জবাবঃ
(১) উভয় সফর করবে,এজন্য উভয়কে মাসীহ বলা হয়,মাসীহ অর্থ মুসাফির।
(২)দাজ্জাল বনি আদম থেকে হবে।ইহুদী বংশদরদের একজন হবে।
(৩)
তাদের বংশদররা কিয়ামত পূর্ব পর্যন্ত থাকবে।
কিয়ামত নিকটবর্তী হবার পর অপর একটি বড় আলামত হল পৃথিবীতে ইয়াজুজ-মাযুয নামে দুটি চরম অত্যাচারী গোত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে। হযরত ঈসা (আঃ) অবতরনের পর এই জাতি দুটির প্রকাশ ঘটবে। ফাতাহুল বারী র ৬ষ্ঠ খন্ডে হযরত কাতাদা (রাঃ) বলেন এরা মানুষের আকৃতি হবে এবং হযরত নুহ (আঃ) এর পুত্র ইয়াকা এর বংশধর থেকে হবে। তাফসীরে তাবারী গ্রন্থ মতে তারা পৃথিবীর উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাসিন্দা হবে, বর্তমানের আরমেনিয়া ও আযারবাইযানের পাশাতবাগ তাদের আবাসস্থল উল্লেখ্য করা হয়।
ইয়াজুজ-মাযুয দেখতে মানুষের মত কিন্তু তাদের স্বভাব হবে চতুস্পদ জন্তুর ন্যায়। দেহের সন্মুখ ভাগ মানূষের ন্যায় কিন্তু পিছনের ও নিম্নভাগ চতুস্পদ জন্তুর ন্যায়। দুনিয়ের এক সীমান্তে এরা বাস করে। এরা মানুষ বৃক্ষলতা সব ভক্ষন করে। এক সময় মানুষ জাতির ওপর এরা ভীষন অত্যাচার চালাত। হযরত শাহ সেকান্দার সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মান করে মানব এলাকায় আসার পথ বন্ধ করে দেয়।
ওরা উক্ত প্রাচীরটি জিহ্বা দ্বারা প্রতিদিন চাটতে থাকে আবার সন্ধ্যার সময় উক্ত প্রাচীর আবার পূর্বের অবস্থায় ফেরত যায় মানে পূর্নাঙ্গ অবস্থা লাভ করে। এভাবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত চলতে থাকবে। কিন্তু হঠাৎ একদিন এ দেয়াল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, তখনই ইয়াজুজ-মাযুযের দল স্রোতের ন্যায় মানুষের এলাকায় ডুকে পড়বে। তারা সব কিছু খেয়ে ফেলবে। পানির পিপাসায় তারা দুনিয়ার সব সাগর মহাসাগরের সব পানি খেয়ে ফেলবে। তাদের দৌরাত্মে দুনিয়া তছনছ হয়ে যাবে। এমত অবস্থায় হযরত ঈসা (আঃ) মুসলমানদের নিয়ে দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। দেখা দেবে মহামারী সে মহামারীতে এই অত্যাচারী সম্প্রদায় ধ্বংশ হয়ে যাবে।
পবিত্র কোরানে সুরা কাহফে ৯৪-৯৯ আয়াতে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা আছে।
قَالُوا يَا ذَا الْقَرْنَيْنِ إِنَّ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ فَهَلْ نَجْعَلُ لَكَ خَرْجًا عَلَى أَن تَجْعَلَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ سَدًّا 94
তারা বললঃ হে যুলকারনাইন, ইয়াজুজ ও মাজুজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আপনি বললে আমরা আপনার জন্যে কিছু কর ধার্য করব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মধ্যে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন।
قَالَ مَا مَكَّنِّي فِيهِ رَبِّي خَيْرٌ فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ أَجْعَلْ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ رَدْمًا 95
তিনি বললেনঃ আমার পালনকর্তা আমাকে যে সামর্থø দিয়েছেন, তাই যথেষ্ট। অতএব, তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যে একটি সুদৃঢ় প্রাচীর নির্মাণ করে দেব।
آتُونِي زُبَرَ الْحَدِيدِ حَتَّى إِذَا سَاوَى بَيْنَ الصَّدَفَيْنِ قَالَ انفُخُوا حَتَّى إِذَا جَعَلَهُ نَارًا قَالَ آتُونِي أُفْرِغْ عَلَيْهِ قِطْرًا 96
তোমরা আমাকে লোহার পাত এনে দাও। অবশেষে যখন পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। অবশেষে যখন তা আগুনে পরিণত হল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এস, আমি তা এর উপরে ঢেলে দেই।
فَمَا اسْطَاعُوا أَن يَظْهَرُوهُ وَمَا اسْتَطَاعُوا لَهُ نَقْبًا 97
অতঃপর ইয়াজুজ ও মাজুজ তার উপরে আরোহণ করতে পারল না এবং তা ভেদ করতে ও সক্ষম হল না।
قَالَ هَذَا رَحْمَةٌ مِّن رَّبِّي فَإِذَا جَاء وَعْدُ رَبِّي جَعَلَهُ دَكَّاء وَكَانَ وَعْدُ رَبِّي حَقًّا 98
যুলকারনাইন বললেনঃ এটা আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ। যখন আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুত সময় আসবে, তখন তিনি একে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন এবং আমার পালনকর্তার প্রতিশ্রুতি সত্য।
وَتَرَكْنَا بَعْضَهُمْ يَوْمَئِذٍ يَمُوجُ فِي بَعْضٍ وَنُفِخَ فِي الصُّورِ فَجَمَعْنَاهُمْ جَمْعًا 99
আমি সেদিন তাদেরকে দলে দলে তরঙ্গের আকারে ছেড়ে দেব এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে আনব।
সুরা আম্বিয়া ৯৬ নং আয়াত।
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ وَهُم مِّن كُلِّ حَدَبٍ يَنسِلُونَ96
যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে।
কিয়ামতের আলামতগুলোর মধ্যে “ইয়াজুজ-মাজুজ”-এর উত্থান অন্যতম। কিন্ত আমাদের অনেকেই ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে জানা তো দূরে থাক,এদের নামই শোনেন নি! এ কারণেই খুব সংক্ষেপে ইয়াজুজ-মাজুজ সম্পর্কে কিছু লেখা হল।