আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
525 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (21 points)
আসসালামু আলাইকুম।

আমার বয়স কিছু দিন পর ৩১ হবে। সাত বছর যাবত তওবা করে পর্দা করা শুরু করি, ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা শুরু করি, আলহামদুলিল্লাহ। আমার পরিবার মাঝে মাঝে নামাজ পড়া, রোজা রাখা ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য বিষয় মেনে চলেনা। আমি দ্বীনে ফেরার পর থেকেই দ্বীনদার কাউকে বিয়ে করতে চাই এটা পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি তা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। এনিয়ে তখন থেকেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। তাদের পছন্দ করা বেদ্বীন পাত্রকে বিয়ে করিনা বলে তারা আমার উপর খুবই ক্ষিপ্ত। এই কয়েক বছরের মাঝে কয়েকজন দ্বীনদার পাত্র পাওয়া গেলেও তারা আমার বয়সের জন্য আমাকে পছন্দ করেনি। যারা রাজি হয়েছে তাদের চাকরি পছন্দ হয়নি তাই আমার পরিবার না করে দিয়েছে। এমন করেই অনেক গুলো বছর চলে গেছে। এখন আমার বয়স যেহেতু অনেক বেশি হয়ে গেছে তাই আমার উপর খুব চাপ দেয়া হচ্ছে। বিয়ে না হওয়ার হতাশা ও সবার খারাপ আচরণে আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছি। যদিও এটা আমি কাউকে বুঝতে দেইনা। সম্প্রতি আমার একটা প্রস্তাব এসেছে। ছেলে দ্বীনদার না। আমাকে ছেলে ও ছেলের বাবা দেখতে আসবে। আমি ছেলের বাবার সামনে যাওয়া জায়েজ নাই বলায় আমার পরিবার থেকে খুব চাপে আছি, তারা আমাকে বারবার জোর করে রাজি করাতে চাচ্ছে। রাজি না হলে আমার কোন দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলেছে। আমি তাদের বিষয়টা কিছুতেই বোঝাতে পারছিনা। বারবার এসে বলতেছে রাজি হতে। এই অবস্থায় আমার করনীয় কি? আমি কি ভুল করছি? আমি কিভাবে পর্দার সাথে আপোস করবো? আমি খুব ভেঙ্গে পড়েছি। হকের পথে অটল থাকতে সবর করতে যেন পারি এজন্য নসিহা দেন ও আমার জন্য দোয়া করে দেন শায়েখ।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
 بسم الله الرحمن الرحيم


বিয়ের আগে পাত্রপাত্রীর যে বিষয়গুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে তার মধ্যে ‘কুফু’ অন্যতম। 
আরবি ‘কুফু’ শব্দের অর্থ সমতা, সমান, সাদৃশ্য, সমকক্ষ, সমতুল্য ইত্যাদি। 

বিয়ের ক্ষেত্রে বর-কনের দ্বীনদারি, সম্পদ, বংশ, সৌন্দর্যতা সব কিছু সমান সমান বা কাছাকাছি হওয়াকে ইসলামী পরিভাষায় কুফু বলে। 

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের রুচি, চাহিদা, অর্থনৈতিক অবস্থান খুব বেশি ভিন্ন হলে সেখানে সুখী দাম্পত্যজীবন প্রতিষ্ঠা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। একজন উচ্চ শ্রেণীর ছেলেমেয়ের চাহিদা-রুচির সাথে একজন দরিদ্র বা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের রুচিবোধের মিল না থাকাটাই স্বাভাবিক।

আবার একজন দ্বীনদার পাত্রপাত্রীর সাথে একজন ধর্মবিষয়ে উদাসীন পাত্রপাত্রীর জীবনাচার নাও মিলতে পারে। দ্বীনদার চাইবে সব কিছুতে ধর্মের ছাপ থাকুক। আর দীনহীন চাইবে সব কিছু ধর্মের আবরণমুক্ত থাকুক। সুতরাং এ দুইয়ের একত্রে বসবাস কখনো শান্তি-সুখের ঠিকানা হতে পারে না। তাই পবিত্র কুরআনও বিয়ের ক্ষেত্রে দ্বীনদারিতে সমতা রক্ষার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে।

