আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
42 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (46 points)
আসসালামু আলাইকুম শায়খ।


সমস্যা ১.
আমি কিছুদিন আগে আমার সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিই। এরপর আমার জমানো Provident fund এর টাকা কালেক্ট করি। সাধারণত প্রতি মাসে যে টাকা জমে, তার সাথে ব্যাংক সুদও যোগ করে। আমি সুদ সহ পুরো টাকাটা তুলে আনার পর নিজের টাকাটুকু নিজের কাজে লাগিয়েছি। আর সুদটুকুর একটা অংশ গাজাতে পাঠিয়েছি। কিছু সুদের টাকা বাকি ছিল। তার মধ্যে খবর আসে আমার এক দূরের আত্মীয় হঠাৎ ব্যবসায়িক লোকসানের কারণে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁরা ঋণগ্রস্ত অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন এবং এমনকি এক বেলা খেলে অন্য বেলা খাননা এমন অবস্থা। উনি আমার কাছে কিছু টাকা ধার চেয়েছিলেন ছোট মেয়ের ভার্সিটির বেতন দেয়ার জন্য। আমার হাতে টাকা না থাকায় ওই সুদের টাকা থেকেই দিয়েছি। উনি এখনো ফেরত দিতে পারেনি। এখন, আমি কি ওই টাকা ফেরত নিয়ে এর চেয়েও needy কাউকে দেবো নাকি এই ধার মাফ করে দিবো? মাফ করে দিলে এই সুদের টাকা থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু এতে আবার আমার আত্মীয় উপকৃত হচ্ছে। এ বিষয়ে শারীয়াহর বিধান কি?


সমস্যা ২:

একজন এয়ারফোর্স অফিসারের পক্ষ থেকে: এয়ারফোর্সের মিলিটারি এয়ারক্রাফটে প্রতিদিন ট্রেনিং এবং অপারেশনের পাশাপাশি প্রচুর VVIP, VIP military personnel এবং অন্যান্য military equipment materials transport হয়। এবং এই মুভমেন্ট নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা আলাদা অফিসও আছে, নাম: এয়ার মুভমেন্ট। একজন অফিসার এই অফিসের ইন চার্জ থাকে এবং তার আন্ডারে বেশ কিছু নন কমিশনড লোকজন থাকে। ঢাকার দুই এয়ারবেসের এয়ার মুভমেন্ট অফিস রীতিমতো এলাহি কান্ডে ভরপুর, কারণ সবসময় এখান থেকে VVIP, VIP রা যাতায়াত করে। এদের জন্য প্রচুর পরিমানে ড্রাই ফুড আনা হয়। চকলেট, ফক্স ক্যান্ডি, প্রিঙ্গেলস চিপস, ক্যাশোনাট, কফি, অত্যন্ত দামি দামি জিনিস। এবং প্রচুর পরিমাণে খাবার অপচয় হয়। উদাহরণস্বরূপ: হয়তো গেস্টদের পরিবেশনের জন্য অল্প কিছু দেয়া হয়, কিন্তু কেনা হয় পুরো প্যাকেট। অনেক সময় গেস্টরা সেই খাবার খায়ও না, সেক্ষেত্রে সেগুলোও অপচয় হয়। এবং VVIP র খাবার আনা হয় প্রায় দ্বিগুণ৷ তার মধ্যে কিছু থাকে ফুড টেস্টিং এর জন্য। প্রতিবার মুভমেন্টের সময় যে প্যাকেট আনা হয়, পরের বার তা আর ইউজ করে না। রেখে দেয়। এভাবে প্রচুর জমে। বেশিদিন থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। মাস শেষে অনেক সময় ওই খাবার থেকে কিছু খাবার এয়ার মুভমেন্টের দায়িত্ব পালনকারী অন্য জুনিয়র অফিসারদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। এই পাঠানোর কাজটা করে মেইনলি ওখানকার নন কমিশনডরা। তারা নিজেরাও নেয়, কিছু অফিসারদের পাঠায়। প্রশ্ন হল, এই খাবার গ্রহণ করা কি তাদের জন্য হালাল হবে? এগুলো সরকারি টাকায় কেনা। প্রসঙ্গত, এই এয়ার মুভমেন্টের দায়িত্ব পালনকারী লোকেরা সরকার থেকে একটা extra allowance পাওয়ার কথা যেটা কোন কারণে তাদের দেয়া হয়না। আবার কোন একটা ফ্লাইটের সময় নাস্তার একটা আইটেম তাদের ও পাওনা থাকে। সেটা তারা সবসময় খেতে সময়ও পায়না। সেই হিসেব করলে শারিয়াহর আদেশটা কি দাঁড়ায়?

