আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আমার বড় বোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ছে থার্ড ইয়ারে। বাসা থেকে তাকে বিয়ে কথা বলা হয়েছে কিন্তু জোর করা হয়নি কারণ সে জানিয়েছে এখন করবেনা। ইসলাম অনুযায়ী তার করে ফেলা উচিত। আমি জানতে পেরেছি ও যাকে পছন্দ করে সে তার ক্লাসেরই এবং সেই ছেলে চাকরিতে না যাওয়া পর্যন্ত, ছেলেটি আমার বোনকে প্রস্তাব দিতে পারবেনা। তাদের মধ্যে চ্যাট হয়, আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম আমার বোনকে সে বলেছে সে ক্লাসমেট হিসেবেই শুধু কাজের কথা বলে। আমি বুঝতে পারছি তাদের মধ্যে খারাপ কিছু নেই কিন্তু তাদের নিয়ত একজন আরেকজন কে বিয়ে করবে আর বর্তমানে সেভাবেই কথা বলছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটাও তো জায়েজ নয়, সেটা কনফার্ম হয়ে আমার বোন কে আমি জানাতে চাই। সে আমার থেকে বড় দেখে তাকে সেভাবে বুঝানো আমার সাধ্যে নেই, রাগারাগি হবে। আর বাসায় যেহেতু ওর গার্ডিয়ান কেউ জানেনা আমি এই বিষয়ে চিন্তিত যে আমার কি বাসার কাউকে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া উচিত কিনা যাতে ওকে বুঝানো যায়। আমার কাছে খুবই খারাপ লাগছে কারণ এসব এর শাস্তি কেবল ওর দম্পতি জীবনেই পড়বেনা বরং আমার মা বাবা, বড় ভাইয়ের উপরেও পড়বে। আর আমি জেনে চুপ করে আছি তাতে কি আমারও গুনাহ হবে কিনা

জাযাকাল্লাহ খায়রান।

1 Answer

0 votes
by (671,040 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

বিবাহ পূর্ব প্রেম পুরোপুরি নাজায়েজ।    
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠] 

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ   
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
,
https://ifatwa.info/30521/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
দুনিয়ার আগুন শরীরের শুধু বাহ্যিক অঙ্গ পোড়াতে পারে। পোড়াতে পারে না তা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। কিন্তু জাহান্নামের আগুনের এমন পাওয়ার থাকবে যা জাহান্নামিদের শরীর পোড়ানোর পাশাপাশি তাদের হৃৎপিণ্ডও পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এটি আল্লাহর প্রজ্ব¡লিত অগ্নি, যা তাদের হৃদয়কে গ্রাস করে ফেলবে।’ (সূরা হুমাজা : ৬-৭) দুনিয়ার আগুন লাল বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু জাহান্নামের আগুন তীব্র উত্তপ্ত হওয়ার দরুণ কালো বর্ণের হবে।

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত।রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা বর্ণ হয়েছে। তারপর এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়েছে। এখন তা গভীর অন্ধকার রাতের অন্ধকারের মতো কালো (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪৩২০)। ‘জাহান্নামিরা যখন পিপাসায় ছটফট করবে তখন তাদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবে, যা সে এক এক ঢোক করে গিলবে’ (সূরা ইবরাহিম : ১৬-১৭)।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘পুঁজ যখন তার মুখের নিকটে নিয়ে আসা হবে, সে তা অপছন্দ করবে। তারপর যখন আরো নিকটে নিয়ে আসা হবে, তখন তার মুখমণ্ডল পুড়ে যাবে এবং মাথার চামড়া গলে পড়ে যাবে। তারপর সে যখন তা পান করবে তখন তার নাড়িভুঁড়ি গলে ছিন্নভিন্ন হয়ে মলদার দিয়ে বের হয়ে যাবে।’ (জামে তিরমিজি :২৫৮৩)

 ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, একদিন রাসূলুল্লাহ সা: এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, অর্থাৎ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং পূর্ণ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ তারপর প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করলেন, ‘যদি জাক্কুম গাছের একটা ফোঁটা এই দুনিয়ায় পড়ে তাহলে দুনিয়াবাসীর জীবনোপকরণ বিনষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ওইসব লোকের কেমন দুর্দশা হবে এটা যাদের খাদ্য হবে?’ (জামে তিরমিজি : ২৫৮৫)

রাসূল সা: জাহান্নামের সবচেয়ে সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ শাস্তি ওই ব্যক্তির হবে, যাকে ফিতাসহ এক জোড়া জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। এতে তার মগজ এমনভাবে টগবগ করবে গরম পানির পাত্র যেমন টগবগ করে। সে ধারণা করবে তার থেকে কঠিন আজাব আর কেউই ভোগ করছে না। অথচ সে হবে সবচেয়ে সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (সহিহ মুসলিম : ৩৬৪)

প্রিয় পাঠক! জাহান্নামের সবচেয়ে সহজ শাস্তির যদি হয় এমন পাওয়ার তাহলে কঠিন শাস্তির পাওয়ার কেমন হবে? তা আমাদের ভাবতে হবে। প্রতিদিন কত গুনাহ আমরা করে যাচ্ছি অহরহ। কখনো কি ভেবে দেখেছি, এর শাস্তি যদি আমাকে দেয়া হয় তাহলে কিভাবে সহ্য করব? অথচ জাহান্নামে যাওয়ার জন্য একটি কবিরা গুনাহ-ই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের মাফ না করেন, তাহলে আমাদের কী উপায় হবে? আল্লাহ তায়ালা আমাদের জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে হিফাজত করুন।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনার বড় বোনের বিষয়টি অবশ্যই আপনার বাবা মাকে জানাবেন।

পাশাপাশি আপনার বোনকে নিচের পরামর্শ দেখাতে পারেনঃ-

★সু-প্রিয় দ্বীনি বোন,

আপনি হারাম রিলেশন ত্যাগ করুন। আল্লাহকে ভয় করুন। জাহান্নামের শাস্তি খুবই কঠিন। মানুষের মৃত্যু কখন কি হয় বলা যায় না। তাই আপনি খুব দ্রুত হারাম রিলেশন ত্যাগ করুন। আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবা করুন।


আপনার প্রধান কাজ তো হল আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করা।

আর যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। এক কথায়, ছেলেটির সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিন। যোগাযোগ বন্ধ করার কারণে ছেলেটি যদি মনে কষ্ট নেয় তাহলে আপনার কোনো গুনাহ তো হবেই না; বরং নিজে গুনাহ থেকে বাঁচার এবং ছেলেটিকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর ছওয়াব পাবেন।

আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। মাস্তুরাত জামাতে যেতে পারেন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে।

★তার কথা মনে পড়ে,এমন কোনো কাজ,স্থান সবকিছু থেকেই দূরে থাকবেন।
,
★মনের কামনার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান অস্ত্র হল ঈমান। ঈমান সুদৃঢ় রাখতে হবে।
★ধৈর্য ও মনের দৃঢ়-সংকল্পতা এবং সুপুরুষের মত মনের স্থিরতা। 
মনের খেয়াল-খুশীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৃঢ়-সংকল্প হোন, যে, আপনি ঐ শয়তানী কুমন্ত্রণায় সায় দেবেন না।
অতএব ধৈর্যের সাথে শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন, এবং তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।
★নির্জনতা ত্যাগ করুন। কারণ, নির্জনতায় ঐ শ্রেণীর কুবাসনা মনে স্থান পায় বেশী। অতএব সকল অসৎ-চরিত্রের বন্ধু থেকে দুরে থেকে সৎ-বন্ধু গ্রহণ করে বিভিন্ন সৎ আলোচনায় প্রবৃত্ত হোন। 

★আল্লাহর যিকরে মনোযোগ দিন। 
বিভিন্ন ফলপ্রসু বইপুস্তক পাঠ করুন। সম্ভব হলে সে জায়গা একেবারে বর্জন করুন, যে জায়গায় পা রাখলে তার সহিত দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ফোন/মেসেজ এলে তার উত্তর দিবেন না। 

প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ 

★নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাবা মার পরামর্শ মাফিক দ্রুত বিবাহ করে ফেলুন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...