আল্লাহ বলেন, ‘দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষদের জন্য; দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্য; সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষদের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্য উপযুক্ত।’ (সূরা নূর : ২৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী পুরুষ যেন ব্যভিচারিণী বা মুশরিক নারী ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। আবার ব্যভিচারিণী নারী যেন ব্যভিচারী পুরুষ বা মুশরিক পুরুষ ছাড়া কাউকে বিয়ে না করে। মুমিনদের জন্য এ ধরনের চরিত্রের নারী-পুরুষকে হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা নূর : ৩)।

কুরআনের পাশাপাশি রাসূল সা:-এর পবিত্র হাদিস শরিফেও ‘কুফু’ সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। 

রাসূল সা: ‘কুফু’র বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَابُورَ الرَّقِّيُّ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَنْصَارِيُّ أَخُو فُلَيْحٍ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَجْلَانَ عَنْ ابْنِ وَثِيمَةَ النَّصْرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ خُلُقَهُ وَدِينَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের নিকট এমন কোন ব্যক্তি বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে এলে, যার চরিত্র ও ধর্মানুরাগ সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সাথে (তোমাদের মেয়েদের) বিবাহ দাও। তোমরা যদি তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়বে।
(ইবনে মাজাহ ১৯৬৭,তিরমিযী ১০৮৪, ইরওয়াহ ১৮৬৮, সহীহাহ ১০২২।) 
,
আরো জানুনঃ 
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
কুফুর সামঞ্জস্যতার এই বিষয়টি আপনি নিজ অভিভাবকদের বুঝান। 
প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে আপনার অবস্থা এখন এমন যে তাদের সামনে যেতে,এবং এই বিয়েতে রাজি না হলে আপনার অভিভাবক আপনার  কোন দায়িত্ব নিতে পারবেন না বলেছে। 
,
সুতরাং উল্লেখিত ছুরতে উক্ত ছেলের সাথে কথা বলে,আপনি বুঝবেন যে আপনার পর্দার বিষয় যদি তারা ভালোভাবে মেনে নিতে পারে,ঐ সংসারে গেলে আপনার পরিপূর্ণ পর্দা করতে যদি কোনো সমস্যা না হয়, এবং ঐ ছেলেকে দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর রহমতে দ্বীনদারির পথে নিয়ে আসা যাবে বলে মনে হয়,তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তার সাথে বিবাহের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
আপনি বলবেন যে আগে উক্ত ছেলের পরিবারের অভিভাবকদের মধ্যে মহিলা সদস্য গন যেনো আগে তাকে দেখতে আসে।
,
আপনাকে দেখতে আসার সময় ছেলের বাবাও যদি আপনাকে দেখতে চায়,এটি কোনো ভাবেই যদি আটকানো সম্ভব না হয়,তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে চক্ষু নিচু রাখার শর্তে তার সামনে যাবেন।
আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার পাঠ করবেন।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (21 points)
আমাকে দেখতে আসলে কোন কথা বলতে নিষেধ করেছে। এর আগে অন্য পাত্র পক্ষ আমাকে দেখতে এসেছিলো তখন আমি বোরকা পরে তাদের সামনে গিয়েছিলাম। ছেলের বাবা আমার মুখ খুলতে বললে আমি ছেলের মাকে কানে কানে বলি যে আলেমগণ পাত্রের বাবাকে মুখ দেখানো যাবেনা বলেছেন। পাত্রের মা এটা পাত্রের বাবাকে বললে তিনি খুব রাগান্বিত হন ও বিয়েটা ভেঙ্গে যায়। আব্বা ভাইয়া বলেছে আমি বেয়াদবের চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছি। তাদের অপমান করেছি। পাত্রী দেখতে আসলে বেয়াদব অসভ্য পাত্রীরাই কথা বলে। তাই বলছে আমাকে দেখতে আসলে কোন কথা বলতে পারবোনা। বলেছে পাত্রী না দেখে কোন বাবাই তার ছেলেকে বিয়ে করাবে না। পাত্রী দেখতে না পারলে তারা অপমানিত বোধ করবে। এই ভাবে আমি সবাইকে অপমান করেছি।তাই আমাকে কোন কথা বলতে নিষেধ করেছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...