কোনো নিআমত পেলে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে,বলতে হবে যে আলহামদু লিল্লাহ কিংবা এসবই আল্লাহর দান।
,
হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন, তোমার পরবর্তীতে আমি এক উম্মত পাঠাব, কাক্সিক্ষত কোনো বিষয় যদি তাদের হাসিল হয় তাহলে তারা আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং শুকরিয়া আদায় করবে, আর যদি অনাকাক্সিক্ষত কোনো কিছু তাদের পেয়ে বসে তাহলে তারা সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করবে। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭৫৪৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১২৮৯; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৪১৬৫; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৬৭০৪
,
উম্মতে মুহাম্মদীর এই চরিত্র এভাবেই আল্লাহ তাআলা প্রকাশ করেছেন হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট। আরেক হাদীসে বিষয়টি আরও পরিষ্কার প্রতিভাত হয়েছে। হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ.
মুমিনের বিষয়াদি কত আশ্চর্যের! তার সবকিছুই কল্যাণকর। আর এটা তো কেবল মুমিনের ক্ষেত্রেই হতে পারে। সচ্ছলতায় সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্যে কল্যাণকর হয়। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে তাহলে সে সবর করে, ফলে তাও তার জন্যে কল্যাণকর হয়ে যায়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৯৯
কৃতজ্ঞতা আদায় এর ব্যতিক্রম ঘটলে পবিত্র কুরআনে উচ্চারিত হয়েছে কঠোর হুঁশিয়ারিও-
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذابِيْ لَشَدِيْدٌ.
তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অস্বীকার কর তাহলে আমার আজাব অবশ্যই কঠিন। -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭
এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফে বর্ণিত একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনি ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি, তাদের একজন ছিল শ্বেতরোগী, একজনের মাথায় ছিল টাক, আরেকজন ছিল অন্ধ। আল্লাহ তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। তাই তাদের নিকট এক ফেরেশতা পাঠালেন। ফেরেশতা প্রথমে শ্বেতরোগীর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘(শরীরের) সুন্দর বর্ণ আর সুন্দর চামড়া। মানুষ যে আমাকে অপছন্দ করে!’ ফেরেশতা তখন তার গায়ে হাত বুলিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার রোগ দূর হয়ে গেল এবং তার গায়ের রং ও চামড়া সুন্দর হয়ে গেল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, উট। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী উটনী দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। এরপর ফেরেশতা চলে গেলেন টেকো ব্যক্তির কাছে। তাকেও জিজ্ঞেস করলেন, তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘সুন্দর চুল। মানুষ যে আমাকে এ টাকের জন্যে অপছন্দ করে!’ ফেরেশতা তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার টাক দূর হয়ে গেল এবং তার মাথা সুন্দর সুন্দর চুলে ছেয়ে গেল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদের কথা বলো! সে বলল, গরু। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী গাভী দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। সবশেষে ফেরেশতা গেলেন অন্ধব্যক্তির কাছে। তার কাছেও একই প্রশ্ন; তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় জিনিস কোনটি? সে বলল, ‘আল্লাহ যদি আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতেন, আমি তাহলে মানুষদের দেখতে পারতাম।’ ফেরেশতা তখন হাত বুলিয়ে দিলেন, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরে এল। এরপর ফেরেশতা তাকে বললেন, তোমার সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ কোনটি? সে বলল, ছাগল। তখনি তাকে একটি গর্ভবতী ছাগল দেয়া হলো। ফেরেশতা তার জন্যে দুআ করলেন- আল্লাহ তাতে তোমার জন্যে বরকত দান করুন। এরপর তাদের উট গরু আর ছাগলে আল্লাহ যথেষ্ট বরকত দিলেন। কারও মাঠভর্তি উট, কারও মাঠভর্তি গরু আর কারও মাঠভর্তি ছাগল। ফেরেশতা আবার এলেন। প্রথমেই উটের মালিকের কাছে গিয়ে বললেন, আমি মিসকিন, সফরে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। তিনি তো তোমাকে সুন্দর গায়ের রং, সুন্দর চামড়া আর এ ধনসম্পদ দান করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটি উট দাও, তাহলে আমি আমার সফর শেষ করে ফিরে যেতে পারব। সে বলল, আমার তো কত মানুষকে দিতে হয়! (তোমাকে দিতে পারছি না।) ফেরেশতা এরপর বলল, আমি তো মনে হচ্ছে তোমাকে চিনতে পারছি। তোমার কি শ্বেতরোগ ছিল না, যে কারণে মানুষ তোমাকে অপছন্দ করত? এরপর আল্লাহ তোমাকে এসব দান করলেন। সে বলল : এগুলো তো আমার বাপ-দাদার সম্পদ! ফেরেশতা বললেন, যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থাতেই ফিরিয়ে দেন। এরপর ফেরেশতা গেলেন গরুর মালিকের কাছে। তার কাছেও একই ভাষায় সাহায্যের আবদার করলেন। সেও একই ভাষায় ফিরিয়ে দিল। ফেরেশতাও তার জন্যে একই বদদুআ করলেন; যদি তুমি মিথ্যা বলে থাক, তাহলে তুমি যেমন ছিলে আল্লাহ যেন তোমাকে সে অবস্থাতেই ফিরিয়ে দেন। এবার ফেরেশতা ছাগলের মালিকের কাছে গিয়ে বললেন, আমি মিসকিন মুসাফির, সফরে আমার সবকিছু হারিয়ে গেছে। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই। তিনি তো তোমার চোখ ভালো করে দিয়েছেন আর এ ধনসম্পদ দান করেছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে একটি ছাগল দাও, যেন আমি আমার সফর শেষ করে ফিরে যেতে পারি। সে বলল, আমি তো অন্ধ ছিলাম, আল্লাহ আমার চোখ ভালো করে দিয়েছেন; আমি দরিদ্র ছিলাম, তিনি আমাকে ধনসম্পদ দান করেছেন। তুমি যা ইচ্ছা নিয়ে নিতে পার। তুমি যাই কিছু নেবে আমি তোমাকে কিছু বলব না। ফেরেশতা বললেন, তোমার সম্পদ তোমার কাছেই থাক; তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে, আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তোমার দুই সঙ্গীর ওপর তিনি অসন্তুষ্ট। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৬৪
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে করনীয় হলোঃ সাথে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে,গরিব মিসকিনকে দান খয়রাত করতে হবে।