আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
49 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (30 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষকে ছবি দিতে রাজি না হওয়ায়, আমার অনুমতি ব্যতীত আমার অজান্তে একজনের কাছ থেকে ছবি নিয়ে নন মাহরামকে দেওয়া হয়েছে। এইসব ছবি ঠিক কত মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে আমার জানা নেই। এই ছবি আদান প্রদানের বিষয়ে এই পর্যন্ত কত্তবার যে ঝামেলা হয়েছে বাসায়।  এই একই টপিক নিয়ে কথা বলতে বলতে আমি নিজেও বিরক্ত, একই সাথে হতাশ। আমার প্রশ্ন:

১) এইযে আমার ছবি এতো জায়গায় ছড়িয়ে গেল এতে কি আমার গুনাহ হবে/ হচ্ছে?
২) বেদ্বীন ছেলে বিয়ে করতে না চাওয়ায় যদি বাবা মা মুখ ফিরিয়ে নেয়, এতে কি সন্তান গুনাহগার হবে?
৩) হতাশা দূর করবো কিভাবে?

1 Answer

0 votes
by (704,280 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

اِنۡ تَکۡفُرُوۡا فَاِنَّ اللّٰہَ غَنِیٌّ عَنۡکُمۡ ۟ وَ لَا یَرۡضٰی لِعِبَادِہِ الۡکُفۡرَ ۚ وَ اِنۡ تَشۡکُرُوۡا یَرۡضَہُ لَکُمۡ ؕ وَ لَا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی ؕ ثُمَّ اِلٰی رَبِّکُمۡ مَّرۡجِعُکُمۡ فَیُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ؕ اِنَّہٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۷﴾ 

যদি তোমরা কুফরী কর তবে (জেনে রাখ) আল্লাহ তোমাদের মুখাপেক্ষী নন। আর তিনি তার বান্দাদের জন্য কুফরী পছন্দ করেন না। এবং যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তবে তিনি তোমাদের জন্য তা-ই পছন্দ করেন। আর কোন বোঝা বহনকারী অপরের বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের রবের কাছেই তোমাদের ফিরে যাওয়া। তখন তোমরা যা আমল করতে তা তিনি তোমাদেরকে অবহিত করবেন। নিশ্চয় অন্তরে যা আছে তিনি তা সম্যক অবগত।
(সুরা আয যুমার ০৭)

وَ لَا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی

কোনো ব্যাক্তি অন্য কোনো ব্যাক্তির গুনাহের বোঝা বহন করবেনা।
(সুরা ফাতির ১৮)

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন কোন মানুষ অন্য মানুষের পাপভার বহন করতে পারবে না। প্রত্যেককে নিজের বোঝা নিজেই বহন করতে হবে। “বোঝা” মানে কৃতকর্মের দায়দায়িত্বের বোঝা। এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই তার কাজের জন্য দায়ী এবং প্রত্যেকের ওপর কেবলমাত্র তার নিজের কাজের দায়-দায়িত্ব আরোপিত হয়। এক ব্যক্তির কাজের দায়-দায়িত্বের বোঝা আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্য ব্যক্তির ঘাড়ে চাপিয়ে দেবার কোন সম্ভাবনা নেই। কোন ব্যক্তি অন্যের দায়-দায়িত্বের বোঝা নিজের ওপর চাপিয়ে নেবে এবং তাকে বাঁচাবার জন্য তার অপরাধে নিজেকে পাকড়াও করাবে  এরও কোন সম্ভাবনা নেই।
,
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,    
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হবেনা।  তদুপরি সেই ছবি গুলো যেনো পাত্রপক্ষ ডিলিট ( প্রিন্ট করা হলে) তাহা ছিড়ে ফেলে দেয়,এ জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।

(০২)
সন্তান দ্বীনদার হলে এক্ষেত্রে সন্তান গুনাহগার হবেনা।

(০৩)
এক্ষেত্রে করণীয়ঃ-

★আল্লাহর জিকির (স্মরণ) হলো প্রশান্তির মূল উৎস।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
“জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।”
(সূরা রা’দ, আয়াত ২৮)