1 Answer

0 votes
by (680,310 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
প্রভিডেন্ট ফান্ড এর অতিরিক্ত টাকার বিধানঃ  

প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।
,
আর প্রভিডেন্ট ফান্ডে বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত আরো টাকা নিজ থেকে খাটানো জায়েয নেই। কেউ খাটালে এ টাকার উপর যা অতিরিক্ত দেওয়া হবে তা নাজায়েয ও সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
,
তবে কেহ যদি বাধ্যতামূলক অংশের অতিরিক্ত টাকা জমা করে,তাহলে তাহা বৈধ হবেনা। এটির কারণে সুদি চুক্তির গুনাহ হবে। 

বিস্তারিত জানুনঃ 

শরীয়তের বিধান হলো টাকার বিনিময়ে টাকা নিলে  কোনো কমবেশি করা যাবেনা।
কম বেশি করলে সেটি সূদ হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

حَدَّثَنَا الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنَا بِشْرُ بْنُ عُمَرَ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي الْخَلِيلِ، عَنْ مُسْلِمٍ الْمَكِّيِّ، عَنْ أَبِي الأَشْعَثِ الصَّنْعَانِيِّ، عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الذَّهَبُ بِالذَّهَبِ تِبْرُهَا وَعَيْنُهَا وَالْفِضَّةُ بِالْفِضَّةِ تِبْرُهَا وَعَيْنُهَا وَالْبُرُّ بِالْبُرِّ مُدْىٌ بِمُدْىٍ وَالشَّعِيرُ بِالشَّعِيرِ مُدْىٌ بِمُدْىٍ وَالتَّمْرُ بِالتَّمْرِ مُدْىٌ بِمُدْىٍ وَالْمِلْحُ بِالْمِلْحِ مُدْىٌ بِمُدْىٍ فَمَنْ زَادَ أَوِ ازْدَادَ فَقَدْ أَرْبَى وَلاَ بَأْسَ بِبَيْعِ الذَّهَبِ بِالْفِضَّةِ - وَالْفِضَّةُ أَكْثَرُهُمَا - يَدًا بِيَدٍ وَأَمَّا نَسِيئَةً فَلاَ وَلاَ بَأْسَ بِبَيْعِ الْبُرِّ بِالشَّعِيرِ وَالشَّعِيرُ أَكْثَرُهُمَا يَدًا بِيَدٍ وَأَمَّا نَسِيئَةً فَلاَ "

হাসান ইবন আলী (রহঃ) ........... উবাদা ইবন সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সোনা সোনার বিনিময়ে সমান সমান বিক্রি করবে, চাই তা সোনার পাত হোক বা স্বর্ণ মুদ্রাই হোক এবং রুপা রুপার বিনিময়ে সমান সমান বিক্রি করবে, চাই তা রুপার পাত হোক বা রৌপ্য মুদ্রাই হোক। আর গম গমের বিনিময়ে এক মুদ এক মুদের বিনিময়ে বিক্রি করতে হবে এবং যবের বিনিময়ে যবও এক মুদের বিনিময়ে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। আর খেজুর খেজুরের বদলে এক মুদের বিনিময়ে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। একই ভাবে লবণ লবণের বিনিময়ে এক মুদের বদলে এক মুদ বিক্রি করতে হবে। এই প্রকারের একই ধরনের জিনিসের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশী নিবে বা দিবে, তা-ই সূদ হবে।

তবে সোনাকে রুপার বিনিময়ে এ অবস্থায় বিক্রি করা, যখন রুপা উভয় অংশের মধ্যে অধিক হবে, তবে তা দূষণীয় নয়। তবে এতে শর্ত হলো- লেন-দেন হাতে হাতে হতে হবে, বাকীতে বিক্রি জায়িয হবে না। একই রূপে গম যবের বিনিময়ে বিক্রি করা দূষণীয় নয়, যখন যবের অংশ উভয়ের মধ্যে অধিক হবে। তবে তা এ শর্তে যে, লেন-দেন হাতে হাতে হতে হবে এবং এতেও বাকী বিক্রি বৈধ নয়।
(আবু দাউদ ৩৩১৬)
,
★প্রভিডেন্ট ফান্ড এর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা  সূদ নয়।   

কেননা বেতনের কর্তনকৃত ঐ অংশ  ইচ্ছা করলেও উক্ত চাকুরজীবি এখন উসূল করতে পারবেনা।আর কবজা বা হস্তগ্রত করার পূর্বে কেউ কোনো বেতন ভাতার মালিক হতে পারে না।যখন সে উক্ত টাকার মালিকই হয়নি,তখন সে কিভাবে এ টাকাকে সুদে লাগাবে।তাই কর্তনকৃত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকার প্রভিডেন্ট ফান্ডকে সুদ বলা যাবে না।বরং এক্ষেত্রে এটাই অনুমান করা হবে যে,বেতন-ভাতার অপরিশোধিত সেই টাকাগুলাই এখন তার হস্তগ্রত হচ্ছে। এখানে সবগুলাকেই তার বেতন রূপে গণ্য করা হবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে চাকরিজীবীর বেতনের যে অংশ প্রভিডেন্ট ফান্ডে কেটে রাখা হয় তার উপর সুদের নামে অতিরিক্ত যা দেওয়া হয় তা চাকরিজীবীর জন্য গ্রহণ করা জায়েয আছে। এটাকে সুদ বলা হলেও শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সুদ নয়।

★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি যদি সেই টাকা আপনার ওই আত্মীয়কে একেবারে দিয়ে দেন, তথা ঋণ মাফ করে দেন, সেক্ষেত্রে তো কোন সমস্যা নেই, এতে আপনি সদকার ছওয়াব পাবেন।

আর যদি আপনি সেউ টাকা গ্রহণ করেন, তাতেও কোন সমস্যা নাই, কেননা এটি শরীয়াহ দৃষ্টিকোণ হতে সুদ নয়।

(০২)
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাদের জন্য এই খাবার গ্রহন এর অনুমতি থাকলে এই খাবার গ্রহণ করা তাদের জন্য হালাল হবে।

অন্যথায় হালাল হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...