আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
331 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (42 points)
আসসালামু আলাইকুম
১।মুবাহালা কি?
২।এটি কখন করা হয়?

৩।কি কি ক্ষেত্রে করা যায়?

৪।মুবাহালা কার্যকর হওয়ার জন্য কি দু পক্ষকেই রাজি হতে হয়? না এক পক্ষ আহবান করলে অপর পক্ষের উপর পতিত হবে?
৫। এর ফলাফলের ব্যাপারে কতটা সময় সাধারণত প্রয়োজন?
জাযাকাল্লাহু খাইর

1 Answer

+1 vote
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(১.২)
সুরা আল ইমরানের ৬১ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

فَمَنۡ حَآجَّکَ فِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ فَقُلۡ تَعَالَوۡا نَدۡعُ اَبۡنَآءَنَا وَ اَبۡنَآءَکُمۡ وَ نِسَآءَنَا وَ نِسَآءَکُمۡ وَ اَنۡفُسَنَا وَ اَنۡفُسَکُمۡ ۟ ثُمَّ نَبۡتَهِلۡ فَنَجۡعَلۡ لَّعۡنَتَ اللّٰهِ عَلَی الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۶۱﴾

অতঃপর তোমার নিকট জ্ঞান আসার পর যে তোমার সাথে এ বিষয়ে ঝগড়া করে, তবে তুমি তাকে বল, ‘এস আমরা ডেকে নেই আমাদের সন্তানদেরকে ও তোমাদের সন্তানদেরকে। আর আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে এবং আমাদের নিজদেরকে ও তোমাদের নিজদেরকে, তারপর আমরা বিনীত প্রার্থনা করি, ‘মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত করি’।

 এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুবাহালা করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুবাহালা হলো, যদি সত্য ও মিথ্যার ব্যাপারে দুই পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ হয় এবং যুক্তিতর্কে মীমাংসা না হয়, তবে তারা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে, যে পক্ষ এ ব্যাপারে মিথ্যাবাদী, সে যেন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর লানতের অধিকারী হয়। মূলত: লা'নত অৰ্থ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে পড়া। আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে পড়া মানেই আল্লাহর ক্রোধে পড়া। এর সারমর্ম দাঁড়ায় এই যে, মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর ক্রোধ বর্ষিত হোক। এরূপ করার পর যে পক্ষ মিথ্যাবাদী, সে তার প্রতিফল ভোগ করবে। সে সময় সত্যবাদী ও মিথ্যাবাদীর পরিচয় অবিশ্বাসীদের দৃষ্টিতেও স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এভাবে প্রার্থনা করাকে ‘মুবাহালা’ বলা হয়। এতে বিতর্ককারীরা একত্রিত হয়ে প্রার্থনা করলেই চলে। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনকে একত্রিত করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একত্রিত করলে এর গুরুত্ব বেড়ে যায়।

তাফসীরে আহসানুল বয়ানে উল্লেখ রয়েছেঃ

এটাকে ‘মুবাহালা’র আয়াত বলা হয়। মুবাহালার অর্থ হল, দুই পক্ষের একে অপরের প্রতি অভিসম্পাত করা। অর্থাৎ, দুই পক্ষের মধ্যে কোন বিষয়ের সত্য ও মিথ্যা হওয়ার ব্যাপারে তর্ক-বিতর্ক হলে এবং দলীলাদির ভিত্তিতে মীমাংসা না হলে, তারা সকলে মিলে আল্লাহর কাছে এই বলে দু’আ করবে যে, ‘হে আল্লাহ! আমাদের উভয়ের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী, তার উপর তোমার অভিশাপ বর্ষণ হোক!’ এর সংক্ষিপ্ত পটভূমি এই যে, ৯ম হিজরীতে নাজরান থেকে খ্রিষ্টানদের একটি প্রতিনিধিদল নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে এসে তারা যে ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে অতিরঞ্জনমূলক আকীদা রাখত, সে নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত নাযিল হয় এবং মহানবী (সাঃ) তাদেরকে মুবাহালার আহবান জানান। 

