আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আ'লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ উস্তাদ। ছেলের বিবাহিত জীবনের পাঁচ বছর চলছে । কিন্তু শাশুড়ি আর ননদ মিলে নানা ভাবে নানা সময় বউয়ের উপর মানসিক অত্যাচার করে ,বিভিন্ন কথা বলে,খবর টেবিল থেকে খাবার সরিয়ে নিয়ে আরো নানা ভাবে। বউ সব সহ্য করে যায় । ছেলে যখন মায়ের সাথে এই বিষয় নিয়ে  মিটমাট করতে চাই তখন মা তা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন এবং বলেন"  আমি কেনো এমন করবো তোর বউয়ের সাথে,এখন কার শ্বাশুড়ি রা বউকে জ্বালায় না,আগের দিনে জ্বালাতো,আমার মত ভালো শ্বাশুড়ি পাবে না ইত্যাদি । কিন্তু বউকে এমন করার বা অপছন্দ করার কোনো কারণ জানা নেই । ছেলে চাই বাবা মাকে সহ নিয়ে একসাথে থাকতে এবং কোনো অবস্থাতেই সে আলাদা হবে না বউকে নিয়ে । কিন্তু এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা যায় , মা তো কিছুতেই তার দোষ বুঝতে রাজি না,পারিবারিক কোলাহল লেগেই আছে এটা নিয়ে । কিভাবে ছেলে সব ঠিক করে একসাথে থাকতে পারবে সবাই মিলে জানাবেন উস্তাদ জ্বি মিন ফাদলিক

1 Answer

0 votes
by (689,850 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মায়ের প্রতি সেবা, শ্রদ্ধা ও ভক্তি,তার বৈধ আদেশ মান্য করা সন্তানের অন্যতম ফরজ দায়িত্ব।

আবার স্ত্রীর প্রতি ন্যায্য আচরণ, ভালো ব্যবহার ও মানসিক নিরাপত্তা দেওয়া স্বামীরও ফরজ দায়িত্ব।

আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তমভাবে বাস করো।”
(সূরা আন-নিসা ৪:১৯)

আর নবী করিম ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।”
(তিরমিজি ৩৮৯৫)

সুতরাং, মা এবং স্ত্রী — দু’জনেই সম্মান ও ভালো ব্যবহারের দাবিদার।
কিন্তু কেউ অন্যজনের উপর জুলুম করতে পারে না, সে মা হোক বা বউ।

শাশুড়ির মানসিকতা ও অস্বীকারের কারণ,
অনেক সময় মায়েরা ছেলেকে নিজের একচ্ছত্র অধিকার মনে করেন, এবং ছেলের বউকে “প্রতিদ্বন্দ্বী” হিসেবে ভাবেন — এটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, ধর্মীয় নয়।

তাই তিনি বলেন — “আমি তো কিছুই করি না”, “আমি ভালোই আছি” ইত্যাদি।
এটি স্বীকার না করার প্রতিরক্ষা মানসিকতা  অপরাধবোধ নয়।

★ শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী ছেলের করণীয়

১. ন্যায়বিচার ও ভারসাম্য বজায় রাখা
আল্লাহ তাআলা বলেন:

“যখন তোমরা কথা বলো, ন্যায়ের সঙ্গে বলো, যদিও তা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেই হয়।”
(সূরা আনআ’আম ৬:১৫২)

অর্থাৎ, ছেলেকে এমনভাবে আচরণ করতে হবে যাতে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নষ্ট না হয়, আবার স্ত্রীর উপর অন্যায়ও না হয়।
---
২. মায়ের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করুন, অভিযোগ নয় — অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন।
যেমন বলুন:

 “আম্মা, আমি জানি আপনি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি শুধু চাই আমাদের ঘরটা যেন শান্তিতে থাকে। আমার স্ত্রীও আপনাকে মায়ের জায়গায় দেখে, কিন্তু কখনও কখনও ছোটখাটো কথায় কষ্ট পায় — আমি চাই আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি।”

