আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
523 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (72 points)
১)কেউ যদি তার মাজার সম্পর্কে বিশ্বাস নিয়ে এই কথা বলেন যে ,"পীরদের রুহানি ফয়েজের উচিলায় যাতে আল্লাহ আমাদের মুসলিম উম্মাহর হেফাজত করেন "
এই বাক্য দ্বারা কি ব্যক্তিটির আকিদাগত কোনো সমস্যা আছে বলে ধরে নেওয়া যায় নাকি বাক্যটি ঠিক আছে?
২)" মাজার এর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করাও জায়েয নেই"
এই কথাটা কি সঠিক?

1 Answer

+1 vote
by (574,050 points)
edited by
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
সুরা মায়েদার ৩৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ ابۡتَغُوۡۤا اِلَیۡهِ الۡوَسِیۡلَۃَ وَ جَاهِدُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِهٖ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۳۵﴾

হে মুমিনগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নৈকট্যের অনুসন্ধান কর, আর তার রাস্তায় জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফল হও।

উক্ত আয়াতের ব্যখ্যায় তাফসীরে জাকারিয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ

অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অন্বেষণ কর। (الْوَسِيلَةَ) শব্দটি وسل ধাতু থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ সংযোগ স্থাপন করা। পূর্ববর্তী মনীষী, সাহাবী ও তাবেয়ীগণ ইবাদাত, নৈকট্য, ঈমান সৎকর্ম দ্বারা আয়াতে উল্লেখিত وسيلة শব্দের তাফসীর করেছেন। হাকেমের বর্ণনা মতে হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ ‘ওসীলা শব্দ দ্বারা নৈকট্য ও আনুগত্য বোঝানো হয়েছে’। ইবন জরীর আতা, মুজাহিদ ও হাসান বসরী রাহিমাহুমুল্লাহ থেকে এ অর্থই বর্ণনা করেছেন। এ আয়াতের তাফসীরে কাতাদাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন, تَقَرَّبُوْا إلَيْهِ بِطَاعَتِهِ وَالعَمَلِ بِمَا يُرْضِيْهِ অর্থাৎ আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর তার আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কাজ করে। [তাবারী; ইবন কাসীর]
অতএব, আয়াতের সারব্যাখ্যা এই দাঁড়ায় যে, ঈমান ও সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য অন্বেষণ কর। অন্য বর্ণনায় হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু এক ব্যক্তিকে এ আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে বললেন যে, ওসীলা অর্থ, নৈকট্য। তারপর তিনি বললেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীদের মধ্যে যারা সংরক্ষণকারী তারা সবাই এটা ভালভাবেই জানেন যে, ইবন উম্ম আব্দ (ইবন মাসউদ) তিনি তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১২; অনুরূপ তিরমিযী: ৩৮০৭; মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯৫]
এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ জান্নাতের একটি উচ্চ স্তরের নাম 'ওসীলা'। এর ঊর্ধ্বে কোন স্তর নেই। তোমরা আল্লাহর কাছে দোআ কর যেন তিনি এ স্তরটি আমাকে দান করেন। [মুসনাদে আহমাদঃ ১১৩৭৪ আবু সাঈদ আল-খুদরী হতে] অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যখন মুয়াযযিন আযান দেয়, তখন মুয়াযযিন যা বলে, তোমরাও তাই বল। এরপর দুরূদ পাঠ কর এবং আমার জন্য ওসীলার দোআ কর’। [মুসলিমঃ ৩৮৪]
উপর্যুক্ত ওসীলা শব্দের আভিধানিক ব্যাখ্যা এবং সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তাফসীর থেকে জানা গেল যে, যা দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভ হয়, তাই অসীলা। পক্ষান্তরে শরীআতের পরিভাষায় তাওয়াসসুলের অর্থ হল - আল্লাহ যা বৈধ করেছেন তা পালন করে এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন তা পরিত্যাগ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা ও জান্নাতে পৌঁছা।
,
বিস্তারিত জানুনঃ  
,
সুতরাং আকীদা বিশুদ্ধ রেখে প্রশ্নে উল্লেখিত বাক্যে দোয়া করা যাবে।
,
(০২)
জাহেলী যুগের কবর পূজা সম্পর্কে ঘৃণা সৃষ্টির জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে উম্মতকে কবরের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন। এরপর যখন ঐ সময়ের রসম-রেওয়াজ ভালোভাবে দূর হল তখন তিনি কবর-যিয়ারতের অনুমতি দিয়ে বলেছেন-
كنت نهيتكم عن زيارة القبور، فزوروها، فإنها تزهد في الدنيا وتذكر الآخرة.
আমি তোমাদের কবর-যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। (এখন ঐ নিষেধ মানসূখ করা হচ্ছে) এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কারণ তা দুনিয়ার মোহ দূর করে এবং আখিরাতকে মনে করিয়ে দেয়। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৫৭১; মিশকাত পৃ. ১৫৪

