আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
841 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
reshown by
আমি মোঃ শাহিন আলম।বাড়ি সিংড়া,নাটোর।।২০১৫ সালের প্রথম দিকে পারিবারিক ভাবে একটা মেয়ের সাথে আমার কাবিন করে রাখা হয়। কাবিন করার ৪-৫ মাস পরে ইজাব কবুলের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে হয়। ইজাব- কবুলের সময় আমার কিছু দেনমোহর বাকি ছিলো, বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি এবং আমার স্ত্রী আলাদা ভাবে অনেক স্বর্ণালংকার উপহার হিসেবে পাই, আলাদা ভাবে। অতিথিদের কাছ হতে। আমার স্ত্রীর গুলো তার কাছেই থাকে এবং আমারগুলোও তাকে দিয়ে দেই দেনমোহর হিসেবে। আমার বাঁকি দেনমোহর এর চেয়ে যে স্বর্ণালংকার স্ত্রীকে দেই তার মূল্য অনেক বেশি ছিলো। বিয়ের কিছুদিন পরে ব্যবসায় লস এবং আমার মায়ের ক্যান্সারের কারনে আমাদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়। তখন থেকে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার স্ত্রীকে চাপ দিতে থাকে, আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য, আমার স্ত্রীকে ত্যাজ্য করার হুমকি দেয়, এবং আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তারপরও আমার স্ত্রী আমার কাছেই থাকে। আলহামদুলিল্লাহ, আমাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো, খুবই ভালোবাসাময়। কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী তার বাড়ি যায়। কয়েক দিন পর শুনতে পাই, আমার স্ত্রী আমাকে তালাক দিয়েছে, কাবিননামার ১৮ নং ধারার ক্ষমতাবলে। আমি তালাকের নোটিশ পাইনি বা সই করিনি। কাবিনের সময় (ইজাব,কবুলের ৪/৫ মাস আগে), ১৮ নং ধারা সম্পর্কে কাজী সাহেব আমাকে কিছু বলেনি। আমি পরে শুনেছি, আমার স্ত্রী বা সাক্ষীরাও এ বিষয়ে কিছু শোনেনি। সম্ভবত কাজী সাহেব, পরে এটি পূরণ করে। আমার এক আলেম বন্ধু আমাকে বলে “”কাবিন করার সময় তোমার স্ত্রীর তুমি স্বামী ছিলে না, তাই তোমার নিজেরই, স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার ছিলো না, তুমি তখন (ইজাব কবুলের ৫ মাস আগে) এই অধিকার তাকে দিলেও কাজ হতো না, আর তুমিতো জানোই না (তালাকের ক্ষমতা দেবার কথা), তাই তালাক হয়নি।””এই কথা, আমার স্ত্রীকে বললে, সে বলে “এক মৌলভীর কাছে সে শুনেছে, তালাক হয়ে গেছে।” এখন আমার প্রশ্ন ১। আমাদের কি তালাক হয়েছে? ২। আমার দেনমোহর কি আদায় হয়েছে?
দয়া করে, উওর দেবেন।

 আমি আমার এই ঘটনার বিস্তারিত পয়েন্ট গুলো লিখছি।

১. আমার কাবিন নামা বিয়ের অর্থাৎ ইজাব কবুলের ৪/৫ আগে লেখা হয়।

২.কাবিন নামা লেখার সময় আমি আমার স্ত্রীকে (যদিও তখন সে আমার ইচ্ছে ছিল না) তালাক দেওয়ার অধিকার আছে কিনা এ বিষয়ে কেউ আমাকে প্রশ্ন করেনি।

৩.পরবর্তীতে আমি আমার স্ত্রী এবং কাবিন নামা লেখার সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছ থেকে শুনেছি কাবিন নামার ১৮ এবং ১৯ নং ধারা সম্বন্ধে কেউ কিছু শুনেনি।

৪.সম্ভবত কাজী সাহেব কাবিননামায় সই নেবার পরে ১৮ এবং ১৯ নং ধারা পূরণ করে। বা আমার শ্বশুর অনেক পরে এই ধারা গুলো পূরণ করে নেয়।

৪.বিয়ের পর আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দেবার কোন অধিকার দেইনি।

৫. কাবিন নামা লেখার মজলিসে (বিয়ের ৪-৫ মাস আগে) আমি এবং আমার স্ত্রী উভয়ই উপস্থিত ছিলাম। তবে দুইজনকে পর্দা দিয়ে আলাদা করে রাখা হয়েছিলো। আমাদের কাবিননামা লেখা হয়েছিল আমার শ্বশুরবাড়িতে। সেখানে ২৫-৩০ জন লোক উপস্থিত ছিলো।

৬.যখন আমার স্ত্রী স্বামী তালাক করে আমি তার কোনো নোটিশ পাইনি বা তালাকের কাগজে আমি সই করেনি।

৭. আমার স্ত্রীকে দারা সম্ভবত জোরপূর্বক তালাকনামায় সই করিয়ে নেয়া হয়। কারণ ৩-৪ বছর ধরে আমার শশুর আমার স্ত্রীকে প্রচন্ড মানসিক চাপ দিচ্ছিল। যেগুলো বলা যাবে না। শুধু দু-একটা বলি, আমি তখন রংপুরে চাকরি করতাম, আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে ছিলো, তার প্রচন্ড ব্লেডিং হচ্ছিল। একরকম মৃতপ্রায় অবস্থা। তখন,আমার শশুর আর স্ত্রীকে বলে ''"হয় তুই তোর স্বামীকে তালাক দিবি না হলে তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো না। তুই মরে যা।"'আরেকদিনের ঘটনা, আমার স্ত্রীকে আমার শ্বশুর বলে, ""তুই যদি তার স্বামীকে তালাক না দিস তাহলে আমি আত্মহত্যা করব।" আর‌ও অনেক ঘটনা আছে,যে গুলো বলা যাবে না। যে ধরনের কথা বাবা হয়ে মেয়েকে বলতো , তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়, কারণ এতটাই অশ্লীল সেই সব ভাষা।এবং আমাকে তালাক না দিলে, তাকে ত্যাজ্য  করতে চেয়েছিল। ৩-৪ বছর আমার স্ত্রীর সাথে আমার শ্বশুর কোন কথা বলেননি।

৮. তালাকনামা আমি দেখিনি, তবে শুনেছি (যিনি দেখেছেন তার কাছ থেকে) সেখানে লেখা ছিলো,""আমার স্বামী আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার কারনে  কাবিননামার ১৮ এবং ১৯ নং ধারার ক্ষমতা বলে তালাকে তৌফিজ এর মাধ্যমে আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।"' তবে আল্লাহ জানেন, আমি কখনোই তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করিনি। আল্লাহর রহমতে আমাদের দাম্পত্য জীবন ছিলো খুবই ভালোবাসাময়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কথা নাকি কাজী সাহেব লিখে দিয়েছিলো। কারণ এই শর্ত ও আরো কিছু শর্তে নাকি কাবিননামায় তাকে তালাক দেবার অধিকার দেয়া হয়েছে।

৯.আমার কাছে কাবিননামা বা তালাকনামা নেই! আমি কখনোই আমাদের কাবিননামা ও তালাক নামদেখিনি।

এখন এই বিষয়ে আমাকে সঠিক মাসালা দিয়ে সাহায্য করলে চির কৃতজ্ঞ থাকব।

1 Answer

0 votes
by (575,580 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


ইসলামের মূল থিউরী হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন 

قال اللّٰہ تعالیٰ: {وَاللّٰاتِیْ تَخَافُوْنَ نُشُوْزَہُنَّ فَعِظُوْہُنَّ وَاہْجُرُوْہُنَّ فِیْ الْمَضَاجِعِ} [النساء، جزء آیت:۳۴]

হাদীস শরীফে এসেছে   

عن ابن عمر رضي اللّٰہ عنہما أن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: أبغض الحلال إلی اللّٰہ عزوجل الطلاق۔ (سنن أبي داؤد ۱؍۳۰۳، المستدرک للحاکم ۲؍۲۱۸ رقم: ۲۸۰۹، السنن الکبریٰ ۷؍۳۱۶)

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম হালাল হলো তালাক প্রদান করা।
,
★শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  মহিলা নিজের উপর কেবল তখনি তালাক পতিত করতে পারবে, যদি স্বামী তাকে তালাক দেবার অধিকার দিয়ে থাকে।
.
এ অধিকার বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর দিলে তা অধিকার বলে সাব্যস্ত হবে।
বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পূর্বে এ অধিকার দিলে সেটি তালাকে তাফবিজের অধিকার বলে সাব্যস্ত হবেনা।
,
যদি নিকাহনামা ইজাব কবুল হওয়ার পর লেখা হয়,এবং স্বামী জেনে শুনে ১৮ নং ধারায় স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দিয়ে থাকে,তাহলে স্ত্রী তালাকে তাভবিজের ক্ষমতা প্রাপ্ত হবে।
নতুবা নয়।
,
তালাকে তাভবিজের ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়ার পর স্ত্রী নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে।
যদি সে স্বামীকে তালাক দেয়,তাহলে সেটি তালাক হসেবে সাব্যস্ত হবেনা। 
      
এই ছুরতে স্ত্রী যদি বলে/লিখে আমি স্বামী কর্তৃক তালাকে তাভবিজের ক্ষমতাবলে  (লিখিত বা মৌখিকভাবে) নিজের নফসের উপর তালাক দিয়ে দিলাম,তাহালে  সেটি পতিত হয়ে যাবে।
এখানে স্ত্রী যে কয় তালাক নিন নফসের দিবে,সেই কয় তালাকই পতিত হবে।  

আরো জানুনঃ 
,
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কোনো তালাক পতিত হয়নি।
আপনারা এখনো আগের মতোই স্বামী স্ত্রী হিসেবেই আছেন।

তালাক না হওয়ার কারন সমুহঃ
এক, এই নিকাহনামা ইজাব কবুল হওয়ার আগে লেখা হয়েছে।   
,
দুই, স্বামী এক্ষেত্রে ১৮ নং ধারা সম্পর্কে অবগত নয়।
সুতরাং এটি স্পষ্ট যে তিনি স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা দেননি।
,
তিন,  (প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে) যেই তালাক নামা তারা পাঠিয়েছে,  সেখানে লেখা ছিলো,""আমার স্বামী আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার কারনে  কাবিননামার ১৮ এবং ১৯ নং ধারার ক্ষমতা বলে তালাকে তৌফিজ এর মাধ্যমে আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম।"' 
,
এখানে স্ত্রী নিজের নফসের উপর তালাক দেয়নি,বরং স্বামীকে তালাক দিয়েছে।
স্ত্রী কোনো ভাবেই স্বামীকে তালাক দিতে পারেনা।
তালাকের ক্ষমতা পেলে নিজেকে নিজে  তালাক দিতে পারে।
,
তালাকপ্রাপ্তা হয় স্ত্রীরা,স্বামীরা তালাক প্রাপ্ত হননা।
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কোনো তালাকই হয়নি।   


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (1 point)
 কষ্ট করে, ফতোয়া দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ হুজুর।আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।।আমিন।।। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...