আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
27 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (6 points)
اَلسَّلاَمْ عَلَيْـــــــــــكُمْ وَ رَحْمَةُ اللہِ وَبَرَكَاتُهُ
উস্তাদ, এক পরিবারের ৩জন ছেলে এবং স্বামী স্ত্রী আছে।  প্রথম ছেলের ২জন ছেলে এবং ২য় ছেলের ১জন ছেলে আছে, ৩য় ছেলের বিয়ে হয়েছে তবে বাচ্চা নেই।  এমতাবস্থায় স্ত্রী মানে ৩ জন ছেলের মা মারা গিয়েছেন। স্ত্রীর জামানো ৩০,০০০ টাকা ছিল। এবং  ৩ বিঘার মতো জমি আছে। এখন স্বামী সন্তানের সবার অনুমতি নিয়ে সব টাকা স্ত্রীর মানে তাদের মায়ের নামে দান করে দেয়া হয়। এইভাবে দান করা কি ঠিক হবে নাকি ভাগ করার পর দান করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (705,510 points)
জবাবঃ- 
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহ তা’আলা বলেন, 

يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু?জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু' এর অধিক, তবে তাদের জন্যে ঐ মালের তিন ভাগের দুই ভাগ যা ত্যাগ করে মরে এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিস হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থাকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ।

 تتعلق بتركة الميت أربعة أشياء: تجهيز الميت، وقضاء ديونه، وتنفيذ وصاياه، وتقسيم ما بقي بين ورثته. ثم تقضى ديونه من جميع ما بقي من ماله، ثم تنفذ وصاياه من ثلث ما بقي بعد الدين، ثم يقسم الباقي بين ورثته.
(المقدمة، الحقوق الأربعة المتعلقة بتركة الميت، ص:14:البشرى).

মৃত ব্যক্তির তরিকায় (ছাড়াপত্র বা সম্পত্তি) চারটি বিষয় সম্পর্কিত থাকে:
(১) মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের প্রস্তুতি,
(২) তার ঋণ পরিশোধ,
(৩) তার উইল (وصية) বাস্তবায়ন,
এবং (৪) অবশিষ্ট সম্পদ তার ওয়ারিসদের মাঝে বণ্টন।

(অর্থাৎ প্রথমে কাফন দাফন, এরপর (দাফন-কাফনের খরচ বাদ দিয়ে) তার ঋণ সমস্ত সম্পদ থেকে পরিশোধ করা হবে,
তারপর ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ অংশ থেকে তার উইল কার্যকর করা হবে,
তারপর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তার ওয়ারিসদের মাঝে ভাগ করে দেওয়া হবে।)

★যদি কেউ জীবিত অবস্থায় বলেন:
 “আমার মৃত্যুর পর আমার সম্পত্তি দান করে দিও।”

তাহলে সেটি ওসিয়ত (وصية) হয়ে যায়।
আর ইসলামে নিয়ম হলো:

ওসিয়ত কেবল সম্পদের সর্বোচ্চ এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত বৈধ,
এবং তাও ওয়ারিশ ছাড়া অন্য কারো জন্য।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দান করা যেতে পারে, এবং এক-তৃতীয়াংশই যথেষ্ট।”
(সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম; হাদীস: সা‘দ ইবন আবি ওয়াক্কাস (রা.)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কেউ মারা গেলে তার সম্পত্তি আর তার নিজের থাকে না।
তখন সেই সম্পত্তি ওয়ারিশদের মালিকানায় চলে যায় — কুরআন অনুযায়ী নির্ধারিত অংশে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“আল্লাহ তোমাদের সন্তানদের বিষয়ে তোমাদের জন্য বিধান দিয়েছেন... (এরপর নির্ধারিত অংশগুলো উল্লেখ করেছেন)।”
— সূরা আন-নিসা, আয়াত ১১-১২

অর্থাৎ — মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের হক হয়ে যায়।

তাই, মৃত্যুর পর কেউ অন্য কারো হয়ে দান করতে পারে না।

যদি কেউ মারা যান, তার সম্পত্তি ইচ্ছেমতো দান করা যাবে না,
কারণ এখন এটি তার নয়, বরং ওয়ারিশদের সম্পত্তি।

ফিকহের মূলনীতি:
 “মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি মৃত্যুর পর ওয়ারিশদের অধিকারে চলে যায়; অতএব, অন্য কেউ তা থেকে দান করতে পারবে না ওয়ারিশদের অনুমতি ছাড়া।”
(আল-মুগনী, ইবন কুদামা; ফাতাওয়াল হিন্দিয়া, খণ্ড ৬)

তাহলে দান কিভাবে বৈধ হবে?

(ক) ওয়ারিশরা একযোগে সম্মতি দিলে

যদি সবাই প্রাপ্ত অংশের আগেই সম্মতি দেয় 
“আমরা সবাই মিলে মায়ের সম্পত্তি দান করতে রাজি” 
তাহলে পুরো সম্পত্তি দান করা বৈধ।

কারণ তখন প্রতিটি ওয়ারিশ নিজের হক ছাড়ছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,
এবং এই দান তাদের সম্মিলিত ইচ্ছায় হচ্ছে।

ইমাম নববী (রহ.) বলেন:
“যদি সব ওয়ারিশ সম্মত হয়, তবে তারা মৃতের সম্পত্তি দান করতে পারে, কারণ সেটি এখন তাদের সম্পদ।”
(আল-মাজমূ’, ১৫/৩৮৩)

 (খ) কেউ যদি রাজি না হয়,
তাহলে পুরো সম্পত্তি দান করা হারাম হবে,
কারণ তুমি তার হক কেড়ে নিচ্ছো।

এক্ষেত্রে প্রত্যেকে তার নিজ নিজ অংশের মালিক,তাই সকলের অংশ আগে ভাগ করে দিতে হবে।
এরপর কেহ চাইলে নিজের অংশ আলাদা করে দান করতে পারে। 
আর অন্যরা চাইলে নিজেদের অংশ রাখতে পারে।

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সর্বোত্তম ছুরত হলোঃ

ওয়ারিশদের সবাইকে বসিয়ে সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া।

সবাই রাজি হলে সমষ্টিগতভাবে দান করা (সওয়াব বেশি)।

কেউ রাজি না হলে, কাউকে বাধ্য না করা।
সকলের অংশ আগে ভাগ করে দিতে হবে।
এরপর প্রত্যেকে নিজের অংশ দান করুক — এটিই ন্যায্য ও শরীয়তসম্মত পদ্ধতি ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...