াম রেখে দেখে নিবেন সিয়াম রাখার কারণে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা। 
১। সাধারণত একবেলা নেয়ার ইনসুলিন ইফতারের আগে নিয়ে ইফতার করতে হবে।দুইবেলা নেয়ার ইনসুলিনে, সকালের ডোজটা ইফতারে পানি খেয়ে তারপর ডোজ নিয়ে সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে, এবং রাতের ডোজটা ৩০-৫০% কমিয়ে সাহরীর আগে নিতে হবে। তিন বেলা নেয়ার ইনসুলিনে, সকালের ডোজটা একইভাবে ইফতারের আগে, দুপুরের ডোজটা রাতের খাবারের আগে এবং রাতের ডোজটা অর্ধেক কমিয়ে সাহরীর আগে নিতে হবে। রাতে নেয়ার লং একটিং ইনসুলিন আগের মত একই সময়েই নেয়া যাবে। এভাবে ডোজ পরিবর্তন করার পর ইফতারের আগে, পরে, সাহরীর পরে, বিকেলে এবং বিভিন্ন সময় গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করে দেখতে হবে। গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে ইনসুলিনের পরিমানটাকেও ২ বা ৪ পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে হবে। আর দিনের বেলা পানির অভাবে ডিহাইড্রেশন হয়ে প্রেশার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, রাতে অনেক বেশি করে পানি খেতে হবে। (ডক্টর ফিরোজ আমীন, এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, এসোসিয়েট প্রফেসর, বারডেম)

২। ইনসুলিন-নির্ভর ডায়াবেটিক/ টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিক রোগীর যদি প্রস্রাবে এসিটোন যাওয়ার প্রবণতা থাকে  তাদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত রোজা রাখা উচিত হবে না। যাদের দিনে ৪ বেলা ব্যাজাল ইনসুলিন নেয়া লাগে, তাদের জন্য সিয়াম না রাখার রুখসত থাকবে। তবে সিয়াম রাখতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে ডোজ পরিবর্তন করে নিতে হবে। 

৩। রোজার সময়ের জন্য বিশেষ খাবারের নিয়ম জেনে নিতে হবে। সেহেরীর খাবারের শেষ সময়ের অল্প কিছু আগে খাওয়া বাঞ্ছনীয়। সেহেরীর সময় নাম মাত্র খবার খেয়ে রোজা রাখা উচিত নয়। আবার ইফতারে একবারে অনেক বেশিও খাওয়া উচিৎ নয়।
৪। রোজার দিনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অতিরিক্ত ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই, এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও পানিশূন্যতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। চাইলে ইফতার ও রাতের খাবারের পর হাল্কা ব্যায়াম করা যেতে পারে। 
৫। রোজার দিন বিকেলে দৈহিক পরিশ্রমের কাজ না করে  বিশ্রাম নেওয়া ভালো।
৬। সিয়ামরত অবস্থায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা হাইপারগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ অনুভূত হলে সাথে সাথে গ্লুকোমিটার দিয়ে রক্তের গ্লুকোজ মাপতে হবে। রক্তের গ্লুকোজ ৪ মিলিমোল/লিটারের কম হলে সাথে সাথে মিষ্টিজাতীয় কিছু (চিনির পানি, মিষ্টি, মধু, চকোলেট) খেয়ে সিয়াম ভেঙে ফেলতে হবে। অজ্ঞান হয়ে গেলে সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করে শিরায় গ্লুকোজ স্যালাইন দিতে হবে।(হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ: হাত-পায়ে কাপুনি, পিপাসা লাগা, ঘাম ঘাম ভাব, অস্বস্তি, বুক ধড়ফড় করা, মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।হাইপারগ্লাইসেমিয়া বা ডায়াবেটিক কিটো এসিডোসিসের লক্ষণ: মাথাব্যথা, ঘন প্রস্রাব, অত্যধিক পিপাসা, বুক ধড়ফড় করা, বমি, নিঃশ্বাসে মিষ্টি গন্ধ ইত্যাদি।) ( নিশাত তাম্মিম লিখিত পান্ডলিপি থেকে সংগৃহিত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 214 views
...