ইমাম বুখারীর হাদীস গ্রহণের প্রধান শর্তাবলি
ইমাম বুখারীর উদ্দেশ্য ছিল — “সর্বাধিক সহীহ (বিশুদ্ধ) হাদীসসমূহকে একত্র করা।”
এর জন্য তিনি কয়েকটি কঠোর শর্ত নির্ধারণ করেছিলেন, যেগুলো অন্য অনেক মুহাদ্দিসের তুলনায় বেশি কঠিন।
★ সংযোগ (اتصال السند – ইত্তিসালুস সানাদ)
অর্থাৎ, হাদীসের সনদে কোনো ছেদ বা বিচ্ছিন্নতা থাকবে না।
প্রত্যেক রাবী (বর্ণনাকারী) অবশ্যই পরবর্তী রাবীর কাছ থেকে সরাসরি শোনা বা সাক্ষাৎ করা অবস্থায় হাদীস গ্রহণ করেছেন — এর প্রমাণ থাকা চাই।
অর্থাৎ “رُؤية ولقاء” (দেখা ও সাক্ষাৎ) – কেবল সমসাময়িক হওয়া যথেষ্ট নয়।
ইমাম বুখারী নিশ্চিত করতেন যে, রাবী আসলেই তাঁর শায়খের কাছ থেকে শুনেছেন (سمع منه)।
উদাহরণ,
যদি কোনো রাবী বলেন “ফুলান আমাকে বলেছেন”, তাহলে ইমাম বুখারী প্রমাণ খুঁজতেন — তারা সত্যিই একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন কিনা।
★ রাবীদের ন্যায়পরায়ণতা (العدالة – আল-‘আদালাহ)
প্রত্যেক বর্ণনাকারী হতে হবে:
ধার্মিক (মুত্তাকি),
সত্যবাদী,
বড় গুনাহ থেকে দূরে,
অপবাদ বা সন্দেহজনক আচরণ থেকে মুক্ত।
এ শর্তে কোনো সন্দেহ থাকলে — ইমাম বুখারী সেই হাদীস গ্রহণ করতেন না।
★রাবীদের স্মৃতি ও নির্ভুলতা (الضبط – আদ-দাব্ৎ)
রাবীদের স্মরণশক্তি ও লেখার নির্ভুলতা পরীক্ষিত হতে হবে।
অর্থাৎ, তারা যে হাদীস বর্ণনা করছেন, সেটি ঠিকভাবে মুখস্থ ও হুবহু সংরক্ষিত আছে — এমন প্রমাণ থাকা চাই।
ইমাম বুখারী এজন্য রাবীদের জীবনী, তাদের ছাত্র ও শায়খদের মন্তব্য, এমনকি তাদের ভুলের তালিকা পর্যন্ত পর্যালোচনা করতেন।
★সনদে ও মতনে কোনো গোপন ত্রুটি না থাকা (عدم العلة – ইললাহ মুক্ত)
হাদীসটি বাহ্যিকভাবে সহীহ মনে হলেও, কখনও কখনও গভীর বিশ্লেষণে গোপন ত্রুটি (عِلّة) পাওয়া যায় — যেমন:
আসল রাবীর পরিবর্তে ভুল রাবীর নাম আসা,
একই হাদীস অন্যভাবে ভুল বর্ণিত হওয়া, ইত্যাদি।
ইমাম বুখারী এসব ইললাহ (গুপ্ত ত্রুটি) খুঁজে বের করতেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে।
এই কারণেই তাঁর হাদীসগুলো বিশেষভাবে “أصح الأحاديث” (সবচেয়ে সহীহ হাদীস) বলে স্বীকৃত।
★ হাদীসটি বিদ্রোহী বা ভিন্নরূপ (شذوذ – শুঝূয) মুক্ত হওয়া
অর্থাৎ, সেই হাদীস অন্য নির্ভরযোগ্য রাবীদের বর্ণনার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ হবে না।
যদি কোনো নির্ভরযোগ্য রাবী এমনভাবে বর্ণনা করেন যা সংখ্যাগরিষ্ঠ বা অধিক বিশ্বাসযোগ্য রাবীদের বর্ণনার বিপরীত — তাহলে সেই হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়।
★হাদীসের বিষয়বস্তু ও ভাষা শরীয়ত ও যুক্তির পরিপন্থী নয়
ইমাম বুখারী দেখতেন — হাদীসের অর্থ বা মর্ম কুরআনের মূলনীতি, সুপ্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ, বা ইসলামী যুক্তিবোধের পরিপন্থী নয় কিনা।
ইমাম বুখারীর হাদীস গ্রহণের প্রধান শর্তাবলি সংক্ষেপে বলা যায়:
১اتصال السندসনদ অবিচ্ছিন্ন হতে হবে
২العدالةবর্ণনাকারীরা ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক হতে হবে
৩الضبطবর্ণনাকারীর স্মৃতি ও লেখনী নির্ভুল হতে হবে
৪عدم العلةকোনো গুপ্ত ত্রুটি থাকবে না
৫عدم الشذوذঅন্য সহীহ বর্ণনার সঙ্গে বিরোধ থাকবে না
★ইমাম মুসলিম (রহ.)-এর “সহীহ মুসলিম” গ্রন্থেও অনুরূপ শর্ত ছিল, কিন্তু ইমাম বুখারী আরও কঠোর ছিলেন — বিশেষত সাক্ষাৎ ও সরাসরি শ্রবণের প্রমাণ বিষয়ে।
এই কারণেই “সহীহ বুখারী”কে বলা হয়:
"أصح كتاب بعد كتاب الله"
— (আল্লাহর কিতাবের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনার প্রতি পরামর্শ থাকবে এটি বাংলায় ট্রান্সলেট করে উলুমুল হাদিস আছে এমন মাদ্রাসায় আপনি সময় নিয়ে যাবেন এবং তাদের কাছে আপনার জানতে চাওয়া সবকিছু প্রশ্ন করবেন।