আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
18 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (2 points)
edited by
১. আমার কাছে রমজানের ১ তারিখে নেসাব পরিমাণ সম্পদ ছিল এবং আগামী বছর রমজানের ১ তারিখে পূর্ণ চন্দ্র মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আমার কাছে নেসাব নেই, কিন্তু তার এক মাস পরেই আমার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ/টাকা এসেছে এখন আমার এই এক মাস পর যে নেসাব পরিমাণ টাকা হলো সেটার উপর কি তখনই সাথে সাথে যাকাত দিয়ে দিতে হবে? আর ১ বছর এক মাস পর হওয়ার পর যে নেসাব আসলো সেদিন থেকে আবার পূর্ণ বছর গণনা শুরু করতে হবে?

২. ঋণ আছে,নেসাব পরিমান সম্পদ আছে। ঋণ না আদায়  করলে নিসাব থাকবে। এমতাবস্থায়  কি যাকাত আদায় করতে হবে?

৩. স্যালাইন শরীরে পুশ করলে কি রোজা ভাঙবে?

1 Answer

0 votes
by (689,850 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

(০১)
যাকাত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুকন। ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হল সালাত ও যাকাত।

আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوْا لِاَنْفُسِكُمْ مِّنْ خَیْرٍ تَجِدُوْهُ عِنْدَ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ بِمَا تَعْمَلُوْنَ بَصِیْرٌ۱۱۰

 ‘তোমরা সালাত আদায় কর এবং যাকাত প্রদান কর। তোমরা যে উত্তম কাজ নিজেদের জন্য অগ্রে প্রেরণ করবে তা আল্লাহর নিকটে পাবে। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ তা দেখছেন। -সূরা বাকারা : ১১০

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-

وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ وَ اَطِیْعُوا الرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ۵۶

‘তোমরা সালাত আদায় কর, যাকাত দাও এবং রাসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহভাজন হতে পার।’-সূরা নূর : ৫৬

সূরা নিসার ১৬২ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের জন্য ‘আজরুন আযীম’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে-

وَ الْمُقِیْمِیْنَ الصَّلٰوةَ وَ الْمُؤْتُوْنَ الزَّكٰوةَ وَ الْمُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ ؕ اُولٰٓىِٕكَ سَنُؤْتِیْهِمْ اَجْرًا عَظِیْمًا۠۱۶۲

‘এবং যারা সালাত আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

 عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُول اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَا زَكَاةَ فِي مَالٍ حَتَّى يَحُولَ عَلَيْهِ الْحَوْلُ»
হযরত আয়েশা রা থেকে বর্ণিতঃনবী কারীম সাঃ বলেনঃ-সম্পত্তিতে কোনো যাকাত নেই যতক্ষণ না এক বৎসর পূর্ণ হবে।(সুনানে ইবনে মাজা-১৭৯২)

★শরীয়তের বিধান হলো মৌলিক প্রয়োজন থেকে উদ্ধৃত্ত টাকা-পয়সা নিসাব পরিমাণ হলে এবং এক বছর স্থায়ী হলে বছর শেষে তার যাকাত আদায় করা ফরয হয়।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক ৭০৯১,৭০৯২

শরীয়তের বিধান হলোঃ 
কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের যাকাত দিতে হবে। বছরের মাঝে যা যোগ হয়েছে তার জন্য পৃথক বছর পূর্ণ হওয়া লাগবে না।
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৬৮৭২,৭০৪০,৭০৪৪; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা হাদীস ১০৩২৫,১০৩২৭) 

বছরের শুরু ও শেষে নিসাব পূর্ণ থাকলে যাকাত আদায় করতে হবে। মাঝে নিসাব কমে যাওয়া ধর্তব্য নয়। অবশ্য বছরের মাঝে সম্পূর্ণ সম্পদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে ঐ সময় থেকে নতুন করে বছরের হিসাব আরম্ভ হবে এবং এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর যাকাত আদায় করতে হবে। 
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক  হাদীস ৭০৪২,৭০৪৪।)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
রমজানের ১ তারিখে আপনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছিলেন,পরবর্তী বছর রমজানের ১ তারিখে আপনার সম্পদ কমে গেলে অর্থাৎ নেসাব পরিমান সম্পদ আর না থাকলে সেক্ষেত্রে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবেনা।

এরপরের মাস শাওয়াল মাসের এক তারিখ  আপনি আবারো নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সেক্ষেত্রে সেটার উপর তখনই সাথে সাথে যাকাত দিয়ে দিতে হবেনা।

বরং পরবর্তী বছর শাওয়াল মাসের এক তারিখে আপনার মালিকানায় নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে সেক্ষেত্রে তার উপর যাকাত ফরজ হবে। 

(০২)
ঋণ দুই ধরনের হয়ে থাকে।
 ক. প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে যে ঋণ নেওয়া হয়। 
খ. ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেওয়া হয়।
,
প্রথম প্রকারের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দিয়ে যাকাতের নিসাব বাকি থাকে কিনা তার হিসাব করতে হবে। নিসাব থাকলে যাকাত ফরয হবে, অন্যথায় নয়। 
,
কিন্তু যে সকল ঋণ উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয় যেমন কারখানা বানানো, কিংবা ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার উদ্দেশ্যে বিল্ডিং বানানো অথবা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিলে যাকাতের হিসাবের সময় সে ঋণ ধর্তব্য হবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে যাকাত কম দেওয়া যাবে না। 
(মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক হাদীস ৭০৮৭)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন,
আপনার যে ঋন আছে! এটি ঋণের কোন প্রকারের?

সেই ঋণ যদি প্রথম প্রকারের হয়,অর্থাৎ এ টাকা যদি প্রয়োজনাদি পূরণের জন্য বাধ্য হয়ে নেওয়া হয়,ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে নয়।

তাহলে সেটা বাদ দিয়ে যেহেতু আপনার নেসাব পরিমান সম্পদ থাকেনা,তাই তার উপর যাকাত ফরজ হবেনা।

তবে যদি আপনি দ্বিতীয় প্রকারের ঋণ নিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার উপর যাকাত ফরজ হবে।

এমতাবস্থায় আপনি যে মাসে যাকাত আদায় করছেন, সে মাসে আপনাকে যে পরিমান লোনের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে, সে কিস্তির টাকা বাদ দিয়ে অবশিষ্ট টাকার যাকাত আদায় করতে হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০৩)
স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গে না। তেমনিভাবে অসুস্থতার কারণে গ্লুকোজ স্যালাইন নিলেও রোযার ক্ষতি হবে না। তবে অসুস্থতা ছাড়া গ্লুকোজ স্যালাইন নেওয়া নাজায়েয।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...