যখন মন অশান্ত বা উদ্বিগ্ন হয়, তখন নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত, দোয়া বা তাসবীহ পড়া,মানসিক চাপ দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

সকালে ও বিকেলে আযকারুল সাবাহ ওল মাসা পড়া

“لا حول ولا قوة إلا بالله” (লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ) বেশি পড়া

নামাজে মনোযোগী হওয়া

★ তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)

وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“যে আল্লাহর উপর ভরসা করে, আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।”
(সূরা আত-তালাক, আয়াত ৩)

যখন আমরা বুঝি যে ফলাফল আল্লাহর হাতে, তখন ব্যর্থতার ভয় বা চিন্তা অনেক কমে যায়।
তাওয়াক্কুল মানে কাজ ছেড়ে দেওয়া নয় — বরং পরিশ্রমের পর ফলাফলের চিন্তা আল্লাহর উপর ছেড়ে দেওয়া।

নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করো
তারপর বলবেন: “হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হু”

ফলাফল যা-ই আসুক, শান্ত চিত্তে মেনে নিবেন।

★নামাজ ও দোয়ায় মন প্রশান্ত করা

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

 اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
“ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও।”
(সূরা আল-বাকারা, ৪৫)

যখন মন খারাপ, দুশ্চিন্তা বা ভয় হয় — তখন নামাজ পড়া, সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে নেওয়া, নিজের মনের কথা বলা — এটি এক বিশাল “রিলিজ”।

 বিশেষ দোয়া:

“اللهم إني أعوذ بك من الهم والحزن، وأعوذ بك من العجز والكسل…”
(হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুঃখ ও উদ্বেগ থেকে...)
( সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩৬৯)

★কদরে বিশ্বাস (তাকদিরে সন্তুষ্টি)

 قُل لَّن يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا
“বলুন, আমাদের কেবল সেই ঘটনাই ঘটবে যা আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন।”
(সূরা আত-তাওবা, ৫১)

জীবনের যা ঘটে, ভালো বা খারাপ — সবই আল্লাহর নির্ধারিত পরীক্ষা।
এই বিশ্বাস রাখলে — অতীতের অনুশোচনা, ভবিষ্যতের ভয়, বর্তমানের দুশ্চিন্তা অনেকটাই হালকা হয়ে যায়।

★পরিমিত জীবন ও দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমানো

চাপের মূল কারণ অনেক সময় হয় —
“লোক কী বলবে?”, “আমি আরও বেশি চাই”, “আমার জীবন কেন ওদের মতো না?”

নবী ﷺ বলেছেন:

انظروا إلى من هو أسفل منكم، ولا تنظروا إلى من هو فوقكم
“তোমরা তাদের দিকে তাকাও যারা তোমাদের চেয়ে নিচে অবস্থানে আছে,
তাদের দিকে নয় যারা তোমাদের চেয়ে উঁচু অবস্থানে।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৯৬৩)

★অন্যকে সাহায্য করা।
অন্যকে উপকার করা মানসিক শান্তির অসাধারণ উপায়।
নবী ﷺ বলেছেন:

أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللَّهِ أَنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ
“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষ সে, যে অন্যদের উপকারে আসে।”
( মু’জামুল আওসাত, হাদীস ৬১৯২)

অন্যের কষ্ট লাঘব করলে নিজের মনও শান্ত হয়।

★পর্যাপ্ত ঘুম, পবিত্র খাবার, এবং একাকী সময়

ইসলামে শরীর ও মনের ভারসাম্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নবী ﷺ মাঝেমধ্যে নিঃশব্দে একাকী সময় কাটাতেন (তাফাক্কুর)।

বিশ্রাম, সঠিক খাদ্য, ও নিয়মিত তাসবীহ — এগুলোও চাপ কমায়।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...