“একটি শর্তযুক্ত বিক্রয় চুক্তি, যেখানে বিক্রেতা ক্রেতাকে বলে —
আমি এই সম্পত্তি তোমার কাছে বিক্রি করছি, তবে যখন আমি দাম ফেরত দেব, তখন তুমি এই সম্পত্তি আমাকে ফেরত দেবে।”
অর্থাৎ:
এটি এমন এক “বিক্রয়” যা প্রকৃতপক্ষে “ঋণের নিরাপত্তা-এর মতো হয়।
বাস্তবে এটি বিক্রয় নয়, বরং ঋণের ছদ্মবেশে সম্পত্তি বন্ধক রাখা।
এটি প্রকৃত বিক্রয় নয়, বরং ঋণ ও বিক্রয়ের মিশ্রণ, যেখানে উভয় দিকের শর্ত আছে —
এবং রাসূল ﷺ স্পষ্টভাবে এমন লেনদেন নিষিদ্ধ করেছেন।
---
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا
“আল্লাহ বিক্রয়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।”
(সূরা আল-বাকারা ২:২৭৫)
এই আয়াতের ভিত্তিতে ইসলাম বিক্রয় ও ঋণকে পৃথক রেখেছে; উভয়কে একসাথে মিশানো রিবা বা প্রতারণার রূপ।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
«نَهَى رَسُولُ اللَّهِ ﷺ عَنْ بَيْعَتَيْنِ فِي بَيْعَةٍ»
— রাসূল ﷺ এক বিক্রয়ে দুই চুক্তি করার নিষেধ করেছেন।
(তিরমিযি, হাদীস: ১২৩১; আহমদ, আবু দাউদ)
অর্থাৎ, এক চুক্তির মধ্যে দুটি শর্ত বা লেনদেন মেশানো হারাম।
বাই‘ আল-উফা ঠিক এইরকম — বিক্রয় ও রেহনের মিশ্রণ।
◼️ ইমাম আবু হানিফা ও তার আসহাব (ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ) তাঁরা বলেন, এটি ফাসিদ (অবৈধ বিক্রয়)।
কারণ বিক্রয় তখনই বৈধ হবে যখন মালিকানা স্থায়ীভাবে হস্তান্তর হয়,
কিন্তু এখানে বিক্রেতা পুনরুদ্ধারের শর্ত দিয়েছে, ফলে বিক্রয়ের মূল উদ্দেশ্য নষ্ট হয়।
(সূত্র: “الفتاوى الهندية” ٣/١٧٣, “الدر المختار مع رد المحتار” ٥/٧٧)
ফতওয়া আলামগিরি (الفتاوى الهندية):
“بيع الوفاء الذي هو أن يقول البائع للمشتري: بعتك على أني إذا رددت الثمن رددت المبيع، هو بيع فاسد.”
অর্থাৎ: “যে বিক্রয়ে বলা হয়, আমি বিক্রি করছি এই শর্তে যে দাম ফেরত দিলে সম্পত্তি ফেরত দেবে — এটি ফাসিদ বিক্রয়।”
ইবনে আবিদিন (রহ.) বলেন,
“এই ধরণের বিক্রয় ‘ঋণের নিরাপত্তা’ হিসেবে প্রচলিত, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটি বিক্রয় নয়। তাই এটি শরীয়তসম্মত নয়।”
(رد المحتار ٥/٧٧)
যেহেতু বিক্রয়ের মধ্যে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে (শর্ত বিক্রয় বাতিল করে),এতে সুদ বা অন্যায্য লাভের উপাদান আছে,এতে প্রতারণা ও অনিশ্চয়তা (غرر) আছে,এটি বিক্রয় নয়, বরং রাহন/ঋণের ছদ্মবেশ।
তবে যদি প্রথম থেকেই কোন চুক্তি না করা হয় বরং ক্রয় বিক্রয় সম্পাদন হওয়ার পর ও উক্ত ব্যাক্তির মালিক হয়ে যাওয়ার পর সাধারণভাবে যদি প্রথম ব্যক্তির কাছে সে জমিটি বিক্রি করে দিতে চায়, তাহলে তা জায়েজ আছে।