আসসালামু আলাইকুম। খুব কাছের একজন মানুষের কথা তুলে ধরছি।
তার নিজের ভাষায় -
আমি ও আমার স্বামী দুজনেই অনেক বেশি প্র্যাক্টিসিং আলহামদুলিল্লাহ। সব সময় আখেরাতের ভয় মনে কাজ করে। মনে হয় আজকে মারা গেলে আমার কবরের জবাবদিহিতা আমাকে দিতে হবে। আখেরাতের এত লম্বা একটা সময় কিভাবে নাফরমানীর জবাবদিহিতা করব।
এই চিন্তাগুলি এখন কাজ করে। কিন্তু আমি নিজে খুব সেক্যুলার একটা পরিবেশে সো কলড ইসলামিক পরিবেশে ক্যারিয়ারে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে বড় হয়েছি। আল্লাহ মাফ করুক, কারো কথা সহজে মানার প্রবণতা আমার ছিল না, বিশেষ করে নিজের চেয়ে ছোট কেউ।
বিয়ের পর অনেক ভাবে স্বামীর সাথে এডজাস্টমেন্ট এ সমস্যা হয়েছে। ও একটু ডমিনেটিং টাইপের মানুষ। মেয়েদের বাসায় থাকাকে পছন্দ করে, আবার পর্দা করে জব করাটাকেও এলাও করে না যে তা না। সে আর আমি দুজনেই দুই রকমের মানুষ।আমরা দুজনেই চিকিৎসক, সেও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছে।আমি নিজেও করছি । এমতাবস্থায়, সব ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টের চিন্তাভাবনার জন্য সংসারী হয়ে উঠতে পারি নাই পুরোপুরি। কিন্তু আমার স্বামী আবার টিপটপ চায় সবকিছু। সংসারের অনেক কিছুই বুঝি না। যাইহোক, নিজে যে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করছিলাম তার দুই বছরের দ্বারপ্রান্তে (টোটাল পাঁচ বছর) এসে হঠাৎ করে দীনের প্রচন্ড বোঝ আসে। মনে হয় পুরোপুরি,বাসায় থেকে স্বামী সন্তান সবাইকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করে যাই, অনেক বেশি গুনা করে ফেলেছি,এর মধ্যেও স্বামীর সাথে অনেকবার মনোমালিন্যতা তৈরি হয়েছে।
ছুটি নিয়েছিলাম, ছুটি শেষে এখন আবার মনের মধ্যে একদিকে চিন্তা আসছে, জয়েন করি।আবার অন্যদিকে, মনে হচ্ছে, কোনভাবে যদি স্বামীকে কষ্ট দিয়ে ফেলি, অতিরিক্ত স্ট্রেসে পড়ে,অথবা স্বামী যদি এমনিই কষ্ট পায় আমার থেকে (স্বামী একবার বলেছিল, আমার পড়াশোনার জন্য তাকে ব্যবহার করছি,উল্লেখ্য যে সে সমস্ত আর্থিক সাপোর্ট দেয়, আর আমার পড়াশোনার ব্যাপারটা আমার বাবার কাছে বিবাহের আগে ওয়াদা দেওয়া ছিল)। এখন সবকিছু ছেড়ে একেবারে বাসায় বসে থাকলেও, নিজে ডিপ্রেশনে পড়ে যেতে পারি। এ কথা, অনেকবার শুনেছি আর ভেবেছি। কিন্তু,
আমার স্বামী এ কথা বলায়, তখন বললাম, আল্লাহর জন্য কোন কিছু ছাড়লে, আল্লাহ কেন আমাকে ডিপ্রেশনে ফেলবেন?? এটা কি আল্লাহর ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না?? এমন একটা ধারণা মনে আসে এবং বলেও ফেলি।
