আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
37 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (44 points)

আসসালামু আলাইকুম। আশা করি ভালো আছেন। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর কোরআন হাদীসের আলোকে বললে উপকৃত হতাম 

১) দীনদার পুরুষের মূল বৈশিষ্ট্য কি কি? 

 

২) দীনদার নারীদের মূল বৈশিষ্ট্য কি কি?

 

৩) কারো তাকওয়া নাই বা অনেক কম তাকওয়া তাদের কি দীনদার বলা যাবে?

 

৪) বেদীন কাদের কে বলা যাবে?


 

৫) প্রেকটিসিং মুসলিম ও দীনদার মুসলিম কি একই মানের? 



 

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
by (689,250 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
দ্বীনদার পুরুষের মূল বৈশিষ্ট্যঃ

“দ্বীনদার” (دَيِّن) শব্দের অর্থ হলো: যে ব্যক্তি আল্লাহভীরু, শরীয়তের বিধান মেনে চলে, ও জীবনকে ইসলাম অনুযায়ী সাজানোর চেষ্টা করে।
দ্বীনদার পুরুষের বৈশিষ্ট্যগুলো কুরআন ও হাদীসে এমনভাবে বর্ণিত হয়েছে —

 মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:

1. আল্লাহভীরু (তাকওয়াবান) — আল্লাহকে ভয় করে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“সর্বাধিক সম্মানিত তোমাদের মধ্যে সেই, যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু।” (সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩)

2. নামাজ কায়েম করে — সময়মতো সালাত আদায় করে, জামাতে অংশ নেয়।

3. হারাম থেকে বেঁচে থাকে — সুদ, মিথ্যা, অশ্লীলতা, দৃষ্টি হারাম দিকে দেওয়া ইত্যাদি থেকে দূরে থাকে।

4. গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি সংযত রাখে

 “মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।” (সূরা নূর ২৪:৩০)

5. অভিভাবক, স্ত্রী, পরিবারে দায়িত্বশীল

“তোমরা প্রত্যেকে অভিভাবক এবং প্রত্যেকে নিজের অধীনদের বিষয়ে জবাবদিহি করবে।” (বুখারী)

6. সত্যবাদী, আমানতদার, বিনয়ী ও ন্যায়পরায়ণ।


(০২)
দ্বীনদার নারীর মূল বৈশিষ্ট্যঃ

কুরআন ও হাদীসের আলোকে:

1. আল্লাহভীরু (তাকওয়াবান) — আল্লাহর আদেশ মানে, নিষেধ থেকে বেঁচে থাকে।

“আল্লাহভীরু নারীদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।” (সূরা আহযাব ৩৩:৩৫)

2. নামাজ পড়ে, রোযা রাখে, ইবাদতে আগ্রহী।

3. লজ্জাশীল ও পূর্ণ পর্দাশীল।

“মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন দৃষ্টি সংযত রাখে ও নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে এবং পর্দা বজায় রাখে।” (সূরা নূর ২৪:৩১)

4. স্বামীর আনুগত্য করে (হালাল বিষয়ে), স্বামীর ইজ্জত রক্ষা করে।

“যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, রমজানের রোযা রাখে, তার সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে, তাকে বলা হবে — তুমি যেকোন দরজায় দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করো।” (ইবনে হিব্বান)

5. গীবত-পরনিন্দা থেকে বিরত থাকে, বিনয়ী ও সহনশীল।

(০৩) কারো তাকওয়া নাই বা অনেক কম তাকওয়া — তাদের কি দীনদার বলা যাবে?

 না, “তাকওয়া” (আল্লাহভীরুতা) দ্বীনদার হওয়ার মূল শর্ত।
যার তাকওয়া একদমই নেই, সে প্রকৃত অর্থে “দীনদার” নয়।

তবে যদি কারো তাকওয়া দুর্বল হয় কিন্তু সে চেষ্টা করছে, গুনাহে অনুতপ্ত হচ্ছে, সংশোধনের পথে রয়েছে — তাহলে তাকে দ্বীনদার হওয়ার পথে বলা যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 “যারা পাপ করলে নিজেদের প্রতি জুলুম করে, তারপর আল্লাহকে স্মরণ করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে — তাদের জন্য আল্লাহ ক্ষমাশীল।” (সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৫)


(০৪)
বেদ্বীন যাদেরকে বলা যাবেঃ

“বেদ্বীন” মানে যারা ইসলামী শরীয়তের নিয়ম-কানুন, ঈমান, নৈতিকতা ও আমলকে অবজ্ঞা করে বা অমান্য করে।

উদাহরণ:

1. যারা নামাজ, রোযা, হালাল–হারামের পরোয়া করে না।

2. যারা আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর নির্দেশ অগ্রাহ্য করে।

3. যারা ইসলামী আদর্শকে উপহাস করে বা ছোট করে দেখে।

4. যারা দুনিয়াকে দ্বীনের চেয়ে বড় মনে করে।

তবে কাউকে “বেদ্বীন” বলার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হয় — কারণ এটি একটি গুরুতর রায়, যা শুধুমাত্র আলেম ও শরীয়তবিদ সঠিক প্রমাণ দেখে দিতে পারেন।

(০৫)
প্র্যাকটিসিং মুসলিম ও দীনদার মুসলিম এরা প্রায় কাছাকাছি ধারণা হলেও কিছু পার্থক্য আছে।

দীনদার মুসলিম যে ইসলাম পূর্ণ ভাবে অনুশীলন করে,নামাজ, রোযা, পর্দা, সুন্নাহ মেনে চলে। যে  আল্লাহভীরু, তাকওয়াবান, হৃদয়ে দ্বীনের গভীর প্রভাব আছে।বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে দ্বীনের অনুসারী।

প্র্যাকটিসিং মুসলিম হলো ইসলাম নিয়ে প্র্যাকটিসিং শুরু,দীনদার হওয়া শুরু পরিপূর্নতায় এখনো পৌঁছেনি।  

সব দীনদার মুসলিম প্র্যাকটিসিং হন,
কিন্তু সব প্র্যাকটিসিং মুসলিম এখনো পুরোপুরি দীনদার নাও হতে পারেন — তারা দীনদার হওয়ার পথে আছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...