আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (4 points)
আসসালামু ওয়ালাইকুম। আমি মানসিক ভাবে ভেংগে পরেছি । আমি ৫ ওয়াক্ত নামায পরছি । অন্যান্য আমল জারি রাখার চেষ্টা করছি । আমি জানি , সুইসাইড করা হারাম। এবং  এটা করা উচিথ না। আমার শুধু সুইসাইড করতে মন চাই । আমি অনেক কঠিন সময় পার করছি । আমি কোনও ভাবে নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে ঃ     ১} এসব ভাবার কারনে কি আমার ঈমান দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ? ঈমান / আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস আনার বা রাখার জন্য [যখন এসব চিন্তা আসবে ] কি কি করলে ঈমান টা আরও শক্ত  হবে?          ২} কি কি আমল করলে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবো আর জলদি আল্লাহর কাছে জেতে পারব?       এই কঠিন সময়ে আমার পরিবার আমার সাথে নেই[ বাবা , মা , ভাই , বোন
] [ আমার কোন দোষ নেই , আমাকে ভুল বুজচ্ছে] আর আমি কারো থেকে সাহায্যও নিতে চাই না , শুধু আল্লাহর থেকেই সাহায্য নিতে চাই কারন উনি এক মাত্র সাহায্যকারী ।                                                                         ৩}   আর কিভাবে সুন্দর ভাবে  দুয়া করলে আল্লাহ তায়ালা  খুশি হবেন?                                                                                                                                     আমাকে সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে উত্তর দিবেন। আমি অনেক মানসিক ভাবে ব্যাহত । আরও কিভাবে ঈমান এর সহিত আমল করে আল্লাহ কে খুশি করা যাবে বা যাই আমাকে এটার একটা সমাধান দিবেন ইন শা আল্লাহ । জাযাকুমুল্লাহ খাইর।

1 Answer

0 votes
by (704,130 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

আত্মহত্যা কোনো ভাবেই সমাধান নয়। 
একটি আত্মহত্যা শুধু একটি জীবনকে শেষ করে দেয় না বরং একটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র এমনকি গোটা মানবজাতিকে হুমকির মধ্যে ফেলে দেয়।

প্রত্যেক আত্মহত্যায় চেষ্টাকারী ব্যাক্তির ফিকির করা উচিত, যে আত্মহত্যা করার পর তার পরিবারের উপর কি যন্ত্রণা  যায়, কি চাপ যায়,কতটা কষ্ট পায় মা বাবা,আত্মীয় স্বজন।

আত্মহত্যা কারী ব্যাক্তি দুনিয়াও হারায়,আখেরাতও হারায়।
সুতরাং এটি কোনো সমাধান হতেই পারেনা।  

ইসলামী আইন ও বিধানে আত্মহত্যাকে হারাম করা হয়েছে এবং তার পরিণতিতে বলা হয়েছে, আত্মহত্যাকারী ব্যক্তির আত্মহত্যা করার পদ্ধতি অনুযায়ী তার যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। 

পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর করুণাময়।’ (সূরা আন-নিসা, ৪ : ২৯-৩০) 

অন্য দিকে অনেক হাদিস আত্মহত্যা এবং এর শাস্তি সম্পর্কে আমাদের অবহিত করে। রাসূলুল্লাহ সা: আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত 

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে।’ (সহিহ বুখারি, খণ্ড ২, হাদিস নং ৪৪৬) 

এখন যারা ইসলামী অনুশাসনে বিশ্বাসী এবং সে আলোকে নিজেদের জীবন পরিচালনা করেন, তারা কখনো আত্মহত্যা করে নিজেদের পরকালীন জীবনকে জাহান্নামে নিশ্চিত করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক।

★আত্মহত্যা থেকে বাঁচার জন্য তাক্বদীরে বিশ্বাস মযবুত করা জরূরী । 

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিনের বিষয়টি বিস্ময়কর। যখন সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আবার যখন বিপদগ্রস্ত হয়, তখন ছবর করে। উভয় অবস্থায় সে আল্লাহর নিকট পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়’ (মুসলিম)। 

★সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করা জরুরী । আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে, তিনিই তার জন্য যথেষ্ট হন’ (তালাক ৬৫/৩)। 

★হতাশা থেকে বাঁচতে হবে,হতাশ হওয়া যাবেনা।
আল্লাহ বলেন, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না’ (যুমার ৩৯/৫৩)। অতএব মুমিন কখনো হতাশায় ভোগে না।

আত্মহত্যা মহাপাপ। এরপরেও মানুষ আত্মহত্যা করে। 

কোন মুমিন আত্মহত্যা করতে পারে না। কেননা এটা করলে সে ইহকাল ও পরকাল দু’টিই হারাবে। তাকে এ বিশ্বাস রাখতে হবে যে, উপায়-উপাদানের মালিক আল্লাহ। 

নিরুপায় মানুষ আল্লাহর উপর একান্ত ভরসা করে বৈধ পন্থায় চেষ্টা করে গেলে আল্লাহ অবশ্যই তার জন্য উত্তম পথ বের করে দিবেন। 
এ ব্যাপারে তিনি তার অনুগত বান্দাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্য তিনি উপায় বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রূযী দেন, যা সে কল্পনাও করেনি’ (তালাক ৬৫/২-৩)।

 তিনি বলেন ‘যারা আমাদের পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, অবশ্যই আমরা তাদেরকে আমাদের পথসমূহে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথে থাকেন’ (আনকাবূত ২৯/৬৯)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি হতাশ হবেননা।
নিশ্চয়ই আপনার জন্য উত্তম কোনো কিছু অপেক্ষা করছে।

আখেরাতের শাস্তির তুলনায় দুনিয়ার  জিন্দেগীর এ শাস্তি কিছু নয়।
ধৈর্য করে আল্লাহর উপর ভরসা করে ঈমান আমল নিয়ে চললে আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম জাযা দিবেন।
শুধুমাত্র আল্লাহকে আপন মনে করুন। 

আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)

সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
পুরুষ হলে তাদের  মজলিসে আসা যাওয়া করুন।
দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন। 
চিল্লায় যেতে পারেন।

নারী হলে মাহরাম পুরুষ সহকারে মাস্তুরাত জামাতে যেতে পারেন।

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শুধুমাত্র এই দুনিয়া বা দুনিয়ার কাহারো জন্য কেনো আত্মহত্যা করবেন?
অথচ যিনি আপনাকে সৃষ্টি করলেন, রিযিক দিলেন,এতো লক্ষ কোটি নিয়ামত দ্বারা ভরপুর করলেন,সেই মহান সত্তার কথা  ভাববেননা?
সুতরাং আপনি হতাশ হবেননা।
,
যে যে পরামর্শ দেয়া হলো,আমল করুন,সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে,ইনশাআল্লাহ।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...