আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
318 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
reshown by
আসসালামু আলাইকুম
শায়েখ, আশা করি আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো আছেন। আমি একটা জটিল বিষয়ে আপনার সাহায্য চাচ্ছি। পরামর্শ ও বলা যেতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমি খুলে বলছি।

আমি এবং আমার স্বামী প্রায় দেড় বছর হারাম রিলেশনে ছিলাম। তারপর আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা গুনাহ থেকে বাচতে দুইজন আলাদা হয়ে যাই। আমাদের নিয়ত ছিল পরিবারকে বলে একদম বিয়ে করা। তাতে বেশ কয়েক বছর লেগে যেত।
যা হোক, দুইবছরের বেশি সময় আমরা আলাদা ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু অত্যন্ত খারাপ বিষয় দুইবছর পর আমরা আবারও দুইজন যোগাযোগ শুরু করি। এই অবস্থা  নয় মাসের মত ছিল। এই নয় মাসে না দুইজন আলাদা হতে পারছিলাম, না হারামের গ্লানি টানতে পারছিলাম। পরিবার থেকে বিয়ে করা আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। সবদিক ভেবে আমরা নয় মাস পর বন্ধুদের মাধ্যমে বিয়ে করি। আলহামদুলিল্লাহ। হানাফী মতে আমরা বিয়ে করি, যদিও আমরা জানতাম যে এভাবে বিয়ে করা অনুচিত। কিন্তু আমরা অপারগ ছিলাম। এ বিষয়ে আল্লাহ সাক্ষী আছেন। তবে আমরা পালিয়ে যাবো এমন কোনো ইচ্ছা আমাদের তখনও ছিল না, এখনও নেই। বরং আমরা চাই পরিবার থেকে যখন বিয়ের কথা উঠবে তখন আবারও পারিবারিক ভাবে বিয়ে করতে। বাবা মা কষ্ট পাবেন, এই ইচ্ছা আমাদের নেই।
আমাদের বিয়ের আলহামদুলিল্লাহ প্রায় দেড় বছর চলছে। আমরা এক সাথে সময় কাটানোর সুযোগ খুব কম পেয়েছি, বেশিরভাগ সময় আমরা দূরে ছিলাম। আল্লাহ ভালো জানেন দূরত্বের সুযোগ শয়তান নেয় কিনা।

এত দিন পর এসে আমার স্বামী বেশ কিছু মানসিক অস্থিরতায় ভুগছেন। আমি উনার সমস্যাকে ছোট করে দেখছি না কিন্তু উনার এবং আমার দুইজনের জন্য কষ্ট হয়ে গেছে এভাবে থাকা।
এই বিয়ে বৈধ এটা উনি জানেন আর মানেনও, কিন্তু এভাবে বিয়ে করা আলেমরা অনুচিত বলেন দেখে উনি মানসিক অশান্তিতে আছেন। আমাদের নিয়ত আল্লাহ জানেন, এই ভেবেও উনি নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না। উনার কাছে মনে হচ্ছে এভাবে বিয়ে করা ভুল হয়ে গেছে। আমি উনাকে কোনো আলেমের সহোবতে যেয়ে এই বিষয় গুলো খুলে বলার পরামর্শ দিয়েছিলাম কিন্তু উনি কোনো আলেমের সহোবতে নেই। এতে যা হয়েছে, উনি নিজের চিন্তার কোনো গতি করতে পারছেন না।
দয়া করে উনাকে কোনো পরামর্শ দিন যাতে উনি শান্ত হতে পারেন। আল্লাহ আমাদের বিয়ের ব্যাপারে নারাজ হবেন না বলে আমি বিশ্বাস করি, উনি নিজেকে শান্ত করতে পারছেন না এইটুকু ভেবে। দয়া করে উনার জন্য উত্তম কিছু নাসিহা করুন যাতে উনি শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বাচতে পারেন, উনার অন্তরের অশান্তি দূর করতে পারেন। আমি আপনার নসিহা ইনশাআল্লাহ উনার কাছে পৌছে দিব। দয়া করে সাহায্য করুন শায়েখ। আমি আমার সংসারের ব্যাপারে  আশংকা করছি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। উত্তম নাসিহা পেলে ইনশাআল্লাহ উনি শান্ত হবেন। এভাবে বিয়ে করা অনুচিত কিন্তু আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাচার আর কোনো উপায় তো আমাদের ছিল না।
আমাদের জন্য দুয়া করবেন শায়েখ, আল্লাহ আমাদের সংসারে যাতে বারাকাহ দান করেন, হেফাজত করেন।

