আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
4,996 views
in পবিত্রতা (Purity) by (9 points)
সম্মানিত শাইখ আসসালামু আ'লাইকুম ...আমার প্রশ্নটি হলোঃ  -  
কুকুর কি নাপাক প্রানী?

কুকুর এর কোনটি নাপাক? পুরো শরীর নাকি শুধু লালা?
কুকুরকে হাত দিয়ে ধরে যদি আদর করি অথবা কুকুরের গায়ের সাথে আমার জামা/প্যান্ট এর টাচ লাগলে,শরীরের টাচ লাগলে  কি সেই অংশ টা নাপাক হয়ে যাবে? আর এই কাপড়  পড়ে কি সালাত পড়া যাবে?

কুকুরের লালা শরীরের যে অংশে লাগবে সেই অংশ কি নাপাক হয়ে যাবে?
নাপাক হয়ে গেলে পবিত্রতা অর্জন করব কিভাবে?তখন কি ওজু করতে হবে??..অনেকে বলেন এক বার মাটি দিয়ে আর সাত বার পানি দিয়ে ধুতে হবে? এটা কি সঠিক?

আমরা জানি হাদিসে আসছে যে ঘরে কুকুর থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না.. এখন সাপোজ আমার বাড়িটা ৪ তলা বাড়ি...আমরা ২য় তলায় থাকি...সেক্ষেত্রে কি নিচ তলায় কুকুর এর থাকার জন্য আলাদা কোনো ঘর তৈরি করে কুকুরকে সেখানে রাখা যাবে?আর এমনটা করার পরেও কি হাদিসের বিধান টা আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে? আর যদি এমন করি যে ৪ তলা বাড়ির বাইরে উঠোনে কুকুর এর জন্য আলাদা ঘর তৈরি করে দেই তাহলে কি সমস্যা হবে? কুকুর পালা ও কি জায়েজ নয়?
আমি জানতে চাচ্ছিলাম কোন কোন ফক্বীহ এ ব্যাপারে কি মত প্রদান করেছেন
জাযাকুমুল্লাহু খইরান

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)

ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ
(১) 
শুকনা কুকুর শরীর বা কাপড়ের সাথে লাগলে শরীর বা কাপড় কিছুই নাপাক হবে না।(ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়্যাহ-৫/২৩৩) যদি কেউ পবিত্র পানি কুকুরের উপর ঢেলে দেয়।অতঃপর কুকুর মানুষের সামনে গিয়ে গা ঝাড়া দেয়,এবং ঐ পানি কোনো মানুষের শরীরে লাগে তাহলে ঐ মানুষের শরীর নাপাক হবে না।(আহসানুল ফাতাওয়া-২/৮৬) আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ লিখেন,
 وَلَوْ أُخْرِجَ حَيًّا وَلَمْ يُصِبْ فَمُهُ الْمَاءَ لَا يَفْسُدُ مَاءُ الْبِئْرِ وَلَا الثَّوْبُ بِانْتِفَاضِهِ وَلَا بِعَضِّهِ مَا لَمْ يُرَ رِيقُهُ وَلَا صَلَاةُ حَامِلِهِ وَلَوْ كَبِيرًا، وَشَرَطَ الْحَلْوَانِيُّ شَدَّ فَمِهِ. 
যদি কুকুরকে পানির ছোট হাউজ(১০*১০স্কয়ার হাত নয় এমন হলে ছোট নতুবা বড়)থেকে বের করা হয়,এবং কুকুরের মূখ পানির সাথে মিশ্রিত না হয়,তাহলে হাউজের পানি ফাসিদ হবে না।এবং কুকুরের শরীরের পানি কোনো কাপড়ে লাগলে সেই কাপড়ও নাপাক হবে না।কুকুর কাউকে কামড় দিলে যতক্ষণ পর্যন্ত তার লালা দেখা যাবে না ততক্ষণ পর্যন্ত কাপড় নাপাক হবে না।এবং বড় কুকুরকে বহনকারীর কাপড়ও নাপাক হবে না।সুতরাং নামায ফাসিদ হবে না।আল্লাম হালওয়ানী রাহ এক্ষেত্রে কুকুরের মূখ বন্ধ থাকার শর্তারোপ করেন।(আদ্দুর্রুল মুখতার-১/২০৮) 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই বোন! 
শুকুর যেভাবে তার সমস্ত অংশ নিয়ে অপবিত্র যাকে নজসুল আইন বলা হয়।কুকুর কিন্তু সেভাবে তার সমস্ত অংশ নিয়ে অপবিত্র নয়।বরং কুকুরের পশম পবিত্র।তার চামড়া পবিত্র কি না? সে সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। তবে দেবাগতের পর কুকুরের চামড়া পবিত্র হওয়া সম্পর্কে সবাই একমত।এবং শরীরের ঐ সমস্ত অঙ্গ পবিত্র যাতে হায়াত থাকে না,যেমন নক,পশম ইত্যাদি।তবে তার গোশত নাপাক। 