এইভাবে বললে মা “অভিযুক্ত” মনে করবেন না, বরং “মূল্যবান” মনে করবেন।
---
৩. স্ত্রীকেও ধৈর্য ধরতে বলুন, তবে নীরব নির্যাতন সহ্য করতে নয়।

তিনি যেন শাশুড়ির সঙ্গে তর্ক না করেন, বরং নরমভাবে এড়িয়ে যান, এবং নিজের আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখেন।
নবী করিম ﷺ বলেছেন:

“যে ব্যক্তি ঝগড়া ত্যাগ করে, যদিও সে সঠিক হয় — আমি তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
(আবু দাউদ ৪৮০০)

---
৪. আলাদা থাকা যদি প্রয়োজন হয়,তাহলে আলাদা থাকতে হবে, তবে সম্পর্ক ছিন্ন নয়।

ইসলাম বলে না যে একসাথে থাকা বাধ্যতামূলক; বরং যদি একসাথে থাকতে গিয়ে বিবাদ, গীবত, অন্যায়, কষ্ট হয় — তবে আলাদা থাকা উত্তম।

তবে আলাদা থাকা মানে “সম্পর্ক ছিন্ন” নয় —
বরং মা’কে নিয়মিত দেখা, খোঁজ নেওয়া, খরচে সহায়তা করা, সেবা করা — এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।
---
পরামর্শঃ-

১. প্রতিদিন রাতে দুজন (ছেলে ও স্ত্রী) সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে দোয়া করুন — ঘরের শান্তির জন্য।

২. মাকে ছোট ছোট কাজে যুক্ত করুন — যেমন নাতি-নাতনির দায়িত্ব, রান্নার পরামর্শ ইত্যাদি — যেন তিনি গুরুত্ব অনুভব করেন।

৩. ঘরে পরামর্শ সভা,ফ্যামিলি মিটিং  সপ্তাহে একবার করুন, যেখানে অভিযোগ নয়, শুধু কৃতজ্ঞতার কথা বলা হবে।

৪. কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়কে মধ্যস্থতা করতে বলুন, যিনি মায়ের কাছেও গ্রহণযোগ্য।

★উভয় পরিবারের মুরব্বিদের নিয়ে পারিবারিক সালিশ বসাতে পারেন।

কুরআনের নির্দেশ:
“তোমরা যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা কর, তবে উভয় পক্ষ থেকে একজন সালিস নিয়োগ করো...”
— [সূরা আন-নিসা ৪:৩৫]

অর্থাৎ, আপনার ও তার পরিবার থেকে একজন করে সালিশ বসিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

★এতেও কাজ না হলে আপনারা আলাদা হয়ে যেতে পারেন বা অন্যত্রে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন।

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ عَمْرِو بْنِ الأَحْوَصِ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ، شَهِدَ حَجَّةَ الْوَدَاعِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَذَكَّرَ وَوَعَظَ فَذَكَرَ فِي الْحَدِيثِ قِصَّةً فَقَالَ " أَلاَ وَاسْتَوْصُوا بِالنِّسَاءِ خَيْرًا… أَلاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أَنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ فِي كِسْوَتِهِنَّ وَطَعَامِهِنَّ " .

সুলাইমান ইবনু আমর ইবনুল আহওয়াস (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র থেকে বর্ণিতঃ
বিদায় হজ্জের সময় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা ও গুণগান করলেন এবং ওয়াজ-নাসীহাত করলেন। এ হাদীসের মধ্যে বর্ণনাকারী একটি ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণের উপদেশ নাও। ... জেনে রাখ! তোমাদের প্রতি তাদের অধিকার এই যে, তোমরা তাদের উত্তম পোশাক-পরিচ্ছদ ও ভরণপোষণের ব্যবস্থা করবে। (সুনানে তিরমিযী ১১৬৩)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে রয়েছে-

تجب السكني لها عليه في بيت خال

মর্থার্থ: স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা স্বামীর উপর আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াত, ১/৬০৪)

قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )

স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/430

ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।

যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।

আরো জানুনঃ 

শশুর শাশুড়ীর সাথে থাকা,তাদের খেদমত সংক্রান্ত জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...