ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব যে,পশ্চিম দিকে পা রাখা- জায়েয/নাজায়েয নির্ভর করবে,সম্মান প্রদর্শন হওয়া না হওয়া এর উপর।
অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নাজায়েয।আর না হলে নাজায়েয হবে না।ফুকাহায়ে কেরামদের নিম্নোক্ত আলোচনা থেকে বিষয়টা আরো স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে,
অক্ষম ব্যক্তি নামাযের পদ্ধতি বর্ণনা করতে যেয়ে ফুকাহায়ে কেরামগণ বর্ণনা করেন-
যদি কোনো অসুস্থ ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বা বসে নামাজ পড়তে না পারেন, তাহলে কিবলা মুখ করে এক পাশে শুয়ে নামাজ আদায় করবে। যদি সেটাও না পারেন তাহলে চিত হয়ে শুয়ে কিবলার দিকে পা দিয়ে নামাজ পড়বে।
যদি পশ্চিম দিকে পা রাখা যদি সর্বাবস্থায় হারাম বা নাজায়েজ হতো তাহলে সলাত আদায়ের সময় ও তা হারাম হতো।
তবে যেহেতু সম্মান বা অসম্মান প্রদর্শন - একটা লুকায়িত বিষয়টা।
সুতরাং কেউ অসম্মান প্রদর্শনের নিয়্যাত ব্যতীত ও যদি পশ্চিম দিকে পা লম্বা করে,অন্যজন অসম্মান মনে করে নিবে,এ জন্য যে,আমাদের সমাজে তা অসম্মান ই ভাবা হয়, তাই ফুকাহায়ে কিরামগণ স্বাভাবিকত তা মাকরুহ বলে থাকেন।
যেমন ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে,
الفتاوى الهندية- ويكره مد الرجلين إلى الكعبة في النوم وغيره عمدا (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الخامس في آداب المسجد والقبلة والمصحف-5/319
কাবার দিকে ইচ্ছেকৃত পা লম্বা করা মাকরূহ। ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়। {৫/৩১৯,}
আরো বর্ণিত রয়েছে.....
আল মুহিতুল বুরহানী-৮/১০,
ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৯/১৭৪}
অনিচ্ছায় হলে সমস্যা নেই।কিন্তু অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে হলে ঈমান চলে যাবার আশংকা থাকবে।
ফুকাহায়ে কেরামদের ভাষ্যমতে স্বাভাবিক অবস্থায় পশ্চিম দিকে পা রাখা মাকরুহ।
নিম্নোক্ত হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে-
ইমাম যারকানী মুওয়াত্তা মালিকের ব্যখ্যা গ্রন্থে সহীহ ইবনে খুযাইমা ও সহীহ ইবনে হাব্বানের বরাতে নিম্নোক্ত হাদীসে মারফু উল্লেখ করেন-
" ﻣﻦ ﺗﻔﻞ ﺗﺠﺎﻩ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﺟﺎﺀ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﺗﻔﻠﻪ ﺑﻴﻦ ﻋﻴﻨﻴﻪ "
যে ব্যক্তি ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করবে,কিয়ামতের দিন তাকে এমনভাবে উত্তোলন করা হবে যে,তার থুথু তার দু চক্ষুর মাঝখানে থাকবে।
ﻭﻻﺑﻦ ﺧﺰﻳﻤﺔ ، ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻣﺮﻓﻮﻋﺎ : " ﻳﺒﻌﺚ ﺻﺎﺣﺐ ﺍﻟﻨﺨﺎﻣﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻫﻲ ﻓﻲ ﻭﺟﻬﻪ "
ইমাম যারকানী রাহ ইবনে হিব্বান এবং আবু দাউদ রাহ এর বরাতে আরেকটি বর্ণনা করেন-
ﻋﻦﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﺧﻼﺩ : " ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﺃﻡ ﻗﻮﻣﺎ ﻓﺒﺼﻖ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ ، ﻓﻠﻤﺎ ﻓﺮﻍ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - : " ﻻ ﻳﺼﻠﻲ ﻟﻜﻢ
" ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ، ﻭﻓﻴﻪ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ : " ﺇﻧﻚ ﺁﺫﻳﺖ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ "
ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻳﻮﺳﻒ ، ﻭﻣﺴﻠﻢ ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ [ ﺹ : 663 ] ﺍﻟﺘﻤﻴﻤﻲ ، ﻋﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﻪ
এক সাহাবী নামাযের ইমামতি করার সময় সামন তথা ক্বিবলার দিকে থুথু নিক্ষেপ করলেন,যখন তিনি নামায থেকে ফারিগ হলেন তখন তিনি বললেনঃ সে মূলত তোমাদেরকে নিয়ে নামাযই পড়ায়নি।উক্ত হাদীসে আরো বর্ণিত রয়েছে,রাসূলুল্লাহ সাঃ উনাকে বলেন- নিশ্চয় তোমি আল্লাহ এবং তার রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ।
ﺷﺮﺡ ﺍﻟﺰﺭﻗﺎﻧﻲ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﻃﺄ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ» ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ » ﺑﺎﺏ ﺍﻟﻨﻬﻲ ﻋﻦ ﺍﻟﺒﺼﺎﻕ ﻓﻲ ﺍﻟﻘﺒﻠﺔ
শরহে যারকানী-পৃষ্টা-662
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
অসম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্য পশ্চিম দিকে পা রাখা, থুথু নিক্ষেপ,কোনো কিছু নিক্ষেপ করা কুফুরী।
অপারগ অবস্থায় রাখা জায়েয।অনিচ্ছাকৃত হলে জায়েয।ইচ্ছাকৃত তবে অসম্মান প্রদর্শনের নিয়তে নয়, এমন হলে মাকরুহ।কেননা আমাদের সমাজে অসম্মানই গণ্য করা হয়।আল্লাহ-ই ভালো জানেন। (শেষ)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
পশ্চিম দিকে পা দেয়া ব্যতীত যে কোনো দিকে মাথা বা পা দিয়ে ঘুমানো জায়েয। এতে কোনো প্রকার বিধি-নিষেধ নাই।
হ্যা ডান পাশ হয়ে ঘুমাতে সমস্যা হলে বাম পাশ হয়ে ঘুমানো যাবে।