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসক্বাফী রাহ এ সম্পর্কে লিখেন,
 وَلَا خِلَافَ فِي نَجَاسَةِ لَحْمِهِ وَطَهَارَةِ شَعْرِهِ. 
কুকুরের গোসত নাপাক এবং তার পশম পাক হওয়ার বিষয়ে সবাই একমত। সুতরাং কুকুরের শরীরের সাথে কারো শরীর লেগে গেলে তার কাপড় নাপাক হবে না।তবে সাবধান রাসূলুল্লাহ সাঃ কুকুরকে অপছন্দ করতেন।এবং প্রয়োজন ব্যতীত কুকুর লালনপালনের নিষেধ করতেন।যেজন্য ফুকাহায়ে কেরাম,শিকার করা,বকরী রাখালি করা,ক্ষেত পাহারা দেওয়া ,বাড়ী পাহাড়া দেওয়া সহ বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে কুকুর পালনের অনুমতি দিয়ে থাকেন।অযথা কুকুর লালন পালন জায়েয নয়।রাসূলুল্লাহ সাঃ কালো নিকতা বিশিষ্ট কুকুর হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

(২) 
শরীয়ত যে সমস্ত উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালনের আদেশ দিয়েছে সে সমস্ত উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করলে ফেরেস্তা বাধাপ্রাপ্ত হবে না।অর্থাৎ ফেরেস্তা প্রবেশ করবেন।  হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
 ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻃَﻠْﺤَﺔَ ﺭَﺿِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ:( ﻟَﺎ ﺗَﺪْﺧُﻞُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﺑَﻴْﺘًﺎ ﻓِﻴﻪِ ﻛَﻠْﺐٌ ﻭَﻟَﺎ ﺻُﻮﺭَﺓٌ ) 
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ঘরে কুকুর বা ফটো থাকবে, সে ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করবেন না।(সহীহ বুখারী-৩৩২২,সহীহ মুসলিম-২১০৬) 
 ঐ কুকুর ঘরে থাকলে ফেরেস্তা প্রবেশ করেন না, যে কুকুরকে লালন-পালনের অনুমোদন শরীয়ত দেয় নাই। আর যে কুকুর কে লালন-পালনের অনুমোদন শরীয়ত দিয়েছে,সে কুকুর ঘরে থাকলে ফেরেস্তা প্রবেশ করেন।(তরহুত-তাসরিব-৬/৩৫) 

কোন কোন উদ্দেশ্যে কুকুর লালন-পালন করার অনুমোদন রয়েছে- 
এ সম্পর্কে একটি হাদীস শুনুন- হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,
 ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻋَﻦْ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ( ﻣَﻦْ ﺍﻗْﺘَﻨَﻰ ﻛَﻠْﺒًﺎ ، ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻜَﻠْﺐِ ﺻَﻴْﺪٍ ﻭَﻻ ﻣَﺎﺷِﻴَﺔٍ ﻭَﻻ ﺃَﺭْﺽٍ : ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻳَﻨْﻘُﺺُ ﻣِﻦْ ﺃَﺟْﺮِﻩِ ﻗِﻴﺮَﺍﻃَﺎﻥِ ﻛُﻞَّ ﻳَﻮْﻡٍ 
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,যে ব্যক্তি শিকারের কুকুর বা ক্ষেত পাহাড়ার কুকুর বা পশু পাহাড়ার কুকুর ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে কুকুর লালন পালন করবে, তার আ'মল নামা থেকে দৈনিক দুই ক্বিরাত করে সওয়াব কর্তিত হবে।(সহীহ মুসলিম-২৯৭৪) এর মতো আরো কোনো জরুরী কাজ থাকলে সেটাও শরীয়তে অনুমোদিত থাকবে। কয়েক ফ্ল্যাট বিশিষ্ট কোনো বাসার নিচ তলায় যদি কুকুর বাধা থাকে, তাহলে কুকুরের মালিক যিনি শুধুমাত্র উনার বাসাতেই রহমতের ফেরেস্তা প্রবেশ করেন না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...