মায়ের প্রতি সেবা, শ্রদ্ধা ও ভক্তি,তার বৈধ আদেশ মান্য করা সন্তানের অন্যতম ফরজ দায়িত্ব।
আবার স্ত্রীর প্রতি ন্যায্য আচরণ, ভালো ব্যবহার ও মানসিক নিরাপত্তা দেওয়া স্বামীরও ফরজ দায়িত্ব।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে উত্তমভাবে বাস করো।”
(সূরা আন-নিসা ৪:১৯)
আর নবী করিম ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে উত্তম আচরণ করে।”
(তিরমিজি ৩৮৯৫)
সুতরাং, মা এবং স্ত্রী — দু’জনেই সম্মান ও ভালো ব্যবহারের দাবিদার।
কিন্তু কেউ অন্যজনের উপর জুলুম করতে পারে না, সে মা হোক বা বউ।
শাশুড়ির মানসিকতা ও অস্বীকারের কারণ,
অনেক সময় মায়েরা ছেলেকে নিজের একচ্ছত্র অধিকার মনে করেন, এবং ছেলের বউকে “প্রতিদ্বন্দ্বী” হিসেবে ভাবেন — এটা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়, ধর্মীয় নয়।
তাই তিনি বলেন — “আমি তো কিছুই করি না”, “আমি ভালোই আছি” ইত্যাদি।
এটি স্বীকার না করার প্রতিরক্ষা মানসিকতা অপরাধবোধ নয়।
★ শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী ছেলের করণীয়
১. ন্যায়বিচার ও ভারসাম্য বজায় রাখা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যখন তোমরা কথা বলো, ন্যায়ের সঙ্গে বলো, যদিও তা আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধেই হয়।”
(সূরা আনআ’আম ৬:১৫২)
অর্থাৎ, ছেলেকে এমনভাবে আচরণ করতে হবে যাতে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা নষ্ট না হয়, আবার স্ত্রীর উপর অন্যায়ও না হয়।
---
২. মায়ের সঙ্গে একান্তে আলোচনা করুন, অভিযোগ নয় — অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন।
যেমন বলুন:
“আম্মা, আমি জানি আপনি আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমি শুধু চাই আমাদের ঘরটা যেন শান্তিতে থাকে। আমার স্ত্রীও আপনাকে মায়ের জায়গায় দেখে, কিন্তু কখনও কখনও ছোটখাটো কথায় কষ্ট পায় — আমি চাই আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি।”
এইভাবে বললে মা “অভিযুক্ত” মনে করবেন না, বরং “মূল্যবান” মনে করবেন।
---
৩. স্ত্রীকেও ধৈর্য ধরতে বলুন, তবে নীরব নির্যাতন সহ্য করতে নয়।
তিনি যেন শাশুড়ির সঙ্গে তর্ক না করেন, বরং নরমভাবে এড়িয়ে যান, এবং নিজের আচরণে ভদ্রতা বজায় রাখেন।
নবী করিম ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি ঝগড়া ত্যাগ করে, যদিও সে সঠিক হয় — আমি তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর গ্যারান্টি দিচ্ছি।”
(আবু দাউদ ৪৮০০)
---
৪. আলাদা থাকা যদি প্রয়োজন হয়,তাহলে আলাদা থাকতে হবে, তবে সম্পর্ক ছিন্ন নয়।
ইসলাম বলে না যে একসাথে থাকা বাধ্যতামূলক; বরং যদি একসাথে থাকতে গিয়ে বিবাদ, গীবত, অন্যায়, কষ্ট হয় — তবে আলাদা থাকা উত্তম।
তবে আলাদা থাকা মানে “সম্পর্ক ছিন্ন” নয় —
বরং মা’কে নিয়মিত দেখা, খোঁজ নেওয়া, খরচে সহায়তা করা, সেবা করা — এগুলো অব্যাহত রাখতে হবে।
---
পরামর্শঃ-
১. প্রতিদিন রাতে দুজন (ছেলে ও স্ত্রী) সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস পড়ে দোয়া করুন — ঘরের শান্তির জন্য।
২. মাকে ছোট ছোট কাজে যুক্ত করুন — যেমন নাতি-নাতনির দায়িত্ব, রান্নার পরামর্শ ইত্যাদি — যেন তিনি গুরুত্ব অনুভব করেন।
৩. ঘরে পরামর্শ সভা,ফ্যামিলি মিটিং সপ্তাহে একবার করুন, যেখানে অভিযোগ নয়, শুধু কৃতজ্ঞতার কথা বলা হবে।
৪. কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়কে মধ্যস্থতা করতে বলুন, যিনি মায়ের কাছেও গ্রহণযোগ্য।
★এতেও কাজ না হলে আপনারা আলাদা হয়ে যেতে পারেন বা অন্যত্রে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেন।