আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
13 views
ago in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ।
১।ওসমানীয় সম্রাজে যে ভাই হত্যা প্রথা ছিল এটা কি আসলেই ছিল? আর থাকলে এটা নিয়ে ইসলাম কি বলে? মানে এভাবে হত্যা বিষয়টা?

২।টিভিতে যে সুলতান সুলেমান সিরিজ দেখায় কাহিনি গুলো কি মিল  আছে বাস্তবের সাথে?

1 Answer

0 votes
ago by (681,540 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
হ্যাঁ, এটি সত্য। ওসমানীয় (Ottoman) সাম্রাজ্যের প্রথম যুগে, বিশেষ করে ১৫শ ও ১৬শ শতকে, সুলতানদের মধ্যে “ভাই হত্যার” প্রথা (Fratricide) প্রচলিত ছিল।
এই নীতি মূলত রাজনৈতিক কারণে গ্রহণ করা হয় — যাতে সিংহাসনের উত্তরাধিকারে গৃহযুদ্ধ না হয়।

উদাহরণ:

সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহ (Mehmed II) — যিনি ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল জয় করেন, তিনি “Kanunname-i Âl-i Osman” নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন।
সেখানে লেখা ছিল:

“যে কেউ সুলতান হবে, তার ভাইদের হত্যা করা বৈধ গণ্য হবে — যাতে রাষ্ট্রে ফিতনা না হয়।”
(সূত্র: Halil İnalcık, The Ottoman Empire: The Classical Age 1300–1600)

এই আইনের অধীনে, বহু সুলতান ক্ষমতায় এসে ভাইদের হত্যা করেছেন — যেমন Bayezid II, Selim I, Murad III, Mehmed III প্রমুখ।

★শরীয়তের দৃষ্টিতে ভাই হত্যা প্রথাঃ-

শরীয়তের আলোকে এটি হারাম (অবৈধ)।

কুরআনের দলিল:

 وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ
“যে প্রাণকে আল্লাহ হারাম করেছেন, তা ন্যায্য কারণ ছাড়া হত্যা করো না।”
— (সূরা আল-ইসরা ১৭:৩৩)

এখানে “إِلَّا بِالْحَقِّ” অর্থাৎ ন্যায্য কারণ ছাড়া —
যেমন কিসাস (প্রতিশোধ), ব্যভিচার, বা ইসলাম থেকে বের হওয়া —
এই তিন অবস্থায়ই কেবল হত্যা বৈধ।
রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বা ক্ষমতার আশঙ্কা এতে পড়ে না।

হাদীসের দলিল:

 “মুসলিমের প্রাণ, অন্য মুসলিমের জন্য হালাল নয়,
যতক্ষণ না সে তিনটি কারণে তা প্রাপ্য হয় —
ব্যভিচার, খুনের বদলা, বা ধর্ম ত্যাগ।”
— সহীহ বুখারী ৬৮৭৮; সহীহ মুসলিম ১৬৭৬

অতএব, ভাই বা আত্মীয়কে সিংহাসনের জন্য হত্যা করা শরীয়ত অনুসারে সম্পূর্ণ হারাম।

ইতিহাসবিদ ও ফকীহরা একমত যে এই “ভাই হত্যার নীতি” ইসলামি শরীয়ত নয়,
বরং এটি ছিল রাজনৈতিক “রিয়ালপলিটিক” (power politics) —
অর্থাৎ শাসন রক্ষা করার জন্য মানবীয় সিদ্ধান্ত, ধর্মীয় অনুমতি নয়।

ইমাম ইবনে আবিদিন (হানাফি ফকীহ) বলেছেন:

“রাজার ভয় বা সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে হত্যা করা শরীয়তসম্মত নয়, বরং এটি অন্যায়।”
(রদ্দুল মুহতার, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৫৫)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
ভাই হত্যা প্রথাবাস্তবে ছিল, বিশেষ করে প্রারম্ভিক ওসমানীয় আমলেহারাম, কোনো শরীয়তসম্মত ভিত্তি নেই।

(০২)
টিভির "সুলতান সুলেমান" মূলত নাটকীয় ও রোমান্টিকভাবে সাজানো,
বাস্তব ইতিহাসের অনেক কিছু বিকৃত বা অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

যেমন:

সুলতান সুলেমান ও হুররেম সুলতানের সম্পর্ককে নাটকীয় করা হয়েছে।

হুররেমের প্রভাব কিছুটা সত্য, কিন্তু সিরিজে অনেক “গসিপ-ধর্মী” বিষয় বাড়িয়ে দেখানো।

অনেক রাজনৈতিক ঘটনাও সময়রেখা অনুযায়ী ভুলভাবে দেখানো হয়েছে।

ইতিহাসবিদ İlber Ortaylı ও Halil İnalcık উভয়েই বলেছেন,

“সিরিজটি ঐতিহাসিকভাবে অনুপ্রাণিত হলেও এটি একটি নাটক, ইতিহাস নয়।”

সুতরাং বলা যায় যে,“সুলতান সুলেমান” সিরিজ আংশিক সত্য, নাটকীয় ও অতিরঞ্জিত বাস্তব ইতিহাস নয়।

(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

No related questions found

...