1 Answer

0 votes
by (574,050 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যথা-

বর ও কনেকে কিংবা তাদের প্রতিনিধিকে ইজাব তথা প্রস্তাবনা ও কবুল বলতে হয়।

উক্ত ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।

قوله صلى الله عليه وسلم : ( لا نكاح إلا بولي وشاهدي عدل ) رواه البيهقي من حديث عمران وعائشة ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7557) 

বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর।”[মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ জামে গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে (১০৭২)]
۔
ইজাব ও কবুলটি উভয় সাক্ষ্যি স্বকর্ণে শুনতে হবে।

উক্ত তিনটির কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হয় না।

উপরোক্ত তিনটি শর্ত  পাওয়া গেলে বিবাহ হবে,অন্যথায় বিবাহ হবেনা।
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,  
শরীয়তের বিধান হলো যদি দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সমঝদার সাক্ষ্যির সামনে প্রাপ্ত বয়স্ক পাত্র ও পাত্রি যদি প্রস্তাব দেয় এবং অপরপক্ষ তা গ্রহণ করে নেয়, তাহলে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক বিবাহ শুদ্ধ হয়ে যায়। অভিভাবকের সম্মতি থাকুক বা না থাকুক। অভিভাবক জানুক বা না জানুক।

তবে যদি গায়রে কুফুতে বিবাহ করে, তথা এমন পাত্রীকে বিবাহ করে, যার কারণে ছেলে বা মেয়ের পারিবারিক সম্মান বিনষ্ট হয়, তাহলে পিতা সে বিয়ে আদালতের মাধ্যমে ভেঙ্গে দিতে পারে। যদি কুফুতে বিবাহ করে, তাহলে পিতা এ অধিকারও পাবে না।
,
রাসুল সাঃ কুফু মিলাইতে বলেছেনঃ

وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدَّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ»

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (মূলত) চারটি গুণের কারণে নারীকে বিবাহ করা হয়- নারীর ধন-সম্পদ, অথবা বংশ-মর্যাদা, অথবা রূপ-সৌন্দর্য, অথবা তার ধর্মভীরুর কারণে। (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন) সুতরাং ধর্মভীরুকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহ করে সফল হও। আর যদি এরূপ না কর তাহলে তোমার দু’ হাত ধূলায় ধূসরিত হোক (ধর্মভীরু মহিলাকে প্রাধান্য না দিলে ধ্বংস অবধারিত)!
(সহীহ বুখারী ৫০৯০, মুসলিম ১৪৬৬, নাসায়ী ৩২৩০, আবূ দাঊদ ২০৪৭, ইবনু মাজাহ ১৮৫৮, আহমাদ ৯৫২১, ইরওয়া ১৭৮৩, সহীহ আল জামি‘ ৩০০৩।)

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/

এ সংক্রান্ত আরো জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
 আপনারা উভয়ে যদি প্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষ্যির উপস্থিতিতে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রস্তাব গ্রহণ সম্পন্ন করে থাকেন, তাহলে আপনাদের বিয়ে ইসলামী শরীয়াহ মুতাবিক শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
,
আপনারা উভয়েই স্বামী স্ত্রী।
আপনাদের সংসার ছহীহ।
,
তবে আপ আপনাদের মাঝে যদি কুফুর মিল না থাকে,তাহলে পরিবার যখন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হবেন,তখন তারা যদি আদালতের মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করিয়ে দিতে চান,তাহলে সেটি পারবেন।
,
এটি পরিবার জানার পর,আর তারা যদি আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করাতে চান তবেই।
,
আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করানোর পর আপ আপনাদের বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে।
,
এর পূর্ব পর্যন্ত আপনারা শরীয়তের দৃষ্টিকোন থেকে স্বামী স্ত্রী হতে হিসেবেই থাকবেন।
,
সুতরাং এ বিষয় নিতে হতাশায় না ভোগাই এখন জরুরি।
,
তবে নিজ অভিভাবকদের জানিয়ে কাজটি করিলে মঙ্গলজনক হতো,যেহেতু শুরুতে জানানো হয়নি,তাই আপাতত ধীরে ধীরে কৌশলে তাদের জানানোর চেষ্টা করবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (2 points)
শায়েখ, এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে। মংগলজনক না, এর অর্থ কি শায়েখ? 'অনুচিত' নাকি 'অকল্যানকর', কোন অর্থে এটি এখানে ব্যবহার হচ্ছে শায়েখ? মংগলজন না, তার মানে কি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কোনো কারন থাকতে পারে?

উল্লেখ্য যে, কুফু আলহামদুলিল্লাহ মিলে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ চান তো এইসব দিকে কোনো সমস্যা হবে না।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...