আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আমি আসলে জানতে চাই গীবত থেকে কিভাবে বাচব?

কোনো গেট টুগেদার এ গেলে তো হয়ই। চ্যাটিং এ ও হয়।

নিজে বলার চেয়ে শুনা হয় বেশি। পরবর্তীতে খুবই খারাপ লাগে। রুহ যেন কষ্ট পাচ্ছে এমন লাগে।

আমি প্রতিবারই শপথ নেই এমন কিছু করব না। কিন্তু হয়েই যায়।হয় আমি বলি নাহয় কারোটা শুনি

আমি পুরোপুরি এর থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই

1 Answer

0 votes
by (705,510 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

গীবতের গুনাহ খুবই মারাত্মক, তাই আমাদের জানতে হবে যে  গীবত কি?

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢] 

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। {সূরা হুজুরাত-১২}

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ [١٠٤:١] 

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, {সূরা হুমাজা-১}

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ»

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলঃ আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮৯, ৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৪৫৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৯৩, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১৪১৭, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১১৬৩}

عَنْ أَبِي سَعْدٍ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا “، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِ “وَفِي رِوَايَةِ حَمْزَةَ ” فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ لَهُ، وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَغْفِرَهَا لَهُ صَاحِبُهُ  

হযরত আবু সাঈস এবং জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গীবত করা ব্যভিচার করার চেয়েও জঘন্য। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত করা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য হয় কি করে? রাসূল সাঃ বললেনঃ নিশ্চয় ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করে তওবা করে থাকে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করা হয় না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে তাকে ক্ষমা করে। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬৩১৫, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৯০}

কেন গীবত হয়ে যায়?

১. আড্ডায় কথার ফাঁকে হালকা ঠাট্টা বা “সত্যি বলছি, ও তো এমনই...”
২. নিজের ভালো প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যের খারাপ দিক বলা।
৩. কারো আচরণ বা কাজ নিয়ে অভিযোগ করতে গিয়ে সীমা ছাড়ানো।
৪. নিছক “সময় কাটানোর” কথাবার্তা।
৫. অনলাইনে কারো সম্পর্কে পোস্ট/কমেন্টে আলোচনা।

এসবের বেশিরভাগই “অবচেতনে” গীবত হয়ে যায়, এবং শয়তান এই জায়গাটাই ব্যবহার করে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে গীবত থেকে বাঁচার বাস্তব উপায়ঃ-

১. আড্ডা বা চ্যাটে দিক পরিবর্তন করুন।

যখন কেউ কারো কথা তুলতে শুরু করে —

“ওর কথা না বলি, আল্লাহ আমাদের ঢেকে রাখুন।”

“চলো, অন্য কিছু বলি।”
এভাবে শান্তভাবে কথার দিক ঘুরিয়ে দিন।

এতে একদিকে আপনি বাঁচবেন, অন্যদিকে পরিবেশও ধীরে ধীরে পাল্টাবে।

২. মনেই মনে দোয়া করুন।

যখনই গীবত শুনে ফেলবেন —
“আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়া লাহু” (اللهم اغفر لي وله)
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাকে ও তাকে ক্ষমা করুন।
এই দোয়া পড়লে, গীবত শোনার গুনাহ অনেকটা হালকা হয়ে যায় (ইমাম নববী ও অন্যান্য আলেমদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী)।

৩. সামাজিক প্রতিরোধ তৈরি করুন।

যাদের সাথে এমন আড্ডা হয়, একদিন ধীরে বলুন—

 “চলো এমন গল্প করি যাতে সওয়াব হয়। কারো কথা না বলে নিজেদের নিয়ে কিছু বলি।”
এভাবে একবার মনে করালে, পরের বার অনেকেই সাবধান হবে।

৪. নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন — আল্লাহও আমায় ঢেকে রেখেছেন

প্রতিবার মনে করুন —

 “যদি আল্লাহ আমার সব ত্রুটি প্রকাশ করতেন, আমি সমাজে মুখ দেখাতে পারতাম?”
এই চিন্তা গীবতের আগুন নিভিয়ে দেয়।
কারণ, অন্যের দোষ বলা মানে নিজের দোষ খোঁচানো।

নিম্নোক্ত দোয়াটি নিয়মিত পাঠ করার পরামর্শ থাকবে। 

 اللهم أعني على ذكرك وشكرك وحسن عبادتك
“হে আল্লাহ, আপনার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও সুন্দর ইবাদতে আমাকে সহায় করুন।”
— সহীহ মুসলিম


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

No related questions found

...