★শরীয়তের বিধান হলো শুধু নিজ শহরের কবরস্থানে যাওয়া যাবে, নাকি অন্যান্য শহরেও নেককার অলী-বুযুর্গের কবর যিয়ারতে যাওয়ার অনুমতি আছে? কিছু মনীষীর সিদ্ধান্ত, কেউ যদি অন্য কোনো শহরে গিয়ে থাকে, তাহলে ওখানের কবরও যিয়ারত করতে পারে। কিন্তু শুধু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া সহীহ না।
তবে ইমাম গাযালী রাহ.সহ আরো অনেক মনীষীর মতে এরও অনুমতি আছে। তবে এই শর্তে যে, ওখানে গিয়ে শরীয়ত পরিপন্থী কোনো কাজে লিপ্ত হবে না।
ফাতাওয়ায়ে শামী খ. ২ পৃ. ২৪২, নতুন মুদ্রণ, মিশর।
,
.
وفی الإحیاء: ذہب بعض العلماء إلی الاستدلال بہ علی المنع من الرحلة لزیارة المشاہد وقبور العلماء والصالحین، وما تبین فی أن الأمر کذلک، بل الزیارة مأمور بہا لخبر: (کنت نہیتکم عن زیارة القبور ألا فزوروہا)․ والحدیث إنما ورد نہیا عن الشد لغیر الثلاثة من المساجد لتماثلہا، بل لا بلد إلا وفیہا مسجد، فلا معنی للرحلة إلی مسجد آخر، وأما المشاہد فلا تساوی بل برکة زیارتہا علی قدر درجاتہم عند اللہ الخ (مرقاة المفاتیح مع المشکاة، رقم: ۶۹۳)
সারমর্মঃ
কিছু উলামায়ে কেরামদের মত হলো উলামায়ে কেরাম,ছালিহিনে কেরামদের কবর যিয়ারতের জন্য সফর নিষেধ,,,,,,।       

.
إحياء علوم الدين (2/ 247):
"ويدخل في جملته زيارة قبور الأنبياء عليهم السلام وزيارة قبور الصحابة والتابعين وسائر العلماء والأولياء وكل من يتبرك بمشاهدته في حياته يتبرك بزيارته بعد وفاته ويجوز شد الرحال لهذا الغرض ولايمنع من هذا قوله صلى الله عليه وسلم: لاتشد الرحال إلا إلى ثلاثة مساجد مسجدي هذا والمسجد الحرام والمسجد الأقصى؛ لأن ذلك في المساجد فإنها متماثلة بعد هذه المساجد وإلا فلا فرق بين زيارة قبور الأنبياء والأولياء والعلماء في أصل الفضل وإن كان يتفاوت في الدرجات تفاوتًا عظيمًا بحسب اختلاف درجاتهم عند الله".
সারমর্মঃ
আম্বীয়ায়ে কেরাম,ছাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন,সমস্ত উলামায়ে কেরাম, ওলি আওলিয়ায়ে কেরামদের কবর যিয়ারতের জন্য সফর করা জায়েজ আছে,,,,। 


★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন, 
যেহেতু শুধু " মাজার এর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা"" সংক্রান্ত উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। 
তাই সতর্কতামূলক শুধু মাজার এর উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকাই উচিত।
,
সেখানে অন্য কোনো কাজ থাকলে কোনো সমস্যা নেই।
তবে এটি নাজায়েজ নয়। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 1,683 views
...