তিনি আলী, ফাতিমা এবং হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-দেরকে সাথে নিয়ে মুবাহালার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে আসেন এবং খ্রিষ্টানদেরকে বলেন যে, তোমরাও তোমাদের পরিবারের লোকদের সাথে নিয়ে এসো। তারপর আমরা মিথ্যাবাদীর উপর অভিশাপ বর্ষণের বদ্দুআ করব। খ্রিষ্টানরা আপোসে পরামর্শ করে মুবাহালা করার পথ ত্যাগ করে বলল যে, আপনি আমাদের কাছে যা চাইবেন, আমরা তা-ই দিব। সুতরাং রসূল (সাঃ) তাদের উপর জিযিয়া-কর ধার্য করে দেন। আর এই কর আদায়ের জন্য তিনি আমীনে উম্মত (উম্মতের বিশ্বস্তজন উপাধি লাভকারী) আবূ উবায়দা ইবনে জাররাহ (রাঃ)-কে তিনি তাদের সাথে পাঠিয়ে দেন। (ইবনে কাসীর এবং ফাতহুল ক্বাদীর ইত্যাদির সারাংশ) পরের আয়াতে আহলে কিতাব (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান)-দেরকে তাওহীদের প্রতি আহবান জানানো হচ্ছে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَبَّاسُ بْنُ الْحُسَيْنِ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ عَنْ إِسْرَائِيْلَ عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ عَنْ صِلَةَ بْنِ زُفَرَ عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ جَاءَ الْعَاقِبُ وَالسَّيِّدُ صَاحِبَا نَجْرَانَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُرِيْدَانِ أَنْ يُلَاعِنَاهُ قَالَ فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ لَا تَفْعَلْ فَوَاللهِ لَئِنْ كَانَ نَبِيًّا فَلَاعَنَّا لَا نُفْلِحُ نَحْنُ وَلَا عَقِبُنَا مِنْ بَعْدِنَا قَالَا إِنَّا نُعْطِيْكَ مَا سَأَلْتَنَا وَابْعَثْ مَعَنَا رَجُلًا أَمِيْنًا وَلَا تَبْعَثْ مَعَنَا إِلَّا أَمِيْنًا فَقَالَ لَأَبْعَثَنَّ مَعَكُمْ رَجُلًا أَمِيْنًا حَقَّ أَمِيْنٍ فَاسْتَشْرَفَ لَهُ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ قُمْ يَا أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الْجَرَّاحِ فَلَمَّا قَامَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم هَذَا أَمِيْنُ هَذِهِ الْأُمَّةِ.

হুযাইফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাজরান এলাকার দু’জন সরদার আকিব এবং সাইয়িদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে তাঁর সঙ্গে মুবাহালা করতে চেয়েছিল। বর্ণনাকারী হুযাইফাহ (রাঃ) বলেন, তখন তাদের একজন তার সঙ্গীকে বলল, এরূপ করো না। কারণ আল্লাহর কসম! তিনি যদি নাবী হয়ে থাকেন আর আমরা তাঁর সঙ্গে মুবাহালা করি তাহলে আমরা এবং আমাদের পরবর্তী সন্তান-সন্ততি (কেউ) রক্ষা পাবে না। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, আপনি আমাদের নিকট হতে যা চাবেন আপনাকে আমরা তা-ই দেব। তবে এর জন্য আপনি আমাদের সঙ্গে একজন আমানতদার ব্যক্তিকে পাঠিয়ে দিন। আমানতদার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে আমাদের সঙ্গে পাঠাবেন না। তিনি বললেন, আমি তোমাদের সঙ্গে অবশ্যই এমন একজন আমানতদার পাঠাবো যে প্রকৃতই আমানতদার এবং পাক্কা আমানতদার। এ পদে ভূষিত হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহাবীগণ আগ্রহান্বিত হলেন। তখন তিনি বললেন, হে আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্! তুমি উঠে দাঁড়াও। তিনি যখন দাঁড়ালেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ হচ্ছে এই উম্মতের সত্যিকার আমানতদার। [বুখারী শরীফ ৩৭৪৫] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৩৫)

পরস্পর পরস্পরকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে অভিসম্পাত করাকে মুবাহালা বলা হয়ে থাকে। পদ্ধতিটি হলোঃ উভয় পক্ষ স্বীয় পরিবার পরিজনসহ লোকালয় ত্যাগ করে জঙ্গলে চলে যাবে এবং সেখানে এ বলে আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে যে, আমাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী তার প্রতি ধ্বংস নেমে আসুক।

মুবাহালা হলো কোনো সত্য উদঘাটনের নিমিত্তে অনন্য উপায় হচ্ছে এক জায়গায় একত্রে দু’পক্ষের পরস্পরকে বদদোয়া করা।

(০৩)
যেকোনো বৈধ দাবীতে এটি করা যায়।
যখন অপর পক্ষ কোনোভাবেই সত্যটি মানতে নারাজ হয়।
,
(০৪)
মুবাহালার জন্য দুই পক্ষকেই রাজি হতে হবে।
,
(০৫)
এটি সম্পূর্ণ মহান আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা।
তিনি যখন চাইবেন,তখন বাতিল পক্ষের উপর লা'নত হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...