যদিও আমার ইচ্ছা হচ্ছে দীনের সেবা করা, কিন্তু, ভয় হয়, যদি, স্বামীকে যথেষ্ট সময় না দেওয়ার কারণে (এমনিতেই সংসার সম্পর্কে আমার বোঝ কম, সব সময় পড়াশোনায় অভ্যস্ত ছিলাম), বিভিন্ন সময়ের নাইট মর্নিং ডিউটির জন্য, তার সাথে যথেষ্ট সময় দেয়া না হলে /অথবা কখনো কোন স্টেসে পড়ে তাকে কোনভাবে কষ্ট দিয়ে ফেললে (উল্লেখ্য, ছোটখাটো কোন বিষয়ে, আমার কন্ঠের টোন এদিক সেদিক হয়ে গেলেও, আমার স্বামী সেটা নিয়ে মন খারাপ করে থাকেন অনেকদিন, অনেক সময় ডিভোর্সে পর্যন্ত চলে যায়) এই ভয়টা কাজ করে সব সময়।স্বামী সন্তানও নিতে চান না আর আমার ক্যারিয়ারের জন্য, মাঝেমধ্যে তো বলেন তোমার সাথে আমার আর কোন সন্তান নেওয়ার ইচ্ছা নাই । একটা বাচ্চা আছে। আমি বুঝে শুনে তাকে কোন কষ্ট দিচ্ছি না। মাঝেমধ্যে কষ্ট দেয়ার মত কিছু না হলেও সে কষ্ট পেয়ে যাচ্ছে, এই ব্যাপারগুলি বুঝাইয়া বললেও কোন সমাধান হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে বলছে, তুমি তোমার ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাও আমি আমার মতো থাকি। সংসার রক্ষা করার জন্য আমাদেরকে দূরত্ব বাড়িয়ে দিতে হবে নিজেদের মধ্যে এসব কথাও সে বলে থাকে।
এমতাবস্থায়, অনেক সময় ডিউটির স্ট্রেসের জন্য তাকে যদি কোন ভাবে কষ্ট দিয়ে ফেলি, সেটা মাফ চাইলেও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ হিসেবে অনেকদিন থাকে। এক্ষেত্রে, আমার পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে একেবারে বাসায় থাকাটাকি উচিত হবে কিনা???স্পেসিফিকলি এই কাজটা কি আল্লাহর জন্য করা হবে?? আল্লাহর জন্য করছি এটা বোঝাবে?? আমি একটু ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আর কি। তাহলে মনকে বুঝ দিতে পারব যে আল্লার জন্য করছি।। অথবা আমার এই কাজগুলি কি আল্লাহর জন্য হচ্ছে /হবে???আমার বাবা বলেন, তুমি মানুষকে সেবা দিতে পারবা বড় ডাক্তার হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে সারা জীবন অনেক সোয়াব তোমার আমলনামায় লেখা হবে।। কোনটাকে বেশি প্রায়োরিটি দিব?? কোন দিকে আগাও আগাবো? কোন দিকে আগালে সেটা আল্লার জন্য হবে?? আমি ইস্তেখারা করেছি, এই কোর্সটা তে জয়েনিং এর আগে, ছুটি নেয়ার আগে, ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার পরও। মন অস্থির থাকছে। স্বপ্ন বা মনে কোন কিছু স্থির হচ্ছে না। এতদিন পর্যন্ত স্ট্রিট থাকার পরেও এখন আবার মনে হচ্ছে, আবার জয়েন্ করি, আরেকবার মনে হচ্ছে যদি উপরোক্ত ঝামেলাগুলি আবার সৃষ্টি হয়।
আর যদি জবে জয়েন করি, সে ক্ষেত্রে যে বলেছি, আল্লাহর জন্য কোন কিছু ছাড়লে, আল্লাহ কেন ডিপ্রেশনে ফেলবেন, এই কথাগুলির জন্য কি গুনাহ হবে কিনা?? কারন আমি তো ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছি। এটা কি আমার ঈমানের কোন ঘাটতি বোঝা যাচ্ছে.?? আমার কি আমল কম হচ্ছে? এজন্য এমন মনে হচ্ছে?? এটা কি আল্লাহর সাথে বেয়াদবি হয়ে যাবে আমার? যেহেতু আল্লাহর শক্তি নিয়ে আমি নিজেই দৃঢ় ছিলাম, আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবেন। আবার এখন কেন, ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছি??? কাইন্ডলি ব্যাপার গুলো একটু ক্লিয়ার করবেন।।। সবচেয়ে বড় কথা আমার এই কাজগুলোকে আল্লাহর জন্য করা হবে??? অথবা আল্লাহর জন্য করলে কোন দিকে আগাবো??
অনেক বেশি দুঃখিত বড় একটা পোষ্টের জন্য।